মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী (Hazrat Muhammad Sallallahu alaihi wasallam Jiboni)

আমাদের আর্টিকেলে আমরা এখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী (Hazrat Muhammader Jiboni) নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা সবাই জানেন মুহাম্মদ হলেন একজন ধর্মপ্রচারক, যিনি বিশ্বে শান্তির ধর্ম ইসলাম ধর্মের প্রচার করেন।

আজথেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে আরব দেশের মক্কা শহরে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জন্ম গ্রহণ করেন। পরে মুসলিম ঐতিহাসিকগণ হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মসাল গবেষণা করে হযরত মুহাম্মদ এর জন্মসাল হিসাবে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দকে চিহ্নিত করেন।

ইসলামি ইতিহাসে মুহাম্মদের জন্মের আগের সময়কে জাহেলি যুগ (অন্ধকারময় যুগ) বলা হয়। জাহেলি যুগে আরবদেশের মানুষের মধ্যে কোনো ঐক্যতান বা সমানতা বলে কিছু ছিলনা। তারা ক্ষমতা ও বংশমর্যাদা দম্ভে নিজেরাই নিজেদের মধ্যে খন্ড যুদ্ধে মেতে থাকত।

জাহেলি যুগে অরাজনৈতিক কু-শাষন, নর-হত্যা, কলহ-বিবাদ, হিংসা ও মাড়ামাড়ি, মিথ্যাচার, অরাজকতার ছড়াছড়ি ছিল। মানুষের মধ্যে নিষ্ঠা ভালোবাসা বলে কোনো বস্তু ছিলনা। তখন সেই জাহেলি যুগে অধর্মের নাস করার জন্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম হয়।

Table of Contents

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী (Hazrat Muhammader Jiboni)

৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরব দেশের মক্কা শহরের কুরাইশ বংশের বনু হাসিম গোত্রে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ জন্ম গ্রহণ করেন। আরব দেশের এক বিশেষ বণিক সম্প্রদায় হল কুরাইশ গৌত্রের বণিক সম্প্রদায় ।

কুরাইশ গোত্রের লোকেরা সেই সময় আরব দেশ গুলোতে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। তবে এযাবৎ সবথেকে বেশি ইতিহাসে চর্চিত যে মহামানবকে নিয়ে সবথেকে বেশি আলোচনা হয়েছে তিনি হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ।

একদিকে মুহাম্মদকে নিয়ে যেমন আলোচনা ও পর্যালোচনা যেমন হয়েছে, তেমন আবার মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী নিয়ে সবথেকে বেশি জীবনী গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে।

হযরত মুহাম্মদের জন্ম সাল ও জন্ম তারিখ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম তারিখ নিয়ে মতবিরোধ আছে তাই হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নির্দিষ্টভাবে প্রকৃত জন্মতারিখ কেউই বলতে পারেন না। তবে বিখ্যাত ইসলামি গবেষক মন্টগোমারি ওয়াট তার গ্রন্থমালায় হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম বৃত্তান্ত উল্লেখ করে বলেছেন-

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট আরবি, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া হযরত মুহাম্মদ হাদিস কিংবা কুরানে নিজের জন্ম তারিখ ও সাল নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তাই মুহাম্মদের প্রকৃত জন্মতারিখ নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।

তাই মুহাম্মদের জন্ম তারিখ নিয়ে মুসলিম স্কলারের মধ্যে মতবিরোধ রয়েই গেছে। বিশিষ্ট মুসলিম স্কলার সাইয়েদ সুলাইমান নদভী, সালমান মনসুরপুরী এবং মহম্মদ পাশা ফালাকির গবেষণার তথ্য অনুসারে,

হযরত মুহাম্মদের জন্ম সাল ও জন্মতারিখ হিসাবে তারা ৫৭১ সালের ২৬ শে এপ্রিল, আরবি রবিউল আউয়াল মাসের ০৯ তারিখ উল্লেখ করেছেন। এর উল্লেখ্য প্রমাণ হিসাবে তারা হযরত মুহাম্মদের জন্মের বছরে ঘটে যাওয়া

হস্তী যুদ্ধের ঘটনা এবং তার আরো একটি দৃঢ় প্রমান হিসাবে পারস্যের সম্রাট খসরু আনুশেরওয়ানের সিংহাসন লাভের ৪০ বছর পূর্তি হওয়ার ঘটনার দলিল দিয়েছেন।

হযরত মুহাম্মদের শৈশব ও ছেলেবেলা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মদের বাবা "আব্দুল্লাহ” হযরত মুহাম্মদের জন্মের ০৬ মাস পূর্বে মারা যান। পিতার অবর্তমানে পিতামহ (ঠাকুরদা) "আব্দুল মুত্তালিব” এর তত্বাবধানে মা "আমিনার" কোলে হযরত মুহাম্মদের জন্ম হয়।

মা আমিনা ছেলের আদর করে নাম রাখেন আহমাদ এবং ঠাকুরদা আব্দুল মুত্তালিব ভালোবেসে নাতির নাম রাখেন মুহাম্মদ। কিন্তু দুঃখের বিষয় মুহাম্মদের যখন শৈশবকাল, মুহাম্মদের যখন ০৮ বছর ০২ মাস বয়স তখন তার ঠাকুরদা আব্দুল মুত্তালিব মারা যান।

তারপর অভিভাবক হিসাবে শিশু মুহাম্মদের দেখভালের দায়িত্ব নেন তার কাকা "আবু তালিব"(চাচা)। তখনকার দিনে আরবদেশের প্রথানুযায়ী হযরত মুহাম্মদ শিশু অবস্থায় মায়ের আঁচলে বড় না হয়ে দায়মা (ধাত্রী) হালিমার কাছে বড় লালিত পালিত হন।

আরবদেশের রীতিনুযায়ী সন্তান জন্ম হওয়ার পর শিশুর ০৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু সন্তানটিকে দায়মা এর তত্বাবধানে বড় হতে হত । এখানেও হযরত মুহাম্মদ সাঃ কেও ০৬ বছর বয়স অবধি ধাত্রী মায়ের কাছে বড় হতে হয়েছে।

তবে শিশু সন্তানটিকে ধাত্রী মায়ের কাছে তুলে দেওয়ার আগে অবশ্যই ধাত্রী মায়ের স্বভাব-চরিত্র, বংশ মর্যাদা আদি বিচার করা হত। হযরত মুহাম্মদ কুরাইশ বংশের মত উচ্চ বংশ মর্যাদায় জন্ম গ্রহণ করায়, হযরত মুহাম্মদের তত্বাবধানের জন্যে বিশুদ্ধ আরবীভাষী,

সুদাম শারীরিক গঠন, সুস্থ-সবল দেহ সম্পন্ন একজন ধাত্রীমা হিসাবে, “বনি সা'দ" গোত্রের "হালিমা আস-সাদিয়া" নামের ধাত্রী মায়ের কাছে হযরত মুহাম্মদের লালন পালনের দায় ভার দেওয়া হয়।

আরব দেশের প্রথানুযায়ী এইভাবে ০৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা তার আপন মায়ের পরিবর্তে ধাত্রী মায়ের তত্বাবধানে বড় হওয়ায় পর, পুনঃরায় শিশু সন্তানটিকে তার আপন মায়ের কাছে ফেরত দেওয়া হত।

এখানে হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার ধাত্রী মা হালিমার কাছে ০৬ বছর লালিত পালিত হয়ে পুনরায় আপন মা আমিনার কাছে ফিরে এসেছিল। তবে হযরত মুহাম্মদ সাঃ ধাত্রী মা হালিমা আস- সাদিয়ার তত্বাবধানে বড় হওয়ার সময় মুহাম্মদকে ঘিরে বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।

যেমন- শিশু হযরত মুহাম্মদ ধাত্রী হালিমার শুধু একটা স্তনের দুধ পান করত। বাকি আর একটি স্তনের দুধ হালিমার নিজের দুই-ছেলেদের খাওয়ানোর জন্যে ছেড়ে দিত। এখানে হযরত মুহাম্মদ শুধু একটা স্তনের দুধ পান করলেও তার বাকি দুই ছেলের জন্যে কোনোদিন হালিমার স্তনের দুধের ঘাটতি হয়নি।

