আলফ্রেড নোবেলের জীবনী ও নোবেল পুরুস্কারের ইতিহাস।

আজকে আমরা আলোচনা করব নোবেল পুরুস্কার (Nobel Prize) ,আলফ্রেড নোবেলের জীবনী ও নোবেল পুরুস্কারের ইতিহাসকে নিয়ে। যে ব্যক্তিকে মানুষ মৃত্যুর সদাগর নাম নিয়ে ডাকত।

আজকে জানব আলফ্রেড নোবেলের জীবনী,নোবেল পুরুস্কার ও নোবেল পুরুস্কারের ইতিহাস সমন্ধে। আলোচনা করব আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে,

কবে থেকে কিভাবে নোবেল পুরুস্কার (Nobel Prize),দেওয়ার প্রথা শুরু করা হল। তার সাথে জানব এত বড়ো ব্যক্তিত্ব আলফ্রেড নোবেলকে মানুষ কেন এত ঘৃণার চোখে দেখতো।

আলফ্রেড নোবেলকে মানুষ তার আবিষ্কারের জন্য বাহবা না দিয়ে, নোবেলকে কেনই বা মানুষ মৃত্যুর সদাগর বলে ডাকত।

আসুন তাহেল জানা যাক নোবেল পুরুস্কারের ইতিহাস এবং নোবেল পুরুস্কার (Nobel Prize) সমন্ধে বিস্তারিত ভাবে নিচের আলোচনার মধ্যে দিয়ে।

আলফ্রেড নোবেলের জীবনী (Alfred Nobel Biography)


আলফ্রেড নোবেলের পুরো নাম হল আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),নোবেলের মায়ের নাম ক্যারোলিন নোবেল (Caroline Nobel),

আলফ্রেড নোবেলের জন্ম হয় ১৮৩৩ সালের ২১ শে অক্টবর সুইডেনের স্টকহোম শহরে। নোবেলকে নিয়ে নোবেলরা ০৮ ভাইবোন ছিলেন।

আলফ্রেড নোবেল হলেন তার বাবা ও মায়ের চতুর্থ সন্তান। নোবেলের আগের চার ভাই ও বোন জটিল রোগের স্বীকার হয়ে মারা যায়। পরবর্তীকালে নোবেলরা শুধু চার ভাই বেঁচেছিলেন।

তখনকার দিনে সদ্য নবজাতককে কোনো এন্টিবায়োটিক দেওয়া হতোনা। তাই তার প্রথম চার ভাই বোন শিশুকালে মারা যায়।

নোবেলের পরিবার ছিল সুশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারের পরিবার। আলফ্রেড নোবেলের বাবা ও মা দুজনেই যথেষ্ট সুশিক্ষিত ছিলেন। নোবেলের বাবা ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।

আলফ্রেড নোবেলের বাবা পাহাড় কেটে রাস্তা এবং নদীতে ব্রিজ নির্মাণের জন্য গান পাওডার তৈরি করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে গান পাউডারের চাহিদা কমতে থাকায়,

তাদের পারিবারিক ব্যবসা পুরোনো রমরমা হারিয়ে ফেলে। আর সেই জন্য তার বাবা বাধ্য হয়ে তাদের পারিবারিক ব্যবসা বন্ধ করে দেয়।

১৮৩৭ সালে নোবেলের যখন ০৪ বছর বয়স,তখন তার বাবা ইম্মাউনেল নোবেল (Immanuel Nobel) কাজের সন্ধানে রাশিয়ায় চলে আসে।

রাশিয়ায় এসে আলফ্রেড নোবেলের বাবা ইম্মাউনেল নোবেল নতুন করে গান পাউডার উৎপাদনের কাজ শুরু করে দেয়।

নোবেল বাল্যকাল থেকেই জিজ্ঞাসু মনের শিশু ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই নোবেল তার মাকে নানা প্রশ্নের জালে অতিষ্ঠ করে রাখতেন।

আলফ্রেড নোবেলের শিক্ষা ( Alfred Nobel Education)


