কেমোথেরাপি কি,কেমোথেরাপি কত প্রকার, কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট। (Chemotherapy Ki, Chemotherapy Koto Prokar, Chemotherapy Treatment)

আশাকরি আপনারা কেমোথেরাপি (Chemotherapy) নামটার সাথে কমবেশি সবাই মোটামোটি পরিচিত। আজকে আমরা আলোচনা করব কেমোথেরাপি কি ? কেমোথেরাপি কত প্রকার ? কেমোথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় ?

কেমোথেরাপি দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হয় ? ইত্যাদি বিষয় গুলো নিয়ে। বর্তমানে ক্যান্সারের (Canser) মত মারণ ব্যাধির উপাদেয় ঔষধি হিসাবে সর্বাপেক্ষা ব্যবহৃত প্রণালীটি হল কেমোথেরাপি। তবে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ কেমোথেরাপির নাম শুনে থাকলেও

কেমোথেরাপি বিষয়টা নিয়ে তত বেশি হয়তো জানেন না। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কেমোথেরাপি বিষয়টাকে নিয়ে একটু গভীরভাবে আলোচনা করে আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরব। আপনারা আমাদের কেমোথেরাপি নিয়ে আর্টিকেলটি

আগাগোড়া পুরো বিষয়টি মনযোগ দিয়ে পড়ুন তাহলেই কেমোথেরাপি কি ? (Chemotherapy Ki) এই প্রশ্নের যথাচিত উত্তর আপনারা পেয়ে যাবেন বলে আশারাখি। চলুন তাহলে পরের অনুচ্ছেদের দিকে চোখ বুলোনো যাক।

Table of Contents

কেমোথেরাপি কি (Chemotherapy Ki) ?

ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কতগুলো বিশেষ প্রকারের ঔষধের একত্রিত মিশ্রণ হল কেমোথেরাপি (Chemotherapy)। কেমোথেরাপির (Cytoxic) দ্বারা মানব দেহের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ (Cell) গুলোকে নষ্ট করে দেওয়া হয়।

কেমোথেরাপি কি
কেমোথেরাপি কি

প্রায় ১০০-র কিছু বেশি প্রকারের ঔষধের সংমিশ্রন কেমোথেরাপি পক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়। তবে রোগীর দেহে ক্যান্সারের উপস্থিতি, ক্যান্সারের ধরণ এবং ডাক্তার বাবুর চিকিৎসা প্রণালীর তারতম্য অনুসারে কেমোথেরাপির এই ঔষধের সংমিশ্রণ পরিবর্তন হতে পারে।

কেমোথেরাপি কত প্রকার (Chemotherapy Koto Prokar)

বর্তমানে চার প্রকারের কেমোথেরাপি (Chemotherapy) সচরাচর রোগীর দেহে প্রয়োগ করতে দেখতে পাওয়া যায়। আসুন তাহলে একে একে কেমোথেরাপি কত প্রকার ও কি কি পুরো বিষয়টা একটু বর্ণনাত্মকভাবে নিচের অনুচ্ছেদে দেখা যাক।

কেমোথেরাপি মূলত চার প্রকার –

অ্যান্টিটিউমার অ্যান্টিবায়োটিক ( অ্যানথ্রাসাইক্লাইন )

অ্যানথ্রাসাইক্লাইন অথাৎ অ্যান্টিটিউমার অ্যান্টিবায়োটিক যা মানবদেহে হওয়া বিভিন্ন ধরনের টিউমার সেল গুলোর বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে, অ্যান্টিটিউমার অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে।

এই অ্যান্টিটিউমার অ্যান্টিবায়োটিক গুলো মানব দেহে উপস্থিত ক্যান্সার টিউমার সেলের DNA গুলোকে যাতে প্রতিলিপি না তৈরী করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম গুলোতে প্রবেশ করে টিউমার সেলগুলোর বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।

বর্তমানে অ্যান্টিটিউমার অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি স্বরূপ ব্যবহৃত হওয়া কতগুলো ঔষধের উদাহরণ হল- ডক্সোরুবিসিন, মাইটোমাইসিন-সি এবং ব্লোমাইসিন।

আরো পড়ুন : স্বপ্ন দোষ কেন হয়, স্বপ্ন দোষ দূর করার উপায়।

অ্যান্টিমেটাবোলাইটস

অ্যান্টিমেটাবোলাইট হল কেমোথেরাপি চিকিৎসার (কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট) বিশেষ এক ঔষধ যা ক্যান্সার আক্রান্ত সেলের RNA এবং DNA উভয়ের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। মানবদেহে একটি কোষের জীবনকাল একটি নির্দিষ্ট চক্রাকারে চলে।

কেমোথেরাপির অ্যান্টিমেটাবোলাইট ঔষধি প্রয়োগের ফলে কোষের জীবনচক্রাল পুরো হওয়ার আগে অথাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত (Canser) কোষ গুলো সংক্রামিত নতুন ক্যান্সার কোষ জন্ম দেওয়ার আগেই, কোষ গুলোর বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলোকে নষ্ট করে দেয়।

ক্যান্সারের চিকিৎসার কেমোথেরাপির (Chemotherapy) এই ঔষধ গুলো স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়, অন্ত্রের ক্যান্সার এবং ব্লাড ক্যান্সারের মত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির কিছু অ্যান্টিমেটাবোলাইট ঔষধের উদাহরণ হল- ক্যাপিসিটাবাইন, জেমসিটাবাইন,পেমেট্রেক্সড ইত্যাদি।

অ্যালকিলেটিং এজেন্ট

অ্যালকিলেটিং এজেন্ট হল এযাবৎ সবথেকে প্রাচীন ক্যান্সারের চিকিৎসায় অতিপ্রচলিত কেমোথেরাপির ঔষধ। কেমোথেরাপির এই ধরনের ঔষধ গুলো সরাসরি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলোর DNA এর উপর হামলা করে-

ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলোর বংশবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের পুনরুৎপাদন বন্ধ করে। তবে এযাবৎ ক্যান্সারের চিকিৎসায় যত ধরনের ঔষধ আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে সবথেকে প্রভাবশালী কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট হল অ্যালকিলেটিং এজেন্ট প্রণালী।