হযরত মুহাম্মদের লালন পালনের দায়িত্বভার নেওয়ার পূর্বে হালিমার সংসার দারিদ্রতার মধ্যে দিয়েই চলত। কিন্ত হযরত মুহাম্মদের লালন পালনের দায়িত্বভার নেওয়ার পর হালিমার সংসারের যাবতীয় অভাব অনটন দূর হয়ে যায়।

হালিমার পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এলে ০২ বছর হযরত মুহাম্মদকে লালন পালন করার পর হালিমা পুনঃরায় মা আমিনার কাছে ফেরত দিয়ে আসেন। হালিমা,মা আমিনার কাছে হযরত মুহাম্মদকে ফিরিয়ে দিতেই মক্কার বুকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে।

সেই বছরই মক্কায় মক্কায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারী শুরু হয়। এরপর হযরত মুহাম্মদকে পুনঃরায় ধাত্রী মা হালিমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয়। এখানে মুহাম্মদের ধাত্রী হালিমাও চাইছিলেন হযরত মুহাম্মদ তার কাছে পুনঃরায় ফিরে আসুক।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী

যাইহোক মুহাম্মদের ফিরে আসাতে হালিমার মনের আশা পূরণ হয়। ইসলামি বিশ্বাসমতে মুহাম্মদ হালিমার কাছে ফিরে আসার কয়েকদিন পর এক আশ্চর্য্যজনক ঘটনা ঘটে- জিব্রাইল এবং মিকাইল নামের দুজন ফেরেশতা (ঈশ্বরের দূত)

একদিন রাত্রিবেলা শিশু নবির পেট চিরে কলিজার একটি অংশ বের করে জমজমের পানিতে (জল) ধুয়ে পুনরায় যথাস্থানে প্রতিস্থাপন করেন। ইসলামের ইতিহাসে এই ঘটনাটি বক্ষ বিদারণের ঘটনা নামে খ্যাত।

এই ঘটনার পর মুহাম্মদের ০৬ বছর পূর্ণ হতেই হালিমা হযরত মুহাম্মদকে মা আমিনার কাছে ফিরিয়ে দেন। শিশু হযরত মুহাম্মদ আমিনার কাছে ফিরে এলে তিনি ঠিক করেন মুহাম্মদকে নিয়ে স্বামীর কবর জিয়ারত করার উদ্দেশে মদিনায় যাত্রা করবেন।

এরপর মা আমিনা শিশু মুহাম্মদ, শ্বশুর মশায় আব্দুল মুত্তালব এবং সহচরী উম্মে আয়মানকে সাথে নিয়ে প্রায় ৫০০ কিমি রাস্তা পাড়ি দিয়ে মক্কা থেকে মদিনায় পৌঁছান। স্বামীর কবর জিয়ারত করার পর তারা মদিনায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে একমাস যাবৎ সময় কাটান।

দুঃভাগ্যবশত পুনঃরায় মদিনা থেকে মক্কা আসার সময় “আবওয়া নামের একটি জায়গায় মাঝ পথে মুহাম্মদের মা আমিনার শরীর গুরুতর অসুস্থ হয়ে যায় এবং তিনি সেখানেই মারা যান।”

মায়ের মৃত্যুর পর হজরত মুহামদ্দের পিতামহ আব্দুল মুত্তালিব বালক মুহাম্মদকে মদিনা থেকে মক্কায় নিয়ে আসেন। এইভাবে কিছুদিন ঠাকুরদার কাছে মানুষ হওয়ার পর, হযরত মুহাম্মদের পিতামহ আব্দুল মুত্তালিব মারা যান এবং হজরত মুহাম্মদের অভিভাবকের দায়িত্ব নেয় তার কাকা আবু তালিব।

অবশ্যই পড়ুন : শবে বরাত কি ? শবে বরাত কেন পালন করা হয়

হযরত মুহাম্মদের শৈশব ও কর্ম জীবন

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখতে পাওয়া যায় মুহাম্মদ ছিলেন নিরক্ষর, তিনি লেখাপড়া জানতেন না। তরুণ বয়সে তার কোনো পেশা ছিলনা, তিনি ছিলেন একজন রাখাল বালক ।

জীবিকা বলতে তিনি মক্কার বিভিন্ন বিশিষ্ট বংশের লোকেদের (বনু সাদ গোত্রের) বকরি (ছাগল/দুম্মা/ভেড়া/আদি) চরাতেন। পারিশ্রমিক হিসাবে কয়েক কিরাত (সেই সময়কার আরব দেশীয় মুদ্রার বিশেষ ভগ্নাংশ হল ০১ কিরাত) উপার্জন করতেন।

কাকা আবুতালিব একজন ব্যবসায়ী ছিলেন তাই তাকে ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে হত। একবার তার কাকা ব্যবসায়িক কাজে পণ্য নিয়ে সিরিয়া যাচ্ছিলেন, তখন মুহাম্মদ তার কাকার সাথে সিরিয়া যাওয়ার বায়না করেন।

মুহাম্মদের বয়সে কম হওয়ায় (১২ বছর বয়স) তিনি প্রথমে মুহাম্মদকে সিরিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্যে মানা করে দেন। কিন্ত মুহাম্মদের প্রতি স্নেহ বসত কাকা আবু তালিব তাকে সঙ্গে করে সিরিয়ায় নিয়ে যায়।

মক্কা থেকে সিরিয়ার যাত্রাপথ অতি দীর্ঘ্য হওয়ায় মাঝপথে বুশরা বলে একটি জায়গায় আবু তালিব ও তার দলবল তাবু ফেলেন। বুশরা ছিল তখনকার আরাবিয়া পেট্রাইয়ার রাজধানী। বুশরা শহরের গির্জায় খ্রিস্টান পাদ্রি ছিলেন জারজিস নামের একজন ব্যক্তি।

তবে তিনি লোকজনের কাছে বুহাইরা বা বহিরা নামেই অধিক প্রচলিত ছিলেন। গির্জার বাইরে আরবদেশীয় (মক্কা) বণিকদের তাবু গাড়তে দেখে পাদ্রি জারজিস সাহেব আরবীয় বণিকদের আপ্যায়ন করার জন্যে এগিয়ে আসেন।

সেখানে তিনি বালক মুহাম্মদকে দেখে শেষ নবি বলে চিহ্নিত করেন। শৈশবে শিশু হযরত মুহাম্মদ অত্যন্ত কোমল স্বভাবের ছিলেন। চারিত্রিক দিক দিয়ে তিনি সদাচার এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।

সর্বদা তিনি সত্য কথা বলতেন, তার সত্যবাদিতার কারণে তাকে "আল-আমীন" (বিশ্বাসী) বলে ডাকা হত। তৎকালীন আরবদের বিদ্যমান অন্যায়-অনাচার, খেয়ানত প্রবণতা, অন্তঃকলহ, প্রতিশোধ প্রবণতা এগুলো ছোট্ট মুহাম্মদের মনকে পীড়িত করত।

হযরত মুহাম্মদের যখন মাত্র ১৫ বছর বয়স, তখন মক্কায় ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে “হিলফুল ফুজুল” সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তাতে যোগদান করেন এবং তার নের্তৃত্বে "হিলফুল ফুজুল" সংগঠনের মাধ্যমে মক্কায় সাধারণ মানুষের মনে ন্যায় সংগতি ধারণা বৃদ্ধি পায়।

ফিজারের যুদ্ধের সময় তিনি পরোক্ষভাবে অংশ নেন। স্বল্প বয়সী হওয়ায় তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও পরোক্ষভাবে নিজেদের লোকদের (সৈনিকদের) অস্ত্রসস্ত্র সরবরাহ করেন। এই যুদ্ধের নির্মমতায় তার মন কেঁদে উঠলেও, তিনি সেইসময় যুদ্ধ রদ করতে পারেননি।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ কৈশর অবস্থায় নিরক্ষর ছিলেন ঠিকই কিন্ত তিনি আরবীয় বণিক সমাজে নিজেকে একজন সু-প্রসৃদ্ধ বণিক হিসাবে বণিক সমাজে নিজের ছাপ ফেলতে সমর্থ হয়েছিলেন।

