গ্রীন টি কি, গ্রীন টির উপকারিতা, গ্রীন টি খাওয়ার নিয়ম, গ্রীন টি কখন খাওয়া উচিত, গ্রীন টি কি দিয়ে তৈরী হয়, গ্রীন টি কোনটি ভাল (Green Tea Ki, Green Tea Upokarita, Green Tea khaor niyom, Green Tea Kokhon Khaoya Uchit, Green Tea Ki Diya Toiri Hoy, Green Tea Konti Valo)

আজকালকার বর্তমান প্রজন্ম আমরা সকলেই গ্রীন টি (Green Tea) শব্দটির সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। তাই আমাদের আর্টিকেলের মূল আলোচ্য বিষয় হল গ্রীন টি নিয়ে। আমরা আপনাদের সঙ্গে এখন গ্রীন টি কি (Green Tea Ki) , গ্রীন টির উপকারিতা, গ্রীন টি খাওয়ার নিয়ম, গ্রীন টি কখন খাওয়া উচিত,

গ্রীন টি কি দিয়ে তৈরী হয়, গ্রীন টি কোনটি ভাল, গ্রীন টি খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি কি ? এককথায় গ্রীন টি বিষয়ক সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় গুলো আলোচনা স্বাপেক্ষে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

সাধারণভাবে দেখতে গেলে সবুজ পাতা রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়ার পর, সেই শুকনো পাতা তপ্ত তাওয়ায় সেঁকে সেঁকে গ্রীন টি (Green Tea) তৈরী করা হয়। গ্রীন টি এর পাতায় প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীর থেকে টক্সিন রিমুভ করার কাজ করে।

ফল স্বরূপ আমরা ছেলেবেলা থেকেই গ্রীন টির উপকারিতা গুলো শুনে আসছি। যেমন- গ্রীন টি পান করলে হাই প্রেসার থাকলে লো প্রেসার হয়ে যায়, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রন হয়, গ্রীন টি নিয়মিত পান করলে শরীরে ক্যানসার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি ইত্যাদি ।

তাছাড়া গ্রীন টি এর মধ্যে থাকা ক্যাটেচিন আমাদের শরীরে সরাসরি ভিটামিন-ই সরবরাহ করে। যার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের উপকার হয়। যেমন- ভিটামিন- ই আমাদের মেদ মুক্ত শরীর গঠনে সাহায্য করে।

তাই অনেকে গ্রীন টি কে শরীরের মেদ ঝরানোর উত্তম পানীয় বলে মনে করেন এবং প্রায়শই বহু মানুষ নিয়মিত রুটিন করে গ্রীন টি সেবন করেন। তবে মানুষের ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ হল পরিশ্রম না করে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেশি খাবার খাওয়া।

গ্রীন টি কি (Green Tea Ki)

গ্রীন টি কি (Green Tea Ki) ? মানে গ্রীন টি কি সাধারণ চায়ের মত চা পাতা থেকে তৈরী হওয়া বিশেষ পানীয় এমনটা কিন্ত একেবারে নয়। আসলে গ্রীন টি হল এক বিশেষ ধরণের চায়ের মতই সবুজ রঙের পানীয় যেটি সর্বপ্রথম চীন দেশের মানুষেরা খুঁজে বার করে।

পরে এই পানীয়টি চীন দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এক উত্তম স্বাস্থ্য সম্পন্ন পানীয় রুপে জাপান, মালেশিয়া ইত্যাদি দেশের মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় পানীয় রূপে তাদের দেশের সংস্কৃতির অঙ্গ স্বরূপ জায়গা তৈরী করে নেয়।

গ্রীন টি কি
গ্রীন টি কি (Green Tea Ki)

এই সবুজ রঙের পানীয়টি নিয়মিত পান করলে বহুবিধ উপকার পাওয়া যায়। তাই যারা নিয়মিত গ্রীন টি পান করে তাদের মেদ যুক্ত শরীর থাকলে Weight loss (ওজন কম করা) হয়, এছাড়াও গ্রীন টি সেবনে শরীরের টক্সিন রিমুভ হয় তাই ত্বকের জেল্লা ইত্যাদি পরিস্ফুটিত হয়।

গ্রীন টি কি দিয়ে তৈরী হয় (Green Tea Ki Diye Toiri Hoy)