বর্তমানে অ্যালকিলেটিং এজেন্ট প্রণালীর ঔষধ গুলি ব্লাড ক্যান্সার (Blood Canser), লিম্ফোমা (লিমফ নোড, অস্থি মজ্জা, থাইমাস গ্রন্থির অন্তর্ভুক্ত লিম্ফ্যাটিক ক্যান্সার), সারকোমা (হাড় এবং নরম টিস্যু থেকে শুরু করে বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে ক্যান্সার),

হজকিনের রোগ (ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশের ক্যান্সার), এছাড়াও মস্তিস্ক, স্তন, ফুসফুস ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার নিরাময়ে হিসাবে অ্যালকিলেটিং এজেন্ট কেমোথেরাপি প্রণালী ব্যবহার করা হয়।

অ্যালকিলেটিং এজেন্ট পক্রিয়ায় ক্যান্সার (Canser) নিরাময়ে কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হল – অক্সালিপ্ল্যাটিন, সিসপ্ল্যাটিন এবং কার্বোপ্ল্যাটিন ইত্যাদি।

উদ্ভিদ অ্যালকালয়েড

কেমোথেরাপিতে উদ্ভিদ অ্যালকালয়েড পক্রিয়া হল একটি প্রাকৃতিক পক্রিয়া যা মূলত গাছ গাছালি থেকে পাওয়া যায়। কেমোথেরাপিতে এই গাছ গাছালি থেকে পাওয়া ঔষধ গুলি প্রয়োগের ফলে কোষের প্রজোজনের প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ বন্ধ করে মানব দেহের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ বিভাজনকে বাধা দেয়।

কেমোথেরাপিতে (Chemotherapy) ক্যান্সার (Canser) নিরাময়ে প্রয়োগ হওয়া কতগুলো উদ্ভিদ অ্যালকালয়েডের উদাহরণ হল ভিনক্রিস্টাইন, ভিনব্লাস্টাইন এবং ভিনোরেলবাইন ইত্যাদি।

কেমোথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় (Chemotherapy Kivabe Deoya Hoy)

বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যান্সার প্রতিরোধে কেমোথেরাপির ওষুধ (কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট) বিভিন্ন পক্রিয়ায় প্রয়োগ করার নানাবিধ কৌশল আবিষ্কার হয়েছে। এখন আমরা কেমোথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় সেই ব্যাপারে আলোচনা করব-

কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট (Chemotherapy) পক্রিয়া হল একটি রুটিন মাফিক দীর্ঘ্যমেয়াদি চলা ক্যান্সার চিকিৎসাকরণের পক্রিয়া। এই পক্রিয়ায় রোগীকে কয়েক মাস বা বেশ কয়েক সপ্তাহ কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টের মধ্যে থাকতে হতে পারে।

কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টে পুরো একটা সিরিজ বা কোর্স চলে যাকে আপনারা কেমোথেরাপির ট্রিটমেন্টের একটা চক্র বা কেমোথেরাপির পুরো কোর্স বলতে পারেন। এই চক্রে ক্যান্সারের চিকিৎসার সময় রোগীকে নির্দিষ্ট একটি দিনে অথবা প্রতিদিন কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হতে পারে।

কখনো কখনো রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার পর নতুন স্বাস্থ্যকর কোষ তৈরী করতে রোগীর বেশ খানিকটা সময় বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে তখন গ্যাপ রেখে ডাক্তারবাবুরা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে রোগীকে কেমোথেরাপি দিয়ে থাকেন।

সাধারণ মৌখিক কেমোথেরাপি (Oral Chemotherapy)

এটি হল ক্যান্সার চিকিৎসার কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টের প্রাথমিক কেমোথেরাপি চিকিৎসা। এই ধরণের কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টে ডাক্তারবাবু দ্বারা রোগীকে ওষুধ (ক্যাপসুল) খেতে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিকে PO “per os” বলা হয় যার অর্থ হল “মৌখিক বা মুখ দ্বারা” (এটা মুখ্যত মুখ দিয়ে ওষুধ খেতে হয় )

যা রোগী জল দিয়ে গিলে ফেলার পর পেটের মধ্যে পাকস্থলীতে গিয়ে পাকস্থলীর পাচন রসে গলে গিয়ে ওষুধ দ্রবীভূত হয়ে যায়। যে সমস্ত রোগীর ক্যান্সার একদম প্রথম পর্যায়ের দিকে থাকে অথাৎ শুরুর দিকেই ক্যান্সার ধরা পরে,

কেমোথেরাপি কি
কেমোথেরাপি কি

সেই সমস্ত রোগীদের ডাক্তারবাবু Oral Chemotherapy দিয়ে ওষুধের দ্বারাই কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট শুরু করা হয়। তবে এক্ষেত্রে রোগীকে ক্যান্সার নিরাময় যতক্ষণ পর্যন্ত না হচ্ছে ততদিন নিয়মিত ডাক্তারবাবুর কাছে চেকআপ করার জন্যে আসতে হয়।

ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপি (Intravenus Chemotherapy)

এই ধরণের কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট মূলত রোগীর শিরায় IV দেওয়া হয়। এটি একটি ইঞ্জেসেনের সিরিঞ্চ দিয়ে অথবা সেন্ট্রাল ভেনাস ক্যাথেটার (সেলাইনের দ্বারা) ব্যবহার করে সরাসরি রোগীর শিরায় ওষুধ পুশ করা হয়।

ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপি রাসায়নিকভাবে ভাবে খুব ফলপ্রদ এক কৌশল। শিরাপথে ওষুধ গুলো পুশ করা হয় তাই অন্যান্য থেরাপির তুলনায় ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপি রোগীর শরীরে দ্রুত প্রভাব ফেলে ক্যান্সার কোষ গুলোকে মেরে ফেলে।

সাবকুটেনিয়াস কেমোথেরাপি (Subcutaneous Chemotherapy)

এই ধরনের কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট মূলত ত্বকের নিচে সরু ক্যানুল অথবা সুঁচ ঢুকিয়ে কেমোথেরাপির ওষুধ ইনজেকশনের দ্বারা ত্বকের নিচে প্রয়োগ করা হয়। যেমন- টিউমার এর মত ক্যান্সারের চিকিৎসায় এই ধরনের কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করা হয়।

ইন্ট্রামাসকুলার কেমোথেরাপি (Inhanuscular Chemotherapy)