রাশিয়ায় নোবেলের বাবার ব্যবসায় স্বচ্ছলতা এলে ১৮৪২ সালে নোবেলরা স্বপরিবারে সুইডেন থেকে রাশিয়ায় চলে আসে।

রাশিয়ায় সেন্টপিটার্সবাগে নোবেলের পড়াশোনার জন্য নোবেলকে ভালো স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। নোবেলের বাবা নোবেলকে বিদেশী ভাষা রপ্ত করার জন্য আলাদা করে গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করেন।

প্রখর বুদ্ধি সম্পন্না নোবেল কিছুদিনের মধ্যে ফ্রেঞ্চ,ইংলিশ,জার্মান এবং রাশিয়ান ভাষা রপ্ত করে ফেলেন। তাছাড়া নিজের মাতৃভাষা সুইডনিতে নোবেল প্রথম থেকেই দক্ষ ছিলেন।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল Chemistry তে মাস্টার ডিগ্রি হাসিল করেন। এরপর ১৮৫০ সালে নোবেল পড়াশোনা করার জন্য আমেরিকা চলে যান।

সেখানে গিয়ে নোবেল ০২ বছর যাবৎ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। আমেরিকাতে থাকাকালীন নোবেল বিভিন্ন গণ্য মান্য বিজ্ঞানীর সংস্পর্শে আসেন।

আমেরিকাতে পড়াশোনা করার সময় আলফ্রেড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),বেশ কিছু Chemistry-র তত্ব নিয়ে গবেষণা করেন।

আমেরিকা থেকে নোবেল প্যারিস এবং ফ্রান্স যাত্রা করেন। প্যারিসে গিয়ে নোবেলের সাথে দুজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীর সঙ্গে পরিচয় হয় -০১.নিকোলাই জেনিন এবং ০২.এস্কেনিউ সবরেরা।

বিজ্ঞানী নিকোলাই জেনিনের গবেষণায় নোবেল গভীরভাবে অবিভুত হয়। এই নিকোলাই জেনিন,যিনি সবপ্রথম নাইট্রোগ্লিসারিন নামক বিস্ফোরকের আবিষ্কার করেন।

Untitled design 3

নাইট্রোগ্লিসারিন হল গান পাউডারের থেকে কয়েকগুন বেশি ক্ষমতাসমম্পন্ন বিস্ফোরক। কিন্তু নাইট্রোগ্লিসারিনকে ব্যবহারের বেশ কিছু অসুবিধা ছিল।

নাইট্রোগ্লিসারিনের মতো অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরককে একজায়গায় স্থির অবস্থায় রাখা ছিল বিপদজনক। কারণ নাইট্রোগ্লিসারিন হল এমন একটি তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরক,

যা হালকা দ্রবনেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটাতো। তাই এরকম তেজস্ক্রিয় একটি বিস্ফোটককে এক যায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া ছিল ঝুঁকি পূর্ন কাজ।

তখন পর্যন্ত নাইট্রোগ্লিসারিনকে স্থির করে রাখার মত কোনো ফর্মুলা কোনো দেশের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে উঠতে পারেনি। তাই নাইট্রোগ্লিসারিনকে বিস্ফোটোনের কাজে সেরকম ব্যবহার করা হত না।

আলফ্রেড নোবেলের ডিনামাইট আবিষ্কার


এরপর আলফ্রেড নোবেল নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে গবেষণা শুরু করে দেয়। ১৮৫৭ সালে নোবেল প্রথম গ্যাসমিটারের পেটেন্ট আবিষ্কারের দাবিদার হয়।

সব মিলিয়ে আলফ্রেড নোবেল ৩৫৫-র কাছাকাছি পেটেন্ট আবিষ্কার করেছেন। আর সেই পেটেন্টের ফর্মুলা তিনি দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্জন করেছেন।

(সাধারণত কোনো কিছুর পেটেন্ট বলতে কি বোঝায়,একটা উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক। মনেকরুন আপনি কোভিড-১৯ এর টীকার পেটেন্ট আবিষ্কার করলেন।