গ্রীন টি হল ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের গাছের পাতার কুঁড়ি। আর এই কুঁড়ি গুলো শুকিয়ে এবং তপ্ত তাওয়ায় সেঁকে পরে গ্রীন টি তৈরী করা হয়। সাধারণ চায়ের তুলনায় গ্রীন টি-তে ক্লোরোফিল,পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে।

এই সবুজ পানীয়টি আয়ুর্বেদিক বহুগুন সম্পন্ন পানীয় হওয়ায় বর্তমান প্রজন্মের কাছে গ্রীন টি পানীয়টির চাহিদা সাধারণ চায়ের তুলনায় অনেক বেশি তুঙ্গে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে গ্রীন টি আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে।

নিয়মিত গ্রীন টি সেবনের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে, ওয়েট লস হয়, বার্ধক্য প্রতিরোধ করে, এছাড়াও শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বার করে আমাদের শরীরকে স্বাস্থ্যজ্জল রাখতে সাহায্য করে।

গ্রীন টি কত প্রকার (Green Tea Kato Prokar)

বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের গ্রীন টি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি গ্রীন টি হল যথা –

  • জেসমিন গ্রিন টি।
  • গ্যোকুরো গ্রিন টি।
  • বিলোচন গ্রিন টি।
  • সেনচা গ্রিন টি।
  • কুকিচা গ্রিন টি ।
  • গেন মাচা গ্রিন টি।
  • হাজিচা গ্রিন টি।

বর্তমানে এই সমস্ত ধরণের গ্রীন টি (Green Tea) বাজারে উপলব্ধ আছে। আপনারা আপনাদের পছন্দমত যে কোনো ফ্লেভারের গ্রীন টি কিনে পান করতে পারেন। আপনি যে ধরনের গ্রীন টি পান করুন না কেন, গ্রীন টি আপনার শরীরের জন্যে বহুগুন সম্পন্ন উপকারী একটি পানীয়।

গ্রীন টি বানানোর নিয়ম (Green Tea Bananor Niyom)

গ্রীন টি বানানো খুবই সহজ। আপনারা ঘরে, অফিস রুমে, খেলার ফাঁকে যে কোনো জায়গায় বসে গ্রীন টি বানাতে পারেন। গ্রীন টি বানানোর জন্যে প্রথমে পরিমান মত ( এক বড় কাপ জল) জল নিয়ে জলটিকে মোটামোটি ৮০ ডিগ্রী টেম্পারেচারে গরম করে নিতে হবে।

তারপর গরম জলের সঙ্গে ০৫ গ্রাম / এক চা চামচ গ্রীন টি ফেলে দিয়ে চামচ করে গুলে নিতে হবে। তারপর সামান্য ঠান্ডা হলে সেটাকে কাঁচের পাত্রে অথবা স্টিলের পাত্রে রাখতে হবে। এরপর আপনাকে চায়ের কাপে চা টিকে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

তবে আপনারা চাইলে এর সঙ্গে বেশ কিছু ফ্লেবার যেমন- হালকা মত দারচিনি গুঁড়ো, এলাচ গুঁড়ো, আমলা গুঁড়ো অথবা তার সাথে এক চা চামচ আমলার রস, এক চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ আদার রস ইত্যাদি

অ্যাড করে গ্রীন টি (সবুজ চায়ের) এর স্বাদ বদল করে গ্রীন টি পানের মধ্যে দিয়ে এক অন্য মাত্রার স্বাদ আস্বাদন করতে পারেন। আপনারা চাইলে সবাই গ্রীন টি পান করতে পারেন। তবে আমাদের অতিরিক্ত গ্রীন টি পান করা কখনই উচিত নয়। দিনে ০২ থেকে ০৩ কাপ গ্রীন টি আমাদের শরীরের জন্যে যথেষ্ট।

এছাড়াও ফ্লাক্সে গরম জল রেখে দিয়ে চায়ের কাপে গ্রীন টি মিশিয়ে নিয়ে অফিসে, খেলার মাঠে, ভ্রমণ করার সময় আপনারা যখন খুশি গ্রীন টি সেবন করতে পারেন। তবে কাপে গরম জলের সাথে গ্রীন টি মেশানোর পর ০২ থেকে ০৩ মিনিট গ্রীন টি ভিজিয়ে নিয়ে ছেঁকে পরে গ্রীন টি সেবন করতে হবে।

