Postmortem কে ময়নাতদন্ত কেন বলা হয় ?

এই পোস্টটিতে আমরা জানব Postmortem কে ময়নাতদন্ত কেন বলা হয়। ডাক্তাররা ময়নাতদন্ত কিভাবে করে ? ময়নাতদন্ত আইন ও ডাক্তারি মতে ময়নাতদন্ত শব্দের অর্থ কি ইত্যাদি বিষয়ে।

স্বাভাবিক মৃত্যুতে মৃত ব্যক্তির,ময়নাতদন্ত করা হয় না কেন ? আত্মহত্যা,খুন,দুঃঘটনা ইত্যাদিতে ময়নাতদন্ত (Postmortem) কেন করা হয় ?

ময়নাতদন্ত,Postmortem,Autopsy বলতে কি বোঝাই,ইত্যাদি বিষয়ে। আসুন তাহলে জানা যাক ময়নাতদন্ত কিভাবে করা হয় Postmortem কে ময়নাতদন্ত কেন বলা হয়,সেই ব্যাপারে।

Postmortem কে ময়নাতদন্ত কেন বলা হয়


ময়না পাখি  নামটা বেশ চেনা লাগছে তাই না ? ময়না নামটা শুনেই মনের আয়নায় একটা কালো রঙের পাখির ছবি ভেঁসে  উঠল তাই তো!

কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন Postmortem কে ময়নাতদন্ত কেন বলা হয় ? ময়নাতদন্ত নিয়ে আমাদের মনে নানান ছবি ভেসে উঠে।

আবার ময়নাতদন্ত কিভাবে করা হয় তা নিয়েও মনে অনেক জিজ্ঞাসা আছে। তার আগে জেনে রাখা ভাল Autopsy হল Postmortem এর বিঞ্জান সম্মত নাম।

Autopsy নামটা সচরাচর ডাক্তারী ভাঁষাতে ব্যাবহার করা হয়। আর ডাক্তাররা Postmortem কে Autopsy বলে থাকে। এবারে আসা যাক Postmortem কে ময়নাতদন্ত বলা হয় কেন সেই প্রশ্নে জবাবে।

ময়না পাখী দেখতে কালো এবং এই পাখীর ঠোঁটের রঙ হলুদ । কালো রঙের জন্য এই পাখিটি গাছের কোন ডালে বসে থাকলে সহজে চোখে পড়েনা।

ময়নাতদন্ত

বিশেষ করে রাত্রি বেলার অন্ধকারে পাখিটি পুরোপুরি আঁধারে মিলিয়ে যায়। ময়না পাখী ১০-১২ ধরনের বুলি মুখ দিয়ে ডাকতে পারে।

তাই শুধু মাত্র ডাক শুনে,ময়না পাখী ডাকছে বললে ভুল হবে। মৃত লাস দেখে যেমন মৃত্যুর কারন বলে দেওয়া যায় না ।

ঠিক তেমনি শুধু পাখির ডাক শুনে ময়না পাখিকে চেনা যায় না। মৃত দেহের মৃত্যুর কারন ও ময়না পাখীর ডাক দুটো জিনিসই সনাক্ত করার জন্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের দরকার হয়।

এবার তাহলে আসা করা যেতেই পারে Postmortem কে ময়নাতদন্ত কেন বলা হয় এবং Autopsy ও Postmortem যে একই জিনিস সেটা বুঝতে পেরেছেন।

আরো পড়ুন: নতুন ট্রাফিক নিয়ম ও জরিমানার তালিকা। 

প্রথম ময়নাতদন্ত (Autopsy)কিভাবে হয়


Postmortem শব্দটি এসেছে ল্যাট্রিন শব্দ থেকে। Post শব্দটির ল্যাট্রিন অর্থ মৃত্যু এবং Mortem শব্দটির ল্যাট্রিন অর্থ হল পরে। যার সারাংস দাঁড়াই মৃত্যুর পরে।

সর্বপ্রথম ১৫০ খ্রীঃ পূঃ রোমান সম্রাট ফ্রেড্রীক আইন করে মৃত দেহের Postmortem করার অনুমতি দেয়। যদিও ইহুদি ও ইসলাম ধর্মে মৃত দেহ কাটা ছেঁড়া করা ছিল ধর্ম বিরোধী কাজ।

তবুও সম্রাট ফ্রেড্রীক Medical collage গুলোকে,মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের বছরে দুটো করে লাশের Postmortem করার অনুমতি দেয়।

প্রাচীনকালে আজ থেকে প্রায় ৩০০০ খ্র্রিষ্টাব্দ পূর্বে মিশর দেশের মানুষেরা শব দেহের কাটা-ছেড়ার মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ অঙ্গ গুলিকে আলাদা করত।

তারপর মৃত দেহে মসলা মাখীয়ে মমি করে লাস সংরক্ষণ করা হত। খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ অব্দে জুলীয়স সীজার তার প্রতিদ্বন্দি সীমেটর দারা নিহত হন।

চিকিৎসক জুলিয়স সীজারের Postmortem করেতে গীয়ে শরীরের বিভিন্ন যায়গায় মোট ২৩ টি জাগায় ছুরীর আঘাতের ক্ষত চিহ্ন খুজে পান।

