ঈদ উল আযহা কি, ঈদ উল আযহা কেন পালন করা হয়, ঈদ উল আযহা সম্পর্কে হাদিস (EID UL AZHA KI,EID UL AZHA KENO PALON KORA HOY, EID UL AZHA HADISH)

মুসলমান ভাইবোনদের অন্যতম প্রধান দুটি উৎসব হল ০১. ঈদ-উল-ফিতর এবং দ্বিতীয়টি হল ০২. ঈদ উল আযহা (Eid Ul Azha)। তবে ঈদ উল আযহাকে মানুষ কুরবানী এবং বকরীদ এই দুটি নামেও সম্বোধন করে থাকে।

বকরীদ শব্দটি আরবি শব্দ 'বকর' থেকে নেওয়া হয়েছে। বকর শব্দের বাংলা অর্থ হল বিশালকায় (বড়)। মুসলমান ধর্মনুসারী ভাইবোনেরা ঈদ উল আযহাকে অতি পবিত্র আল্লার প্রতি সমর্পিত বিশেষ ত্যাগ ও নিষ্ঠার উৎসব হিসাবে উদযাপন করেন।

এখন আমরা মুসলমান ভাইবোনদের পবিত্র উৎসব বকরীদ (কুরবানী) অথাৎ ঈদ উল আযহা কি ? ঈদ উল আযহা কেন পালন করা হয় ? ঈদ উল আযহা সম্পর্কে হাদিস ? এবং ঈদ উল আযহার তাৎপর্য কি ?

ঈদ উল আযহার ইতিহাস কি ? সমস্ত কিছু ঘটনার নিরিখে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশাকরি আপনারা পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ঈদ উল আযহা কি ? (Eid Ul Azha Ki) পুরো বিষয়টা বুঝতে পারবেন।

ঈদ উল আযহা অর্থ কি (Eid Ul Azha Artho Ki)

ভারতবর্ষ তথা আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষ জন ঈদ উল আযহাকে (Eid Ul Azha) বকরীদ এবং কুরবানীর ঈদ নামে সম্বোধন করে থাকেন। তবে ঈদ এবং আযহা দুটি শব্দই কিন্ত আরবী শব্দ। এই শব্দ দুটির কোনোটিই কিন্তু বাংলা শব্দ নয়।

ঈদের বাংলা অভিধানিক অর্থ হল উৎসব বা আনন্দ উৎসব। আর আযহা শব্দটির বাংলা অর্থ হল উৎসর্গ (কুরবানী) করা বা সমর্পন করা। সুতরাং ঈদ উল আযহা শব্দ দুটির সম্মিলিত অর্থ দাঁড়ায় আল্লাকে সমর্পন করার উৎসব।

আরো পড়ুন : শবে বরাত কেন পালন করা হয়।

ঈদ উল আযহা কি (Eid Ul Azha Ki)

মুসলমান ভাইবোনদের প্রধান দুটি উৎসব হল – ঈদ উল ফিতর এবং ঈদ উল আযহা। ঈদ উল আজহাকে অনেকে কুরবানীর ঈদ বা বকরীদ বলেও সম্বোধন করে থাকেন। ঈদ উল আযহা শব্দটি মূলত আরবি শব্দ থেকে নেওয়া,

যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘ত্যাগের উৎসব’, এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ত্যাগ করা। আপনারা সবাই মোটামোটি জানেন বকরীদের দিন মুসলমান ভাইবোনেরা বকরী (ছাগল) কুরবানী করে থাকেন।

কুরবানী দেওয়ার আগে মুসলমান সমাজের মানুষ তাদের বাড়িতে গৃহ পালিত জন্তুর ন্যায় নিজেদের সামর্থ্য মত বকরী কিনে বকরী পালন করেন। ঘরে পশুটির লালন পালনের মধ্যে দিয়ে পরিবারের মানুষ জনের সাথে মিলে মিশে এক আত্মার সম্পর্ক তৈরী হয়।

