সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী (Sourav Gangulir Jiboni,wiki,Bio Bangla)

আজকে আমরা ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক কলকাতার মহারাজ সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী (Sourav Gangulir Jiboni) নিয়ে কতগুলো কথা আপনাদের সামনে আলোচনা সাপেক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

ভারতীয় ক্রিকেট টিমে ‘দাদা’ হিসাবে পরিচিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguli) ক্রিকেট জগতে অন্যতম সেরা ও সফল অধিনায়কদের মধ্যে একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।

ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ক্রিকেট এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সভাপতি ছাড়াও , বর্তমানে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ৩৯তম সভাপতি পদের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন।

সৌরভ গাঙ্গুলি শুধু একজন ভালোমানের ক্রিকেটার নন, তিনি একদিকে একজন সফল অধিনায়ক, ভাষ্যকার, জি-বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় “দাদাগিরি” রিয়েলিটি শো এর হোস্ট

এবং সবথেকে বড় কথা তিনি একজন বড় মাপের মানুষ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবমিলিয়ে ২০,০০০ হাজার কাছাকাছি রানের রেকর্ডের ঝুলি রয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে।

সর্বকালের সেরা ভারতীয় বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সৌরভ ১১৩ টি টেস্ট ম্যাচে ৭২১২ রান নিজের নামে করেছেন। একদিনের ৩১১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে সৌরভের নামে ১১,৩৬৩ রানের শিরোপা রয়েছে।

Table of Contents

সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী (Sourav Gangulir Jiboni Wikipedia,Bio,Age ,Hight,Weight Bangla)

সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনীর (Sourav Gangulir Jiboni Wikipedia,Bio,Age,Hight,weight Bangla) সংক্ষিপ্ত সূচি-

নাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
ডাকনাম মহারাজ (Prince Of Kolkata)
জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেহেলায় (ভারত) জন্মগ্রহণ করেন
সৌরভ গাঙ্গুলির জন্মদিন ১৯৭২ সালের ০৮ জুলাই
সৌরভ গাঙ্গুলির বর্তমান বয়স ৪৯+
সৌরভ গাঙ্গুলির উচ্চতা ০৫ ফুট ১১ ইঞ্চি
গায়ের রং ফর্সা
বাবার নাম স্বর্গীয় চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায়
মায়ের নাম নিরুপমা গঙ্গোপাধ্যায়
দাদার নাম স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়
সৌরভ গাঙ্গুলির স্ত্রীর নাম ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়
সৌরভ গাঙ্গুলির মেয়ের নাম সানা গঙ্গোপাধ্যায়
পেশা ক্রিকেটার, ভাষ্যকার, টেলিভিশন রিয়ালিটি শো এর হোস্ট,বর্তমানে ৩৯তম BCCI এর সভাপতি
ব্যাটিংয়ের ধরণ বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান
বোলিংয়ের ধরণ ডান হাতে বোলিং করেন
পুরুস্কার অর্জুন পুরুস্কার ও পদ্মশ্রী পুরুস্কার
সৌরভ গাঙ্গুলির আত্মজীবনী ‘এ সেঞ্চুরি ইজ নট ইনাফ’ (২০১৮ সাল)
সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী (Sourav Gangulir Jiboni,wikipedia,Bio,Age,Hight,Weight Bangla)

সৌরভ গাঙ্গুলির জন্ম, শৈশব ও ক্রিকেটে হাতেখড়ি (Sourav Ganguli Childhood)

ভারতীয় প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক ১৯৭২ সালের ০৮ জুলাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম হয় কলকাতার বেহালাতে একটি প্রতিষ্ঠিত ধনী ব্যবসায়ী পরিবারে। সৌরভের বাবা চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায়

সেকালের কলকাতায় মুদ্রণ প্রেসের প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা নিরুপমা গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ির গৃহকর্ত্রী হয়ে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের সংসারের চাবি সামলাতেন। সৌরভের দাদা স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় তৎকালীন

বেঙ্গল ক্রিকেট দলের প্রতিষ্ঠিত একজন ক্রিকেটার ছিলেন। সব মিলিয়ে সৌরভের শৈশব বিলাসিতার মধ্যেই কেটেছে। ছেলেবেলায় সৌরভের ডাকনাম ছিল ‘মহারাজ।’