এরপর আপনি সেই পেটেন্ট কোনো ফার্মা কোম্পানিকে বিক্রি করে,দিলেন কিছু পরিমান টাকার শেয়ার কিংবা পার্সেন্টের বিনিময়ে।

এবারে সেই ওষুধের যতগুলো ডোজ বিক্রি হবে তার উপর আপনি আপনার জন্য ধার্য্য কমিশন পাবেন। আর যা দিয়ে সারাজীবন একটা রয়ালিটি ইনকাম আপনি পেতে থাকবেন।

কারণ আপনি ঐ কোভিড-১৯ এর ওষুধ তৈরি করেছেন,তাই যতদিন আপনার ওষুধ বিক্রি হবে আপনি ততদিন আপনার কমিশন পাবেন)

১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত Crimean War চলাকালীন নোবেলের বাবার গান পাউডারের ব্যবসা যথেষ্ট প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।

কিন্তু ক্রিমিয়ান যুদ্ধের ইতি ঘটলে ধীরে ধীরে বিস্ফোরকের চাহিদা কমে যায়। দুঃখের বিষয় ১৮৫৯ সালে নোবেলের পরিবারের পারিবারিক ব্যবসা ব্যাঙ্কের ঋণে জর্জরিত হয়ে দেওলিয়া হয়ে যায়।

হতাশাগ্রস্থ নোবেলের পরিবার পুনঃরায় রাশিয়া থেকে সুইডেনে ফিরে আসে। কিন্তু আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল হার মানার পাত্র ছিলেন না।

নোবেলের মাথায় নাইট্রোগ্লিসারিন কে স্থিরতা প্রদান করার জন্য গবেষণার ভুত চেপে বসেছিল। ১৮৬২ সালে সুইডেনে ফিরে এসে নোবেল আরো একবার তার পারিবারিক ব্যবসা শুরু করলেন।

১৮৬৪ সালে নাইট্রোগ্লিসারিন নিয়ে পরিক্ষা করার সময় তার ল্যাবে বিস্ফোরণ ঘটে। এই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে নোবেলের ভাই এনেল নোবেল সহ তাদের কারখানার আরো ০৫ জন কর্মচারী মারা যায়।

এই দুঃঘটনা নোবেলকে গভীরভাবে শোকাহত করে। কিন্ত হলে কি হবে নোবেলকে তার জীবনের কোনো বিষম পরিস্থিতি হার মানাতে পারেনি।

নোবেল সারা দিন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে সর্বদা নাইট্রোগ্লিসারিনকে স্থির দেওয়ার নেশায় গবেষণার কাজে মশগুল হয়ে থাকত।

কিন্তু আর বেশিদিন নোবেলকে সফলতার জন্য অপেক্ষা করতে হলোনা,১৮৬৭ সালে নোবেলের নাইট্রোগ্লিসারিনকে স্থির রূপ দেওয়ার স্বপ্ন সত্যি হল।

আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),খুঁজে বার করলেন নাইট্রোগ্লিসারিনকে স্থির রূপ দেওয়ার ফর্মুলা।

নাইট্রোগ্লিসারিনের সাথে সিলিকন মিশিয়ে,নাইট্রোগ্লিসারিন পেস্ট তৈরি করে ফেললেন। আর এরকম ভাবেই নাইট্রোগ্লিসারিনকে একজায়গা থেকে আর এক জায়গায়,

সুরক্ষিত ভাবে নিয়ে যাওয়ার কৌশল আবিষ্কার হয়ে গেল। এই ফর্মুলার দিয়েই আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel), তার যুগান্তকারী আবিষ্কার ডিনামাইট আবিষ্কার করে ফেললেন

এরপর আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে মোট ৩০ টির বেশি ছোটো বড়ো কোম্পানি খুলেন।

আলফ্রেড নোবেলের ডিনামাইট আবিষ্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল, রোড,বিল্ডিং ও পাহাড় ফাটিয়ে মানুষের নির্মাণ কার্যে প্রগতি আনা।