সময়ের সাথে সাথে তিনি রাখাল জীবন ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে সৎ ও একনিষ্ঠ বণিক হিসাবে বণিক সমাজে খ্যাতি লাভ করেন। হযরত মুহাম্মদ ব্যবসায়িক পণ্য কেনাবেচার কাজে বুশরা, সিরিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনে প্রভৃতি জায়গায় বহুবার সফর করেন।

মুহাম্মদের ব্যবসায়িক সফলতার কাহিনী যত্র, তত্র, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তার ব্যবসায়িক দক্ষতা দেখে তৎকালীন আরবদেশের খুওয়ালিদ ইবনে আসাদের কন্যা খাদিজা বিনতে খুওয়ালিদ আরব সমাজে নিজ কর্ম দক্ষতায় নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত মহিলা বণিক হিসাবে পরিচিতি দায়ের করেছিলেন।

মুহাম্মদের সৎভাবাপন্ন বাণিজ্যিক দক্ষতার কথা শুনে খাদিজা মুহাম্মদকে তাঁর ব্যবসার কাজে সঙ্গী হয়ে একসাথে বাণিজ্য করার প্রস্তাব দেন। মুহাম্মদ খাদিজার প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং নিজের পণ্যের সাথে সাথে খাদিজার পণ্য সামগ্রী সিরিয়া ও বুশরার মত প্রদেশ গুলোতে রপ্তানি করেন।

হযরত মুহাম্মদের বিবাহ ও সংসার জীবন

খাদিজা মুহাম্মদের সততা এবং ন্যায়পরায়ণতায় প্রথম থেকেই অভিভুত ছিলেন। এছাড়া মুহাম্মদের ব্যবসায়িক কাজকর্মের দক্ষতা দেখে তিনি বুঝতে পারেন মুহাম্মদ হলেন একজন যোগ্য ব্যক্তি। তাই তিনি বান্ধবী নাফিসা বিনতে মুনব্বিহরের দ্বারা মুহাম্মদকে বিয়ে করার জন্যে প্রস্তাব দিয়ে পাঠান।

নাফিসার কাছে খাদিজার সাথে মুহাম্মদের বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে মুহাম্মদ নাফিসাকে তার কাকাদের (চাচাদের) সাথে কথা বলে বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান। এরপর মুহাম্মদ কাকা আবু তালিবের কাছে বিয়ের সম্মতি পেয়ে খাদিজাকে বিয়ে করার সম্মতি দেন।

বিয়ের সময় হযরত মুহাম্মদ খাদিজার থেকে বয়সে ১৫ বছরের ছোট ছিলেন। বিয়ের সময় হযরত মুহাম্মদ এর বয়স ছিল ২৫ বছর এবং খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর। খাদিজাকে বিয়ে করার পর মুহাম্মদ ও খাদিজার ০৬ জন (০৪ জন মেয়ে এবং ০২ জন ছেলে) সন্তান খাদিজার গর্ভে জন্ম নেয়।

হযরত মুহাম্মদ ও খাদিজার ০৬ জন সন্তান হল- কাসিম, জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা এবং আব্দুল্লাহ। এখানে পীড়ার বিষয় হল মুহাম্মদের ০২ ছেলে শৈশবেই মারা যায়।

বাকি ০৪ জন বাবার কাছ থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন কিন্ত দুঃর্ভাগ্যের বিষয় এখানে শুধুমাত্র ফাতিমা ছাড়া হযরত মুহাম্মদের জীবদ্দশায় বাকি ০৩ জন মেয়ে ইসলামি যুগেই মারা যায়।

মুহাম্মদের বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কাবা গৃহের পুনঃনির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। অতীতের ভারে কাবা গৃহের ভগ্নপ্রায় দশা হয়ে গেলে পুরোনো কাবা গৃহের ইমারত ভেঙে নতুন করে কাবা গৃহের নির্মাণকার্য শুরু হয়।

কাবা গৃহ যখন পুনঃনির্মাণের কাজ চলছিল তখন হাজারে আসওয়াদ ( কাবা গৃহের দক্ষিণ পূর্ব দেওয়ালে লাগানো একটি কালো পাথর। মুসলমানদের বিশ্বাস কাবা গৃহের দেয়ালে লাগানো কালো পাথরটি আদম ও হাওয়ার সঙ্গে পৃথিবীতে এসেছিল অথাৎ তখন থেকে আজ অবধি পৃথিবীতে কালো পাথরটি বিরাজমান আছে )

কালো পাথরটিকে কাবা গৃহের দেওয়ালে কোন গৌত্রের লোকেরা স্থাপন করবে অথাৎ আরবের তৎকালীন মাত্তবরদের কোন বংশের লোকেরা কাবা গৃহের দেওয়ালে কালো পাথরটিকে স্থাপন করবে বলে নিজেদের মধ্যে কলহ বিবাদ শুরু হয়।

সবাই নিজের নিজের বংশ মর্যাদা ও ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে নিজেদের মত করে পাথরটিকে কাবার দেওয়ালে স্থাপন করতে চায়ছিল। আর তাই নিয়ে মক্কার লোকেদের মধ্যে মারামারি ও খুনোখুনি হয়ে যাওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী

সেইসময় মক্কার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি আবু উমাইয়া মাখজুমি একটি পরামর্শ দেন যে, পরের দিন সকালবেলা মসজিদুল হারামের দরজা দিয়ে যে ব্যক্তি প্রথম প্রবেশ করবে তারই সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত মেনে কাবা গৃহে কালো পাথর স্থাপন করা হবে।

পরের দিন সকাল বেলা ঘটনাক্রমে মুহাম্মদই মসজিদুল হারামের দরজা দিয়ে প্রথম প্রবেশ করেন। এতে সকলেই সন্তস্ট হন এবং মুহাম্মদকেই বিচারক বলে সবাই মেনে নেয়। সকল গৌত্রের সমানতা বজায় রাখার জন্যে এখানে নবী মুহাম্মদ অতি উত্তম একটি পন্থা অবলম্বন করেন।

তিনি একটি বড় চাদরের উপর হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) কে রেখে সকল সম্প্রদায়ের মানুষদের চাদরের বিভিন্ন কিনারা ধরে পাথরটিকে কাবা গৃহে তুলে আনার জন্যে বলেন। এতে সবাই খুব খুশি হয় এবং চাদরের কিনারা ধরে কালো পাথরটিকে কাবা গৃহে তুলে আনেন।

এরপর মুহাম্মদ নিজের হাতে করে পাথরটিকে কাবা গৃহের দেওয়ালের নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করেন। এইভাবে তিনি সেই সময় মক্কার মানুষের মধ্যে জাতি দ্বন্দ্বের জোরে হতে বসা খন্ড যুদ্ধকে টলিয়ে দেন।

অবশ্যই পড়ুন : রমজান কি ? রমজান কেন পালন করা হয়।

হযরত মুহাম্মদের নবুয়ত প্রাপ্তি

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী সম্বন্ধিত গ্রন্থ গুলো থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা থেকে জানতে পারা যায় মুহাম্মদের যখন ৪০ বছর বয়স তখন তাঁর নবুয়ত প্রপ্তি ঘটে। মুহাম্মদ সব সময় মক্কার মানুষদের মধ্যে থেকে

ঈর্ষা ও মারামারি দূর করে সামন্জ্ঞস্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন। মুহাম্মদের যখন ৩০ বছর বয়স তখন তিনি বেশিরভাগ সময় ধ্যান করার জন্যে ঘর ছেড়ে মক্কা শহরের কাছে হেরা/হীরা = নামের একটি গুহায় ধ্যান মগ্ন হওয়ার জন্য চলে যেতেন।

ধ্যান মগ্ন অবস্থায় কখনো কখনো তিনি নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতেন এবং স্ত্রী খাদিজা হেরা গুহায় গিয়ে হযরত মুহাম্মদকে খাবার পৌঁছে দিতেন। প্রতিদিনের মত হযরত মুহাম্মদ একদিন হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন ছিলেন।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী

তখন তিনি হঠ্যাৎ করে ওহী (দৈববাণী) শুনতে পান। গুহার মধ্যে থেকে হঠাৎ করে ওহী (দৈববাণী) শুনে মুহাম্মদ ভয়ভীত হয়ে যায়। এরপর ফেরেশতা জিব্রাইল (আল্লার প্রেরিত দূত) মুহাম্মদকে দর্শন দিয়ে বলেন-