তাই এখনো অনেকে স্বগৌরবে সৌরভকে ‘মহারাজ’ (Prince Of Kolkata) বলে সম্বোধন করে থাকেন। সৌরভের বাবা চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘ্য অসুস্থতার পর বার্ধক্যতার কারণে,

২০১৩ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ৭৩ বছর বয়সে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। বাঙালির প্রিয় খেলা হল ফুটবল। শৈশবে সৌরভেরও ফুটবল খেলায় আসক্তি ছিল।

তবে ক্রিকেট খেলায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতেখড়ি হয় দাদা স্নেহাশীষ গাঙ্গুলির হাত ধরে। কিন্তু ছেলেবেলায় তার ক্রিকেট খেলায় বাধ সাধতো সৌরভের পড়াশোনা।

গৃহকর্ত্রী হিসাবে সৌরভের মা নিরুপমা গঙ্গোপাধ্যায় বরাবর ছেলের পড়াশোনায় বাধ সাধিয়ে কখনই খেলাধুলাকে সমর্থন করতেন না। এখানে দাদা স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় সৌরভের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে সমর্থন করেছিলেন।

দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় গ্রীষ্মকালে স্কুলের ছুটি পড়লে স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বাবা চণ্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে সুপারিশ করে সৌরভকে ক্রিকেট কোচিঙে ভর্তি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

সৌরভ কিন্ত শুরু থেকে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন না, সৌরভের দাদা স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বাম হাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। সৌরভ তার দাদা স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের

ক্রিকেটের সরঞ্জাম গুলোকে ব্যবহার করার জন্যে দাদার মত বামহাতি ব্যাটিং শেখার অভ্যাস করেন। সৌরভের কর্ম প্রচেষ্টা সৌরভকে একজন ভালো বাম হাতি প্লেয়ার তৈরী করে দেয়।

পরে সৌরভের খেলার উপর সন্তস্ট হয়ে তার বাবা, দুই ছেলে সৌরভ ও স্নেহাশীষের ক্রিকেট অনুশীলনের জন্যে বাড়িতে ইনডোর-মাল্টিজিম ক্রিকেট অভ্যাসের ব্যবস্থা করে দেন।

খেলাধুলা ও পড়াশোনার ফাঁকে সৌরভ এবং স্নেহাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় টিভিতে ডেভিড গাওয়ারের পুরোনো ক্রিকেট ম্যাচের ভিডিও গুলো দেখে নিজেদের প্রোৎসাহিত করতেন।

স্কুলে পড়াশোনা করার সময় সৌরভ সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচে সৌরভ সেঞ্চুরি করেন। তারপর সৌরভকে স্কুল কর্তৃপক্ষ সেন্ট জেভিয়ার্স দলের অধিনায়ক হিসাবে নির্বাচিত করেন।

তবে একজন ভালো খেলোড়ারের জীবনের গ্রাফে ওঠা নামা থাকবেনা, এমন কিন্তু নয় ! সৌরভের সতীর্থের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্লেয়ার সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বলেন, সৌরভ অধিনায়ক হওয়ার পর তার মধ্যে দম্ভ এসে গেছিল।

সৌরভ জুনিয়র দলে থাকার সময় কোনো একটি টুর্নামেন্টের সফরে সৌরভকে দলে দ্বাদশ স্থানে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। সৌরভ কিন্তু তাতে গর্জে উঠে প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন টিমের দ্বাদশে থেকে,

অন্যান্য প্লেয়ারদের খেলার সরঞ্জাম বয়ে বেড়ানো তার কর্ম নয়। তিনি টিমে থেকে এই ধরণের কাজ গুলোকে হীন মনে করতেন। তার মনে হত এই ধরণের কাজ গুলো তার সামাজিক মর্যাদাকে নষ্ট করবে।

তবে সৌরভের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্রিকেটের প্রতিভা এবং সৌরভের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ১৯৮৯ সালে সৌরভকে বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ করে দেয়।

তবে এটাও ঠিক, সত্য সব সময় সুখদায়ক হবে এমন কিন্ত কোনো মানে নেই, সত্য কখন কখনো বেদনাদায়কও হয়। ঐ একই বছর বাংলার ক্রিকেট দলের নির্বাচন কমিটি সৌরভের দাদা স্নেহাশীষকে বাংলার ক্রিকেট দল থেকে বাদ দিয়ে দেয়।