কিন্তু পরে ডিনামাইটের চাহিদা মিলিটারি সার্ভিসে ক্রমাগত বাড়তে থাকে,আর এই ডিনামাইটের ব্যবসা করেই নোবেল রাতারাতি বিলিয়নার হয়ে যান।

১৮৭৫ সালে নোবেল গ্যালেনাইট এবং ব্যালিসাইটের মতো বিধ্বংস বিস্ফোরক আবিষ্কার করে ফেলেন। ১৮৮৪ সালে আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),কে

সুইডেনে, রয়েল সুইডেন একাডেমি অফ সায়েন্স এর সদস্য পদ দেওয়া হয়। ১৮৯৩ সালে নোবেলকে উপসালা ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেড উপাধি দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

১৮৯৩ সালে আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),সুইডেনের বোফোর্স নামের একটি বিখ্যাত স্টিল নির্মাতা কোম্পানির শেয়ার কিনে নেয়।

আর ঐ বোফোর্স কারখানায় স্টিলের পরিবর্তে নোবেল,মিলিটারীর জন্য তোপ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন,

১৯৮০ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এই বোফোর্স কোম্পানির সঙ্গে তোপ কেনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

Untitled design 3 2

আর এই বোফোর্স তোপ চুক্তির মাধ্যমে রাজীব গান্ধী সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকার স্ক্যাম সামনে আসে। এই বোফোর্স ঘোটালার জন্য পরের বার রাজীব গান্ধী ইলেকশন হেরে যায়।

১৮৯৬ সালের ১০ ই ডিসেম্বর ৬৩ বছর বয়সে ইতালির স্যান রিমোতে নোবেলের নিজের গ্রামে,ল্যাবে গবেষণা করার সময় আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel) হার্ট এটাক হয়ে মারা যান।

আরো পড়ুন: ভারতরত্ন পুরুস্কার কেন দেওয়া হয়। 

নোবেল পুরুস্কারের ইতিহাস (History of Nobel Prize)


সালটা ১৮৮৮ আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel) একদিন সকালবেলা তার বাগানের প্রাঙ্গনে একটি চেয়ারে বসে কফির পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছেলেন।

চায়ের টেবিলে থাকা ফ্রেঞ্চ ভাষার খবরের কাগজটা উঠিয়ে মুখের সামনে উঁচিয়ে ধরতেই একটা ইউনিক আর্টিকেলের হেড লাইন নোবেলের নজর কাড়লো।

খবরের শিরোনামটা পরেই নোবেল নিজেকে খুব অপরাধী মনে করতে লাগলেন। আসলে খবরের কাগজের শিরোনামটা ছিল কিছুটা এরকম।

“মৃত্যুর সদাগরের মৃত্যু”,খবরের কাগজের শিরোনামটা পরেই আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel) মনে খুব বড় ধাক্কা পেল।

আসলে ঐ দিন ফ্রেঞ্চ ভাষার খবরের কাগজে,সেদিন যে প্রতিবেদনটি বার হয়েছিল সেটা ছিল নোবেলের ভাই এনেল নোবেলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লেখা একটি প্রতিবেদন।

খবরের কাগজে বেরোনো প্রতিবেদনটি পড়ার পর থেকে নোবেলের জীবনে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। নোবেল সর্বদা মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকে।

তিনি সর্বদা চিন্তা করতে থাকেন সারা জীবন মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে তার গবেষণা কর্ম মানব কল্যাণের চিন্তায় ব্যতীত করেছেন। আলফ্রেড নোবেলের ডিনামাইট আবিষ্কারের মূল উদ্দেশ্য ছিল মানব জাতির কল্যাণ করা।

কিন্তু দুঃভাগ্যের বিষয় কিছু মানুষ ডিনামাইটের অপব্যবহার করেছে,তাদের নিজের স্বার্থে,আর তার জন্য মানুষ নোবেলের নাম দিয়েছে মৃত্যুর সওদাগর, এই জিনিসটা নোবেল মেনে নিতে পারছিলেননা।

