পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী, পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কারা পাবে, পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা গুলো কী কী (PM Biswakorma Yojoana)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থার অর্থনীতির বুনিয়াদী শিল্পী ও কারিগরদের সুবিদার্থে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা নামের এক নতুন যোজনার কথা ঘোষণা করেন।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিস্তারিতভাবে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী ? পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার লাভ কারা পাবে ? পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা আবেদন করার নিয়ম ? প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা গুলো কী কী ?

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা আবেদন করার জন্যে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে ? এক কথায় পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আপনাদের সুবিধার্থে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আমাদের আর্টিকেলে আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

আপনারা একটু মনোযোগ সহকারে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা পুরো আর্টিকেলটি পড়লেই পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী ? পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার লাভ বা পিএম বিশ্বকর্মা যোজনার সুফল সমস্ত কিছু জানতে পারবেন।

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী (PM Vishwakarma Yojana)

আমাদের সমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ বসবাস করে, তাদের মধ্যে সবাই কোনো না কোনো ছোট বড় পেশার সঙ্গে যুক্ত আছে। এদের মধ্যে কেউ কারিগর তো কেউ আবার শিল্পী। তাদের মধ্যে আবার কেউ হয়ত মাটির হাঁড়ি বানায় তো কেউ আবার কাঠের কাজ করে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরী করে।

এই সমস্ত শিল্পী ও কারিগর পেশার মানুষদের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে লালকেল্লায় ভাষণ দিতে গিয়ে নতুন এক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নতুন প্রকল্পটির নাম হল পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা (PM Vishwakarma Yojana) প্রকল্প।

বিশ্বকর্মা যোজনার আওতায় সমাজের এই সমস্ত শিল্পী ও কারিগরদের বাৎসরিক ০২ লক্ষ টাকা ঋণ এবং এক কালীন কারিগরি বিদ্যায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্যে ১৫,০০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা ঘোষণা করেছেন। সেপটেম্বর মাসের বিশ্বকর্মা পূজার দিন থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা হয়।

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা প্রকল্পের আওতায় পড়া সমাজের ছোট বড় কারিগরি পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন মানুষেরা সহজেই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা পাবেন।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা প্রকল্পের বিবরণ

আসুন একনজরে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা প্রকল্পের বিবরণ এর নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক –

প্রকল্পের নাম প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা প্রকল্প
প্রকল্পের সূচনা ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষে
সূচনার দিন ০৭-০৯-২০২৩, বিশ্বকর্মা পূজার দিন
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা ক) ০৫% সুদে দুই ধাপে সর্বাধিক ০২,০০০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ।
খ) সমাজের বিভিন্ন ধরণের পেসার সঙ্গে যুক্ত কারিগর ও শিল্পীদের সরকার কর্তৃক বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
গ) সরকারি প্রশিক্ষণের সময় দৈনিক ৫০০ টাকা করে ভাতা।
ঘ) কারিগরি বিদ্যার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্যে এককালীন ১৫,০০০ টাকা।
ঙ ) প্রশিক্ষণ নেওয়া কারিগর ও শিল্পীদের পি এম বিশ্বকর্মা শংসাপত্র প্রদান ।
আবেদন কীভাবে করবেন অনলাইন CSC কেন্দ্র থেকে আবেদন করতে হবে।
প্রকল্পের জন্যে বরাদ্দ অর্থের পরিমান ১৩ হাজার কোটি টাকা।
ত্বত্তাবধান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রণালয় ভারত সরকার।
পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার লাভ কারা নিতে পারবে পারম্পরিক পেশাগত শিল্পী ও কারিগররা এর লাভ নিতে পারবে।
পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার অপর নাম পি এম বিশ্বকর্মা কৌশল বিকাশ যোজনা
পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://pmvishwakarma.gov.in/
পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার জন্যে বরাদ্দ টাকার পরিমান ১৩ হাজার কোটি টাকা।
পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা আবেদন করার জন্যে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে

আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পি এম বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদন করার জন্যে প্রয়োজনীয় কি যোগ্যতা থাকতে হবে –

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই ভারতীয় মূল নিবাসী হতে হবে।
  • আবেদন করার জন্যে আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছর হতে হবে।
  • একই পরিবারের শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিই পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার লাভ পাবে।
  • শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত কারিগর ও শিল্পীরা পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা নিতে পারবে।
  • সরকারি কর্মচারি অথাৎ যারা সরকারি চাকুরী করেন, তারা এই যোজনার লাভ নিতে পারবেনা।

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা গুলো কি কি

আপনারা সবাই জানেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষে ছোট ছোট কুটির শিল্প বা কারিগরি পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন মানুষদের আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থে,২০২৩ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পূজার দিন বিশ্বকর্মা যোজনা নামের প্রকল্পটির সূচনা করেন।

এই প্রকল্পের অধীনে সমাজের বিভিন্ন কারিগরি পেশার মানুষেরা বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা পাবেন। আসুন তবে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা বা বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদন করলে কি কি লাভ বা সুবিধা পাওয়া যাবে, সেই বিষয় গুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক –

০১. পি এম বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদনকারী ব্যক্তিদের প্রথমধাপে ০৫% সুদে ০১ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। বিশ্বকর্মা যোজনার এই প্রথমধাপের ঋণ আবেদনকারীকে ১৮ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