আল্লাহতালা দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে মুহাম্মদকে নবী (পয়গম্বর) হিসাবে চয়ন করেছে বলে মুহাম্মদকে জানান। তারপর আল্লার ফেরেশতা জিব্রাইল মুহাম্মদকে আল্লাহ প্রেরিত সেই ওহী আরবিতে পাঠ করার জন্যে বলেন। আরবি ভাষার ওহীর বাংলায় লিখিত রূপ ছিল কিছুটা এরকম-

"পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তার নাম, যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে, জমাট রক্তপিন্ড থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা হলেন পরম দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। "

মুহাম্মদ তখন জিব্রাইলের কাছে নিজেকে নিরক্ষর বলে দাবি করেন এবং সে পড়ালেখা জানেনা বলে জানান। এরপর জিব্রাইল মুহাম্মদকে বুকে জড়িয়ে ধরে চাপ দেয় এবং মুহাম্মদকে পুনঃরায় সেই ওহী (দৈববাণী) পড়ার জন্যে বলেন।

মুহাম্মদ তখন পুনঃরায় তার অপারগতার কথা জিব্রাইলকে বলেন। জিব্রাইল তখন মুহাম্মদকে জড়িয়ে ধরে তিনবার চাপ দেয়। এরপর মুহাম্মদ ওহীর পঙতিটি পড়তে সমর্থ হন। ইসলামী মতে হযরত মুহাম্মদের পড়া এই ওহীর পঙতি হল কুরানের প্রথম আয়াত (অনুচ্ছেদ) / সূরা এলাককের প্রথম পাঁচ আয়াত।

আল্লার প্রেরিত ফেরেশতা দ্বারা ওহী লাভ করার পর হযরত মুহাম্মদ ঘরে ফিরে আসে এবং শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করে। হযরত মুহাম্মদের প্রচন্ড জ্বর আসে ও তার শরীর কাঁপতে থাকলে তিনি স্ত্রী খাদিজাকে কম্বল চেপে তাকে জড়িয়ে ধরার জন্য বলেন।

এরপর মুহাম্মদ সুস্থ হলে খাদিজাকে ওহী প্রাপ্তি এবং আল্লাহতালা দ্বারা তাকে নবী বলে চয়ন করার ঘটনা খুলে বলেন। স্ত্রী খাদিজা হযরত মুহাম্মদের সকল কথা বিশ্বাস করেন এবং তাকে নবী হিসাবে মেনে নেন।

নবীর ভয় দূর করার জন্যে খাদিজা তার চাচাতো ভাই (কাকার ছেলে) ওয়ারাকা ইবনে নওফলের কাছে নিয়ে যান এবং তিনি মুহাম্মদকে শেষ নবী বলে আখ্যায়িত করে। এরপর মুহাম্মদ ধীরে ধীরে নিজেকে নবী বলে আত্মস্থ করেন।

এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মুহাম্মদ আল্লার থেকে পরবর্তী প্রত্যাদেশ পাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন। বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর গুহায় ধ্যান করার সময় মুহাম্মদ দ্বিতীয়বার স্রষ্টার বাণী শুনতে পান। ইসলামী মতে আল্লাহ থেকে পাওয়া দ্বিতীয় প্রত্যাদেশ হল সূরা মুদ্দাসিরের কয়েকটি আয়াত।

এরপর থেকে হজরত মুহাম্মদ সাঃ নিজেকে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োগ করেন। তবে শুরুর দিকে তিনি প্রকাশ্যে এসে ইসলাম প্রচার করেননি। শুরুর তিন বছর মক্কার বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের পরিচিত মানুষজনের মধ্যে গোপনে তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচার করেন।

হযরত মুহাম্মদের ইসলাম ধর্ম প্রচার

আল্লার দ্বারা পয়গম্বর হিসাবে চয়ন হওয়ার পর মুহাম্মদ নিজেকে ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োগ করেন। তবে শুরুর দিকে ইসলাম প্রচারের কাজ মোটেই সহজ ছিলনা। ইসলাম ধর্মের প্রচারের জন্যে মুহাম্মদকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন সময়ে সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছে অপদস্ত হতে হয়েছে।

গোপনে ইসলাম ধর্ম প্রচার

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী আলোচনা ও পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই পঙতিতে আমরা হজরত মুহাম্মদের ইসলাম ধর্মের প্রচারের ইতিহাস গুলো জানব। ধ্যানের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ আল্লার থেকে প্রত্যাদেশ পাওয়ার পর

মুহাম্মদ ইসলামের প্রচার করতে গিয়ে ভালোভাবেই বুজতে পারেন যে, শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা মানে পুরো আরব দেশের সমাজের মানুষের সামনে নিজেকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করা।

তবে এটাও ঠিক আরবের তৎকালীন কলুষিত সমাজ ব্যবস্থার ভীত ধ্বংস না করে ইসলাম ধর্মের প্রচার বা প্রতিষ্ঠা কোনোটাই সম্ভব ছিল না। তাই নবী ঠিক করলেন শুরুতে তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের প্রচার না করে গোপনে নিজের প্রিয়জনদের কাছে ইসলামের আদর্শ তুলে ধরবেন।

মুহাম্মদ শুরুর দিকে নিজের আত্মীয় স্বজন ভাই বন্ধুদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার করা শুরু করেন। মুহাম্মদের আহ্বানে সর্বপ্রথম নবীর স্ত্রী খাদিজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর হযরত মুহাম্মদ ইসলাম প্রচারের লক্ষে নিজেদের আত্মীয়দের নিয়ে একটি সভা করেন।

সেই সভায় কোনো আত্মীয়ই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে চায়নি। হযরত মুহাম্মদের ইসলামের আদর্শ তারা কেউই মেনে নেয়নি। তারা সবাই একবাক্যে ইসলাম ধর্ম কবুল না করার জন্যে মানা করে দেয়।

এই ধর্মীয় সভাতে শুধুমাত্র ১০ বছরের আলী নামের একজন কিশোর হযরত মুহাম্মদের ডাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার জন্যে এগিয়ে আসে। আলী হলেন ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি, হযরত মুহাম্মদের চাচাইত ভাই (কাকার ছেলে) ছিলেন।

এরপর হযরত মুহাম্মদের অন্তরঙ্গ বন্ধু আবু বকর ছিলেন তৃতীয় ব্যক্তি যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এইভাবে হযরত মুহাম্মদ শুরুর দিকে ইসলাম ধর্ম নিজেদের পরিচিত আত্মীয় স্বজনদের কাছে প্রচার করে মক্কায় ইসলাম ধর্মের ভিত স্থাপন করেন।

প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচার

শুরুর দিকে হযরত মুহাম্মদ গোপনে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করলে পরে অবশ্য তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের প্রচার করা শুরু করেন। হযরত মুহাম্মদের জীবনী অধ্যয়ন করলে আপনাদের কাছে মুহাম্মদের প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের ধরণ কিছুটা নাটকীয় ও হাস্যময় বলে মনে হবে।

হযরত মুহাম্মদ প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে সবার প্রথমে মক্কার সাফা পর্বতের (উঁচু টিবির মত একটি জায়গা) উপর চেপে, জোরে জোরে চিৎকার করে সকলকে একত্রিত হওয়ার জন্যে বলেন।

তারপর পাহাড়ের উপর থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকেন " আমি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই। "মুহাম্মদের এই ধরনের আচরণ দেখে সকলে বেশ ক্ষুব্ধ হন।

বেশিরভাগ মক্কাবাসী মুহাম্মদকে অবজ্ঞা করে সেখান থেকে চলে যায়। তবে তার মধ্যে কেউ কেউ আবার হযরত মুহাম্মদকে অনুসরণ করেন। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ছিল বিদেশী এবং সংখালঘু ছিল।

আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ এমন ছিল যারা তাদের বংশ থেকে স্থান চুত্য হয়েছে। সেই সমস্ত দুর্বল ব্যক্তিরা যারা নিরাপত্তা হীনতার কারনে ভুক্তভোগী ছিলেন তারাই তখন ইসলাম কবুল করেছিলেন।