তারপর বকরী বড় হলে ঈদ উল আযহার দিন আল্লাকে উৎসর্গ করে পরিবারের প্রিয়জনের মত সবথেকে প্রিয় বস্তু বকরী টিকে কুরবানী দেওয়া হয়। ঈদ উল আযহা (Eid Ul Azha) উৎসবের এই বিশেষ দিনটিতে

মুসলমানেরা ফজরের নামাজের পর স্নান সেরে নতুন জামা কাপড় পড়ে, ঈদগাহে দুই রাক্কাত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করে। তারপর ঈদগাহ থেকে নামাজ আদায় করে ফিরে এসে মুসলমান ভাইবোনেরা

ঈদ উল আযহা কি
ঈদ উল আযহা কি

নিজেরা নিজেদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী দুম্বা, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, উট ইত্যাদি পশুকে মহান আল্লার নামে কুরবানী করে থাকেন। ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকায় ঈদুল আযহা জ্বিলহজ্জের ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। তবে আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায়

প্রতি বছর ঈদ উল আযহা অনুষ্ঠানের দিন পরিবর্তিত হতে থাকে। সাধারণত প্রতি বছর আন্তর্জাতিক পঞ্জিকায় বিগত বছর থেকে ১০ থেকে ১১ দিন আগে ঈদ উল আযহা পরব অনুষ্ঠিত হয়। তবে ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়।

ঈদ উল আযহা কেন পালন করা হয় (Eid Ul Azha Keno Palon Kora Hoy)

ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষদের মতে পয়গম্বর 'হজরত ইব্রাহিম' আল্লার কাছ থেকে তার সবথেকে প্রিয় জিনিসটাকে কুরবানী করার জন্যে স্বপ্নাদেশ পান। এরপর ইব্রাহিম তার সর্বাধিক প্রিয় জিনিস কি ? যেটা তার কাছ থেকে আল্লাহ কুরবানী চেয়েছে

সেই বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন। অনেক চিন্তাভাবনার পর হজরত ইব্রাহিম বুঝতে পারেন তার কাছে সবথেকে প্রিয় বস্তু হল তার পুত্র ইসমাইল। পুত্র ইসমাইলকে হজরত ইব্রাহিম নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসতেন।

এইরকম দ্বিমুখ পরিস্থিতিতে ইব্রাহিম ধর্মসংকটে পড়ে যান। তিনি কিছু বুঝতে পারছিলেননা তার কি করা উচিত। সবমিলিয়ে ইব্রাহিমের শাঁখের করাতের মাঝখানে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়। একদিকে প্রাণের পুত্র ইসমাইল অপরদিকে মহান আল্লার আদেশ।

শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তা ভাবনা করার পর আল্লার থেকে পাওয়া স্বপ্নাদেশের পুরো বিষয়টা ইব্রাহিম, পুত্র ইসমাইলকে খুলে বলেন। বাবার কাছ থেকে সবকিছু শুনে দশ বছরের ছোট বালক ইসমাইল আল্লার কাছে নিজেকে কুরবানী (প্রাণের আহুতি) দেওয়ার জন্যে রাজী হয়ে যায়।

এরপর ইব্রাহিম ও ইসমাইল নির্দিষ্ট দিনে স্নান সেরে পরিষ্কার পরিছন্ন জামা কাপড় পড়ে লোকালয় থেকে দূরে মরুভূমির কাছে পাহাড়ে মীনা নামক একটি নিরিবিলি স্থানে ইসমাইলকে কুরবানী করার জন্যে নিয়ে যান।

সেখানে পিতা ও পুত্র উভয়ে কোলাকোলি বিনিময়ের মাধ্যমে শেষ আলাপ করেন। কিন্ত ইসমাইল ইব্রাহিমকে কুরবানী করতে অসমর্থ হলে, তখন ইসমাইল তার পিতাকে চোখের উপর পট্টি বাঁধতে বলেন।

এরপর ইসমাইল গর্দন ঝুঁকিয়ে নিজেকে আল্লাহর উদেশ্যে কুরবানী করার জন্যে বাবার ছুরির ডগায় নিজের গর্দান এগিয়ে দেন। পুত্রের সম্মতি পেয়ে ইব্রাহিম আল্লাহকে আহব্বান করে পুত্র ইসমাইলের গলায় ছুরি চালিয়ে দেন।

