ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয় (Idul Fitor Keno Palon Kora Hoy)

মুসলিম সমুদায়ের দুটি গুরুত্ব পূর্ণ উৎসব হল ঈদুল আজহা এবং ঈদুল ফিতর। আমরা এখন ঈদুল ফিতর কি ? ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয় ? ঈদুল ফিতরের ইতিহাস ? ঈদুল ফিতর কবে হবে সেই বিষয়ে আলোচনা করব।

শবে বরাতের দুই সপ্তাহ পর মুসলিম সম্প্রয়াদের ইবাদতের মাস, রমজান মাস শুরু হয়। রমজান মাসের দিনগুলোতে দীর্ঘ্য এক মাস যাবৎ উপবাস পালন করার পর আসে মুসলিম সমাজের খুশির উৎসব ঈদুল ফিতর।

ইসলামী ঐতিহাসিকরা ইসলামী ইতিহাসে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার আগের সময়কালকে জাহেলি যুগ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই জাহেলি যুগে সেখানকার মানুষেরা শরৎ কালে পূর্ণিমার দিন “নওরোজ” এবং বছরের শেষে বসন্ত পূর্ণিমায় “মেহেরজান” এই দুটি উৎসব পালন করত।

পরে মদীনাবাসীর কাছে হজরত মহম্মদ যখন এই দুটি উৎসব সম্পর্কে জানতে চান নওরোজ এবং মেহেরজান এই দুটি উৎসব কিসের উৎসব এবং এই উৎসবের তাৎপর্য কি ? তখন মদীনাবাসীরা হজরত মহম্মদকে (সাঃ) এর কাছে

এই দুটি উৎসবের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন “নওরোজ” এবং “মেহেরজান” এই উৎসব দুটি হল মদীনাবাসীর কাছে আনন্দ উপভোগ করার বিশেষ দিন। এই দুই দিন মদীনাবাসী আমোদ প্রমোদ এর সাথে ভালো খাওয়া দাওয়া এবং মনরঞ্জন করে থাকেন। রাসুল (সাঃ) মদীনাবাসীর কাছে সমস্ত কিছু শোনার পর

মদীনাবাসী তথা ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষদের উদ্দেশ্যে জাহেলি যুগের নওরোজ এবং মেহেরজান এই দুটি উৎসবের পরিবর্তে "মহান আল্লাহ প্রদত্ত দুটি নতুন উৎসব ০১) ঈদুল ফিতর এবং ০২) ঈদুল আজহা (মুসনাদে আহমদ ১৩০৫৮)।" উদযাপন করার নির্দেশ দেন।

ঈদুল ফিতর কি (Idul Fitor Ki)

ঈদুল ফিতর কি ? এই প্রশ্নের এক কথায় জবাব বলতে হলে বলতে হবে, ঈদুল ফিতর হল মুসলমানধর্মী ভাইবোনদের অন্যতম একটি খুশির উৎসব। মুসলমান ভাইবোনেরা রমজান মাসে যেমন প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধে বেলা ইফতার করে দিনের শেষে রমজানের উপোস ভাঙেন।

ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয়
ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয়

ঠিক তেমনি মুসলমান ভাইবোনেরা দীর্ঘ্য এক মাস যাবৎ রোজা (উপোস) রাখার পর রাসুল (সা:) এর নির্দেশে জাহেলী যুগে প্রচলিত "নওরোজ" উৎসবের পরিবর্তে রমজান মাসের ইতি ঘোষনা করে রমজান মাস শেষ হওয়ার পরের দিন খুশির উৎসব পবিত্র "ঈদুল ফিতর" উৎসব পালন করেন।

ঈদুল ফিতর অর্থ কি (Idul Fitor Artho Ki)

ঈদুল এবং ফিতর বা ঈদুল ফিতর দুটি শব্দই হল আরবি শব্দ। "ঈদুল" শব্দটির বাংলা মানে হল "ফিরে আসা অথাৎ প্রত্যাবর্তীত হওয়া।" তবে ” ঈদ” শব্দটির মূল আরবি শব্দ হল "আওদ।"

সুতরাং ঈদ (ঈদুল) কথার মানে গিয়ে দাঁড়াল বছরের পর বছর ঘুরে আসা একটি দিন। আরবিতে কোনো বিশেষ স্মরণীয় দিন বা উৎসবের দিনকে ঈদ বলা হয়। এত গেল ঈদ বা ঈদুল শব্দের বাংলা অর্থ। এবার দেখা যাক "ফিতর" শব্দটির বাংলা মানে করলে কী দাঁড়ায় !