গ্রীন টি খাওয়ার নিয়ম (Green Tea Khaoyar Niyom)

আপনি যদি গ্রীন টি-সেবনের পর গ্রীন টির সব গুনাগুন একসাথে পেতে চান তাহলে আপনাকে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে পরে গ্রীন টি সেবন করতে হবে। আপনার মত হয়ত প্রায়শই মানুষের ধারণা এই যে গ্রীন টি পান করলেই খুব তাড়াতাড়ী শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝড়বে এবং শরীরের ওজন কমে আসবে।

তাই অনেকেই কি করে তাড়াতাড়ি ওজন কমানোর জন্যে যখন তখন গ্রীন টি পান করে। কিন্ত মানুষের যখন তখন গ্রীন টি পান করে ওজন কম করার ধারণা কিন্ত একেবারেই ভুল। প্রতিদিন ০২ থেকে ০৫ কাপ গ্রীন টি পান করা উচিত, তবে তার জন্যে অবশ্যই কিছু দিশা নির্দেশ রয়েছে।

সেই সমস্ত দিশা নির্দেশ গুলো পালন করে গ্রীন টি পালন করলে তবেই আপনি যথাপযুক্ত ভাবে গ্রীন টি সেবনের উপকার পাবেন। আসুন তাহলে গ্রীন টি খাওয়ার নিয়ম গুলো একটু ভালো করে জেনে নেওয়া যাক –

আমাদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা এই যে খাওয়ার পর গ্রীন টি সেবন করলে শরীরের চর্বি (ক্যালোরি) খুব তাড়াতাড়ি বার্ন হয়। মানুষের এই ধারণা কিন্ত একেবারে ভুল। কারণ খাবার খাওয়ার পর, খাবার থেকে পাওয়া প্রোটিন গুলো সঙ্গে সঙ্গে হজম হয়না, খাবার হজম করতে পাকস্থলীর

মোটামুটি ০৬ থেকে ০৭ ঘন্টা সময় লাগে। তাই খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই যদি গ্রীন টি খান তাহলে হয়ত আমাদের শরীরে উপকারের পরিবর্তে উল্টে ক্ষতি হতে পারে। খালি পেটে আমাদের কখনই গ্রীন টি খাওয়া উচিত নয়।

আমাদের দুটি ভারী খাবারের অন্তরালে মাঝখানের বিরতিতে গ্রীন টি পান করা উচিত। তবে আপনি যদি গ্রীন টি পান করার পর গ্রীন টি এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে চান তাহলে ভারী খাবার খাওয়ার ০২ থেকে ০৩ ঘন্টা পরে গ্রীন টি পান করতে পারেন।

গ্রীন টি কি
গ্রীন টি কি (Green Tea Ki)

গ্রীন টি এর মধ্যে অনেক বেশি পরিমানে ক্যাফিন ও ক্যাটেচিন থাকে যা আমাদের পাকস্থলীতে গিয়ে রক্তের সঙ্গে মিশে শরীরের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত চর্বি গুলোকে ঝড়াতে সাহায্য করে।

তাই আপনারা যারা ওজন কমাতে চান তারা ওজন কমানোর জন্যে খালি পেটে গ্রীন টি (Green Tea) সেবন না করে খাবার খাওয়ার পর ০২ ঘন্টার অন্তরালে গ্রীন টি পান করলে বেশি ভালো ফল পাবেন বলে আশা করি।

অতিরিক্ত পরিমানে গ্রীন টি সেবন আমাদের শরীরের জন্যে ক্ষতিকারক। কারণ গ্রীন টিতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ক্যাফিন থাকে। তাই গ্রীন টি এর মধ্যে থাকা ক্যাফিন অতিরিক্ত পরিমানে শরীরে মিশলে আমাদের অনিদ্রা রোগ দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত গরম জলে গ্রীন টি মেশানো পানীয় কখনই আমাদের সেবন করা উচিত নয়। সর্বদা হালকা ঈষদ গরম গ্রীন টি পান করা উচিত। অতিরিক্ত গরম করা গ্রীন টি পান করলে গ্রীন টি এর স্বাদ থাকেনা, এছাড়া অতিরিক্ত গরম গ্রীন টি (Green Tea) পান করলে গলায় ব্যাথা ও পেট খারাপ হতে পারে।

