ধনতেরাসের ইতিহাস, ধনতেরাস কাকে বলে (Dhanteras er Itihas)

কথায় বলে ধনের উৎসব ধনতেরাস (Dhanteras)। এখন আমরা ধনতেরাসের ইতিহাস অথাৎ ধনতেরাস কেন পালন করা হয় বা ধনতেরাস কাকে বলে সেই ব্যাপারে আলোচনা করব। ধনতেরাস মূলত অবাঙালিদের উৎসব হওয়ায়,

বাংলায় ধনতেরাসের প্রচলন সেভাবে না থাকলেও উত্তরের রাজ্যগুলোতে ধনতেরাস কিন্তু খুব ধুমধামেই উৎযাপন করা হয়। তবে কালের বিবর্তনে ধনতেরাস উৎসবটি অবাঙালিদের সাথে সাথে বাঙালিদেরও ১২ মাসে ১৩ পার্বনের অঙ্গ হয়ে গেছে আজ।

দীপাবলি শ্যামা পূজার দুই দিন আগে উৎযাপিত হওয়া ধনতেরাস উৎসব এখন অবাঙালিদের পাশাপাশি বাঙালিরাও সমানে উৎসবটিকে বেশ জাকজমকভাবেই উৎযাপন করছে। ধনতেরাসকে ধনাত্ৰয়োদশী নামেও সম্বোধন করা হয়, যার আক্ষরিক অর্থ হল ধনাবত্রী ত্রয়োদশী।

ধন শব্দের অর্থ হল “সম্পত্তি বা সম্পদ” আর ত্রয়োদশী মানে হল “১৩-তম দিন।” তাই প্রতিবছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ১৩ তম দিনে পালিত হয় ধনতেরাস (Dhanteras) ।

ধনতেরাসের ইতিহাস ও ধনতেরাস কেন পালন করা হয়

ধনতেরাসের ইতিহাসের পৌরাণিক কাহিনী ঘেটে দেখলে দেখতে পাওয়া যায়। ধন সম্পদের প্রধান দেবতা হল রাবনের ভাই কুবের। তাই ধনতেরাসের দিন ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী, স্বরসতী,গণেশ এর পাশাপাশি ধন সম্পদের রক্ষক কুবের এর পূজা করা হয়।

তবে ধনতেরাস উৎসবে ধনের প্রাপ্তি নিয়ে, ধনতেরাসের ইতিহাসে বহু কাহিনী আছে। আসুন তাহলে ধনতেরাসের ইতিহাস বা ধনতেরাস প্রচলন হওয়ার পিছনে বিভিন্ন কাহিনী গুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া যাক-

প্রথম :- পুরাণের পাতায় বিবরণ পাওয়া যায় দুর্বাশা মুনির শাপে মা লক্ষ্মীকে বৈকুন্ঠ ধাম ছেড়ে সাগরের তলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়। পরে সুর ও অসুরের লড়ায়ে কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ১৩- তম দিনে অথাৎ ত্রয়োদশীর দিনে

সাগর মন্থনে মা লক্ষ্মী সাগর তল থেকে উপরে উঠে আসেন এবং দেবতাগণ মা লক্ষ্মীকে ফিরে পান। তাই কার্তিক মাসের ত্রয়োদশীর দিন মা ধনের দেবী লক্ষ্মীকে পুনরায় ফিরে পেয়ে লক্ষ্মী দেবীকে তুষ্ট করতে ধনতেরাস পালন করা হয়।

ধনতেরাসের ইতিহাস
ধনতেরাসের ইতিহাস

দ্বিতীয়:- পুরাণের আর এক ঘটনায় প্রাচীন রাজা হিমের ছেলের ভাগ্য লেখার গল্প বলা হয়েছে। সেই গল্প কাহিনীতে দেখা গেছে রাজা হিমের ছেলের ভাগ্য গণনায় হিমের ছেলের ভাগ্যে বিয়ের পরের চতুর্থ রাত্রে ( চার নম্বর রাতে) সাপের কামড়ে মৃত্যু যোগের উল্লেখ পাওয়া যায়।

স্বামীর মৃত্যুযোগের কথা জানতে পেরে রাজা হিমের বৌমা স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে দরজার সামনে রাত্রি হওয়ার আগে প্রদীপের আলোর সামনে নিজের যাবতীয় গয়নাগাটি খুলে রেখে দেয়। এরপর রাত্রি বেলা যমরাজ হিমুর ছেলের প্রাণ নিতে এসে তার গয়না ও স্বর্ণ অলঙ্কারের ছটায় চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

