স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়,স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য,স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য,১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস ২০২৩

প্রতিবছর নিয়ম করে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস (Independence Day India) পালন করা হয়। কিন্ত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় ? এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য জানতে হবে।

প্রতিবছর ১৫ আগস্ট দিনটি বছর ঘুরে যখন আমাদের সামনে আসে তখনই স্কুলে, ক্লাবে,পাড়ার মোড়ে শিক্ষক, শিক্ষিকা, কচি কাচা সহ স্কুল পড়ুয়াদের স্বাধীনতা দিবসের রচনা বা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম সহ, স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা বলতে হয়। আজকে আমাদের আলোচনায় স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য বা স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ বাবদ ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম সহ, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রতিদবেদন আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আপনারা যে যার মত করে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্যটি সবার সামনে তুলে ধরতে পারেন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য ২০২৩ ও স্বাধীনতা দিবস রচনা (Independence Day Speech in Bengali 2023)

নমস্কার, জয়..হিন্দ…,বন্দে..মাতরম,…ভারত..মাতা..কি…জয়…, আমি…..কৃষ্ণ সাহু।…(আপনারা নিজের নাম বলবেন)… স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে উপস্থিত সকল সহকর্মী,

বন্ধু, শিক্ষক, অশিক্ষক, গুরুজন, ছোট ছোট কচিকাচা ও ভাই বোনেদের ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতার অমৃত মহাউৎসব পার করে ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবসে উপস্থিত সবাইকে জানায় আমার পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

প্রতিবছরের ন্যায় আজকে আমরা সকলে সমবেত হয়েছি ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনটিকে বিশেষ ঐতিহ্য ও মর্যাদার সাথে যথাযথ ভাবে পালন করার জন্য।

আপনারা জানেন স্বাধীনতার বিপরীত অর্থ হল পরাধীনতা। আমরা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের আগে আমরা আমাদের নিজের দেশেই, ইংরেজ শাসকদের হাতে ২০০ বছর পরাধীন ছিলাম।

তবে ইংরেজদের হাতে ভারত মায়ের পায়ে পড়ানো পরাধীনতার বেড়ি একদিনেই টুটে যায়নি ! ভারত মাতাকে ইংরেজদের পড়ানো পরাধীনতার বেড়ি থেকে মুক্ত করার জন্যে

ভারত মায়ের অনেক বীর সন্তানকে রক্ত ক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিজেদের প্রাণের আহুতি দিতে হয়েছে। একদিকে যেমন অহিংসার পূজারী গান্ধীজি,সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের স্বাধীনতার লড়ায়ে সামিল করেছেন।

অন্যদিকে তেমনি ‘করব..না..হয়..মরব…মর্মে’ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার জন্যে রক্ত ঝড়িয়েছেন ভগৎ সিং, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, ক্ষুদিরাম,

মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বাঘা যতীনের মত আরো অনেক বিপ্লবীরা। এইসমস্ত বিপ্লবী বন্ধুদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফসল হল আমাদের আজকের স্বাধীনতা।

একজন ভারতবাসী হিসাবে ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের শুভক্ষণে আপনাদের সামনে বিপ্লবী বন্ধুদের রক্তক্ষয়ী বলিগাঁথা সংগ্রামের পরিভাষা আমার দু-একটা তুচ্ছ শব্দে ব্যক্ত করা, আমার কাছে নিত্যান্ত বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

আজকের ১৫ আগস্ট দিনটি সমগ্র ভারতবাসীর কাছে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উদযাপন করে আমাদের বিপ্লবী বন্ধুদের স্মরণ করার দিন। আজ থেকে ৭৬ বছর আগে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শ্রী জওহরলাল নেহেরু

দিল্লীর লাল কেল্লার লাহোরী গেটে সর্বপ্রথম ভারতের তিন রঙে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আর সেই থেকে আজ অবধি নিয়ম মেনে ১৫ আগস্ট দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস (দিন) হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়
১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Independence Day India) ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়