এমন বহু লোক আছেন যারা ঘুম ভাঙতে না ভাঙতে বেড টি হিসাবে গ্রীন টি পান করেন। বিশেষজ্ঞের মতে কিন্ত খালি পেটে কখনই গ্রীন টি পান করা উচিত নয়। কারণ গ্রীন টি এর মধ্যে ভারী মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পনিফেনল থাকে,

যা খালি পেটে পান করলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমান বাড়িয়ে দেয় যার ফল স্বরূপ আগে গিয়ে গ্রীন টি পানীয়টি আমাদের পাকযন্ত্র পাকস্থলীর হজম পক্রিয়া ব্যাহত করে হজম জনিত সমস্যা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তাই আমাদের কখনই খালি পেটে গ্রীন টি পান না করে ভর্তি পেটে গ্রীন টি পান করা উচিত। চিনির বিকল্প হিসাবে অনেকেই গ্রীন টি (Green Tea) এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে গ্রীন টি এর সাথে মিষ্টির স্বাদ নিতে চায়।

তবে একটা বিষয় একটু মনে রাখবেন ফুটন্ত গরম জলে কখনই মধু মেশাবেন না, এতে মধুর পুষ্টি গুন্ নষ্ট হয়ে যায়। তাই গ্রীন টি এর সাথে মধু মিশিয়ে মিষ্টির স্বাদ নিতে চাইলে গ্রীন টি ও তার পানীয় একটু ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর তাতে মধু মিশিয়ে গ্রীন টি (Green Tea) পান করুন। এতে মধু ও গ্রীন টি উভয়ের গুনাগুন অক্ষত থাকবে।

এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের হয়ত শারীরিক অসুস্থতার কারণে সকালে ট্যাবলেট (ওষুধ) খেতে হয়। তাই তারা কি করেন গ্রীন টি সহযোগে ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেন। এমনটা করা কিন্ত আমাদের শরীরের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর।

কারণ ওষুধের মধ্যে থাকা রাসায়নিক যৌগটি গ্রীন টি (Green Tea) এর সঙ্গে মিশে গিয়ে অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। তাই আপনাদের সকাল বেলা বা অন্য সময়ে ঔষধ খাওয়ার থাকলে তা জল দিয়ে খান। গ্রীন টি দিয়ে কখনই ঔষধ খাবেন না।

চটজলদি মেদ ঝরিয়ে রোগা পাতলা হওয়ার চক্করে অনেকে দিনে ১০ থেকে ১২ কাপ গ্রীন টি পান করাকে স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন। আমাদের কিন্ত এমনটা করা উচিত নয়। কারণ আমাদের সকলের জানা উচিত গ্রীন টি (Green Tea) এর মধ্যে প্রচুর পরিমানে ক্যাফেইন থাকে।

তাই বার বার গ্রীন টি পান করলে গ্রীন টি এর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন আমাদের মাথাধরা, চিড়চিড়ে ভাব, মনোযোগ হারানো এবং অনিদ্রার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই একজন সুষ্ঠ স্বভাবাবিক মানুষের জন্যে দিনে ০২ থেকে ০৩ কাপ গ্রীন টি পান করাই যথেষ্ট।

আপনারা অনেকেই হয়ত গ্রীন টি এর রং গাঢ় করার জন্যে দীর্ঘ্যক্ষন ধরে ফুটন্ত জলে গ্রীন টি মিশিয়ে ফোটান। তবে গ্রীন টি দীর্ঘ্যক্ষন ধরে না ফুটিয়ে অল্প সময় মত মোটামোটি ঈষদ গরম জলে গ্রীন টি এর পাতা দিয়ে আপনি গ্রীন টি পান করতে পারেন।

গ্রীন টি কি
গ্রীন টি কি (Green Tea Ki)

আমাদের কখনই তাড়াহুড়ো করে গ্রীন টি পান করা উচিত নয়। তাই অফিস যাওয়ার সময় বা আপনার কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করে গ্রীন টি পান না করে, আমাদের বিশ্রাম করার সময় ধীরে সুস্থে গ্রীন টি পান করা উচিত।