সৌরভ গাঙ্গুলির পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন

ভারতীয় ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বিয়ে করেন। তবে দাদার বিয়ে নিয়ে একটু টুইস্ট আছে। সৌরভ ও তার বউ ডোনা রায় ছোটো বেলার বন্ধু।

সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী
সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী

পরে দুজনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রেমের সম্পর্কের রুপ নেয়। কিন্তু পরিবার কেউ রাজি না থাকায় তিনি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। পরে অবশ্য দুই পরিবার তাদের বিয়েকে মেনে নেয়।

১৯৯৭ সালে হিন্দু বাঙালি রীতিনীতি মেনে দুই পরিবারের সম্মতিতে সৌরভ ও ডোনা রায়ের পুনঃরায় বিয়ে হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে। সৌরভের মেয়ের নাম সানা গঙ্গোপাধ্যায়।

সৌরভ গাঙ্গুলির ক্রিকেট জীবন (Sourav Ganguli Cricket Carrier)

সৌরভ গাঙ্গুলি শুরুর দিকে স্কুল জীবনে সর্ব প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়ার সময় সর্বপ্রথম তিনি তার স্কুলের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে ওড়িশার বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলে সেঞ্চুরি করেন।

তারপর বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেন। সৌরভ তার ক্রিকেট জীবনে ১৯৯২ সালের ১১ ই জানুয়ারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে খেলার সুযোগ পায়।

কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে জীবনের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচে সৌরভ মাত্র ০৩ রান করে আউট হয়ে যায়। যার জন্যে সৌরভকে পরের আন্তর্জাতিক ম্যাচ গুলো থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

সৌরভ কিন্তু এখানে ভেঙে না পড়ে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে ঘরোয়া ম্যাচ গুলোতে প্যাক্টিশ শুরু করেন। সৌরভের পরিশ্রম সৌরভকে ১৯৯৩,১৯৯৪,১৯৯৫ সালের রঞ্জি ট্রফি ম্যাচ গুলোতে সাফল্য এনে দেয়।

এরপর আরো একবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্যে সৌরভের ডাক আসে। কিন্তু প্রথম টেস্টে সৌরভকে খেলতে দেওয়া হয়নি, পরে নবজিৎ সিং সিধু ম্যাচে অনুপস্থিত থাকলে ভারত ইংল্যান্ড সফরে সৌরভকে ক্রিকেট খেলার সুযোগ দেওয়া হয়।

এবারে কিন্তু সৌরভ ক্রিকেট জীবনের চাপানতোরের মোড়ে ঘুরে দাঁড়ায়। ১৯৯৬ সালের ২০ জুন ভারতের হয়ে ভারত ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচে সৌরভ গাঙ্গুলি ১৩০ রান করেন।

পরের টেস্টে তিনি একইভাবে সৌরভ সেঞ্চুরি হাঁকান, সেই টেস্টে তিনি ব্যক্তিগত সংগ্রহে ১৩৬ রান করেন। ভারত ইংল্যান্ড সফরে পর পর দুটি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট ইতিহাসে তৃতীয় ব্যাটসম্যানের তকমা পান।

ক্রিকেট বিশ্ব তাকে “God of Side” বলে সম্বোধন করেন। ১৯৯৭ সালে ভারত ও শ্রীলংকার ম্যাচে সৌরভ ১১৩ রান করেন। ভারত ও পাকিস্তান সাহারা কাপে সৌরভ ‘Man of the Match’ হন।

অধিনায়ক হিসাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Captain Sourav Ganguli)

১৯৯৯ সালে আরো একবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ১৮৩ রান করেন। একের পর এক চোখ ধাঁধানো ইনিংস দেখে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে

২০০০ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক পদের জন্যে নির্বচিত করেন। সৌরভের নের্তৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সৌরভের আগে বিদেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জেতা ভারতের কাছে অনেকটা স্বপ্নের মত ছিল।

সৌরভ একমাত্র অধিনায়ক যিনি বিদেশের মাটি থেকে ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে জয় ছিনিয়ে আনার বীজমন্ত্র শিখিয়েছিলেন। সৌরভের প্ৰশংসক সহ একাংশদের ধারণা