অবশ্যই পড়ুন : ঈদুল-ফিতর-কি, ঈদুল-ফিতর-কেন পালন করা হয়।

মক্কায় মুহাম্মদের বিরোধিতার সম্মুখীন

মুহাম্মদ সাহেবকে প্রকাশ্যে ধর্ম প্রচার করার সময় বেশ কিছু দুর্বিধার মধ্যে পড়তে হয়। হযরত মুহাম্মদের যারা বিরুদ্ধবাদী ছিলেন তারা ভেতরে এবং বাইরে দুই দিক থেকেই মুহাম্মদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা শুরু করেন।

তারা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক প্রচার করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে, হযরত মুহাম্মদকে নিয়ে অপপ্রচার চালান। তাতে কাজ না হলে হযরত মুহাম্মদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে অপপ্রচার চালানোর জন্যে এবং ইসলাম ধর্মের প্রচারকে দুর্বল করার লক্ষে

মক্কার বিশেষ গৌত্রের লোকেদের দ্বারা একটি নাট্যদল (অপপ্রচার গোষ্ঠী) তৈরী করা হয়। এই নাট্যদলের কাজ ছিল বিভিন্ন মনোরঞ্জন সাহিত্য ও গান বাজনা করে মুহাম্মদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মুহাম্মদকে হেয় করা।

পরে অবশ্য মুহাম্মদের সাথে কুরাইশ গোত্রের লোকেরা আপোষ করতে চাইলে মুহাম্মদ বহু ঈশ্বরবাদী মূর্তি পূজার ধর্মকে অস্বীকার করেন এবং তিনি আল্লাহ এক এবং নিরাকার এই সিদ্ধান্তে অটল থেকে দৃঢ়তার সাথে ইসলাম ধর্মের প্রচারে মননিবেশ করেন।

মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও বনু হাসিম গোত্রদের নির্বাসন

এতক্ষনে আপনারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী পড়ে অন্তত বুঝে গেছেন মক্কায় মুহাম্মদের ইসলাম ধর্ম প্রচারের কাজ একেবারে নিতান্ত সহজ কাজ ছিলনা, যার জন্যে তাকে অনেক বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

কিন্ত সময়ের ব্যবধানে কিছু সময় পরে মক্কার বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ হযরত মুহাম্মদের ইসলাম প্রচারের কাজকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল। মক্কার বিশিষ্ট গন্যমান্য ব্যক্তিদের তালিকায় হযরত মুহাম্মদের চাচা (কাকা) হামজা ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

মুহাম্মদ সর্বদা চাইতেন তাদের প্রিয়জনের মধ্যে তার চাচা হামজা এবং চাচার বন্ধু উমর ও আবুজাহল এই দুইজনের মধ্যে কেউ অন্তত একজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুক। মুহাম্মদের সেই স্বপ্ন পরে অবশ্য সফল হয়।

ছেলেবেলা থেকেই চাচা হামজা হযরত মুহাম্মদকে খুব পছন্দ করতেন এবং মুহাম্মদকে সন্তান সমতুল্য স্নেহ করতেন। একবার আবু জাহল নামের এক ব্যক্তি কাবা গৃহের ময়দানে হযরত মুহাম্মদকে কঠোর ভাষায় অপমান করে বিরূপ শব্দের প্রয়োগ করেন।

এই ঘটনার বিবরণ হামজা জানতে পেরে আবু জাহলকে মারধর করেন এবং তিনি মুহাম্মদের সমর্থনে, হযরত মুহাম্মদের প্রচারিত ধর্ম ইসলাম কবুল করেন। মুহাম্মদের চাচা হামজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মুসলিম আধিপত্য অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়।

এর পরে পরেই চাচা হামজার সঙ্গী হিসাবে তার অনুগামী কুরাইশ বংশের প্রতিপত্তিবান ব্যক্তি উমর ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। উমরের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতেই মুহাম্মদের ইসলাম ধর্মের প্রচারের কাজ অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায় এবং মক্কার বিভিন্ন স্থানে

ইসলামের প্রচারে মুহাম্মদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। হযরত মুহাম্মদ সহ মুসলিমগণ উমরের কাছ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা দানের আশ্বাস পেয়ে মুহাম্মদ সহ তার অনুগামীরা প্রকাশ্যে কাবা প্রাঙ্গনে এসে আল্লার উপাসনা করা শুরু করেন।

এইভাবে ধীর গতিতে মুহাম্মদ যখন একটু একটু করে মক্কায় ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটাচ্ছিলেন তখনই মুহাম্মদের সামনে নতুন বিপদ সামনে এসে দাঁড়ায়। মক্কার প্রতিপত্তবান কুরাইশ বংশের লোকেরা ইসলাম ধর্মী বনু হাশিম গোত্রের লোকেদের গৃহবন্দী করেন এবং সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়।

হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী ও প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনীতে দেখতে পাওয়া টানা ০৩ বছর সমাজচুত্য গৃহবন্দী জীবন যাপন করার পর মুহাম্মদ পুনঃরায় ধর্ম প্রচারের জন্যে এগিয়ে আসেন। তবে এরপরেই হযরত মুহাম্মদের পরিবারে দুঃখের ছায়া নেমে আসে।

খুব অল্পসময়ের ব্যবধানে হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা এবং চাচা আবু তালিব মারা যান। এরপর মুহাম্মদ শারীরিক এবং মানসিক দুই দিক দিয়েই হতাশ হয়ে ভেঙে পড়েন।

( স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুর পর বিভিন্ন আদর্শিক প্রয়োজনে নারী সমাজের বিভিন্ন উপকারের জন্যে এবং আরব সমাজের কুসংস্কার ও অযৌতিক প্রথা দূর করার লক্ষে হযরত মুহাম্মদ সর্বমোট ১১ টি বিয়ে করেছিলেন )

এরপর হযরত মুহাম্মদ হতাশ হয়ে মক্কার পরিবর্তে ইসলাম প্রচারের জন্যে তায়েফ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্ত তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে মুআহম্মদকে প্রচুর হেনস্থার স্বীকার হতে হয়।

সেখানে হযরত মুহাম্মদকে প্রচন্ড অপমান, ক্রোধ ও উপহাসের স্বীকার হতে হয়। তায়েফের মাতব্বররা হযরত মুহাম্মদের পিছনে বাচ্চা শিশুদের লেলিয়ে দেয়। এরপর তায়েফের লোকজন সহ তরুনরা মুহাম্মদকে পাথর ও ইঁট ছুড়ে মেরে মুহাম্মদের মাথা ফাটিয়ে রক্ত বের করে দেয়।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনে এতো কিছু হওয়া সত্ত্বেও এখানেই তিনি হাত গুটিয়ে বসে পড়েননি বরং সেখানে তিনি ইসলাম কিভাবে প্রচার করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা করতে থাকেন।

মুহাম্মদের বুরাক আহরণ ও বেহশত ও দোজখ যাত্রা

ইসলামি ইতিহাসে মুহাম্মদের বুরাক এর উপর বসে বেহেশত ও দোজখ এর যাত্রা একটি অলৌকিক ঘটনা। মুহাম্মদ একরাতে মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় ভ্রমণ করেন।

ইসলামের ইতিহাসে এই ঘটনা ইসরা নামেই পরিচিত। হাদিসে এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে মসজিদুল আকসা থেকে তিনি বুরাক (একটি দিব্য /ঐশ্বরিক ঘোড়া যে শুন্যে সেকেন্ডের মধ্যে মাইলের পর মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে )

এর উপর চড়ে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে সরাসরি আল্লার কাছে পৌঁছান। সেখানে তিনি মহান আল্লাকে স্ব-চক্ষে দর্শন করেন এবং সেখানে তিনি ইসলামের ভূতপূর্বে আসা ইব্রাহিম, মূসা ও ঈসা নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন

তারপর তিনি বেহেশত (স্বর্গ) এবং দোজখ (নরক) নিজের চোখে পর্যবেক্ষণ করেন। মুসলমানদের কাছে এই ঘটনা মিরাজ নামে পরিচিত। এই সম্পূর্ণ যাত্রাকালে মুহাম্মদ বিন্দুমাত্র সময় পৃথিবীতে অতিবাহিত করেননি।