এই ধরনের কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টে রোগীর মাংস পেশীতে কেমো প্রয়োগ করে করা হয়। ডাক্তারবাবুরা এই ক্ষেত্রে ওষুধটিকে রোগীর মাংস পেশীতে ঢোকানোর জন্যে সূক্ষ্ম সুঁচের প্রয়োগ করে থাকেন।

ইন্ট্রাথেকাল কেমোথেরাপি (Intrathecal Chemotherapy)

কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টের ক্যান্সার নিরাময়ে আর একটি বিশেষ থেরাপি হল ইন্ট্রাথেকাল মানে “সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF)”/ মেরুদণ্ডের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে কেমোথেরাপির ওষুধ প্রয়োগ।

ডাক্তারবাবুরা রোগীদের কটিদেশীয় খোঁচার সাহায্যে, কেমোথেরাপির ওষুধটি মেরুদণ্ডে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে (সিএনএস) পৌঁছানোর জন্য সিএসএফ-এর ইনজেকশন দিয়ে থাকেন।

ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার কেমোথেরাপি

ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার মানে মস্তিষ্কের “ভেন্ট্রিকেলের মধ্যে”। এই ধরণের কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টে কেমোথেরাপির ওষুধটি মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকলের একটিতে সরবরাহ করা হয় যেখান থেকে এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে (সিএনএস) বিতরণ করে।

এই ধরনের কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট মূলত মানুষের কোনো একটি নির্দিষ্ট অঙ্গে যখন ক্যান্সার চিহ্নিত হয়, তখন রোগীর সেই নির্দিষ্ট অঙ্গটি চিহ্নিত করে ডাক্তারবাবুরা ইন্ট্রাভেন্ট্রিকুলার কেমোথেরাপি প্রয়োগ করেন। যেমন- লিভার, কিডনি, মস্তিস্ক ইত্যাদি।

আরো পড়ুন : গরমে বাচ্চাদের ঘামাচি দূর করার উপায়।

কেমোথেরাপি কিভাবে কাজ করে

ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি হচ্ছে ক্যান্সার সেলের জন্যে একপ্রকার বিষ। যা ক্যান্সার রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হলে কেমোথেরাপিতে মেশানো ওষুধ রোগীর শরীরে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে।

বিজ্ঞানের ভাষায় কেমোথেরাপির ওষুধের সাথে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের এই রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সাইটোটক্লিক কেমিক্যাল বলা হয়। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কেমোথেরাপি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলোর জন্য বিষাক্ত হলেও

কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধ গুলোর পার্শ্বপতিক্রিয়া রোগীর সুস্থ -স্বাভাবিক আরো অন্যান্য কোষ গুলোর উপর খারাপ প্রভাব ফেলে রোগীর সুস্থ-সবল কোষ গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তবে এটাও ঠিক কেমোথেরাপি যেমন ক্যান্সার (Canser) আক্রান্ত কোষ গুলোকে যেমন বেছে বেছে মেরে ফেলে। অপরদিকে রোগীর সুস্থ-সবল কোষ গুলোকে যতটা সম্ভব কম ধ্বংস করে। বর্তমানে কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট ক্যান্সার নিরাময়ে

অনেকাংশেই ফলপ্রদ হওয়ায় চিকিৎসকরা ক্যান্সারের চিকিৎসায় এখন অনেক বেশি সাফল্য পাচ্ছেন। কেমোথেরাপির মাধ্যমেই শরীরের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ এবং ভালো কোষ গুলোকে চিহ্নিত করে আলাদা করে ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে।

শরীরের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ ও সুস্থ কোষের মধ্যে একটি প্রধান পার্থক্য হল, ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলো পুনরায় দ্রুত দ্রুত নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের জন্ম দেয়। অন্যদিকে একটি সুস্থ কোষ ক্যান্সার কোষের মত দ্রুত আলাদা হয় না এবং বিস্তার লাভ করে না।

ক্যান্সার কোষ গুলো দ্রুত প্রজনন ঘটিয়ে নতুন করে ক্যান্সার (Canser) কোষের জন্ম দেয় যা মানব শরীরে নতুন করে টিউমার হিসেবে দেখা দেয়। তাছাড়া মানব শরীরে যে সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে সেটা ক্যান্সার কোষের প্রজননকে প্রতিরোধ করতে পারেনা।

কেমোথেরাপি কি
কেমোথেরাপি কি

মানবদেহে ক্যান্সার কোষ শরীরের ভিতরেই তৈরী হয় তাই শরীরের অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমধাপেই ক্যানসারকে শরীরের বাইরে বার হয়ে আসতে দেয়না। যার ফলে শুরুর স্টেজে বাইয়োপ্সি ছাড়া বাইরে থেকে ক্যান্সার নির্ণয় করা খুব মুশকিল।

কেমোথেরাপি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমনভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাতে ক্যান্সার কোষগুলোকে বাইরে থেকে আসা কোষ হিসেবে দেখে এবং সেগুলোকে আক্রমণ করে।

কেমোথেরাপি দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হয়

আমাদের সবারই মোটামোটি কেমোথেরাপি কি (Chemotherapy) জন্যে দেওয়া হয় ? এর কারণ মোটামোটি সবারই জানা ! বাকি কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট কি ? কেমোথেরাপি কত প্রকার ? কেমোথেরাপি কিভাবে দেওয়া হয় ? এই সমস্ত প্রশ্ন গুলোর মোটামোটি যথাযত উত্তর আমরা উপরের পঙতিতে আলোচনা করেছি।

এবারে আমাদের যেটা জানার বিষয় হল কেমোথেরাপি দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হয় অথাৎ কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্ৰতিক্রিয়া গুলো কি কি ? কেমোথেরাপির ওষুধ ক্যান্সার রোগীর শরীরের অবাঞ্চিত বাড়ন্ত কোষগুলোকে মারার কাজ করে।

কিন্তু এখানে কেমোথেরাপির ওষুধ গুলো ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলোকে মারার সাথে সাথে সেই ওষুধ শরীরের আরো অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায় তাই শরীরের সুস্থ অণুকোষ গুলো কেমোথেরাপির ওষুধের সংস্পর্শে এসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যার ফলে মানব দেহে বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখা যায়। কেমোথেরাপি নেওয়ার পর শরীরের ভিতরে ও বাইরে ফুটে ওঠা এই বিভিন্ন ধরনের লক্ষন হল কেমো থেরাপির পার্শ্বপ্ৰতিক্রিয়া। আসুন তাহলে ক্যান্সার রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার কি কি সমস্যা হয় ? অথাৎ কেমোথেরাপির সাইডইফেক্ট গুলো জানা যাক।

কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্ৰতিক্রিয়া গুলো হল –

০১. মাথার চুল পড়ে যাওয়া শরীরের যেসব কোষ চুলের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত কোষগুলো কেমোথেরাপির ওষুধ দ্বারা সংক্রামিত হয়। যার ফল স্বরূপ মাথার চুল পড়ে যায়। তবে কেমোথেরাপি শেষ হলে ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করলে মাথার চুল পুনরায় গজিয়ে যায়।

০২. ডায়রিয়া – কেমোথেরাপি দেওয়ার ফলে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে তাই ক্যান্সার চিকিৎসা চলাকালীন এবং ক্যান্সারে আরোগ্য লাভের পর কেমো নেওয়া ব্যক্তির ডায়রিয়া হতে পারে।

০৩. গা গুলানো ও বমি বমি ভাব – ক্যান্সার (Canser) রোগীকে কেমো দেওয়ার ফলে খাবারে রুচি চলে যায়। তাই সাধারণত কেমো নেওয়া ব্যক্তির সামনে খাবার রাখলেই গা গোলায় এবং বমি বমি ভাব পায়।

০৪. ক্লান্তি ও অবসন্নতা – কেমো নেওয়ার সময় ক্যান্সার রোগীর এমনিতেই খাবার দাবারে রুচি চলে যায়। তাছাড়া কেমো দেওয়ার ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলো মারা যাওয়ার সাথে সুস্থ কোষ গুলো আক্রান্ত হয়। যা রোগীর শরীরে রক্ত সরবরাহ অনেকটাই কমিয়ে দেয়, তাই কেমো নেওয়ার পর রোগীর শরীরে ক্লান্তি ভাব আসে।

০৫. রোগ সংক্রমণ- কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট নেওয়ার ফলে রোগীর শরীর এমনিতেই দুর্বল হয়ে যায়। তাছাড়া শরীরের অন্যান্য সুস্থ কোষ গুলোও সংক্রামিত হয় তাই পর্যাপ্ত পরিমান রক্ত কোষ গুলোতে সরবরাহ না হওয়ায়

সেই সময় রোগীর শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম সেরকমভাবে কাজ করে না। এর ফল স্বরূপ একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ছোট খাট রোগ ব্যাধি, যেমন- জ্বর, ঠান্ডা লাগা, হাঁচি, কাশি, মাথা ঘোরা ইত্যাদি উপসর্গ গুলো দেখা দিতেই থাকে এবং আরো অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

০৬. কোষ্ঠ্যকাঠিন্য- একজন কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীর পায়খানার রঙ কালো হয়ে যায়। রোগী ঠিকঠাক মত ভোজন করতে না পারায় রোগীর শরীরে ঠিকঠাক পুষ্টিগুণ সরবরাহ না হওয়ার ফলে ক্যান্সার রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যায়।

০৭. কালশিরা পড়ে যাওয়া – একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় মূলত ইন্জিসেনের মাধ্যমে কিংবা সেলাইনের দ্বারা শরীরের শিরা গুলোতে সুঁচ ফুটিয়ে। শরীরের এই শিরা উপশিরা গুলোতে কেমোর ওষুধ প্রয়োগ করায় রোগীর শিরা কালচে হয়ে যায়।

০৮. প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া- একজন ক্যান্সার রোগীকে যখন কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট দেওয়া তখন কেমো নেওয়া ব্যক্তি প্রচন্ড পরিমানে ক্লান্তি ও অবসন্নতায় ভোগে। তাই আর পাঁচজন ব্যক্তির ন্যায় রোগীর দেহে পর্যাপ্ত মিনারেল রোগীর শিরায় বইয়ে মানব দেহের প্রতিটা অঙ্গে পৌঁছতে পারেনা।

একজন কেমোথেরাপি নেওয়া পুরুষ রোগীর শুক্রাশয় এবং মহিলা রোগীর ডিম্বাশয় জমে যাওয়ার পর্যায়ে চলে আসে। তাই এক্ষেত্রে অনেক সময় একজকন ক্যান্সার আক্রান্ত কেমোথেরাপি নেওয়া রোগী তার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

আরো পড়ুন : কপার টি কি , কপার টি দিয়ে কিভাবে গর্ভনিরোধ করা যায়।

কেমোথেরাপি পার্শ্বপ্ৰতিক্রিয়া হলে আমাদের কি করণীয়

আমরা উপরের আলোচনায় কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্টে কেমোথেরাপি কিভাবে কাজ করে এবং কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। এবারে আমরা জানব একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর অথবা একজন সদ্য ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর কেমোথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে কি করণীয় সেই ব্যাপারে একটু জানার চেষ্টা করব।

A . গা-গুলানো এবং বমি বমি ভাব হলে কি করণীয়

কেমোথেরাপির (Chemotherapy) অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল গা গুলানো এবং বমি বমি ভাব আসা। তবে কেমোথেরাপি নিলে এমনিতেই রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে যায়,তাই যারা ক্যান্সার রোগী তাদের অবশ্যই ভালো ভোজন নিত্যান্ত প্রয়োজন।

ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি নেওয়ার পর বমি পেলে যে বিষয় গুলো আমাদের মাথায় রাখা উচিত-

০১. একসঙ্গে অনেকটা খাবার না খেয়ে খেয়ে অল্প অল্প করে কয়েক ঘন্টা পর পর বারবার খাবার খেতে হবে।

০২. পানীয় (জল/ দুধ) খাওয়ার আধ ঘন্টা আগে কিংবা পরে পান করা।

০৩. খাবার সময় পানীয় এবং খাবার দুটোই সময় দিয়ে আস্তে আস্তে খাওয়া ও পান করা।

০৪. তেলেভাজা এবং চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করা।

০৫. কম তেল মসলা যুক্ত খাবার, সময় দিয়ে দীর্ঘ্যক্ষণ ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া।

০৬. গরম পানীয় বর্জন করে চিনি ছাড়া পানীয়, ফলের জুস, স্বল্প ঠান্ডা পানীয় পান করা উচিত।

০৭. বায়ুযুক্ত পানীয় (Aerated Drink) পান করতে হলে ঝাঁঝ বার করার পর পান করতে হবে।