ভারতীয় ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনির জায়গা করে দেওয়ার পিছনে সৌরভের ভূমিকা ছিল। সৌরভ সবসময় নতুন প্রজন্মের তরুণ প্লেয়ারদের ভারতীয় ক্রিকেট টিমে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার কথা ভাবতেন।

সৌরভ মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুবরাজ সিং সহ বিভিন্ন খেলোয়াড়দের ভারতীয় ক্রিকেট টিমে বড় দাদার ন্যায় পাশে থেকে ক্রিকেট টিমে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার রাস্তা প্রস্তুত করে দেয়।

ভারতীয় ক্রিকেট টিমের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার পর মহারাজের দৌলতে ভারতীয় ক্রিকেট একে একে জয়ের মুখ দেখতে শুরু করে। এই সবের মধ্যে দাদার উল্লেখযোগ্য জয় ছিল ইংল্যান্ডে লর্ডসের মাটিতে

একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে লর্ডসের মাটিতে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। লর্ডসের মাটিতে ম্যাচ জিতে লর্ডসের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খালি গায়ে জার্সি ওড়ানোর দৃশ্য আজো ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে।

সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী
সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী

অধিনায়ক হিসাবে তিন দেশীয় সিরিজগুলোতে সেরকম পারফরম্যান্স করতে না পারলেও আই.সি.সির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট গুলোতে দাদার রণমূর্তী দেখতে পাওয়া যায়।

ক্রিকেটে ২২ গজের মাঠের চাণক্য হিসাবে সৌরভ তার ক্যাপ্টেন্সি দিয়ে ২০০০ সালে ভারতীয় ক্রিকেট টিমকে ”নকআউট ট্রফির” ফাইনালে পৌঁছে দেয়।

কিন্ত হলে কি হবে বাংলাতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে “কপালে নেই কো ঘী, ঠক ঠকালে হবে কি” ? সৌরভ সেই সিরিজে পর পর দুটি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে সিরিজের সবথেকে রান সংগ্রহকারী হলেও দুর্ভাগ্য বশত ভারত সেবার ফাইনালে হেরে যায়।

সৌরভের ক্রিকেট জীবনের উত্থান,পতন ও অবসর

সৌরভ যেমন খুব অল্পসময়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেরকম ধীরে ধীরে টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রদর্শন অবন্নতি হতে থাকে।

ক্রিকেট জীবনে সৌরভ বহুবার বাদ-বিবাদ ও সমালোচনায় ঘিরেছেন। আই.সি.সির তরফ থেকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে বহুবার সৌরভের উপর নালিশ হয়েছে।

সৌরভের নামে অভিযোগ ওঠে, সৌরভ মাঠে টসে দেরি করে আসতেন, ক্রিকেট বোর্ডে নিজের প্রভুত্ব দেখাতেন। লর্ডসের মাঠে গা থেকে জার্সি ওড়ানোর জন্যে সৌরভকে আই.সি.সির তরফ থেকে জরিমানাও করা হয়।

তবে দাদার এই সমালোচনা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তায় কোনো বাধ সাধেনি। বরঞ্চ লর্ডসের স্টেডিয়ামে জার্সি ওড়ানোর জন্যে দাদা বাঙালিদের কাছে দাদার মহিমা আরো বেড়ে যায়।

দাদা বাঙালিদের ঘরে একজন কাছের মানুষ হয়ে উঠেন। ২০০৪ সাল নাগাদ দাদার ক্রিকেট জীবনের পথ ক্রমশ সংকুল হয়ে হতে শুরু হয় এবং ২০০৫ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হিসাবে জয়েন করেন ‘গ্রেগ চ্যাপেল। ‘

সেই সময় খারাপ পারফর্মেন্সের জন্যে সৌরভকে ভারতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে ভারতীয় কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের সম্পর্ক অনেকটা সাপে নেউলের মত ছিল।

দাদার অবর্তমানে কিছুদিনের জন্যে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অধিনায়ক পদের দায়িত্বভার সামলান দাদার কলিক ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড়। তখনকার দিনে সংবাদ শিরোনামে সৌরভ ও গ্রেগ চ্যাপেলের চর্চা প্রায়ই ওঠে আসত।