একসঙ্গে গ্রীন টি এর ০২ ব্যাগ কাপের মধ্যে চুবিয়ে নিয়ে গ্রীন টি পান করার অভ্যাস হয়ত আমাদের অনেকেরই আছে। তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন একসাথে গ্রীন টি এর ০২ টি ব্যাগ ভিজিয়ে গ্রীন টি (Green Tea) পান করলে আপনার ওজন হয়ত তড়তড়িয়ে ঝরে যাবে।

কিন্ত অপরদিকে ০২ টি করে গ্রীন টি এর ব্যাগ একসাথে ভিজিয়ে গ্রীন টি পান করলে নতুন করে আপনার এসিডিটি ও হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমার মনে হয় আমাদের একসাথে ০২ টি করে গ্রীন টি এর ব্যাগ ভিজিয়ে গ্রীন টি পান না করে,

দিনের বিভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদা করে ০১ টি করে গ্রীন টি এর ব্যাগ ভিজিয়ে গ্রীন টি পান করলে আমরা যেমন গ্রীন টি পানের উপকারিতা পাব। তেমনি আবার আমাদের হেলথ ও ভালো থাকবে।

আবার খাবার খাওয়ার পরে পরেই ০১ দু-ঘন্টা সময়ের ব্যবধান না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে গ্রীন টি পান করলে আমাদের উপকার না হয়ে উল্টে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই আপনাদের বিশেষজ্ঞদের কথা মেনে দুটি খাবারের মাঝখানের অন্তরাল সময় টুকুতে গ্রীন টি পান করা উচিত।

আপনারা যদি গ্রীন টি পান করে গ্রীন টি থেকে যথাযথ উপকার পেতে চান তাহলে অবশ্যই খালি পেটে গ্রীন টি পান না করে ০২ টি খাবারের অন্তরালে ভারী খাবার খাওয়ার ০২ ঘন্টা আগে বা পরে গ্রীন টি পান করতে পারেন।

গ্রীন টির উপকারিতা (Green Tea Benefit’s)

গ্রীন টি (Green Tea) একটি আয়ুর্বেদিক গুণসম্পন্ন ভেষজ হওয়ায় গ্রীন টি কে আমরা একটি উত্তম স্বাস্থ্যকারী পানীয় হিসাবে পান করি। গ্রীন টি এর মধ্যে বহু আয়ুর্বেদিক গুন থাকায় গ্রীন টি কে আমরা পানীয়র সাথে সাথে আরো বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে গ্রীন টি থেকে নানান ধরণের উপকার পেতে পারি।

আমরা এখন গ্রীন টির উপকারিতা নিয়ে গ্রীন টি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে কীভাবে নানাবিধ উপকার পাওয়া যায় সেই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনারা নিজেরা এই সমস্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে গ্রীন টি থেকে নানা বিধ উপকার পেতে পারেন।

০১. বর্তমানযুগে তরুণ প্রজন্ম ওজন কমানোর জন্যে (Weight loss) গ্রীন টি এর ব্যবহার সবথেকে বেশি করে থাকেন। শরীর ফ্যাট মুক্ত করার জন্যে অথাৎ শরীরের ওজন কমানোর জন্যে অনেকেই গ্রীন টি পান করে থাকেন।

গবেষনায় দেখা গেছে যাদের মেদ যুক্ত শরীর তারা চটজলদি নিজেদের শরীর ফ্যাট মুক্ত করার জন্যে গ্রীন টি পান করতে পারেন। যদি কোন ব্যক্তি নিয়ম করে গ্রীন টি পান করে তাহলে প্রতিদিন গ্রীন টি পান করে দৈনিক ৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করতে পারে।

সুতরাং বুঝতেই পাচ্ছন পুরো বিষয়টা যদি অঙ্ক কষে দেখতে যান তাহলে দেখতে পাবেন একজন ব্যক্তি নিয়মিত গ্রীন টি পান করে বছর ০৭ পাউন্ড ওজন কমাতে পারে। তাহলে দেখুন নিয়মিত গ্রীন টি সেবন ফ্যাট যুক্ত শরীরের জন্যে কতটা উপাদেয়।

০২. গ্রীন টি (Green Tea) দিয়ে খুব ভাল ফেস টোনার তৈরী করা যায়। এই ফেস টোনার তৈরী করার জন্যে এক কাপ জল নিয়ে, সেই জলের মধ্যে ০৫ চামচ গ্রীন টি এবং তার সঙ্গে ০১ চামচ পুদিনার পাতা দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন।