এরপর এখানে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে, ইব্রাহিম পুত্রকে আল্লার কাছে উৎসর্গ করার জন্যে পুত্রের গলায় যে ছুরি চালিয়েছিলেন সেই ছুরিতে পুত্র ইসমাইল কুরবানী না হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি দুম্বা (ভেঁড়া প্রজাতীর পশু) কুরবানী হয়ে বালু ভূমিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

পরে ইব্রাহিম চোখের পট্টি খুললে দেখতে পায় কুরবানী হওয়া দুম্বাটির পাশে ইসমাইল জীবিত অবস্থায় স্ব-শরীরে দাঁড়িয়ে আছে। এইভাবে হজরত ইব্রাহিমের আল্লার প্রতি গভীর নিষ্ঠায় খুশি হয়ে আল্লা ইব্রাহিমের কুরবানী কবুল করেন এবং ইসমাইলকে নবজীবন দান করেন।

হজরত ইব্রাহিমের আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত ত্যাগের কথা অনুসরণ করে পৃথিবীর সমস্ত মুসলমান ভাইবোনেরা আল্লার প্রতি নিজেদের ধর্মীয় আস্থাকে বজায় রেখে ত্যাগের উৎসব ঈদ উল আযহা প্রতি বছর পশু কুরবানী দেওয়ার মাধ্যমে পালন করে থাকেন।

ঈদ উল আযহা সম্পর্কে হাদিস (Eid Ul Azha Somporke Hadis)

আজথেকে প্রায় ৩৮০০ (সৌর) বছর পূর্বে হজরত ইব্রাহিম আল্লার নির্দেশে তার প্রাণ প্রিয় জ্যৈষ্ঠ পুত্র ইসমাইলকে, পুত্রের পূর্ণ সম্মতিতে মক্কার মীনা নামক স্থানে কুরবানী দিতে উদ্যত হন। আল্লাহ ইব্রাহিমের ঐকান্তিক নিষ্ঠায় সন্তস্ট হয়ে

ইব্রাহিমের কুরবানী কবুল করেন এবং পুত্র ইসমাইলের জায়গায় একটি পশুকে কুরবানী করা অবস্থায় রেখে দেন। এই ঘটনার পর থেকে আল্লার প্রতি অবিচল আনুগত্য এবং নজিরবিহীন অভূতপূর্ব ঘটনার অনুক্রমে মক্কাবাসী তথা

জগতের সমস্ত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ আত্মত্যাগের প্রতীকী উৎসব হিসাবে মহানবী হজরত মুহাম্মদের নির্দেশে কুরবানীর দিনে পশু যবাই করে ঈদ উল আযহা অথাৎ কুরবানী (বকরীদ) উৎসব পালন করা শুরু করেন।

ঈদ উল আযহা কি
ঈদ উল আযহা কি

কুরবানীর দিন আল্লাকে উৎসর্গ করে পশু যবাই করে, আল্লার নির্দেশে যবাই করা মাংস সমাজের দুঃস্থ লোকেদের মধ্যে বিতরণ করে আল্লার সানিধ্য লাভ করার চেষ্টা করা হয়। কুরবানীর মধ্যে দিয়ে আল্লার সানিধ্য লাভ করার এই সার্থক প্রচেষ্টাই হল ঈদ উল আযহা।

কুরবানীর দিন হজরত ইব্রাহিম এর অনুসরণ কেবলমাত্র হাজীদের জন্যে নয় ! মুসলিম জগতের সমস্ত সক্ষম মানুষের জন্যে কুরবানী করা ওয়াজিব (মতান্তরে সুন্নাঃ মুআক্কাদা)।

মক্কায় হজ যাত্রীরা ১০ ই যুল- হিজ্জার দিন হজব্রত পালনকালে সমস্ত হাজীরা মক্কার মীনা প্রান্তরে গিয়ে কুরবানী করেন। মতান্তরে তৎপরবর্তী দুই দিন বা তিন দিন (আয়্যাম-আল-তাশরীকে) অনুষ্ঠিত হয়।