এইভাবে গ্রেগ চ্যাপেলের সঙ্গে বাদ বিবাদে জাতীয় দলে ফিরে আসতে সৌরভের বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়। প্রায় দশ মাস অপেক্ষা করার পর ‘মহারাজ’ জাতীয় ক্রিকেট দলে আবার স্বমহিমায় ফিরে আসে।

কামব্যাক ইনিংসে দুর্দান্ত ৯৮ রান করে দাদা ভারতীয় ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ৯৮ রানে সেই ম্যাচে ভারত জিতেছিল। কিন্ত দুৰ্ভাগ্যবশত ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজে হেরে যায়।

সৌরভের খেলার জীবনে ক্রিকেট খেলার প্রদর্শন উত্তম ছিল। তবে ২০০৭ সালের শেষ করে নভেম্বর মাসের পর থেকে সৌরভের আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়ে ওঠেনি।

শেষের দিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক মধুর না হওয়ায় ২০০৮ সালে জনৈক কারণ বশতঃ সৌরভ টেস্ট ক্রিকেট থেকেও বাদ পড়ে যায়।

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের এক অংশের মতে সৌরভের বয়স হয়ত শেষ জীবনে ক্রিকেট খেলায় বাধা সেধেছিল। তবে সবথেকে দুঃখের বিষয় ক্রিকেট জীবনের শেষ ইনিংসের খেলাতেও সৌরভকে শুন্য রানেই ফিরে যেতে হয়।

২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া ভারত ম্যাচের শেষ বলটিতে মহেন্দ্র সিং দাদাকে তার মত করে ক্যাপ্টেন্সি করতে দেয়, জীবনের শেষ ম্যাচে দাদা অধিনায়কত্ব দিয়েই মাঠ ত্যাগ করেন। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে সৌরভকেই আজও সেরা অধিনায়ক বলে মনে করা হয়।

আইপিএল এ কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়কের দায়িত্বগ্রহন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছিটকে যাওয়ার পর দাদা ২০০৮ সালে আইপিএলে শাহরুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক পদের দায়িত্বভার দেওয়া হয়।

কিন্তু আইপিএলেও সৌরভের ভাগ্য সেরকমভাবে চমকায়না, বার বার ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে ২০১০ সালে সৌরভকে বাদ দিয়ে তার জায়গায় গৌতম গম্ভীরকে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১১ সালে আইপিএলে অবশ্য পুণে ওয়ারিওয়র্স দলের হয়ে, দাদা আবার নের্তৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পায়, কিন্ত সেখানেও দাদা বেশিদিন স্থায়ী হয় না, পরে তিনি ২০১২ সালে পাকাপাকিভাবে আইপিএল থেকে অবসর নেন।

সৌরভ গাঙ্গুলির ক্রিকেট থেকে অবসরের পরের পরবর্তী জীবন

ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর সৌরভ গাঙ্গুলি ‘ক্রিকেট এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের’ সভাপতি পদে নিযুক্ত হন। এরপর দাদাকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য পদ দেওয়া হয়।

২০১৯ সালে দাদাকে ভারতীয় ক্রিকেটের বোর্ড সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। এর আগে অবশ্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় BCCI এর টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান পদের দায়িত্বভার সামলেছেন।

সৌরভ গাঙ্গুলির প্রাপ্ত পুরুস্কার (Sourav Ganguli Awards)

সৌরভ গাঙ্গুলি তার ক্রিকেট জীবনে কখনো “Man of the Match” আবার কখনো “Man of the Serees” সবমিলিয়ে ছোট বড় ৩১ টির বেশি পুরুস্কার পেয়েছেন।

তবে ভারত সরকার একজন খেলোয়াড় হিসাবে ১৯৯৭ সালে সৌরভকে “অর্জুন পুরুস্কার” এবং ১৯৯৮ সালে ‘Sports person of the year’ পুরুস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন।

২০০৪ সালে সৌরভ গাঙ্গুলি “পদ্মশ্রী” পুরুস্কার পায় এবং ঐ একই বছর দাদাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘রামমোহন পুরুস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেন।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দাদাগিরি (Sourav Gangopadhay Dadagiri)