ময়নাতদন্ত কিভাবে করা হয়


এই পঙতিতে জানব ময়নাতদন্ত কিভাবে করা হয় সেই বিষয়ে। সাধারণত স্বাভাবিক মৃত্যুতে লাসের ময়নাতদন্ত করা হয় না।

যে সব ব্যাক্তির মৃত্যু,কোন দুঃঘটনা,খুন,কিংবা অপমৃত্যুতে হয়ে থাকে সেই সমস্ত মৃত ব্যাক্তির লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।

এখন প্রশ্ন হল ময়নাতদন্ত কিভাবে করা হয় ? ময়নাতদন্ত করার জন্য কিছু বাধা ধরা নিয়ম আছে যেগুলোর অনুপালনা ডাক্তার এবং ডোম’রা করে থাকেন।

CRPC rules-174 এ Magistrate দারা এবং section-176 অনুযায়ি পুলিসকে সন্দেহভাজিত ভাবে মৃত ব্যাক্তির Postmortem করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মৃত ব্যাক্তির ময়নাতদন্ত করা হয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং তার টিমের তত্বাবধানে। ময়নাতদন্ত করার জন্য বিশেষ যে ডাক্তার নিয়োগ করা হয় তারা সাধারণত Pathologist ডাক্তার নামে পরিচিত।

Postmortem দিনের বেলাতে করা হয়। কারন দিনের বেলাতে সব কীছু পরিস্কার ভাবে দেখা যায়। আর রাত্রিতে লাসের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষত স্থান,

ডাক্তার যখন চিহ্নিত করেন,তখন সেই সব অঙ্গ গুলির লাল রঙ রাতে নীলাভ দেখায়। আর এতে ময়নাতদন্ত report এ ভুলের সম্ভবনা থেকে যায়। তাই সচরাচর রাত্রি বেলা ময়নাতদন্ত হয়না।

বিশেষ ক্ষেত্রে Magistrate এর অনুমতি নিয়ে পুলিস চাইলে রাত্রি বেলা ময়নাতদন্ত করাতে পারে।ময়নাতদন্ত এর সময় লাস কোন ডাক্তার কাটে না। লাস কাটে মর্গের অভিজ্ঞ ডোম।

লাস কাটার সময় ডোম চাইলে নেশা সেবন করতে পারে। এতে তাকে কেউ বাঁধা দিতে পারবে না। ডাক্তার বাবু শুধু লাসের বিভিন্ন কাঁটা ছেঁড়া অঙ্গ পর্যবেক্ষন করেন এবং সেই অনুযায়ী Report লেখেন।

আপনাদের জেনে রাখা ভালো,মৃত লাসের পর্যবেক্ষন দুই ভাবে করা হয়-০১.বাহ্যিক পর্যবেক্ষণ ও ০২.চিকিৎসা জনিত পর্যবেক্ষণ।

০১.বাহ্যিক পর্যবেক্ষন ও অপরাধ নির্ণয়ের জন্য ময়নাতদন্ত 


বাহ্যিক পর্যবেক্ষনে লাসের মাথা থেকে আগা গোঁড়া পর্যবেক্ষন করা হয়। প্রথমে লাসের মাথার বিভিন্ন অংশ। যেমন- মাথার পিছনের দীকে মাথার চুল সহ গর্দন অব্ধি।

আগে নাক,কান,মুখ, চোখ, দাঁত,জিভ, চোয়াল ইত্যাদি। এরপর নিচে দিকে বুক,পিঠ,ঘাড়,কোমর,পেট,নাভি এবং গোপন অঙ্গ ছাড়া অনান্য অঙ্গ।

আভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষনে লাস কে প্রথমে মর্গের টেবিলে উপুড় করে শোয়ান হয়। তারপর মাথার খুলিকে ধারাল ছুরি দিয়ে ডোম গর্দনের উপর মাথার নিচের অংশ থেকে শুরু করে,

কানের পাস দিয়ে আগে কপালের দুই পাস পর্যন্ত কাটে। এরপরে মাথার খুলি উপরে ফেলে মাথার ভিতরের মগজ বের করে ডাক্তার পরীক্ষা করেন।

পরীক্ষা ও নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় মাথার মধ্যে কোন আঘাতের চিহ্ন,মৃত্যুর রহস্যের লক্ষণ লুকীয়ে আছে  কিনা। এর পর যেটা করা হয়,সেটা হল লাসের বুক থেকে নাভি পর্যন্ত মাঝ বরা-বর লাসকে চেড়া হয়।

এরপর একে একে দেহের মুখ্য অঙ্গ গুলিকে আলাদা করে কেটে বের করা হয়। যেমন-হৃৎপিন্ড,ফুসফুস, কিডনি,পাকস্থলি,যকৃৎ,খুদ্রান্ত,বৃহদান্ত প্রভৃতি অঙ্গ গুলিকে।

ডাক্তার এগুলিকে আলাদা করে কেটে পরীক্ষা করে। কোন,কোন ক্ষেত্রে আলাদা করে ল্যাবট্ররিতে অঙ্গ পতঙ্গ গুলো পরীক্ষা করে দেখা হয়।