০৮. বরফের টুকরো কিংবা পুদিনা লজেন্স মুখে রাখলে ভালো লাগে এবং মুখে রুচি ফিরে আসে।

০৯. যে সমস্ত গন্ধ গুলো রোগীর নাখে লাগে, সেই সমস্ত গন্ধ থেকে রোগীকে দূরে থাকা উচিত।

১০. এই সময় যোগ ব্যাম অনুলোম বিলমের মাধ্যমে দীর্ঘ্য স্বাস নেওয়ার অভ্যাস করলে আরাম পাওয়া যায়।

১১. সুতির হালকা জামা কাপড় পড়লে আরাম লাগে।

১২. ধ্যান যোগ ব্যায়াম আদি করলে ডিপ্রেশন দূর হয় রোগীর আত্মমনোবল বৃদ্ধি পায়।

১৩. কেমোথেরাপি শুরু হওয়ার পর যদি গা-গুলানো অথবা বমি বমি ভাব মনে হয়, সেক্ষেত্রে রোগীকে কেমোথেরাপি নেওয়ার দু-ঘন্টা আগে থেকে উপোস করে নেওয়া ভাল।

B. চুল পড়া শুরু হলে কি করণীয়

ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি (Chemotherapy) দেওয়া শুরু হলে রোগীর চুল পড়ে যাওয়া অতি সাধারণ একটা বিষয়। তবে এটাও ঠিক সব কেমোথেরাপির চিকিৎসায় রোগীদের কিন্ত চুল পড়ে যায় না। হালকা ফুলকো চুল ঝড়তে দেখা যায় তবে সেটা রোগী নিজেই আন্দাজ করতে পারেন।

সুতরাং কেমোথেরাপি চিকিৎসায় রোগীর চুল পড়ে গেলেও ঘাবড়ে যাওয়ার মত কিছু নেই। রোগীর দেহে ক্যান্সার নিরাময় হয়ে গেলে এবং কেমোথেরাপি দেওয়া বন্ধ করে দিলেই আবার স্বাভাবিক নিয়মমেই রোগীর মাথায় আগের মত চুল গজিয়ে যায়।

যদিও চুল গজানোর পর নতুন চুলের ধরণে একটু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে, আগের মত ঘন চুল না গজাতেও পারে তবে একেবারে মাথা থেকে চুল চিরতরের জন্যে চুল ঝরে টাক পড়ে যায়না।

তবে কেমো নেওয়ার পর ক্যান্সার নিরাময় হয়ে গেলে রোগী যদি চুলের মোটামোটি যত্ন নেই, যেমন- চুলে হালকা শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার, নিয়ম করে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো, চুলে কোনো ধরনের কলপ বা রঙ না করা, শুরুর দিকে একটু চুল খাটো করে কাটা। এগুলো পালন করলেই চুলের স্থিতি পরিবর্তন হয়।

C. ক্লান্তি এবং অবসন্নতা মনে হলে কি করবেন

ক্লান্তি এবং অবসন্নতা হল কেমোথেরাপির নিত্য সঙ্গী। কেমোথেরাপি নেওয়া একজন ক্যান্সার রোগী কখনো কখনো অল্প অল্প ক্লান্তি হওয়া থেকে শুরু করে, রোগীর শরীর কখনো কখনো আবার একেবারে অবশও হয়ে যায়।

রোগীর ক্যান্সার চিকিৎসা শুরু হওয়ার সময় এবং কেমোথেরাপি দিয়ে রোগী সুস্থ হওয়ার শেষ গোঁড়ায় এই ধরনের ক্লান্তি বেশি অনুভব হয়। কেমোথেরাপি নেওয়ার পর, কেমোথেরাপির আরো অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মত ক্যান্সার সেরে ওঠার সাথে সাথে ধীরে ধীরে ক্লান্তি ও অবসন্নতা দূর হয়ে যায়।

কেমোথেরাপি কি
কেমোথেরাপি কি

ক্লান্তি এবং অবসন্নতা কাটানোর জন্যে ভালো ভোজনের পাশাপাশি রোগীর ভালো ঘুম দরকার। তাই রোগীর যাতে রাত্রে পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, দরকার পড়লে কয়েকদিন নিয়ম করে দুপুরে ঘুমিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

ক্যান্সার সেরে ওঠার পরে পরেই রোগীকে কোনো মতেই কায়িক পরিশ্রম করা উচতি নয়। তাই যতটা সম্ভব এই সময়টা বিশ্রাম নেওয়াটাই ভাল। ভাল খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি রোগী যাতে পর্যাপ্ত পরিমানে যাতে জল পান করে সেই বিষয়টার দিকেও নজর দিতে হবে।

আরো পড়ুন : লো প্রেসারের লক্ষন ও তার প্রতিকার।

D. রোগসংক্রমনের (Infection) সম্ভবনা কিভাবে এড়াবেন

বেশিরভাগ কেমোথেরাপির ওষুধ ক্যান্সার রোগীর মেরুদণ্ডের মজ্জাকে (Bone Marrow) প্রভাবিত করে (খারাপ করে দেয়) এবং স্বেত রক্ত উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। মানবদেহের কোষে উৎপন্ন এই স্বেত রক্তকণিকা গুলো

বাইরে থেকে প্রবেশ করা ব্যাকটেরিয়া গুলোর সাথে লড়াই করে মানব শরীরকে রোগ জীবানুর সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে আমাদের সুস্থ স্ববল রাখে। একইভাবে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর দেহে কেমোথেরাপি দেওয়ার ফলে

পর্যাপ্ত পরিমানে স্বেত রক্তকণিকা উৎপাদন না হওয়ায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই কোনো কারনে যদি একজন ক্যান্সার রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার পরে রোগীর দেহে স্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনের পরিমান কমে যায়,

তখন ডাক্তারবাবু প্রয়োজনে কেমোথেরাপি ওষুধে ডোজের পরিমান কমিয়ে দেয়। অথবা রোগীর দেহে স্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনের পরিমান বাড়ানোর জন্যে রোগীকে বিকল্প ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন।

নিম্নলিখিত উপায় গুলো অবলম্বন করলে খুব সহজেই একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর দেহের অবাঞ্ছিত সংক্রমণকে আটকানো যেতে পারে বা কম করা যেতে পারে –

০১. যথা সম্ভব রোগীকে তার হাত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