তারপর সেই গ্রীন টি ও পুদিনা পাতা ফোটানো জল ঠান্ডা করে নিয়ে কোনো স্পে করা যায় এমন বোতলে স্টোরেজ করে নিন। এবার নিয়মিত আপনার মুখমণ্ডলে গ্রীন টি ও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরী ফেস টোনার দিনে ০২-০৩ বার স্প্রে করুন দেখবেন আপনার ত্বক গ্লো করছে।

০৩. গ্রীন টি এর পাতায় প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) থাকে যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক টক্সিন গুলো বার করে দিয়ে আমাদের শরীররের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।

০৪. গ্রীন টি এর ব্যবহার আপনার চোখের নিচের কালি পড়া (Dark Circle) দাগ কমানোর জন্যে ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্যে প্রথমেই আপনাকে যেটা করতে হবে তা হল গ্রীন টি এর ০২ টি ব্যাগ নিয়ে ঘন্টা দুয়েক ফ্রীজে ঠান্ডা করার জন্যে রেখে দিতে হবে।

তারপর ফ্রীজ থেকে গ্রীন টি এর ব্যাগ দুটো বার করে নিয়ে চোখ বন্ধ করে চোখের উপর গ্রীন টি এর ব্যাগ দুটো রেখে দিতে হবে। এতে আপনার চোখের কালি দাগ দূর করার পাশাপাশি চোখের নিচে ফোলা ভাব থাকলে সেগুলোও দূর হয়ে যাবে।

০৫. গ্রীন টি (Green Tea) দিয়ে খুব ভাল স্ক্রাব তৈরী করা যায়। এর জন্যে আপনাকে গ্রীন টি এর সঙ্গে পরিমান মত মধু মিশিয়ে গ্রীন টি ও মধুর মিশ্রনের স্ক্রাব তৈরী করে নিতে হবে। তারপর সেই স্ক্রাব আপনার মুখে ভালো করে ঘষে ঘষে লাগাতে হবে।

এতে আপনার লোমকূপের মধ্যে জমে থাকা ধুলোবালি ও ময়লা পরিষ্কার হবে এবং আপনার ত্বকের মৃত কোষ গুলোর জায়গায় নতুন কোষ তৈরী হয়ে আপনার ত্বককে মসৃন করে তুলবে।

০৬. গ্রীন টি দিয়ে আপনি আপনার ফ্রীজের দুর্গন্ধ দূর করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে গ্রীন টি এর শুকনো পাতা পরিষ্কার কোনো কাপড়ের মধ্যে বেঁধে নিয়ে বন্ধ ফ্রীজের ভেতরে রেখে দিতে হবে। এতে আপনার ফ্রিজের দুর্গন্ধ এড়ানো যাবে।

০৭. গ্রীন টি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। গ্রীন টি নিয়মিত পান করলে মুখের ভিতরের ওরাল ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। যার ফলে আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায় এবং আমাদের মুখের Dental Cavities দূর হয় ।

০৮. গ্রীন টি এর ব্যবহার করে চুল পড়া প্রতিরোধ করা যায়। এরজন্যে আপনাকে এক লিটার জলের মধ্যে ০৪-০৫ টি গ্রীন টি এর ব্যাগ চুবিয়ে ভাল করে ০১ ঘন্টা ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে।

তারপর চুলে ভাল করে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দেওয়ার পর গ্রীন টি ফোটানো জল ঠান্ডা করার পর সেই জল দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। এইভাবে শ্যাম্পু করার পর গ্রীন টি এর জল দিয়ে মাথা ধুলে আপনার চুল পড়া প্রতিরোধ হওয়ার সাথে সাথে চুলের গোঁড়া মজবুত হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

০৯. গ্রীন টি (Green Tea) পান করলে 44 % পর্যন্ত হার্ট এর্টাকের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই একজন সাধারণ ব্যক্তির তুলনায়, যারা নিয়মিত গ্রীন টি পান করে তাদের হার্ট এর্টাকের পাশাপাশি ব্লাড প্রেসার (Blood Pressure) অনেকটাই কন্ট্রলে থাকে।