তবে ভারতের তিন রঙে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা শুধু পতাকা নয় ! আমরা সমগ্র ভারতবাসী এক পতাকার ছত্রছায়ায় সমবেত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর …. ”হর ঘর তিরঙ্গা” ….আহ্বানে সারা দিয়ে

সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- স্কুল, কলেজ, অফিস ছাড়াও নিজের নিজের বাড়িতে তিন রঙে রঞ্জিত ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছে। এটা খুব গর্বের বিষয় যে প্রধানমন্ত্রীর

….”হর…ঘর…তিরঙ্গা”…ক্যাম্পেনের মাধ্যমে আমাদের আরো একবার জাতি ধর্মের উঁচু,নিচু ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছে——

নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান

বিবিধের মাঝে দেখ , মিলন মহান !

স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Independence Day India)

অথাৎ জাতি ধর্ম, ভাষা, ধর্মীয় ভেদাভেদ সবকিছু ভুলে, আমাদের সবথেকে বড় পরিচয় হল আমরা ভারতবাসী, আমরা সবাই এক । আমাদের সবথেকে বড় পরিচয় আমরা ভারতীয় ! আমাদের দেশ, আমাদের জন্মভূমি হল আমাদের মা !

এই বলে আমি আমার বক্তব্যকে দীর্ঘ্য না করে, আমি আমরা বক্তব্যের ইতি টানছি। জয় হিন্দ। বন্দে মাতরম। ভারত মাতা কি জয়। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা ও স্বাধীনতা দিবসের এসএমএস পাঠানোর জন্য

আরো পড়ুন :- স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা ও স্বাধীনতা দিবসের এসএমএস

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা (Swadhinota Diwas Niye Kichu Kotha)

পরাধীন ভারতে ১৯২৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষের মাটিতে পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়ে ২৬ শে জানুয়ারী দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

তারপর থেকে পরাধীন ভারতে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৩০ সাল থেকে ২৬ জানুয়ারী দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করে আসছিল।

এখানে আমাদের মনে স্বাভাবিক ভাবে একটি প্রশ্ন দেখা দেয় তাহলে ১৫ আগস্ট স্বাধীন দিবস কেন পালন করা হয় ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আর পাঁচটা পশ্চিমা দেশের মত ব্রিটেনের রাজকোষে আর্থিক মন্দা দেখা যায়।

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের কাছে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ দুই জায়গা থেকে কোনো ধরণের অর্থ সাহায্য পাওয়ার ব্রিটেনের কাছে বিকল্প রাস্তা খালি ছিলনা।

ব্রিটিশ গর্ভমেন্ট তখন ভালোভাবেই আঁচ করে যায় ভারতের ক্রমবর্ধমান বিপ্লবী ও রাজনৈতিক আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ সামাল দেওয়ার মত অর্থবল প্রয়োগ করতে গিয়ে ব্রিটিশ রাজকোষ ক্রমশঃ শুন্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

পরিস্থিতির চাপে ব্রিটিশ সরকার ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বারা লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনকে ভারতীয়দের হাতে স্বাধীনতা হস্তান্তরের দায়িত্বভার ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার জন্যে বলা হয়।

কিন্তু লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন স্বাধীনতা হস্তান্তরণের কাজটিকে দীর্ঘায়িত না করে, ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে আসেন। এরপর ১৯৪৭ সালের ০৪ জুলাই লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের দেওয়া তথ্যের উপর

ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার বিলটি ব্রিটিশ সংসদে পেস করা হয় এবং দুই সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার বিলটি পাস হয়ে যায়। লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন

“যেখানেই সাম্রাজ্যের শাসনের অন্ত হয়েছে, সেখানেই রক্তপাত হয়েছে। এ দাম দিতেই হবে।” তাই তার মনে হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতা হস্তান্তরের দিনটিকে এগিয়ে এনে তিনি দাঙ্গার রক্তক্ষরণ এড়াতে অনেকটাই সফল হয়েছিলেন।

তবে চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর মতে মাউন্ট ব্যাটেনের এই যুক্তি কিন্ত একেবারেই গ্রহণযোগ্য ছিলনা। রাজা গোপালাচারীর মতে ইংরেজ প্রশাসন ভারতীয়দের