০২. বাড়ীতে কিংবা প্রতিবেশীতে কারো হাম (Measles), সর্দি, জ্বর, অথবা চিকেন পক্স (Chicken Pox) এর মত সংক্রামিত ব্যাধি হলে, নিজেকে সেই সমস্ত ব্যক্তির থেকে দূরে রাখতে হবে।

০৩. যতটা সম্ভব জনবহুল এলাকা এবং যেখানে জনসঙ্গম বেশি সেই সমস্ত জায়গা না যাওয়ায় ভাল।

০৪. মল ও মূত্র ত্যাগ করার পর নিজের যৌনাঙ্গ এবং মল দ্বার ও তার আশেপাশের জায়গা ভালোকরে পরিষ্কার করতে হবে। এই সমস্ত জায়গায় কোনো ধরণের রোগ ব্যাধির উপসর্গ দেখা দিলে (যেমন -Piles) যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে।

০৫. নখ কাটার সময়, চুল, গোফ-দাড়ি কামানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে ধারালো জিনিসে নখের আঙুল অথবা দাড়ি কাটতে লেগে হাতের আঙুল ও গাল যাতে কেটে না যায়।

০৬. শরীরে কোনো ধরনের ফুসকুড়ি বা ফোঁড়া উঠলে নিজে থেকে কখনোই চাপ দিয়ে ফাটানো ও রস বার করা উচিত নয়।

০৭. শরীরের কোনো জায়গায় কাটা-ছেঁড়া অথবা ক্ষতস্থান তৈরী হলে অবশ্যই সেটিকে ভাল করে পরিষ্কার করে ধুয়ে ওষুধ (Antiseptic) লাগাতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে।

০৮. কেমোথেরাপি নিয়ে মাথার চুল পড়ে গেলে, রোদ্রের দ্রাবদাহ থেকে বাঁচার জন্যে মাথায় টুপি পরতে হবে বা স্কার্ফ বাঁধতে হবে।

০৯. শরীরে টিকা, কোনো ধরনের ইনজেকশন নেওয়ার আগে ডাক্তারবাবুকে জানাতে হবে। খুব বেশী জ্বর (১০০.৫ ডিগ্রির ওপর), ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যাথা, বেশি ঘাম, আমাশয়, পেট খারাপ, প্রসাব করার সময় জ্বালা পোড়ার অনুভূতি,

মেয়েদের যৌনি থেকে সাদা স্রাব হওয়ার ফলে চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ক্ষতের চারপাশে ফুলে গিয়ে ব্যাথা হওয়া বা তলপেটে ব্যাথা করা এইগুলো হল সংক্রমনের অন্যতম লক্ষণ।

E. ডায়রিয়া হলে কি করনীয়

পেটে ব্যাথা এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, ২৪ ঘন্টায় এককভাবে এমন ধরনের পায়খানা হলে চটজলদি ডাক্তার দেখাতে হবে। মাথায় রাখতে হবে কোনো ধরনের পেট খারাপ হলে, ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ না করে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবে না।

পেট খারাপের সময় একসঙ্গে না খেয়ে কম কম করে খেতে হবে। চা, কফির মত সব ধরনের পানীয় এবং মিষ্টি পুরোপুরি ভাবে এড়িয়ে চলাই ভাল। গুরুপাক খাবার যেমন- বিনস, বাদাম, ভাজাভুজি, সোল্ডার খাবার, দুধের তৈরী খাবার পেট খারাপের সমস্যা হলে এগুলো এড়িয়ে চলবেন।

এই সময় বেশী বেশী করে জল, ORS এবং সাথে পটাশিয়াম যুক্ত ফল, যেমন- কমলালেবু, কলা, মৌসুমি লেবু ইত্যাদি খাওয়া দরকার। ভারী খাবার যেমন – দলিয়া ও পাতলা খিচুড়ি করে খাওয়া যেতে পারে।

আরো পড়ুন : মেয়েদের গোপনাঙ্গের কালো দাগ দূর করার উপায়।

F. কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হলে কি করনীয়

কেমোথেরাপি (Chemotherapy) নেওয়ার ফলে অনেক সময় রোগীর কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের মত সমস্যা হয়। একটানা দু-দিন পর্যন্ত পেট পরিষ্কার না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বেশী করে জল খেলে পেট পরিষ্কার হয়ে যায়।

এছাড়া ছিবড়ে যুক্ত খাবার (High Fiber Food), যেমন- আটার রুটি, কাঁচা ও সেদ্ধ তরকারী, ড্রাইফুট খেলে অনেক সময় পেট পরিষ্কার হয়। এই সময় একদম শুয়ে না থেকে অল্প অল্প কসরৎ (Exercise) করাও ভালো।

কেমোথেরাপি দিতে কতদিন সময় লাগে

ডাক্তারবাবুরা রোগীকে কেমোথেরাপি (Chemotherapy) একটি বিশেষ যোজনা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। ওষুধের মাত্রা কি রকম হবে এবং কত হারে কেমোথেরাপি দিতে হবে এর সবটুকুই নির্ভর করে রোগীর দেহে কি ধরনের ক্যান্সার ধরা পড়েছে,

কি ধরণের ওষুধ এবং শরীরের ওপর কি রকমভাবে ওষুধের প্রভাব হচ্ছে তার উপর। একজন ক্যান্সার রোগীকে কেমোথেরাপি প্রতিদিন, সপ্তাহে একবার কিংবা মাসে একবার দেওয়া হতে পারে।

মাঝে মাঝে এই চিকিৎসা কিছুদিন ছেড়ে ছেড়ে ধারাবাহিক ভাবে দেওয়া হয়। তবে কেমোথেরাপি দেওয়ার মাঝখানে কিছু দিন বিশ্রাম দেওয়া হলে শরীরে সুস্থ অনুকোষ জন্মানোর সময় পায় এবং শক্তি ফিরে আসে।

এখানে আমাদের সকলের একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, কি ধরনের কেমোথেরাপি হবে, কতবার কেমো দেওয়া হবে, কতদিন ধরে দেওয়া হবে, প্রত্যেক রোগীরই জন্যে আলাদা কারণ হতে পারে। কারণ কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে ব্যক্তিবিশেষে রোগীর ক্যান্সারের স্থিতীর উপর।

ভারতের কোন কোন হাসপাতালে কেমোথেরাপি হয় এবং তার খরচ

বর্তমানে বিজ্ঞানের উন্নতিতে আজকাল বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হাসপাতালে ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট হচ্ছে। তবে আমরা এখানে আপনাদের ভারতবর্ষের সেরা কয়েকটি হাসপাতালে কেমোথেরাপির খরচ এবং ডাক্তারবাবুদের নাম দিয়ে দিলাম। আপনারা নিচের লিঙ্কের উপর ক্লিক করে বিস্তারিত জানতে পারেন –

FAQ .