১০. গ্রীন টি দিয়ে বগলের ঘামের দুর্গন্ধ দূর করা যায়। তাই যাদের বগলে গন্ধ ছাড়ে তারা যদি স্নান করার পর গ্রীন টি এর পাতা ভিজিয়ে রেখে ঠান্ডা গ্রীন টি বগলে লাগালে বগলের ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়।

১১. গ্রীন টি দিয়ে ময়েশ্চারাইজিং ফেস মাস্ক (Moisturizing Mask) তৈরী করা যায়। এর জন্যে আপনাকে ০১ চামচ গ্রীন টি, ০১ চামচ টক দই এবং তার সাথে ০১ চামচ মধু মিক্স করে পুরো মুখমণ্ডলে লাগাতে হবে।

এরপর মুখমণ্ডলে সেই প্রলেপ ১০-১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে, দেখবেন প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের যত ধুলোবালি দূর হয়ে যাবে এবং আপনার ত্বক দুধের মত ধব ধবে পরিষ্কার দেখাবে।

১২. মুখের ব্রণ দূর করার জন্যে গ্রীন টি একটি খুব ভাল প্রাকৃতিক ভেষজ হিসাবে কাজ করে। তাই যারা ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তারা গ্রীন টি ভিজিয়ে মুখমন্ডলের ত্বকের উপর লাগালে ব্রণের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। উপকার পাওয়া যায়।

গ্রীন টি এর অপকারিতা

নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে, গ্রীন টি এর থেকে যেমন অনেক উপকার পাওয়া যায়। তেমন গ্রীন টি পান করলে গ্রীন টি থেকে অনেক আবার অপকারও হয় । এখন তবে গ্রীন টি এর অপকারিতা গুলো সমন্ধে জানা যাক।

০১. আপনি যদি খালি পেটে গ্রীন টি (Green Tea) পান করেন তাহলে আপনার পেটে ট্যানিন এসিডের পরিমান বেড়ে গিয়ে আপনার পেট ব্যাথার কারণ হিসাবে দেখা দিতে পারে। যার ফল স্বরূপ পেটের আরো অন্যান্য রোগ যেমন- কোষ্ঠ্য কাঠিন্য ও গা বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

০২. যাদের পেটে পেপটিক আলসার আছে তাদের খালি পেটে কখনই গ্রীন টি পান করা উচিত নয়। কারণ খালি পেটে গ্রীন টি পান করার ফলে তাতে পেটে পেপটিক আলসার বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।

০৩. যাদের রক্তচাপ জনিত সমস্যা আছে তাদের খালি পেটে গ্রীন টি না খাওয়ায় ভাল। কারণ খালি পেটে গ্রীন টি পান করলে গ্রীন টি এর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপিত করে আমাদের শরীরে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে।

গ্রীন টি কি
গ্রীন টি কি (Green Tea Ki)

০৪. অতিরিক্ত পরিমানে গ্রীন টি পান করলে আমাদের শরীরে অনিদ্রা জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কখনই আমাদের দিনে ০৩-০৫ কাপের বেশি গ্রীন টি পান করা উচিত নয়।

০৫. অতিরিক্ত গ্রীন টি সেবনের ফলে আমাদের পাকস্থলীতে এসিডিটি তথা বিপাকীয় পক্রিয়া তৈরী করে আমাদের হজমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।

০৬. খুব বেশি বেশি করে গ্রীন টি সেবন করলে গ্রীন টি এর মধ্যে থাকা ক্যাফেইন আমাদের শরীরের হরমোনের ডিসব্যালেন্স ঘটিয়ে মাথা যন্ত্রনা বা মাইগ্রেনের সমস্যা তৈরী হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।

পরিশিষ্ট

এতক্ষন আমরা গ্রীন টি কি ? আর্টিকেলের মাধ্যমে গ্রীন টির উপকারিতা, গ্রীন টি কি দিয়ে তৈরী হয়, গ্রীন টি খাওয়ার নিয়ম, গ্রীন টি বানানোর নিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করলাম।

আশাকরি আপনারা গ্রীন টি কি ? আর্টিকেলটি পড়ে গ্রীন টির বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা এবং গ্রীন টি খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি বিষয় গুলো সমন্ধে মোটামোটি ধারণা পেয়েগেছেন।

তবুও আপনাদের মনে গ্রীন টি ও গ্রীন টি সেবনের বিভিন্ন বিষয়ে কোনো ধরণের জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

5/5 - (2 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here