স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়
১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Independence Day India) ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়

স্বাধীনতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ১৯৪৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যদি অপেক্ষা করত, তাহলে ভারতীয়দের স্বাধীনতা হস্তান্তর করার মত ক্ষমতায় ব্রিটিশদের হাতে থাকতনা।

১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Swadhinota Diwas Keno Palon Kora Hoy)

ভারতকে স্বাধীন রাষ্ট্র ও ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় ক্রমে যত এগিয়ে আসতে থাকে ভারতবর্ষের মাটিতে হিন্দু ও মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিষ বাষ্প ভারতের আকাশে বাতাসে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ বইটিতে মাউন্ট ব্যাটেনের আত্মপক্ষ যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে ” দাঙ্গা প্রতিরোধে ব্রিটিশ গভমেন্টের অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা হস্তান্তরণের দিনটিকে সাত মাস এগিয়ে নিয়ে আসা হয়।

মাউন্ট ব্যাটেন ১৫ আগস্ট দিনটিকে ভারতকে স্বাধীনতা হস্তান্তরের দিন হিসাবে বেছে নেওয়ার পিছনে যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন “আমি আগে থেকে ভারতীয়দের স্বাধীনতা হস্তান্তরের দিন হিসাবে নির্দিষ্ট করে কোনো দিন ধার্য্য করিনি।

আমি ভারতীয়দের স্বাধীনতা হস্তান্তরের ব্যাপারটা নিজের তত্বাবধানে গোটা বিষয়টা তদারকি করতে চেয়েছিলাম। তবে আমাকে হঠাৎ করে স্বাধীনতা হস্তান্তরের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ? তখন আমার মনে হয়

ভারতীয়দের স্বাধীনতা হস্তান্তরের বিষয়টি আগস্ট বা সেপ্টম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যেতে পারে। তারপরে আমি চিন্তাভাবনা করে দেখি ভারতীয়দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা হস্তান্তর করাটাই ঠিক হবে।

কারণ ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপানের সম্রাট হিরোহিতো তার রেকর্ডিং রেডিও ভাষণে মিত্রশক্তির কাছে জাপানের আত্মসমর্পনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ইতিহাসের পাতায় জাপান সম্রাট হিরোহিতোর

মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমপর্ণের সেই ভাষণ “জুয়েল ভয়েস ব্রডকাস্ট” নামে পরিচিত। মাউন্ট ব্যাটেন হিরোহিতোর এই ভাষণ চার্চিলের ঘরে বসে রেডিও মাধ্যমে শুনেছিলেন।

মিত্রশক্তির কাছে জাপান বাহিনীর আত্মসমর্পনের সময় মিত্রশক্তির সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন মাউন্ট ব্যাটেন। ১৯৪৫ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর জাপানীরা মিত্রশক্তির সুপ্রিম কমান্ডার মাউন্ট ব্যাটেনের তত্বাবধানে

মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পনের নথিতে স্বাক্ষর করেন। ঘটনাক্রমে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দিনটি ছিল মিত্রপক্ষের কাছে জাপানিদের আত্মসমর্পনের দ্বিতীয় বছর।

এরপর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, আম্বেদকর, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ তৎকালীন ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ১৯৪৭ সালের জুন মাসে ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে

ভারত বিভাগের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। হিন্দু, শিখ, পার্সি, জৈন, বৌদ্ধ সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চল গুলো নিয়ে ভারত রাষ্ট্রের নির্মাণ হয় এবং মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল গুলো নিয়ে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়।

উত্তর পশ্চিমের পাঞ্জাব প্রদেশ এবং পূর্বের বঙ্গ (বাংলা) দুই-ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পাঞ্জাবের আধা প্রদেশ সিন্ধু ও পাঞ্জাব পাকিস্তানের হাতে চলে যায় ,আর ঠিক একই ভাবে আধা বাংলা ভেঙে পাকিস্তানকে তুলে দেওয়া হয়।