"ফিতর" শব্দটির বাংলা মানে হল রোজা বা উপবাস ভঙ্গ করা। আরবিতে আমরা যাকে রোজার শেষে ইফতার করা বলি। তাই রমজান মাসের শেষে রোজার ঈদকে ইসলামী ভাষায় "ঈদুল ফিতর" বলা হয়। তবে ফিতরা কথাটির আর এক অর্থ হল দানখয়রাত করা।

ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয় (Idul Fitor Keno Palon Kora Hoy)

ইসলামী ক্যালেন্ডারে দ্বিতীয় হিজরি অথাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের আগে জাহেলি যুগে মুসলমানদের পালনীয় দুটি প্রধান উৎসব ছিল। তাই তারা জাহেলি যুগের উৎসব দুটিকেই অনুকরণ করে, বছরে দুটো বিশেষ দিন আনন্দের উৎসব হিসাবে পালন করতো।

উৎসব দুইটি হল – শরৎকালের পূর্ণিমায় "নওরোজ" এবং দ্বিতীয়টি হল বছরের শেষে বসন্ত পূর্ণিমায় "মেহেরজান“. এই দুটি উৎসব মদীনাবাসীর কাছে অত্যন্ত প্রিয় খুশির উৎসব হিসাবে প্রচলিত ছিল। উৎসবের দিন গুলোতে তারা ভালো খাওয়া দাওয়া, নতুন কাপড় পড়া এবং বিনোদন হিসাবে খেলাধুলা করত।

পরে রাসুল (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় ফিরে আসার পর জাহেলি যুগের "নওরোজ" উৎসবের পরিবর্তে মদীনাবাসীদের জন্যে রমজান মাসের শেষে পবিত্র ও খুশির উৎসব ঈদুল ফিতর (Idul Fitor) উৎসবটির সূচনা করেন।

ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয়
ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয়

তারপর থেকে রসুল (সা:) এর নির্দেশে মুসলমান ভাইবোনেরা রমজান মাসের শেষে রমজানের মাসের ইতি টেনে রমজান মাস শেষ হওয়ার পরের দিন খুশির উৎসব হিসাবে "ঈদুল ফিতর" পালন করা শুরু করেন।

মুসলমান ভাইবোনেদের ইবাদতের মাস হল রমজান মাস। এই মাসে মুসলমান ভাইবোনেরা আল্লাহ তালার কাছে নিজেদের কৃতকর্মের প্রতি অনুসোচিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে। দীর্ঘ্য এক মাস রমজান মাসে উপবাস পালন করে, নামাজ পড়ে আল্লার ইবাদত করে, আল্লার কাছে মাফ চাওয়ার পর

রমজান মাস শেষ হওয়ার পরের দিন নতুন জামা কাপড় (পরিষ্কার জামা কাপড়) পড়ে খুশির উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করেন। ঈদুল ফিতরের দিন স্নান করে, ভালো পরিষ্কার পরিছন্ন কাপড় পড়ে ঈদগাহ ময়দানে সকলে একসাথে সমবেত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে।

তারপর শুরু হয় মিষ্টিমুখ এবং কোলাকোলি করে ভালোবাসা ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। মুসলমানদের পবিত্র উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দ উৎসবকে (বুখারি ৭৪৯২) আখেরি রাতে রবের সঙ্গে দেখা করে আনন্দ পাওয়ার সমতুল্য আনন্দ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঈদুল ফিতরের ইতিহাস (Idul Fitorer Itihas)

ইসলামি ইতিহাসের পাতায় ঈদুল ফিতরের ইতিহাস খুঁজে দেখলে দেখতে পাওয়া যায় ঈদুল ফিতর উৎসব প্রচলন হওয়ার বহুআগে থেকে মদিনাতে জরাথুষ্ট্র প্রদত্ত নওরোজ এবং মেহেরজান এই দুটি উৎসবকে তারা তাদের প্রধান উৎসব হিসাবে পালন করত।

তবে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ নবী মহম্মদ মক্কা থেকে মদিনাতে এসে পৌঁছলে মদিনাবাসীদের কাছে আন্দন উৎসব করার দিন হিসাবে নওরোজ ও মেহেরজান উৎসব দুটির কথা শোনেন।

এই উৎসব দুটি যদিও মদীনাবাসীদের কাছে সুখের উৎসব ছিল তবু কিছু ধর্মীয় ভেদাভেদ যেমন- মেহেরজান উৎসবটি ০৫ দিন ব্যাপি আয়োজিত হত। তবে উৎসবের শুরুর ০৪ দিন শুধু মদিনার ধনী এবং উচ্চ শ্রেণীর মানুষেরাই উদযাপন করতে পারত।