এরপর যমরাজ যুবরাজের ঘরের কাছে এসে পৌঁছালে দেখতে পান তার স্ত্রী যুবরাজকে গান শোনাচ্ছেন আর যুবরাজ রাত জেগে গান শুনছেন। যমরাজ সেই গান শুনতে শুনতে গয়নার উপর বসে পড়েন। আর এইভাবে রাত্রি পেরিয়ে সকাল হয়।

যার ফলস্বরুপ যমরাজের আর রাজা হিমের ছেলের প্রাণ হরণ করা হয়ে উঠেনা, যমরাজকে খালি হাতে যমালয়ে ফিরে যেতে হয়। এরপর থেকে রাজা হিমু ও তার রাজ্যের প্রজারা স্বাড়ম্বরে রীতিনীতি মেনে ধনের আরাধনা শুরু করে দেয়। রাজা হিমের প্রচলিত এই উৎসব কালক্রমে ধনতেরাসের রূপ নেয়।

তৃতীয় :- বেনারস (কাশীতে) ধন্বন্তরী নামের একজন রাজা ছিলেন। তিনি রাজ্য পরিচালনার পাশাপাশি আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় পারদর্শী ছিলেন। তিনিই ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রচলন করেন। তাই যখনই আয়ুর্বেদ চিকিৎসার কথা বলা হয় তখন কোনো না কোনো ভাবে ধন্বন্তরীর নাম এসে যায়।

রাজা ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন তাই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগন ত্রয়োদশীর দিন ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী হিসাবে পালন করেন। হিন্দি ভাষায় ধন্বন্তরীর জন্ম দিবসকে ধন্বন্তরী তেরস বা সংক্ষেপে ধনতেরাস বলা হয়।

সাধারণভাবে দেখতে গেলে বাঙালিদের অনেকেই ধনতেরাসের সাথে ধন প্রাপ্তির কোনো সম্পর্ক নেই বলেই মনে করেন। তাই ধন্বন্তরীর মত মহান আয়ুর্বেদাচার্যকে (বৈদ্য) মর্যাদা দিয়ে চতুর্দশী (ভূত চতুর্দশী) তিথিতে বাঙালিরা চৌদ্দ রকমের শাক রান্না করে খেয়ে চোদ্দ শাক উৎসবের পালন করেন।

এই চোদ্দ রকমের শাক হল – হিলঞ্চ, ভাঁটপাতা, শুষনি, শৌলফ, সর্ষে, ওল, বেতো, নিম, জয়ন্তী, পলতা, কাশুন্দি, সজনে, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, গুলঞ্চ ইত্যাদি। তবে এইসমস্ত শাক গুলো না পাওয়া গেলেও আরও অন্যান্য শাক গুলো দিয়ে চোদ্দ শাক পুরো করে নেওয়া হয়।

অবশ্যই পড়ুন : দীপাবলি কেন পালন করা হয়।

ধনতেরাসে কি কিনলে শুভ হয়

ধনতেরাস কে মূলত ধন ও ঐশ্বর্যের উৎসব বলে মনে করা হয়। তাই এই ধনতেরাসের দিন সবাই যে যার শ্রাদ্ধ মত ধন মানে সোনার অলঙ্কার গয়না বা সোনা ও রুপোর কয়েন কেনাকে শুভ বলে মনে করেন।

তবে যারা সোনা বা রুপোর গয়না কিনতে পারেন না অথাৎ যাদের সোনা রুপো কেনার পয়সা নেই তারা কাঁসা পিতলের বাসনের পাশাপাশি ঝাড়ু মানে ঝাঁটা কেনাকে শুভ বলে মনে করেন।

ধনতেরাসের ইতিহাস
ধনতেরাসের ইতিহাস

ঝাড়ুকে মা লক্ষ্মীর প্রতীক বলে মনে করা হয়। তাই ধনতেরাসের দিন ঝাড়ু কিনে নিয়ে এলে গৃহস্থের ঘরে লক্ষ্মী দেবীর অধিষ্ঠান হয় বলে মনে করা হয়। তাই যারা সোনা,রুপো বা অন্যান্য রত্ন সামগ্রী কিনতে না পারলে ধনতেরাসের দিন অন্তত একটা ঝাড়ু ঘরে কিনে নিয়ে আসেন

পরিশিষ্ট

আপনারা এতক্ষনে নিশ্চয় ধনতেরাস কি অথাৎ ধনতেরাস কেন পালন করা হয় ? ধনতেরাসের ইতিহাস কী ? মানে কিভাবে ধনতেরাসের প্রচলন হল ব্যাপার গুলো সমন্ধে মোটামোটি একটা ধারণা পেয়ে গেছেন।

তবুও আপনাদের মনে ধনতেরাসের ইতিহাস কী ? অথবা ধনতেরাস কেন পালন করা হয় এই ব্যাপারে কোনো ধরণের জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ০৫ ষ্টার রেটিং দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here