ব্রিটিশদের হাতে বিভাজিত আধা বাংলার নতুন নামকরন হয় পূর্ব পাকিস্তান। এরপর দুই স্বাধীন রাষ্ট্রকে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয় পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু

এবং পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হয় মহম্মদ আলি জিন্নাহ। ভারত পাকিস্তান বিভাজনে পাঞ্জাবের শিখ অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয় যার ফলে,

স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়
১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Independence Day India) ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়

লক্ষ লক্ষ নিরীহ মা, ভাই, বোন দেশ বিভাজনের দাঙ্গায় মারা যায়। তবে সেই সময় বাংলায় গান্ধীজী উপস্থিত ছিলেন বলে পাঞ্জাবের তুলনায় বাংলায় কিছুটা হলেও দাঙ্গার প্রকোপ কম হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

যাইহোক দেশ বিভাজনের হিন্দু মুসলমান দাঙ্গায় বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। তবে এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশকে একইসাথে একইদিনে স্বাধীনতা হস্তানন্তর করা হলেও

ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ১৫ আগস্ট পালন করা হয়। তাহলে ভারতে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় ? আশাকরি এই নিয়ে আপনাদের মনে আর কোনো সংশয় থাকছেনা !

তবে এখন প্রশ্ন হল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস তাহলে ১৪ আগস্ট কেন ? আসলে এর পিছনে যুক্তি হল ভারতের স্বাধীনতা দেওয়ার বিলে ভারত পাকিস্তান দুই দেশকেই ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

পাকিস্তানের তরফ থেকে মহম্মদ আলি জিন্নাহ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে মেনে নিয়ে জিন্নাহ পাকিস্তানের করাচিতে তাঁর প্রথম ভাষণে ১৫ আগস্টকে স্বাধীন সার্বভৌম পাকিস্তানের জন্মদিন বলে ঘোষণা করেছিলেন।

কিন্তু ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তান ১৪ আগস্টকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করতে থাকেন। তবে এর কারণ হিসাবে মনে করা হয় ভারত থেকে পাকিস্তান পৃথক হওয়ার পর,

১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Independence Day India) ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়

ভারত থেকে পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট আর ঘটনাক্রমে ১৪ আগস্ট ছিল মুসলমান ধর্মের অতিপবিত্র ২৭ তম রমজানের দিন। তাই তারা ১৪ আগস্টকেই পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের দিন বলে মেনে নেন।

আরো পড়ুন : মহাত্মা গান্ধী হত্যা রহস্য।

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদন

“মুক্তির মন্দির সোপানতলে

কত প্রাণ হল বলিদান,

লেখা আছে অশ্রুজলে ।।

মুক্তির মন্দির সোপানতলে

কত প্রাণ হল বলিদান,

লেখা আছে অশ্রুজলে ।।”

স্বাধীনতা দিবস আসলে আমাদের প্রজাতন্র ভারতবর্ষের একটি জাতীয় দিবস। স্বাধীনতা মানেই বলিদান ! স্বাধীনতা একদিনে অতি সহজে আসেনি, তার জন্যে বিপ্লবী বন্ধুদের রক্ত ক্ষরণ হয়েছে।

রক্তের বিনিময়ে রক্ত ঝড়িয়ে তবেই স্বাধীনতা এসেছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের অমৃত ফল। লড়াই ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই ভারতের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে।

বিনয়, বাদল, দিনেশ, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি এমন সহস্র বিপ্লবীদের প্রাণ উৎসর্গ করার পরে তবেই ভারত ব্রিটিশদের পরাধীনতার বেড়ি ছিঁড়ে বার হয়ে আসতে পেরেছিল।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা পায়, তাই প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য বা স্বাধীনতা দিবসের গুরত্ব কিন্ত অপরিসীম।

ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা হস্তান্তরের পর থেকেই ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের দিন হিসাবে ১৫ আগস্ট দিনটাকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে অতি মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট জওহরলাল নেহেরু দিল্লীর লাল কেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করে তার ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যেম স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

এরপর পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু স্বাধীন ভারতের সংসদের অধিবেশনে স্বাধীনতার প্রথম ভাষণ দেন, নেহেরুর সংসদে দেওয়া এই ভাষণ “ট্রিস্ট উইথ ডেসটিনি” নামে পরিচিত।