প্রশ্ন -কেমোথেরাপি দিতে কতদিন সময় লাগে ?

উঃ- ডাক্তারবাবুরা রোগীকে কেমোথেরাপি একটি বিশেষ যোজনা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। কেমোথেরাপির ওষুধের মাত্রা কি রকম হবে এবং কত হারে কেমোথেরাপি দিতে হবে এর সবটুকুই নির্ভর করে রোগীর দেহে কি ধরনের ক্যান্সার ধরা পড়েছে,

কি ধরণের ওষুধ এবং শরীরের ওপর কি রকমভাবে ওষুধের প্রভাব হচ্ছে তার উপর। একজন ক্যান্সার রোগীকে কেমোথেরাপি প্রতিদিন, সপ্তাহে একবার কিংবা মাসে একবার দেওয়া হতে পারে।

মাঝে মাঝে এই চিকিৎসা কিছুদিন ছেড়ে ছেড়ে ধারাবাহিক ভাবে দেওয়া হয়। তবে কেমোথেরাপি দেওয়ার মাঝখানে কিছু দিন বিশ্রাম দেওয়া হলে শরীরে সুস্থ অনুকোষ জন্মানোর সময় পায় এবং শক্তি ফিরে আসে।

এখানে আমাদের সকলের একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, কি ধরনের কেমোথেরাপি হবে, কতবার কেমো দেওয়া হবে, কতদিন ধরে দেওয়া হবে,

প্রত্যেক রোগীরই জন্যে আলাদা কারণ হতে পারে। কারণ কেমোথেরাপি দেওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে ব্যক্তিবিশেষে রোগীর ক্যান্সারের স্থিতীর উপর।

প্রশ্ন – কেমোথেরাপি দাম কত ভারতে ?

উঃ- ভারতে কেমোথেরাপি চিকিৎসার মোট খরচ প্রায় INR ৮০,০০০ থেকে INR ১,০০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। কেমোথেরাপির জন্য ভারতে অনেক হাসপাতাল এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে।

কিন্তু কেমোথেরাপি চিকিৎসার খরচ বিভিন্ন হাসপাতালে ভিন্ন হতে পারে। আপনি যদি বিদেশ থেকে আসছেন, কেমোথেরাপির খরচ বাদে, কিছু অন্যান্য খরচ হবে, যেমন হোটেল থাকার ব্যবস্থা এবং স্থানীয় জায়গা ভ্রমণ ইত্যাদি।

এছাড়াও, চিকিৎসার পর, রোগীকে সুস্থ হওয়ার জন্য একদিন হাসপাতালে এবং ১৫ দিনের জন্য হোটেলে থাকতে হবে। সুতরাং, ভারতে কেমোথেরাপির মোট খরচ হবে প্রায় INR ১,৩০,০০০ থেকে INR ১,৫০,০০০।

প্রশ্ন- কেমোথেরাপি পরবর্তী খাবার কি খাবেন ?

উঃ- কেমোথেরাপি দেওয়ার ফলে এমনিতেই রোগীর শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। তাই এই সময় রোগীর ডায়েট চার্টের উপর এক্সট্রা কেয়ার নেওয়া দরকার।

তবে এখানে সমস্যা হল কেমোথেরাপি নেওয়ার পর রোগীর শরীরে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়, যেমন- গা-গুলানো, বমি বমি ভাব, পেট খারাপ হওয়া ইত্যাদি।

তাই একজন কেমো নেওয়া ক্যান্সার রোগীকে আর পাঁচটা সাধারণ রোগীর মত খাবার দিলে চলেনা। এই রকম সময়ে রোগীকে এমন কিছু খাবার দিতে হয় যে খাবার গুলো

রোগীর পেটে সহজে হজম হবে এবং নতুন করে পেটে কোনো গোলযোগ তৈরী করবে না। তাই এই সময় রোগীকে – পাতলা খিচুড়ী, দলিয়া, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস ইত্যাদি খেতে হবে।

প্রশ্ন- কেমোথেরাপি চিকিৎসা কোথায় করাবেন ?

উঃ- কোথায় কেমোথেরাপির চিকিৎসা হবে সেটা নির্ভর করে ডাক্তারবাবু রোগীর শরীরে কি ধরনের ওষুধ ব্যবহার করবে তার উপর। ডাক্তারবাবু যদি রোগীকে ট্যাবলেট আকারের ওষুধ (Oral) দেন

তাহলে বাড়িতে বসেই কেমোথেরাপির ট্রিটমেন্ট করানো যাবে। আবার অন্যান্য পদ্ধতিতে যদি ডাক্তারবাবুকে কেমোথেরাপির চিকিৎসা করতে হয় তাহলে ডাক্তারের চেম্বারে বা হাঁসপাতালের “ডে-কেয়ার” বা “আউটপেসেন্ট” বিভাগে করাতে হবে।

প্রথম যখন কেমোথেরাপি শুরু হবে ( এই পদ্ধতিতে ) তখন ডাক্তার হয়ত এক- দুদিন রোগীকে হাসপাতালে থাকতে বলবেন। কারণ এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় রোগীর কোনো অসুবিধা হলে

ডাক্তারবাবু সেটা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। কেমোথেরাপি চলাকালীন রোগীর কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারবাবু প্রয়োজনে কেমোথেরাপির ডোজ কম বেশি করতে পারবেন।

প্রশ্ন- কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় কি ব্যাথা লাগে ?