নোবেলের মনে সর্বদা খেয়াল আসতে থাকে তবে কি মৃত্যুর পর মানুষ তাকে মৃত্যুর সদাগর,এই কালিমা মাখা নামে চিনবে।

অথচ তিনি তার জীবনের মহামূল্যবান সময় জনতার জন্য মানব কল্যানে বিজ্ঞানের গবেষণা কাজে নিজেকে সমর্পিত করে গেছেন।

যে বিজ্ঞানের সাধনায় তার প্রিয় জন নোবেলের ভাই এনেল নোবেল কে হারিয়েছেন,পুরো জীবনে বিয়ে করার সময় পর্যন্ত পাননি।

তাহলে সারা জীবন বিজ্ঞানের সাধনায় নিজেকে সমর্পিত করার সব কর্ম প্রচেষ্টা এরকম ভাবে নোবেলের মৃত্যুর পর,মৃত্যুর সদাগরের কালিমা নিয়ে কাটবে ?

এই ঘটনার পর থেকে আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),ঠিক করেন তার মৃত্যুর আগে, তার সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির একটা উইল করে যাবেন।

সম্পত্তির উইল করতে গিয়ে নোবেল উইলের মধ্যে বহুবার ছোট বড়ো পরিবর্তন করেন। সর্বশেষ ১৮৯৫ সালে নোবেল একটা ফাইনাল উইল প্রস্তুত করেন।

নোবেল তার সমস্ত উইলের বিবরণ যেন তার মৃত্যুর পর জনসম্মুখে নিয়ে আসা হয় এই স্বর্তে,নোবেল তার সম্পত্তির উইল সুইডেনের সুপ্রিম কোর্টের কাছে গচ্ছিত রেখেদেন।

১৮৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর নোবেলের মৃত্যু হলে,নোবেলের করে যাওয়া উইল জনতার সামনে পড়ে শোনানো হয়। নোবেলের উইলে লেখা সারমর্ম ছিল কিছুটা এরকম-

আমি আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),ঘোষণা করছি যে আমার সম্পত্তি বর্তমানে  প্রায় ৩১,২২৫,০০০ সুইড্রেন ক্রন (ক্রন হল সুইডেনের টাকার নাম),

এই বিপুল সম্পত্তির ৯৪ শতাংশ এর প্রতি বছর যে সুদ হবে,সেই সুদের মাধ্যমে পাওয়া সমস্ত অর্থ,যে সমস্ত ব্যক্তি মানব কল্যানে,

তার সর্বোচ্চ যোগদান দেবে তাদিকে উৎসাহিত করার জন্য পুরুস্কার হিসাবে প্রতি বছর আমার এই উপার্জন থেকে যেন দান করা হয়। আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel) তার উইলে,

মোট ০৫ টি বিভাগের জন্য পুরুস্কার দেওয়ার কথা উইল করে যান। এই ০৫ টি বিভাগ হল –০১.পদার্থ বিদ্যা,০২.রসায়ন (Nobel prize in chemistry),

০৩.মেডিসিন বা ফিজিওলজি,০৪.সাহিত্য এবং ০৫. শান্তি (Nobel prize in peace), এখন বর্তমানে ০৬ নং বিভাগে অর্থনীতিতে (Nobel prize in economic) দেওয়া হচ্ছে।

যাই হোক আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel) তার উইলে, মূলত ০৫ টি বিভাগে পুরুস্কার প্রদানের জন্য উইল করে গেছিলেন।

কুর্নিশ জানায় নোবেলের দূরদৃষ্টিকে,আপনারা একটু ভালো করে ভেবে দেখুন নোবেলের চয়ন করা এই ০৫ টি বিভাগ আমাদের মানব সভ্যতার প্রধান ইন্ধন।

এই ০৫ টি বিষয়ের থিওরির উপর নির্ভর করে আমাদের সভ্যতা এগিয়ে চলছে। এই বিভাগ গুলির যেকোনো একটি বিষয় মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