তবে মতভেদে শোনাযায় ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। লোকসভা সচিবালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে ভারতের জাতীয় পতাকা আসলে ১৬ আগস্ট উত্তেলন করা হয়েছিল।

আর ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজন রেখা ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্থির করা হয়নি। ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজন রেখা স্বরূপ রেইডক্লিফ লাইন ১৭ আগস্ট রেডক্লিফ দ্বারা টানা হয়।

১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Independence Day India) ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে জওহরলাল নেহেরু শপথ গ্রহণ করেন এবং তখন পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী না হওয়ায় ভারতের গভর্নর পদে অকিবহাল থাকেন মাউন্ট ব্যাটেন।

তাই স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন মাউন্ট ব্যাটেন। আজকে স্বাধীনতার ৭৬ বছর পেড়িয়ে এসে ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তাকিয়ে দেখলে বহু প্রশ্ন সামনে এসে যায়।

কেননা আমরা বর্তমান ভারত শিক্ষিত ভারত, প্রগতিমান ভারতের মানুষ আজ হিংসা,চক্রান্ত,ভেদাভেদের জালে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে ব্রিটিশদের মত পরাধীন মনস্কতার পরিচয় দিয়ে চলেছি।

আজও ভারতের বহু জায়গায় শিক্ষার আলো পৌঁছতে পারেনি, বেকারের তকমা, দারিদ্রতা মানুষকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির তাগিদে ভারতবর্ষের মানুষ

রক্তে রাঙা পূর্ণ স্বাধীনতার বীজ বহন করে চলতে স্বাধীন মানুষের মানুষ ক্রমশ দিন প্রতিদিন অক্ষম হয়ে পড়ছে। তাই ১৫ আগস্টকে শুধুমাত্র একটি জাতীয় দিবস হিসাবে পালন না করে,

স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় ? স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য কি তা অভিধাবন করতে হবে। আর এর জন্যে আপনার আমার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী, আমাদের দেশের মনীষীদের প্রেরণায় দেশের নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

আমাদের নতুন প্রজন্মই হল আমাদের নতুন ভারত, নতুন প্রজন্ম আমাদের ভারতকে আবার বিশ্বের দরবারে গৌরাম্বিত করে দেশের মান উজ্জ্বল করবে। তাই কবির ভাষায় আমরা বলব সবাই-

ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।”

২০২৩ এর দাঁড় গোঁড়ায় এসে ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশ তাদের স্বাধীনতা দিবসের ৭৬ তম বার্ষিকী অতিক্রম করে আজকে ৭৭ তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে।

যদিও ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশ আলাদা আলাদা দিনে স্বাধীনতা দিবস পালন করছে, তবে এই জিনিসটা মানতেই হবে স্বাধীনতা মানেই ত্যাগ ও বলিদান তাই যে যার দিনে স্বাধীনতা দিবস পালন করুকনা কেন স্বাধীনতার তাৎপর্য কিন্ত এক।

স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় (Independence Day India) স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয়

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইংরেজ শাসনের সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে বহু বিপ্লবীরা তাদের জীবন দেশ মাতৃকার সেবায় উৎসর্গ করেছন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করা বিপ্লবী গণ হলেন-

রাস বিহারী বসু, ময়না কুমারী,আবুল কালাম আজাদ, কমল নাথ তিওয়ারি, অরুণা আসফ আলি, অরবিন্দ ঘোষ, চন্দ্রশেখর আজাদ অ্যানি বেসান্ত, রামপ্রসাদ, বিসমিল, ক্ষুদিরাম বসু, বিনায়ক দামোদর সাভারকর,

সুভাষচন্দ্র বসু, মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি,হরেকৃষ্ণ কোঙার, মাহমুদ হাসান দেওবন্দি, হুসাইন আহমদ মাদানি,উবায়দুল্লাহ সিন্ধি,যতীন্দ্র নাথ দাস, বটুকেশ্বর দত্ত, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, হেমু কালানি,