অন্যান্য কারণ

মৃত্যুর আসল কারণ খোঁজার জন্য। মৃত্যু স্বাভাবিক না ও অস্বাভাবিক জানার জন্য। মৃত ব্যাক্তির পরিচয় জানার জন্য। মৃত্যুর সময়কাল জানার জন্য।

মৃত দেহের উপর আঘাতের উৎস ও আঘাতের পরিমান নির্ণয় করার জন্য।মৃত ব্যাক্তিকে মারার ধরণ জানার জন্য। মৃত ব্যাক্তিকে কী ভাবে খুন করা হয়েছে তা জানার জন্য।

অপরাধীর উপর মৃত ব্যাক্তি খুনের আইনি ধারা লাগানোর জন্য।মৃত ব্যাক্তির চিকিৎসা জানকারী জানার জন্য। মৃত ব্যাক্তি আগে থেকে কোন রোগের শিকার ছিলেন কিনা তা জানার জন্য।

Seen of Crime-এর পুনঃনির্মাণের জন্য। এছাড়াও ময়নাতদন্ত এর প্রয়োজন হয় পুলিস,জনতা, ও আদালতে আইনি প্রমান হিসাবে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।

আরো পড়ুন: পুলিশ গ্রেফতার করতে এলে আপনি কি করবেন। 

০২.চিকিৎসাজনিত কারণে ময়নাতদন্ত


চিকিৎসা সংক্রান্ত কারনে ময়না তদন্ত সাধারণত রোগের লক্ষণ,রোগী মৃত্যুর কারণ ও রোগ এবং তার প্রতিশেধক নির্মাণের কাজে ময়নাতদন্ত করা হয়।

এছাড়াও ডাক্তারি ছাত্রদের মানব অঙ্গের পরিচয় করার জন্য ময়নাতদন্ত  এর  Practical class করানোর জন্য ময়নাতদন্ত করা হয়।

 মেডিকো-লিগ্যাল অটন্সীর নিয়ম / ময়নাতদন্ত আইন 


ময়নাতদন্ত আইন অনুসারে Postmortem করার জন্য মৃত ব্যাক্তির পরিবারের সম্মতি নিতে হবে। মর্গে দেহ নীয়ে যাওয়ার জন্য পুলিস প্রশাসনের আদেশের প্রয়োজন হয়।

ময়নাতদন্ত আইন অনুসারে Postmortem দিনের বেলায় করতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে Magistrate এর আদেশ নীয়ে রাত্রে Postmortem-করা যেতে পারে। মৃত ব্যাক্তির ময়নাতদন্ত-হাঁসপাতালে করাতে হবে।

ময়নাতদন্ত

যে ব্যক্তির লাশের Postmortem করা হবে, ময়নাতদন্ত আইন অনুসারে সেই মৃত ব্যাক্তির পরিচয় গোপন রাখতে হবে। মর্গেই ময়নাতদন্ত এর report লেখা হবে।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কি লেখা হয়


ময়নাদন্ত আইন অনুসারে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত ব্যাক্তির নাম ও পরিচয় লিখতে হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ময়নাতদন্ত এর স্থান এবং তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

ময়নাতদন্ত আইন অনুসারে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক report লিখতে হবে। রিপোর্ট কার্ডে নমুনা সংগ্রহের সামুহিক রিপোর্ট উল্লেখ করতে হবে।

ময়নাতদন্ত আইন অনুসারে ভিক্টিম এর মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে? মৃত্যুর আসল কারণ উল্লেখ করতে হবে। .

ময়নাতদন্ত করার সময় যে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার


ময়নাতদন্ত করার সময় যে সমস্ত জিনিস গুলোর দিকে নজর রাখা দরকার-

ভাইরাস সংক্রমন রোধের জন্য মানব দেহের অবশিস্ট অঙ্গের সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা। Postmortem এর সময় মাস্ক,দস্তানা ও চশমার ব্যাবহার করা উচিত।

এতে ভাইরাসের আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। ২০০৮ মানব আধিকার নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্ত করার পর অঙ্গগুলিকে পুনরায় মৃত ব্যক্তির শরীরে স্থাপন করতে হবে।

ময়নাতদন্ত হয়ে গেলে সেলাই করার পর মৃত ব্যাক্তির লাস পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে। কোন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানব দেহের অঙ্গ গুলিকে পরীক্ষার জন্য রাখা যাবে না।

পরিশিষ্ট


এই ছিল ময়নাতদন্ত (Postmortem) নীয়ে সামান্য কীছু বিষয়ের পর্যালোচনা। আসা করছি Postmortem নীয়ে যে সমস্ত সংশয় আপনাদের মনে ছিল,

তাঁর কীছুটা হলেও দুর করতে পেরেছি। এই বিষয়ে আপনাদের ব্যাক্তিগত মতামত কমেন্ট করে জানাবেন। লেখাটি ভাল লেগে থাকলে শেয়ার অবশ্যই করবেন। ধন্যবাদ।

5/5 - (1 vote)

4 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here