তাই নোবেল তার উইলে করে যাওয়া তার স্মৃতি চারণায় পুরুস্কার বিতরণের মাধ্যমে,মানুষের মনের মধ্যে নোবেলের প্রতি থাকা কালিমা ঘোঁচাতে চেয়েছিলেন।

আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel), এর ইচ্ছে এটাই ছিল তার দ্বারা পুরস্কৃত অর্থ মানব সমাজকে জনকল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করবে।

আজকে বর্তমান বিশ্বে নোবেলের করে যাওয়া উইলের দৌলতে বিতরিত নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize) বিশ্বের সবথেকে দামি পুরুস্কার বলে গণ্য হয়ে আসছে।

আরো পড়ুন : স্যার আইজ্যাক নিউটনের জীবনী। 

নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize )


২১ শে অক্টবর আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel),জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তাই প্রতি বছর নোবেলের জন্ম তিথিতে নোবেল পুরুস্কারের (Nobel prize) জন্য নাম মনোনীত করা হয়।

১০ ডিসেম্বর নোবেল মারা গেছিলেন তাই প্রতি বছর নোবেলের মৃত্যু দিবসে আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel), এর স্মৃতিতে নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize) দেওয়া হয়।

১৯০১ সালে নোবেল পুরুস্কার দেওয়ার জন্য একটি নোবেল কমিটি গঠন করা হয়। এই নোবেল কমিটি নোবেলের উইল অনুসারে,

Untitled design 4 1

০৫ টি বিভাগের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তাদের বিশেষ কর্মের জন্য নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize) দিয়ে থাকেন।  ১৯৬৭ সালে সুইডেন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অর্থনীতিতে নোবেল পুরুস্কার দেবেন বলে ঠিক করেন।

এরপর ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতে (Nobel prize in economic), নোবেল পুরুস্কার দেওয়া হতে থাকে। নোবেল কমিটির তালিকায় ০৫ টি বিভাগের জায়গায়,

০৬ টি বিভাগকে নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize) দেওয়ার জন্য যুক্ত করা হয়। ১৯৭৪ সালে মরোনত্তোর  নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize) দেওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize) ০৬ টি বিভাগের যে কোনো একটি বিভাগে এক সঙ্গে ০৩ জন ব্যক্তিকে একত্রিত ভাবে নোবেল পুরুস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।

আর এর মধ্যে কোনো একই বিভাগে ০৩ জন নোবেলের দাবিদার হলে,যে কাজের জন্য নোবেল দেওয়া হচ্ছে, নোবেল কমিটি তিন জনের মধ্যে,তাদের কাজ অনুযায়ী নোবেল পুরুস্কারে প্রাইস মানি ভাগ করে দেয়।

আর কোনো বিভাগে যদি একই সঙ্গে ০২ জনকে নোবেল দেওয়া হয় তাহলে ০২ জনের মধ্যে নোবেল পুরুস্কারের প্রাইস মানি সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।

আর কোনো বিভাগে ০১ জন ব্যক্তি নোবেলের দাবিদার হলে তাকে ঐ বিভাগের নোবেল পুরুস্কারের (Nobel prize) পুরো প্রাইস মানি দিয়ে দেওয়া হয়।

আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল (Alfred Bernhard Nobel), তার উইলে ব্যক্তিগত ভাবে তার অর্থে দেওয়া পুরুস্কারে নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize), তার নামের উল্লেখ করার জন্য বলেন নি।

কিন্তু নোবেল কমিটি যেহেতু আলফ্রেড নোবেলের অর্থে নোবেল পুরুস্কার দিয়ে থাকে,তাই তার দেওয়া পুরুস্কারের নাম,নোবেল পুরুস্কার রাখা হয়।

নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize), দেওয়া হয় সুইডেনের স্টোকহোম শহরে সুইডেনের রাজার হাত দিয়ে। কিন্তু শুধু মাত্র শান্তিতে (Nobel prize in peace), নোবেল দেওয়া হয় নরওয়ের রাজধানী ওশিও শহরে।