ইসলামী স্কলার ও বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা যেমন- ইবনে কাসির ও আল-তাবারি প্রমুখের মতে বুরাকের উপর চড়ে মুহাম্মদ স্ব-শরীরে মিরাজ যাত্রার মাধ্যমে বেহেশত ও দোজখের সফর করেছিলেন।

হযরত মুহাম্মদের মদিনায় হিজরত যাত্রা

হযরত মুহাম্মদের ডাকে সারা দিয়ে মক্কার বেশ কিছু মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এখানে মূলত তারা হজ করার জন্যে মক্কায় এসেছিলেন। মক্কায় হজ করতে এসে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার নিমন্ত্রণ পান।

(হজ হল মুসলমানদের একটি ধর্মীয় সামাবেশ যে ধর্মীয় সমাবেশ প্রত্যেক বছর আরব দেশের মক্কা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে মুসলমানদের অংশ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। তবে কোনো ব্যক্তি ক্ষমতা থাকলে নিজে হজ করতে অপারক হলে তিনি অপর কোনো ব্যক্তি দিয়ে হজ করাতে পারেন )

সেখানে আকবা নামের একটি জায়গায় তিনারা হযরত মুহাম্মদের কাছে শপথ গ্রহণ করে। ইসলামী ইতিহাসে এই ঘটনা আকাবার শপথ নামে পরিচিত। এই শপথে সমবেত হওয়া সকলে ইসলাম ও নবী মুহাম্মদকে রক্ষা করার এবং ইসলাম প্রচারের শপথ নেন।

এই শপথের মাধ্যমে মদিনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরপরে কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর মুহাম্মদ মদিনায় আসার আমন্ত্রণ পায়। সেই সময় মদিনার মানুষ বুঝে গেছিল শুধুমাত্র গোষ্ঠী দ্বন্দ ও রক্তক্ষরণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শান্তি বিরাজ করা সম্ভব নয়।

তাই মদিনার ১২ টি গোত্রের নেতারা একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে হযরত মুহাম্মদকে মদিনা আসার জন্যে নিমন্ত্রণ দেন। তারা চাইছিল তাদের এমন একজন নেতা হোক যাকে সবাই শ্রদ্ধা করবে এবং তিনি সবাইকে ঐক্যবন্ধ করে রাখবেন।

এই আমন্ত্রণের প্রতিনিধি দল মদিনা থেকে মক্কায় এসে হিজরত করে পুনঃরায় মদিনা ফিরে যান। তবে এই প্রতিনিধি দলের সকল সদস্য তখন পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করেননি। সবশেষে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ও তার বন্ধু আবু বকর মদিনায় হিজরত করেন।

মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করার সময় নবী মুহাম্মদ ও আবু বকরকে কুরাইশদের দ্বারা হত্যার পরিকল্পনা করা হয় কিন্তু তা সফল হয়নি। যারা মুহাম্মদের সঙ্গে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন তারা মুহাজিরুন নামে পরিচিত।

ইসলামী ইতিহাসে এখানেই মক্কি যুগের অবসান হয় এবং হিজরী যুগের প্রত্যাবর্তন হয়। ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরতের বছর থেকে দিন গণনা শুরু হয় তাই ইসলামী পঞ্জিকায় হিজরী সন গননা করা হয়। তাই হিজরী পঞ্জিকার বর্ষের আগে AH উল্লেখ করা থাকে যার অর্থ হল হিজরী পরবর্তী।

হযরত মুহাম্মদের মাদানী জীবন

একটা সময় মক্কার মানুষদের কাছে নিজ গৌত্র ছেড়ে অন্য গৌত্রের সাথে যোগদান করা ছিল নিন্দনীয় একটা জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সকল গোত্রের মানুষই ছিল সমান। মুসলিমদের কাছে ইসলামের বন্ধনই হল মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধন।

মুহাম্মদ ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে মুসলমান সমাজে, সমাজের গৌত্রীয় ভেদাভেদ ঘুঁচিয়ে সমাজের সব গৌত্রের মানুষকে এক সুতোয় এক ছত্রছায়ায় আনার ফল স্বরূপ আরব সমাজ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক চিন্তা ধারার জন্ম দেয়।

মদিনাকে স্বাধীন দেশ হিসাবে ঘোষণা ও মদিনায় সংবিধান প্রতিষ্ঠা

হযরত মুহাম্মদ মদিনায় গিয়ে মদিনার সকল গৌত্রের লোকেদের নিয়ে একজন মধ্যস্থতাকারী শাসক হিসাবে সু-শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মদিনায় বনু আওস এবং বনু খাজরাজ এই দুই গৌত্রের মানুষের মধ্যে বিবাদ ছিল।

মুহাম্মদ মদীনাবাসী সকল গৌত্রের মানুষদের নিয়ে মদিনা সনদে স্বাক্ষর করেন যা বিশ্বে ইতিহাসের পাতায় সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান হিসাবে পরিচিতি পায়। এই সংবিধানে মুসলিমদের মধ্যে একে অপরের প্রতি ক্রোধ, ঈর্ষা ও রক্তারক্তি নিষিদ্ধ করা হয়।

সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতির গোড়াপত্তন করে সকল গৌত্রের মানুষের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয়। এই সংবিধান প্রণয়ন হওয়ার পরে মদিনার বনু আওস এবং বনু খাজরাজ গৌত্রের মানুষরাও ইসলাম গ্রহণ করেন।

মদীনাবাসী ইহুদিদের মধ্যে, ইহুদিদের মোট ০৮ টি গৌত্র মুহাম্মদ দ্বারা প্রেরিত সংবিধান সনদে স্বাক্ষর করেছিল। সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে মদিনা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুহাম্মদকে মদিনার প্রধান অথাৎ অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।

এরপর মদীনাবাসী সকল মানুষ ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকেন। মদিনায় ইসলাম প্রচারে এবং মুসলিমদের যারা সাহায্য করতো হযরত মুহাম্মদ তাদের আনসার (সাহায্যকারী) বলে সম্বর্ধনা দেন।

মক্কার সাথে বিভিন্ন সময়ে হওয়া ইসলামের কয়েকটি খন্ড লড়াই

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনীতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হল হযরত মুহাম্মদের মক্কা থেকে মদিনায় স্থানান্তর হওয়া। মুহাম্মদ যখন মক্কা থেকে মদিনায় চলে আসে তখন খুব দ্রুত ইসলামের প্রচার হতে থাকে।

মানুষ সহজভাবেই মুহাম্মদের বিচারধারা গুলো মেনে নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকেন। মুহাম্মদের সমর্থনে ইসলাম ধর্মের দ্রুত প্রচার কোনোমতেই আরব দেশের লোকেরা মেনে নিতে পারছিলেন না।

তখন আরবের লোকেরা সিদ্ধান্ত নেয় মুহাম্মদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে মুহাম্মদ ও তার সঙ্গীদের হত্যা করে ইসলাম ও ইসলামের প্রচারে বাঁধা দিয়ে ইসলামকে ভিত থেকে শেষ করে দেবে।

আরবদের মুসলমান বিরোধী এই সমস্ত কার্যকলাপ দেখে মুহাম্মদকেও শেষ পর্যন্ত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ও ইসলাম ধর্মকে বাঁচানোর তাগিদে লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হতে হয়।

বদরের লড়াই

বদরের যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসে সংগঠিত হওয়া প্রথম লড়াই। এই লড়াই ইসলামী ইতিহাসে গজব-এ-বদ্র নামে পরিচিত। বদরের লড়াই মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে বদর নামের একটি পাহাড়ের উপর হয়েছিল।

বদরের পাহাড়ের উপর কুরাইশ ও মুহাম্মদের মধ্যে এই যুদ্ধ হয়েছিল তাই এই যুদ্ধের নাম হয় বদরের যুদ্ধ বা বদরের লড়াই। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ মুসলমানদের একটি গোষ্ঠী বাণিজ্য করার নাম করে অস্ত্র সংগ্রহের কাজ করতে থাকলে মুসলমানরা তাদের বাধা দেয়।