হাকিম আজমল খাঁ,মাওলানা শরিয়তুল্লাহ, মাওলানা আজাদ, মাওলানা আলাউদ্দিন,মাওলানা মহম্মদ আলি ও শওকত আলি,মাতঙ্গিনী হাজরা, আব্দুল মজিদ, খান আব্দুল গফফার খান, নেতা আহমাদুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ সিঙ্গি

হাফেজ নিশার আলি বা তিতুমীর, বীরাপান্ডিয়া কাট্টাবোমান, আসফাকউল্লা খান, সৈয়দ আহমদ খান, লক্ষ্মী বাঈ, মদনমোহন মালব্য জওহরলাল নেহ্‌রু, বিপিনচন্দ্র পাল, মঙ্গল পান্ডে,

মারুথু পান্ডিয়ার, ভি. ও. চিদাম্বরম পিল্লাই, লালা লাজপত রায়, শিবরাম রাজগুরু, আল্লুরি সিতারামারাজু, রামমোহন রায়, ঝলকারি বাঈ, নানা সাহেব, নিকুঞ্জ সেন, অতুলচন্দ্র ঘোষ, অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী, মনোরঞ্জন গুপ্ত, সত্য গুপ্ত,

বলাইলাল দাস মহাপাত্র, কাজী নজরুল ইসলাম, হাজি ওসমান সইত, দয়ানন্দ সরস্বতী, ভগৎ সিং, সর্দার অজিত সিং, উধাম সিং, সুখদেব থাপার, বাল গঙ্গাধর তিলক,

তাতিয়া টোপি, প্রভুদয়াল বিদ্যার্থী, স্বামী বিবেকানন্দ, বাহাদুর শাহ জাফর, চুনিলাল ভাইদয়া, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, নগেন্দ্রনাথ দত্ত, ভাবিনী মাহাতো, বীণা দাস, ফকির মজনু শাহ, সিধু মুরমু,

কানু মুরমু, ফুলো মুরমু, ঝানো মুরমু, চাঁদ মুরমু। ভৈরব মুরমু, বিরসা মুন্ডা, তিলকা মুরমু (মাঝি), অস্ত্রগুরু হেমচন্দ্র কানুনগো (তথ্যসূত্র wikipedia)

আরো পড়ুন : কালাপানি সেলুলার জেলের ইতিহাস।

পরিশিষ্ট

আজকের লেখনীর মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা দিবস কেন পালন করা হয় তার সার সংক্ষেপ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রতিদবেদন স্বরূপ সামান্য একটা ঝলক আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

আজকের নতুন প্রজন্ম ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস প্রতিবছর স্বগৌরবে পালন করে , কিন্তু মূল বিষয়টা হল তাদের মধ্যে অনেক তরুণ ও তরুণীরা হয়ত স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্যটাই ঠিকঠাক বোঝেনা।

‘স্বাধীনতা হল আমাদের জন্মগত অধিকার’ আমরা সংবিধান আমাদের সেই মৌলিক অধিকার দিয়েছে ঠিকই, কিন্ত সেই স্বাধীনতার গরিমা আমাদেরই ধরে রাখতে হবে।

তা নইলে হয়ত আবার কোনো দুষ্ট সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কোনো রাক্ষস রূপে এসে আমাদের ভারত মায়ের হাতে পায়ে পরাধীনতার বেড়ি পড়িয়ে আবার আমাদের স্বাধীনতা গ্রাস করবে।

তাই দেশের কল্যানে, দেশের প্রয়োজনে, নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে আমাদের দেশের তরুণ তরুণীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম হল আমাদের অগ্রদূত। জয় হিন্দ।

FAQ.

প্রশ্ন- ভারত কবে স্বাধীন হয়েছিল ?

উঃ- ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়েছিল।

প্রশ্ন- ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট কি বার ছিল ?

উঃ- ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট Fri Day ছিল ( বাংলা ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ ২৯ শে শ্রাবণ শুক্রবার ).

প্রশ্ন- পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস কবে ?

উঃ- পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস হল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বৃহস্পতি বার।

5/5 - (3 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here