শান্তিতে নোবেল (Nobel prize in peace), দেওয়া হয় Chairman of the Norway Nobel Committee দ্বারা। আগে সুইডেন এবং নরওয়ে একই দেশ ছিল, তাই শান্তির জন্য নোবেল নরওয়েতে দেওয়া হয়ে থাকে।

এরপর নোবেলের মৃত্যুর পর থেকে নোবেলের স্মৃতি চারণায় প্রতিবছর নোবেল কমিটি দ্বারা নোবেল প্রাপকের নাম মনোনয়ন করে,নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize) দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে।

নোবেল বিজয়ীদের তালিকা


সর্ব প্রথম যে ০৫ জনকে নোবল পুরুস্কার দেওয়া হয় তারা হলেন -০১.ভিলহেল্ম রন্টগেন পদার্থ বিদ্যা,০২.ফান্ট হফ,রসায়ন (Nobel prize in chemistry),০৩.এমিল ফোন বেরিং চিকিৎসা,

০৪.স্যুলি প্রুদোম,সাহিত্য এবং ০৫. ফ্রেদেরিক পাসি কে,শান্তির জন্য (Nobel prize in peace),আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় নোবেল পুরুস্কার বন্ধ রাখা হয়েছিল।

কিছু ব্যতিক্রমী নোবেল বিজয়ী মানুষ


নোবেল পুরুস্কারে কিছু ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত সামনে আসে এর মধ্যে আমরা ০৪ জন এমন ব্যক্তির কথা বলব তারা প্রত্যেকেই ০২ বার করে নোবেল পুরুস্কার (Nobel Prize) পেয়েছেন।

০১. ম্যারি ক্যুরি :- ইনি প্রথম মহিলা ব্যক্তিত্ত্ব যিনি একবার ১৯৩০ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে (তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার) এবং ১৯৯১ সালে রসায়নে (Nobel prize in chemistry) বিশুদ্ধ রেডিয়াম আলাদা করার জন্য নোবেল পান।

০২.লিনাস পাউলিং:-১৯৫৪ সালে রসায়নে (Nobel prize in chemistry) অরবিট্যাল তত্ব শংকরণের জন্য এবং ১৯৬২ সালে নিউক্লীয় শক্তির পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ আইনের বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা করার জন্য (Nobel prize in peace) শান্তিতে নোবেল পান।

০৩. জন বার্ডিন :- ১৯৫৬ সালে ট্রানজিস্টার আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিদ্যায় এবং ১৯৬২ সালে অতিপরিবাহিতার তত্ব আবিষ্কারের জন্য দ্বিতীয় বার পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান।

০৪.ফ্রেডরিক স্যাঙার :- ০২ বার রসায়নে (Nobel prize in chemistry), নোবেল পান। একবার ১৯৫৮ সালে ইনসুলিন অনুর গঠন আবিষ্কারের জন্য এবং দ্বিতীয় বার ১৯৮০ সালে ভাইরাসের নিউক্লিওটাইডের ধারা আবিষ্কারের জন্য।

নোবেল পুরুস্কার বিজয়ী বাঙালিদের নাম


১৯০১ সালের পর থেকে ২০২০ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ০৪ জন বাঙালি নোবেল পুরুস্কার পেয়েছেন। সেই ০৪ জন নোবেল জয়ী বাঙালি হলেন –

০১.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :-সর্বপ্রথম বাঙালি হিসাবে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরুস্কার (Nobel prize)পান।

রবীন্দ্রনাথের লেখা গীতাঞ্জলী কাব্য গ্রন্থটি ইংরেজীতে অনুবাদ করা হলে, তার রচিত বিভিন্ন সৌন্দর্যমণ্ডিত কবিতার পঙতি,কবির দক্ষতা ও কাব্যিক চেতনার প্রয়োগের জন্য সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়।

০২.অমর্ত্য সেন :- দ্বিতীয় নোবেল জয়ী বাঙালি হলেন অমর্ত্য সেন। ১৯৯৮ সালে মানব কল্যাণ ও অর্থনীতিতে মৌলিক যোগদানের জন্য অমর্ত্য সেনকে অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হয়।