এই ঘটনার ভয়ঙ্কর পরিনাম স্বরূপ কুরাইশদের ১১,০০০ সৈনিক এবং মুহাম্মদের পক্ষ থেকে মাত্র ৩,০০ জন মুসলমানদের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। কিন্তু ইসলামীমতে আল্লার কৃপাদৃষ্টির কারণে এত কম সৈন্য নিয়েও মুহাম্মদ কুরাইশদের বদরের যুদ্ধে গুরুতরভাবে পরাজিত করতে সফল হয়েছিল।

উহুদের লড়াই

উহুদের লড়াই ছিল ইসলামের দ্বিতীয় লড়াই। ৬২৫ সালের ২৩ শে মার্চ মদিনা থেকে উত্তরে ০২ মাইল দূরে একটি পাহাড়ের উপর লড়া হয়। এই লড়াই ইসলামী ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণএকটি লড়াই ।

এই যুদ্ধে শুধুমাত্র ০৭ জন মুসলমানের সঙ্গে ৩,০০০ লস্করের লড়াই হয়। দুই-পক্ষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হযরত মুহাম্মদের চাচা হামজা দুশমনদের অস্ত্রাঘাতে শহীদ হয়ে যায় এবং মুহাম্মদ ও অস্ত্রের আঘাতে যথেষ্ট ঘায়েল হয়।

এতসব হওয়ার পরে শুরুর দিকে মুসলমানরা বিজয়ী হলেও কিছু নীতিগত ত্রুটির কারণে মুসলিমদের পরাজয় ঘটে। তবে এই ঘটনার পর পুনঃরায় আরবেরা মদিনায় হামলা চালানোর দুঃসাহস করে উঠতে পারেনি।

খন্দকের যুদ্ধ

অজাবের লড়াই বা খন্দকের যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসে তৃতীয় লড়াই। এই লড়াইয়ের মাধ্যমে নবীর শত্রুরা হযরত মুহাম্মদকে পুরো পরিকল্পনার সঙ্গে হাতেনাতে দমন করতে চেয়েছিল।

এই লড়াইয়ে শত্রুপক্ষ কুরাইশ গৌত্রের লোকেরা ও ইহুদীরা একত্রে মিলিত হয়ে বিশাল বড়সর সেনাবাহিনী তৈরী করেন। কুরাইশ ও ইহুদিদের সম্মিলিত সেনাবাহিনী নিয়ে কুরাইশ গৌত্রের লোকেরা মদিনা ঘিরে ফেলে।

মদিনা বাসীরা নিজেদের শহরের রক্ষনাবেক্ষনের জন্যে আগেভাগেই শহরের প্রবেশ দ্বার গুলোতে বড় বড় খাল খনন করে রেখেছিল। কুরাইশদের বাধা দেওয়ার জন্যে মুসলমারা খাল খনন করে রেখেছিল তাই মুসলিম ইতিহাসে এই যুদ্ধ খন্দকের লড়াই নামে পরিচিত।

মদীনাবাসী মুসলমানদের খাল খনন করে রাখার এই পরিকল্পনার জন্যে কুরাইশ ও ইহুদিদের মিলিত সেনাবাহিনী মদিনা আক্রমন করার আগে খালে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায়। পরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং প্রচন্ড ঝড় জল হওয়ার কারণে ইহুদীদের সৈন্যদলকে প্রাণ বাঁচাতে পিছু হটতে হয়।

হুদায়বিয়ার সন্ধি

ইসলাম এবং কুরান শরীফে হজ্জের (হজ) প্রয়োজনীয়তা সমন্ধে আবশ্যকীয় বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত এখানে কুরাইশদের সঙ্গে মুসলমানদের বিরোধ হওয়ায় মুসলমানরা মক্কায় গিয়ে হজ জিয়ারত করতে পারছিলেন না।

কিন্ত সেই সময় দিব্য কারণ বশতঃ মুহাম্মদ একদিন স্বপ্নে দেখতে পান তিনি হজ করতে যাওয়ার জন্যে মাথা নেড়া করছেন। এই দিব্য স্বপ্ন দেখার পর মুহাম্মদ ঠিক করেন তিনি হজ করার জন্যে মক্কায় যাবেন।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী

এরপর মুহাম্মদ ও তার দলবল সহ কয়েকজন মুসলমান সঙ্গী নিয়ে হজ করার জন্যে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্ত হযরত মুহাম্মদের মক্কায় হজ করতে আসার খবরের পূর্বসূচনা কুরাইশরা পেয়ে গেলে, মুসলমানদের হজ যাত্রায় তারা বাঁধা দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেন।

মুহাম্মদ পুরো ব্যাপারটা ঘটনাক্রমে জানতে পেরে যান এবং তিনি হুদায়বিয়ার নামক স্থানে তাবু খাটান। হযরত মুহাম্মদ তখন যুদ্ধ এড়ানোর জন্যে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের শান্তি চুক্তি করার জন্যে একজন দূতকে কুরাইশদের শিবিরে পাঠান।

মুহাম্মদের দূত কুরাইশদের শিবিরে গিয়ে হযরত মুহাম্মদের বার্তা পৌঁছে দিয়ে বলেন “মুহাম্মদ কুরাইশদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্যে মক্কায় যাচ্ছেন না। তিনি শুধু হজ করার জন্যে মক্কায় যেতে চান।”

কিন্ত এখানে কুরাইশরা মুহাম্মদের প্রেরিত দূতের সঙ্গে দুব্যবহার করেন এবং পরে শেষ পর্যন্ত কুরাইশরা মুহাম্মদের সঙ্গে সন্ধি করতে রাজি হয়ে যান। ইসলামে ইতিহাসের পাতায় এই সন্ধি হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।

যদিও কুরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে এই সন্ধির বিভিন্ন শর্ত মুসলামনদের বিরুদ্ধে ছিল, কিন্ত নবী এখানে রক্তপাত করে যুদ্ধ করতে চাননি। তাই তিনি শুধুমাত্র মুসলমানদের মক্কায় হজ করার খাতিরে এই সন্ধি স্বাক্ষর করেন। সন্ধি স্বাক্ষরিত হওয়ায় ফলে উভয়ের মধ্যে সৌভার্তিত্ব বোধ জন্মায়।

মুহাম্মদ দ্বারা বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলাম গ্রহণ করার বার্তা প্রেরণ

মুহাম্মদ বিশ্বাস করতেন তিনি হলেন রাসুলের দূত। তাই তিনি রাসূলের বার্তাকে ইসলামের মাধ্যমে পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্যে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র নায়কদের কাছে ইসলাম গ্রহণ করার জন্যে বার্তা প্রেরণ করেন।

সেই সময় পৃথিবীর বিভিন্ন শক্তিশালী রাজশক্তি গুলোর কাছে মুহাম্মদ ইসলাম গ্রহণের জন্যে তার দূত প্রেরণ করেন। সেই সমস্ত উল্লেখনীয় রাজশক্তি গুলো হল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য, আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য, এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য, মিশরের মুকাউকিস ইত্যাদি।

হযরত মুহাম্মদ দ্বারা বিভিন্ন সময়ে প্রেরণ করা দূত গুলো হল-

  • রোম সম্রাট কায়সারের কাছে মুহাম্মদ দ্বারা প্রেরণ করা ইসলামের বার্তা বহনকারী দূত হলেন দাহিয়া কালবীকে।
  • পারস্য সম্রাট খসরু পারভেজের কাছে প্রেরিত মুহাম্মদের দূত হল আব্দুল্লাহ বিন হুজায়ফা আস-সাহমিকে।
  • আলেকজান্দ্রিয়ার শাসন কর্তা মুকাউকিসের কাছে প্রেরণ করা মুহাম্মদের দূত হল হাতিব বিন আবু বুলতাকে।
  • হাবশার রাজা নাজ্জাশির কাছে প্রেরণ করা মুহাম্মদের দূত হল আমর বিন উমাইয়াকে।
  • ইয়ামামার সর্দারের কাছে প্রেরণ করা মুহাম্মদের দূত হলেন সলিত বিন উমর বিন আবদে শামসকে।
  • গাস্সানি শাসক হারিসের কাছে মূহাম্মদ প্রেরিত দূত হলেন শুজা ইবনে ওয়াহাবকে।