আর উৎসবের শেষ দিন মানে পঞ্চম দিন ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সমস্ত মদীনাবাসী মেহেরজান উৎসবটিকে নিজেদের মত খুশি ও আনন্দ উৎসব হিসাবে পালন করত। কিন্ত ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হজরত মহম্মদ (সাঃ) মদিনাতে আসার পর মেহেরজান উৎসবের পরিবর্তে ঈদুল ফিতর

ধনী ও দরিদ্র নির্বেশেষে মহান আল্লাহ প্রদত্ত খুশির উৎসব ঈদুল ফিতর এবং ইদু আজহা উৎসবের প্রচলন করেন। তবে বিশিষ্ট ইসলাম স্কলার অধ্যাপক মিয়াজীর মতানুযায়ী হিজরি ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাসে (শাবান মাস) মুসলমানদের জন্যে রমজান/ রোজা করা ব্যাধ্যতামূলক আয়াত নাজিল করা হয়।

এবং হিজরির নবম মাস অথাৎ এক মাস রমজান মাসে রোজা করার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদুল ফিতর অর্থাৎ ঈদ উৎসব পালন করার রীতিনীতি চালু করা হয়। এতো ছিল ইসলামী ইতিহাসে ঈদুল ফিতর পালনের ইতিহাস।

এবারে আসা যাক বঙ্গদেশে ঈদুল ফিতর চালু হওয়ার প্রসঙ্গে। ইতিহাসের পাতায় বঙ্গদেশে ঈদুল ফিতরের প্রচলন নিয়ে সেরকম কোনো বিশেষ দলিল পাওয়া যায়নি। তবে বাংলার নানান ঐতিহাসিক গ্রন্থ উল্টে পাল্টে দেখলে দেখতে পাওয়া যায়

১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গদেশে মুসলমান শাসকেরা তাদের প্রতিপত্তি বিস্তার করতে থাকলেও নামাজ রোজার প্রচলন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উৎসবের প্রচলন বহু আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছিল।

বাংলায় যুদ্ধ মহামারী শুরু হওয়ার বহুআগে পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি দরবেশ ধর্ম সাধকেরা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে এসেছিলেন। পরে সেই সমস্ত ধর্ম সাধকেরা উত্তর ভারত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেন এবং বাংলাতে মুসলমান ধর্মের প্রসার ঘটান।

ঈদুল ফিতর কবে হবে (Idul Fitor Kobe Hobe)

রমজান মাস শেষ হওয়ার খুশিতে খুশির উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করা হয়। তবে ইসলামের নীতিমালায় ঈদুল ফিতর উৎসব সম্পূর্ণ চাঁদের দেখা পাওয়ার উপর নির্ভরশীল। চাঁদের হিসাব অনুযায়ী রমজান ২৯ দিনেও শেষ হতে পারে আবার ৩০ দিনেও শেষ হতে পারে।

তবে ৩০ দিনে রমজানের ইতিটানা ইসলামে সর্বোপরি। তবে ভারতবর্ষের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মুসলমান ভাইবোনেদের খুশির উৎসব ঈদ ২০২৩ সালে ২১ শে এপ্রিল শুক্রবার ঈদুল ফিতর উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে।

FAQ

প্রশ্ন- ঈদ কবে ২০২৩ ?

উঃ- ২০২৩ সালের ২১ শে এপ্রিল শুক্র বার ঈদ।

প্রশ্ন- ঈদ-উল-ফিতর পালিত হয় আরবি কোন মাসে

উঃ- ঈদ-উল-ফিতর পালিত হয় আরবি শাবান মাসে।

প্রশ্ন- ঈদ কবে হবে ?

উঃ- ঈদ ২০২৩ সালের ২১ শে এপ্রিল শুক্র বার।

পরিশিষ্ট

আমরা এতক্ষন ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয় , ঈদুল ফিতর কি, ঈদুল ফিতরের ইতিহাস, ঈদুল ফিতর কবে হবে ? ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব গুলো সংক্ষিপ্তাকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

আশাকরি আপনারা আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয় অথাৎ মুসলমান ভাইবোনেরা ঈদ কেন পালন করে সেই বিষয়ে অবগত হতে পেরেছেন। আপনাদের মনে ঈদুল ফিতর কি বা ঈদুল ফিতর কেন পালন করা হয় ?

এর বাইরে কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যতদ্রুত সম্ভব আপনার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

5/5 - (3 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here