উঃ- সাধারণভাবে রোগীর দেহে ইঞ্জেকসন দেওয়ার সময় সুঁচ ফোটালে যেমন ব্যাথার অনুভূতি হয়, ঠিক সেরকম অনুভূতি কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় একজন ক্যান্সার রোগীর ব্যাথা অনুভব হয়।

শরীরে সুঁচ ফুটিয়ে সেলাইন দেওয়ার মত করে যখন কেমোথেরাপির ঔষধ রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয় তখন কোনো রকম ব্যাথা লাগার কথা নয়। শুধুমাত্র প্রথমবার যখন সুঁচ ফোটানো হয় তখন কিছুটা ব্যাথার অনুভূতি হয়।

কেমোথেরাপি চলাকালীন রোগীর দেহে কোন ধরনের ব্যাথা হয় অথবা কোনো ধরনের জ্বালা,পোড়া কিংবা ঠান্ডার অনুভূতি হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কেমোথেরাপি দেওয়া নার্সকে কিংবা ডাক্তারবাবুকে ব্যাপারটা জানানো উচিত।

প্রশ্ন- কেমোথেরাপি চলাকালীন অন্য ওষুধ কি খাওয়া যাবে ?

উঃ- কিছু এমন কিছু ওষুধ আছে যে গুলো কেমোথেরাপি ওষুধের সাথে মিলে ওষুধের কার্য-ক্ষমতা কম করে বা শরীরের ক্ষতি করে। সুতরাং চিকিৎসা শুরু করার আগে কি ওষুধ খাচ্ছেন,

কতবার খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন, এবং কেন খাচ্ছেন সবকিছু পরিষ্কার করে ডাক্তারের কাছে বলতে হবে। রোজগার ওষুধ যেমন- পেটখারাপ, মাথা ধরা, ঠান্ডা লাগার ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে খাওয়া উচিত।

প্রশ্ন- কি করে বুঝবেন যে কেমোথেরাপি কাজ করছে ?

উঃ- কেমোথেরাপি দেওয়ার পর কাজ হচ্ছে কিনা বোঝার জন্যে ডাক্তারবাবু নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন। যেমন – রক্ত পরীক্ষা, এক্স- রে ইত্যাদি। সুতরাং ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞেস করলেই আপনি বুঝতে পারবেন কেমো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা।

তবে কখনো কখনো এমন হয়ে থাকে যে কেমোথেরাপি নেওয়ার পরও রোগীর দেহে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়না। তার মানে এটা ভাবা উচিত নয় যে

কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলোনা বা কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলনা মানেই যে কেমোথেরাপিতে কাজ হল না এমনটা কিন্ত একেবারেই নয় ।

প্রশ্ন- কেমোথেরাপি চলাকালীন মদ্যপান (Alcohol) করা যাবে কি ?

উঃ- Alcohol আমাদের মনের অবস্বাদ দূর করে। তাই অবস্বাদ কাটানোর জন্যে হালকা ফুলকো মদ্যপান করা যেতে পারে। তবে কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলোর কার্যকারিতা Alcohol সেবন করলে পুরোপুরিভাবে নষ্ট হয়ে যায়।

তাই একজন ক্যান্সার রোগীর কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট চললে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ নেওয়ার পর তবেই মধ্যপান বা ধূম্ৰপান করা উচিত।

প্রশ্ন- কেমোথেরাপি নিলে পরে যৌন ইচ্ছা কি সমাপ্ত হয়ে যায় ?

উঃ- কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট রোগীর যৌন ইচ্ছাকে কম করে দেয়, তাই যৌন জীবন যাপনে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে। কেমোথেরাপি নেওয়ার ফলে অনেক সময় পুরুষের অন্ডকোষে শুক্রাণুর পরিমান কম হয়ে যায়।

তবে একজন পুরুষের যৌন জীবন যাপনে সেরকমভাবে ততটা প্রভাব না পড়লেও মহিলাদের ক্ষেত্রে তার নানা ধরনের প্রভাব পড়ে। একজন মহিলার শরীরে কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট চলাকালীন অনেকরকম অসুবিধা হয়।

কেমোথেরাপির ওষুধ সরাসরি মহিলাদের ডিম্বাশয়ে প্রভাব ফেলে শরীরে হরমোন উৎপাদনকে কম করে দেয়। তাই কোনো মহিলা বা তার স্বামীর কেমোথেরাপি চললে সেই সময় পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই মা/বাবা (Baby Plan) না হওয়া উচিত।

প্রশ্ন- কেমোথেরাপি নিলে পরে একজন রোগীর মনের আবেগের কি কি পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায় ?

উঃ- কেমোথেরাপি ক্যান্সার রোগীর জীবনে সাময়িকভাবে একটা বড় রকমের পরিবর্তন আনে। কারণ এই সময় রোগীর শরীর ঠিক থাকেনা, স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়, মাঝে মাঝে সম্পর্কের মধ্যেও অসুবিধা তৈরী হয়।

এটা ঠিক পরিবারের সকলেই রোগীকে নিয়ে চিন্তিত থাকেন। রোগী অনেক সময় নিজের আত্মমনোবল হারিয়ে ফেলেন। মন খুলে কারো সঙ্গে সেভাবে কথা বলতে পারেন না।

তাই এই সময় রোগী ও তার পরিবারের লোকজনের উচিত রোগীর প্রতক্ষবাদী (Positive) মনোভাব তৈরী করা। পরিবারের লোকের রোগী যাতে মনোবল হারিয়ে না ফেলে সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

চিকিৎসা চলাকালীন মানসিক আবেগ এবং মানসিক পীড়ন তখনই হেরে যাবে, যখন শরীরে এবং মন একসঙ্গে বুঝতে পারবে সে এই জীবন যুদ্ধে হেরে গেছে।

পরিশিষ্ট

আমাদের এই আর্টিকেলটিতে ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম একটা বিষয় কেমোথেরাপি, মানে কেমোথেরাপি কি ? এই প্রশ্নের নানাবিধ উত্তর যুক্তি স্বাপেক্ষে আপনাদের সামনে যতটা সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

আপনারা যদি পুরো আর্টিকেলটা মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আপনাদের মনে থাকা কেমোথেরাপি নিয়ে সমস্ত রকমের জিজ্ঞাসা ? যেমন -কেমোথেরাপি দেওয়ার পর কি কি সমস্যা হয় ? কেমোথেরাপি কত প্রকার ?

কেমোথেরাপি ট্রিটমেন্ট কোথায় করাবেন ? ভারতে কেমোথেরাপি চিকিৎসার খরচ কত পড়বে ? এই ধরনের সমস্ত জিজ্ঞাসার ছোট বড় জবাব মোটামোটিভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

তবুও আপনাদের মনে কেমোথেরাপি বা ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের প্রশ্নের যথাযত উত্তর যত দ্রুত সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।

5/5 - (3 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here