মুহাম্মদের মক্কা বিজয়

মুসলমানদের সঙ্গে কুরাইশদের হুদাইবিয়ার সন্ধি ১০ বছরের জন্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্ত হুদাইবিয়ার স্বাক্ষরিত করা সন্ধি বেশিদিন দীর্ঘ্যস্থায়ী হয়নি। সন্ধির ০২ বছর পূর্ণ্য হতে না হতেই এই সন্ধি ভেঙে যায়।

আরবের খুজাআহ গৌত্রের সঙ্গে মুসলমানদের মিত্রতা ছিল অপরদিকে কুরাইশ গৌত্রের লোকেদের সঙ্গে বকর গৌত্রের লোকেদের মিত্রতা ছিল। কিন্ত এখানে পরিলক্ষণীয় বিষয় হল কুরাইশরা মুসলমানদের মিত্র গৌত্র, খুজাআহ গৌত্রের লোকদের উপর অন্যায়ভাবে হামলা করে।

কুরাইশদের এই হামলার ফলে মুহাম্মদ মুসলমান ও কুরাইশদের মধ্যে হওয়া সন্ধি ভঙ্গ করেন এবং কুরাইশদের কাছে তিনটি শর্ত রেখে যে কোনো একটি শর্ত কবুল করার জন্যে বলেন-

  • কুরাইশ খুজাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করবে।
  • অথবা তারা বকর গোত্রের সাথে তাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করবে।
  • অথবা এ ঘোষণা দিবে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

কুরাইশরা মুহাম্মদের এই তিনটি শর্তের মধ্যে ০৩ নং শর্তটি মেনে নেয়। কিন্ত পরে কুরাইশরা তাদের ভুল বুঝতে পেরে মুহাম্মদের কাছে আবু সুফিয়ানকে নতুন করে সন্ধি করার জন্যে দূত হিসাবে প্রেরণ করেন।

এবারে কিন্ত মুহাম্মদ কুরাইশদের সন্ধির বার্তা মেনে নেন না, তিনি দূতকে স্ব-সম্মানে ফিরিয়ে দিয়ে কুরাইশদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ প্রায় ১০,০০০ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা নগরী আক্রমণ করেন।

শুরুর দিকে কুরাইশদের দু-একটা কাফেলার সঙ্গে বাধা প্রাপ্ত হলেও মুহাম্মদ প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনোরকম সংঘর্ষ ছাড়াই মক্কা বিজয় করেন। ইতিহাসের পাতায় ঐতিহাসিকরা মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের দিনটিকে হিজরি ক্যালেন্ডারে অষ্টম হিজরির ১০ তারিখ রমজান মাস বলে চিহ্নিত করেছেন।

হযরত মুহাম্মদ মক্কা বিজয়ের পর সবার প্রথমে কাবা গৃহে প্রবেশ করে, কাবা গৃহের সমস্ত মূর্তিকে ধ্বংস করে দেন। তারপর তিনি মক্কাবাসীদের তিনি ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে বিশেষভাবে ১০ জন নারী ও পুরুষকে এই ক্ষমার বাইরে রাখা হয়।

এরা ছিলেন সেই সমস্ত নারী পুরুষ যারা সর্বদা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে নানা রকম কুৎসা রটাতেন। পরে মুহাম্মদ এদের মধ্যে অনেককে ক্ষমা করে দেন। মুহাম্মদের শান-শওকত ও ক্ষমাসুন্দর গুন দেখে অধিকাংশ মক্কাবাসী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

হযরত মুহাম্মদের মৃত্যু

বিদায় হজ থেকে ফিরে আসার পর ইসলামীয়া হিজরি ১১ সালের সফর মাসে (হিজরি ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় মাস) মুহাম্মদ জ্বরে আক্রান্ত হন। প্রচন্ড জ্বরে মুহাম্মদ প্রায় ১১ দিন অসুস্থ থাকেন। দীর্ঘ্য ১১ দিন অসুস্থ থাকার পর হযরত মুহাম্মদ

তার সকল স্ত্রীর কাছে বিদায় নেওয়ার পর স্ত্রী আয়েশার ঘরে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। শোনা যায় মুহাম্মদের শারীরিক অসুস্থতার পিছনে এক ইহুদি নারীর হাত ছিল। জনৈক্য সেই ইহুদি নারী মুহাম্মদের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন।

মৃত্যুর আগে স্ত্রী আয়েশাকে ডেকে মুহাম্মদ তার শেষ পার্থিব সম্পদ গরীবদের মধ্যে দান করে দেওয়ার জন্যে বলেন। মৃত্যুকালে মুহাম্মদ যে উক্তিটি উচ্চারণ করেছিলেন সেই উক্তিটি হল-

" হে আল্লাহ, তুমি আর-রফিক আল-আলা (শ্রেষ্ঠ বন্ধু, সর্বোচ্চ আবাস বা সর্বোন্নত, স্বর্গের সর্বোচ্চ সঙ্গ)"

ইংরেজী ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ০৮ ই জুন রবিবার ( হিজরি ১১ সালের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সন্ধ্যায় মদিনায় আয়েশার গৃহে মৃত্যুবরণ করেন) ৬৩ বছর বয়সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর মুহাম্মদের পার্থিব শরীরকে

গোসল করিয়ে কাফন পড়ান করান মুহাম্মদের কাকার ছেলে আলী। আয়েশার যে ঘরে মুহাম্মদের মৃত্যু হয় সেই ঘরেই মুহাম্মদকে দাফন করা হয়। পরবর্তীকালে খলিফা উমিয়া এবং ওয়ালিদের সময়কালে মসজিদে নববিকে সম্প্রসারণ করে মুহাম্মদের কবর পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী pdf

আপনারা যারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী অথাৎ হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী pdf আকারে পড়তে চাইছেন তারা আমাদের দেওয়া নিচের লিংকের উপর ক্লিক করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবন কাহিনী pdf আকারে ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী

প্রশ্ন- হযরত মুহাম্মদ কে ছিলেন ?

উঃ পবিত্র ইসলাম ধর্মমতে হযরত মুহাম্মদ হলেন মুসলমানদের শেষ নবী বা রাসুলের বার্তা বাহক এবং ইসলাম ধর্মের প্রচারক। হজরত মুহাম্মদের বার্তার উপর ভিত্তি করে ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্ত কুরআন লেখা হয়।

প্রশ্ন- হযরত মুহাম্মদ এর পুরো নাম কি ?

উঃ- হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

প্রশ্ন- হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর স্ত্রীদের নাম কি কি ?

উঃ- হযরত মুহাম্মদ সবমিলিয়ে ১১ জনকে বিবাহ করেছিলেন-
০১. খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
০২. সাওদা বিনতে জামআ
০৩. আয়েশা বিনতে আবু বকর
০৪. হাফসা বিনতে উমর
০৫. জয়নব বিনতে খুযায়মা
০৬. উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়া
০৭. রায়হানা বিনতে জায়েদ
০৮. জয়নব বিনতে জাহশ
০৯. জুওয়াইরিয়া বিনতে আল হারিস
১০. রামহাল ( উম্মে হাবীবা) বিনতে আবু সুফিয়ান
১১. সাফিয়া বিনতে হুইয়াই
১২. মাইমুনা বিনতে আল হারিস
১৩. মারিয়া আল কিবতিয়া

প্রশ্ন- হযরত মুহাম্মদের পিতার নাম কি ?

উঃ- হযরত মুহাম্মদের পিতার নাম হল আব্দুল্লাহ।

প্রশ্ন- হযরত মুহাম্মদের জন্ম কতসালে হয় ?

উঃ – ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা শহরে হযরত মুহাম্মদের জন্ম হয়।

পরিশিষ্ট

আমরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আশাকরি আপনারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী পাঠ করলে হযরত মুহাম্মদ সম্পর্কে কিছুটা হলেও তিনার সম্পর্কে স্বচ্ছ একটা ধারণা পাবেন।

অবশিষ্ট্যাংশে এটুকুই বলব এত বড় মহামানবের জীবনী আর্টিকেলে দু-চারটে বাক্যে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী নিয়ে বহু গবেষক তারা তাদের বই লিখেছেন। আপনাদের সেই ইসলামী গবেষকদের বই পড়তে হবে তবেই আপনি মুহাম্মদকে জানতে পারবেন।

 

4.3/5 - (15 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here