ঈদ উল আযহা সম্পর্কে হাদিস নিয়ে কত গুলো কথা বলা হয়েছে, যেমন- কানা, কান-কাটা, শিং ভাঙা, খোঁড়া, অসুখ আছে এমন পশুকে কুরবানী দেওয়া যাবেনা। বড় পশু উট, গরু, মহিষ ইত্যাদি পশু একত্রে অনধিক সাত জন মিলে কুরবানী দেওয়া যাবে।

আবার দুম্বা, ছাগল, ভেঁড়া ইত্যাদি পশু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি কুরবানী করতে পারবে। ঈদ উল আযহার দিন ঈদ গাহে নামাজ আদায় করার পর থেকে সেদিন সন্ধে পর্যন্ত মানে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত কুরবানী দেওয়া যাবে।

রীতি অনুযায়ী যে ব্যক্তি কুরবানী দেবেন তার নিজ হাতে যবাই করা সুন্নত। তবে প্রয়োজনে তাঁর পক্ষে যবাহ করা সম্ভব না হলে অন্য কোন ব্যক্তিকে দিয়েও যবাই করানো যেতে পারে। কুরবানীর পশু যবাই করার সময় পবিত্র কুরানের দুটি আয়াত-

সূরা সূরা আনআম-এর ৮০ নম্বর এবং ১৬৩ নম্বর আয়াত পাঠ করা হয়। কুরান আয়াতের প্রথম আয়াতটির অর্থ হল- ‘‘আমি আমার মুখ করিলাম যিনি আকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন তাঁহার প্রতি একনিষ্ঠভাবে এবং আমি মুশরিক নই।’’

দ্বিতীয়টির অর্থ হল – ‘‘অবশ্যই আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ, সবই আল্লাহর জন্য যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক, তাঁহার কোনো শরীক নাই।’’

এরপর আল্লার উদ্দেশ্যে বলা হয় –‘‘হে আল্লাহ এ পশু তুমিই দিয়েছ এবং তোমারই জন্য কুরবানী করিতেছি, সুতরাং তুমি ইহা কবুল কর’’, তারপর "বিসমিল্লাহি রহমানে রহিম এবং আল্লাহু আকবর"বলে পশুটি যবাই করা হয়।

তবে পবিত্র কুরানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- ” কুরবানীর রক্ত বা কুরবানী করা পশুর মাংস কোনোটাই আল্লার কাছে পৌঁছায় না, আল্লার কাছে শুধুমাত্র তাকওয়া মানে আল্লার প্রতি উৎসর্গকৃত ত্যাগ এবং নিষ্ঠা পৌঁছায়।

ইসলাম প্রবর্তনের আগে জাহেলি যুগে পশু বলির পর, বলির রক্ত প্রতিমার গায়ে মাখানো হত এবং বলি করা পশুর মাংস প্রসাদ রূপে প্রতিমাকে উৎসর্গ করে সবার সাথে বিতরণ করা হত। কিন্ত ইসলামী যুগের ইসলামের প্রচলনের ফলে

পশুর রক্ত ও পশুর মাংস প্রতিমাকে উৎসর্গ করার মত প্রথা বিলুপ্ত হয়। একইসঙ্গে সু-স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট হয়ে যায় তাকওয়ার চূড়ান্ত অর্থ হল “এই বিশ্বে একজন মুমিন তাঁর সবকিছু। এমনকি প্রয়োজনে নিজের জীবন পর্যন্ত আল্লার নামে কুরবানী করতে প্রস্তুত।

‘‘আল্লাহ মু’মিনের জান-মাল ক্রয় করিয়াছেন জান্নাতের বদলে’’ (৯ঃ১০০)। তারজন্যে কুরানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে – ‘অনন্তর তোমার প্রতিপালক প্রভুর জন্য নামায পড় এবং কুরবানী কর’’ (১০৮ঃ২)। হাদীস শরীফে এর সুস্পষ্ট বিধান বিদ্যমান।