০৩.মোঃ ইউনুস :- বাংলাদেশের এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষক তার ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়।

তসলিমা নাসরিন হলেন একমাত্র বাংলাদেশী ও একমাত্র নারী যিনি ২০০৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরুস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নোবেল জিতেন নি।

০৪.অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় :- ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষে পরীক্ষামূলক পথ অনুসন্ধান করার জন্য অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় কে অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হয়।

FAQ


প্রঃ – আলফ্রেড নোবেল কি আবিষ্কার করেন ?                                                                          উঃ আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেন।

প্রঃ- ডিনামাইট আবিস্কারক আলফ্রেড নোবেল কোন দেশের অধিবাসী ?                                            উঃ ডিনামাইট আবিস্কারক আলফ্রেড নোবেল সুইডেনের অধিবাসী।

প্রঃ- আলফ্রেড নোবেল কতসালে ডিনামাইট আবিষ্কার করেন ?                                                      উঃ -১৮৬৭ সালে আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কার করেন।

প্রঃ- আলফ্রেড নোবেলের ডিনামাইট আবিষ্কারের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল ?                                            উঃ আলফ্রেড নোবেলের ডিনামাইট আবিষ্কারের মূল উদেশ্য ছিল মানব জাতি এবং সভ্যতার কল্যানে ডিনামাইটের প্রয়োগ করা।

প্রঃ- নোবেল বিজয়ী প্রথম মুসলিম মহিলা কে ?                                                                          উঃ নোবেল বিজয়ী প্রথম মুসলিম মহিলা হলেন তাওয়াক্কল আব্দেল সালাম কারমান। ২০১১ সালে আরবের ইয়েমেনের মানবাধিকার কর্মী এই মহিলাকে শান্তির জন্য নোবেল দেওয়া হয়।

প্রঃ – ভারতের প্রথম নোবেল পুরুস্কার কে পান ?                                                                        উঃ ভারতের প্রথম নোবেল পুরুস্কার পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রঃ- বাংলাদেশের প্রথম নোবেল পুরুস্কার কে পান ?                                                                  উঃ- বাংলাদেশের প্রথম নোবেল পুরুস্কার পান,মোঃ ইউনুস।

প্রঃ -প্রথম মুসলিম নোবেল বিজয়ী কে ?                                                                                 উঃ প্রথম মুসলিম বিজয়ী হলেন মিশরের রাজনীতিবিদ আনোয়ার আল সাদাদ। ওনাকে ১৯৭৮ সালে নোবেল দেওয়া হয়।

প্রঃ- ২০২০ সালে নোবেল বিজয়ীদের তালিকা ?                                                                         উঃ ২০২০ সালে কাউকে নোবেল পুরুস্কার দেওয়া হয়নি করোনা মহামারীর কারণে।

প্রঃ- নোবেল পুরুস্কারের অর্থমূল্য কত ?                                                                                  উঃ নোবেল পুরুস্কারের অর্থ মূল্য হল ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রঃ- সবথেকে কম বয়সে কে নোবেল পেয়েছেন ?                                                                      উঃ পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই একজন মানবাধিকার ও শিশু কর্মী যিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০১৪ সালে নোবেল পান।

প্রঃ-২০১৯ সালে নোবেল বিজয়ীদের তালিকা ?                                                                               উঃ ২০১৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে জিম পিবলস,মিশেল মাইযর, দিদিয়ে কেলজ, রসায়নে জন বি.গুড এনাফ, আকিরা ইয়াসিনও,এম.স্ট্যানলি হুইটিংহাম।

চিকিৎসা শাস্ত্রে উইলিয়ম কেলিন জুনিয়র, পিটার জে. র্যাটক্লিফ গ্রেগ এল.সেমেনজা। সাহিত্যে পেটার হ্যান্ডকে, অর্থনীতিতে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, এস্তের ডুফলো,মাইকেল ক্রেমার এবং শান্তিতে আবি আহম্মেদ।

 

5/5 - (1 vote)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here