পশ্চিমবঙ্গ সহ সমস্ত বাঙালিদের কাছে দাদা হলেন একজন কাছের মানুষ। ২০০৯ সালে ১২ ই অক্টবর জি বাংলা টিভি চ্যানেলে সৌরভ গাঙ্গুলির নের্তৃত্বে বাংলার জনপ্রিয় কুইজ শো “দাদাগিরি” প্রোগামটি চালু হয়।

জি বাংলার জনপ্রিয় এই টিভি কুইজ শো টি হোস্ট করেন আমাদের দাদা ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

এছাড়াও জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ” বকুল কথা” ধারাবাহিকে বকুলের আইডল হিসাবেই খন্ড চরিত্রে সৌরভ গাঙ্গুলিকে অভিনয় করতে দেখা যায়।

সৌরভ গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বের মূল্যাঙ্কন

টেস্ট ক্রিকেট সৌরভ গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান

মাঠসময়কালখেলার সংখ্যাজয়পরাজয়টাইড্র
ভারতের মাঠে ২০০০-২০০৫২১১০
বিদেশের মাঠে২০০০-২০০৫৫১২৪২৪
নিরপেক্ষ মাঠে১৯৯৯-২০০৫৫৯৩৪২৩
সর্বমোট১৯৯৯-২০০৫১৪৬৭৬৬৫
সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনী (Sourav Ganguli Jiboni,wiki,Bio Bangla)

FAQ

প্রশ্ন- সৌরভ গাঙ্গুলির বাড়ি কোথায় ?

উঃ- সৌরভ গাঙ্গুলির বাড়ি হল কলকাতার বেহালায়।

প্রশ্ন- সৌরভ গাঙ্গুলির জন্মদিন কবে ?

উঃ- ১৯৭২ সালের ০৮ জুলাই।

প্রশ্ন- সৌরভ গাঙ্গুলির প্রিয় খাবার ?

উঃ- সৌরভ গাঙ্গুলির প্রিয় খাবার বিরিয়ানি,আলুপোস্ত ও চিংড়ি মাছের মালাইকারি।

প্রশ্ন- সৌরভ গাঙ্গুলির প্রিয় অভিনেতা কে ?

উঃ- অমিতাভ বচ্চন।

পরিশিষ্ট

সৌরভ গাঙ্গুলির জীবনীর মূল্যায়ন করলে দেখতে পাওয়া যায় সৌরভ অস্তাচলে চলে যাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটে উঠিত সূর্যের ন্যায় এসে ভারতীয় ক্রিকেটকে ঊষার কিরণ দেখিয়েছে।

সৌরভ শুধু ভারত নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার। অধিনায়ক হিসাবে দেখতে গেলে সৌরভ একজন সৎ সাহসী নির্ভিক অধিনায়ক।

দলের প্রয়োজনে দলের সাথে থেকে ভারতীয় ক্রিকেট এবং নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের বিশ্বমানের ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। বর্তমানে বোর্ড প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েও

করোনা মহামারীর মত কঠিন পরিস্থিতিতে যেখানে সমস্ত ধরণের খেলাধুলা বন্ধ, সেখানে খুব সুন্দরভাবে আইপিএল খেলার আয়োজন করে সমগ্র ক্রিকেট প্রেমীদের বিনোদনের সুযোগ করে দিয়ে ভালোবাসা কুড়িয়েছেন।

তাই দাদা একজন বাঙালি হিসাবে শুধু মাঠের ২২ গজের মধ্যেই নিজেকে সীমিত না রেখে মাঠের বাইরেও তার অভিভাবকত্বের প্রমান দিয়ে গেছেন।

খেলায় খেলোয়াড়ের জীবনের গ্রাফ উঁচু নিচু হবে এটাই স্বাভাবিক, তবে জীবন সংগ্রামে কিভাবে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে শান্ত রাখতে হয় তা আমাদের দাদার কাছ থেকে শেখা উচিত।

একজন ক্রিকেট প্রেমীর কাছে সচিন যদি ক্রিকেটের ভগবান হয়, তাহলে একজন বাঙালির কাছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শুধু বাঙালির মহারাজ নয়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সত্যি সত্যি ক্রিকেটর জগতের মহারাজ।

5/5 - (4 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here