০২. পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার আওতায় আবেদনকারী যে ধরণের পেশার সঙ্গে যুক্ত আবেদনকারীকে সরকার কর্তৃক সেই ধরণের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং প্রশিক্ষণ চলাকালীন দিন প্রতি ৫০০ টাকা করে প্রশিক্ষণ ভাতা দেওয়া হবে।

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী
পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী

০৩. প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনার আওতায় কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার কারিগরি ট্রেনিং এর শংসাপত্র দেওয়া হবে।

০৪. পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার আওতায় পাওয়া প্রথমধাপের ঋণ সময়মত পরিশোধ করতে পারলে দ্বিতীয় ধাপে আবেদনকারীকে পুনরায় ০৫% সুদে ০২ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপের এই ঋণ আবেদনকারীকে ৩০ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

০৫. পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার এই সরকারি ঋণ সরাসরি আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক একাউন্টে ডিজিট্যালি প্রদান করা হবে।

০৬. কারিগরি পেশার মানুষদের তাদের কারিগরি যন্ত্রপাতি কেনার জন্যে সরকার এককালীন ১৫,০০০ টাকা করে দিয়ে সাহায্য করবে।

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার জন্যে কারা কারা আবেদন করতে পারবে

ভারত সরকার পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার আওতায় প্রথমধাপে সবমিলিয়ে সমাজের বিভিন্ন কারিগরি পেশার মানুষদের একটা সূচী তৈরী করেছেন। এই সূচীতে সর্বমোট ১৮ ধরণের পেশার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই ১৮ ধরণের পেশার মানুষ পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার জন্যে আবেদন করতে পারেন।

০১. কাঠমিস্ত্রী (ছুতোর)

০২. কামার (কর্মকার)

০৩. কুমোর

০৪. স্বর্ণকার

০৫. মুচি (চর্মকার)

০৬. রাজমিস্ত্রী

০৭. মালাকার (যারা মালা তৈরী করেন / থার্মোকল দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরী করেন)

০৮. নাপিত

০৯. ধোপা

১০. মৃৎশিল্পী (যারা মাটির পুতুল আদি তৈরী করেন)

১১. দর্জি (ট্রেলার)

১২. ঝুড়ি, মাদুর, প্রস্তুত কারক

১৩. নৌকা নির্মাতা (যারা নৌকা আদি তৈরী করেন)

১৪. যারা মাছের জাল বোনেন বা তৈরী করেন

১৫. পাথরের মূর্তি প্রস্তুত কারক / যারা পাথর ভেঙে ভাস্কর্য্য তৈরী করেন এমন শিল্পীরা

১৬. তালা ও চাবি তৈরী করেন এমন পেশার মানুষেরা

১৭. অস্ত্রশস্ত্র নির্মাতা

১৮. হাতুড়ি এবং আরো অন্যান্য যন্ত্র নির্মাণ করেন এমন শিল্পীরা।

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী
পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদন করার জন্যে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদন করার জন্যে যে সমস্ত কাগজপত্র আপনার হাতের নাগালে রাখতে হবে –

০১. সবার প্রথমে আপনার একটি চালু ব্যাঙ্ক একাউন্ট থাকতে হবে এবং আবেদন করার সময় আপনাকে আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টের যাবতীয় নথি দিতে হবে।

০২. আপনার প্যান কার্ড থাকতে হবে।

০৩. আধার কার্ড।

০৪. চালু মোবাইল নম্বর।

০৫. আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র (Certificate)

০৬. বর্তমান সময়ে তোলা আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে।

পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা আবেদন করার নিয়ম বা পি এম বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদন কীভাবে করবেন

অফলাইন ফর্ম ফিলাপ করে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার জন্যে আবেদন করা যাবেনা। পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার আবেদন সরাসরি অনলাইনে করতে হবে। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি আপনার যদি CSC Id না থাকে তাহলে

আপনি নিজে থেকে অনলাইনে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার জন্যে আবেদন করতে পারবেন না। পি এম বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদন করার জন্যে আপনাকে আপনার নিকটস্থ CSC সেন্টারে গিয়ে User Id এবং Password তৈরী করে,

CSC সেন্টার থেকে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার জন্যে আবেদন করতে পারবেন। তাই আপনি যদি পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার লাভ নিতে চান তাহলে দেরি না করে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনায় আবেদন করার জন্যে যাবতীয় নথি সঙ্গে নিয়ে আজই আপনার নিকটস্থ CSC সেন্টারে গিয়ে আবেদন করুন।

পরিশিষ্ট

এতক্ষন আমরা আপনাদের সুবিদার্থে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী ? পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার জন্যে কারা কারা আবেদন করতে পারবে ? পি এম বিশ্বকর্মা যোজনার সুবিধা ? পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা আবেদন করার নিয়ম ইত্যাদি বিষয় গুলো নিয়ে মোটামোটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

তবুও আপনাদের মনে পি এম বিশ্বকর্মা যোজনা কী ? অথবা প্রধান মন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা নিয়ে কোনো ধরণের প্রশ্ন থাকলে আমাদের যে কোনো সময় কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

5/5 - (2 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here