কুরবানীর পর কুরবানীর মাংস তিন ভাগের এক ভাগ মালিক, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং আর একভাগ হত দরিদ্র মানুষ যারা কুরবানী দিতে অসমর্থ তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। কুরবানীর মধ্যে দিয়ে দরিদ্রের প্রতি ধনীদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ঘটে।

ঈদ উল আযহা কি
ঈদ উল আযহা কি

কুরবানী করা পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার না করে দান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই মুসলমান সমাজের মানুষ কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রয় করে বিক্রয় করা অর্থ গরীব মানুষ বা এতিম খানায় কিংবা মাদ্রাসায় দান করে দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন : ঈদ উল ফিতর কি ? ঈদ উল ফিতর কেন পালন করা হয়।

ঈদ উল আযহা কিভাবে পালন করা হয় (Eid Ul Azha Kivabe Palon Kora Hoy)

উপরের পঙতিতে আমরা ঈদ উল আযহা সম্পর্কে হাদিস এর বিধান গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করলাম। এবারে আমরা ঈদ উল আযহা কিভাবে পালন করা হয় সেই ব্যাপারে আলোচনা করব।

ঈদ উল আযহা শুরু হওয়ার বেশ কযেকদিন আগে থেকেই মুসলমান ভাই বোনেরা তাদের ঘরের সাফ সাফাই শুরু করে দেয়। ঈদ উল আযহার দিন গ্রামের বা পাড়ার মসজিদ রঙ বেরঙের মনহরক আলোক সজ্জায় সাজানো হয়।

ঈদ উল ফিতর উৎসবের মতই ঈদ উল আযহার দিন সকল মুসলিম ভাইয়েরা ঈদ গাহে কিংবা মসজিদে গিয়ে সমবেত হয়ে এক সাথে ঈদ উল আযহার নামাজ আদায় করে। ঈদের নামাজ সমাপ্ত হওয়ার পর বাসায় ফিরে এসে নিজেরা নিজেদের

পালিত জন্তু আল্লার নামে জবাই করে কুরবানী দেয়। তারপর কুরবানী দেওয়া পশুর মাংস তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। যার এক ভাগ মাংস যিনি কুরবানী দিচ্ছেন তার জন্য রাখা হয়, আর বাকি মাংসের দুই ভাগের এক ভাগ আত্মীয় স্বজন এবং আর এক ভাগ গরীব ভাই বোনেদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়।

ঈদের দিন বাড়ীর মেয়েরা হাতে বিভিন্ন ধরনের মেহেন্দী তথা নতুন রকমারি জামা কাপড় পড়ে। বাড়ীর কচি কাচাদের নতুন জামাকাপড় পড়ানো হয়। ঈদের দিন বাড়ীতে বিভিন্ন ধরনের নতুনত্ব খাবার বিরিয়ানি, সিমুই, ক্ষীর ইত্যাদি বানানো হয়।

ঐ দিন বাড়িতে আসা অতিথিদের ক্ষীর সিমুই খেতে দিয়ে মিষ্টি মুখ করানো হয়। সন্ধে বেলা বাড়িতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, এই অনুষ্ঠানে গান বাজনা, কবিতা আবৃতি, গজল ইত্যাদি পাঠ করা হয়।

বড় বড় মুসলিম রাজনেতারা বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষদের নিয়ে পার্টির আয়োজন করে ঈদ মিলন সমারোহ উদযাপন করেন। এইভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মুসলিম ভাই বোনেরা ঈদ উল আযহা উৎসবটি পালন করে থাকেন।

পরিশিষ্ট

উপরের আলোচনায় আমরা ঈদ উল আযহা কি (Eid Ul Azha Ki), ঈদ উল আযহা কেন পালন করা হয়, ঈদ উল আযহা অর্থ কি, বকরীদ এবং ঈদ উল আযহা সম্পর্কে হাদিস, সবমিলিয়ে ঈদ উল আযহার ছোট বড় বিষয় গুলো নিয়ে আমরা সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করলাম।

তবুও আপনাদের মনে ঈদ উল আজহা (Eid Ul Azha) বা বকরীদ নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

5/5 - (4 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here