অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী (Soumitra Chattopadhay)

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজকে আপনাদের জন্যে শোনোবাংলা’র ডালিতে সাজিয়ে নিয়ে এসেছি, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনীর প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের বিভিন্ন সময়ের গল্প। অধ্যয়ন করব বাচক শিল্পী সৌমিত্র থেকে,অভিনেতা সৌমিত্র হওয়ার পিছনের কাহিনীকে।

অল ইন্ডিয়া রেডিওর বাচক শিল্পী থেকে, কীভাবে তিনি হয়ে উঠলেন সত্যজিত রায়ের অপুর সংসারের অপু। কৃষ্ণনগরের মাটির সুগন্ধে,কীভাবে কেটেছিল সৌমিত্র বাবুর শৈশব।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের সবকিছু জানব, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী অধ্যয়নের মাধ্যমে। আসুন তাহলে একটু একটু করে জেনে নেওয়া যাক পোস্তর,দাদুর জীবনের বিভিন্ন ঘটনাক্রমকে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী (Soumitra Chattopadhyay)


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী অধ্যায়ন করতে গিয়ে যে সমস্ত বিষয় গুলি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে, সেগুলি হল –

  1. জন্ম ও পূর্ব পুরুষদের ভিটেমাটি।
  2. শিক্ষা দীক্ষা।
  3. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা।
  4. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলচিত্র জীবন।
  5. সত্যজিৎ ও সৌমিত্র
  6. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর সিনেমা।
  7. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর লেখা বই।
  8. পুরুস্কার।
  9. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত নাটক।
  10. সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কবিতা।
  11. করোনা আক্রান্ত হয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর মৃত্যু।

আরো পড়ুন: মহানায়ক উত্তম কুমারের জীবনী।

সৌমিত্র বাবুর জন্ম ও তার পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি


চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল অবিভাজিত বাংলার কুষ্টিয়ার, শিলাইদহের কয়া গ্রামে। বর্তমানে আজ তা বাংলাদেশের অন্তভুক্ত।

সৌমিত্রের পূর্বপুরুষের ভিটে বাংলাদেশে হলেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জন্মেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে (মতভেদে হাওড়া/কলকাতায় ) .

সৌমিত্র বাবুরা তার ঠাকুরদার আমল থেকে, কৃষ্ণনগরে এসে বসবাস শুরু করে দেয়। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে,বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও তার পরিবারের কুটুম ছিল।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিসিমনি,তারা দেবীর সঙ্গে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বড় ছেলে,রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। রমাপ্রসাদ বাবু, পেশায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন।

মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাবা কলকাতা হাইকোর্টের একজন সরকারী উকিল ছিলেন। ওকালতির কাজের জন্যে তাকে কলকাতাতেই বেশিরভাগ সময় থাকতে হত।

শুধুমাত্র সাপ্তাহিক অবকাশে কোর্টের কাজকর্ম বন্ধ থাকলে, তিনি কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরে চলে আসতেন। এইভাবে যাওয়া আসা করেই তার চাকুরী জীবন কাটছিল।

১৯৩৫ সালের, ১৯ জানুয়ারী মাতা আশালতা চট্টোপাধ্যায়ের গর্ভে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। সৌমিত্র বাবুর মা আশালতা দেবী ছিলেন একজন সাধারণ গৃহকর্তী।

আরো পড়ুন : সেরা ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা কবিতা স্ট্যাটাস এস এম এস

শিক্ষা পর্ব (Soumitra Chattopadhyay Education)


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্কুল শিক্ষা শুরু হয় কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স স্কুল থেকে। এখানে তিনি ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল, মায়ের শাড়ীর আঁচলে আঁকি বুঁকি কেটে দিব্বি কাটছিল আমাদের প্রিয় অভিনেতা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শৈশব জীবন।

কিন্তু বাবা মোহিত বাবু চাইছিলেন,ছেলেকে নিজের কাছে রেখে মানুষ করতে। কিন্তু তার বাড়ি থেকে কর্মস্থল দূরে হওয়ায়, ব্যাপারটা ঠিক খাপে খাপ বসছিল না।

এরপর সৌমিত্র বাবু,তার বাবা মায়ের সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন। মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায়,কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে (সূর্য সেন স্ট্রিট )বাড়ি ভাড়া নেন।

কলকাতায় এসে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhay) কে, তার বাবা হাওড়া জেলা স্কুলে,ভর্তি করেন। সেখান থেকে তিনি মেট্রিক পাস্ করেন।

এরপর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,কোলকাতার আর্মহার্স্ট স্ট্রিটের, সিটি কলেজে থেকে, ISC এবং বাংলা সাহিত্য নিয়ে,BA পড়ার জন্য ভর্তি হয় এবং সেখান থেকেই বাংলায় স্নাতক পাস্ করেন।

স্নাতক পাস্ করার পর সৌমিত্র কলেজ অফ আর্টসে ভর্তি হয়। সেখানে দুই বছর পড়াশোনা করার পর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় MA পাস্ করেন।

কর্ম জীবনের শুরু ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর (Soumitra Chattopadhyay) অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা


বাপ্ ঠাকুরদার আমল থেকেই, চট্টোপাধ্যায় পরিবারে অভিনয়ের চর্চা ছিল। ঠাকুরদার বাড়ি কৃষ্ণনগর বরাবরই থিয়েটারের জন্য বিখ্যাত।

সৌমিত্র এর ঠাকুরদার, থিয়েটারের সঙ্গে ওঠা,বসা ছিল,এছাড়া তিনি ছিলেন একজন ভালোমানের মঞ্চ অভিনেতা। বাবা মোহিত বাবু,পাড়ার যাত্রা অনুষ্ঠান ও নাটকে ভাগ নিতেন।

সব মিলিয়ে সোমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের রক্তে,অভিনয়ের রক্তবীজ লুকিয়ে ছিল। সৌমিত্র বাবু তার শৈশবের, শুরুর দশটি বছর কৃষ্ণনগরে কাটিয়েছিলেন ।

ছেলেবেলা, থেকেই সৌমিত্র বাবুর মধ্যে অভিনয়ের স্রোত বয়ে চলছিল। হাওড়া জেলা স্কুলে পড়াশোনা করার সময় তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, ছোট,ছোট নাটকের পাট নিতেন।

বাড়িতে আলমারিতে সাজানো, বিভিন্ন পদক, মেডেল এর দিকে তাকিয়ে, সৌমিত্র বাবুর মন চলে যেত শৈশবের দিন গুলির দিকে, মা পিসিমার শাড়ী দিয়ে মঞ্চ বানানো,

মনে পড়ে যেত ছোট্ট বেলায়,পাট দিয়ে পাকানো কৃত্রিম গোঁফ দাড়ির কথা। টিনের তলোয়ার ধরে,অট্টহাস্যে হাসি হেসে আমি কংশ,করিব দৈবকীর উদরের কণিষ্ঠরে ধ্বংস।

BA পাস্ করার পর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhay) অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করেন। অভিনয় জগতে সৌমিত্রের হাতে খড়ি হয় অহীন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে।

কলেজে পড়াশোনা করার সময় নাট্য ব্যক্তিত্ব, শিশীর ভাদুড়ীর অভিনয় দেখে,সোমিত্র খুব অভিভূত হয়। এরপর সৌমিত্র শিশীর ভাদুড়ীকে,তার আইডল হিসাবে গ্রহণ করেন।

শিশীর ভাদুড়ীর সাথে,সৌমিত্রের আলাপ হয় তার বান্ধবীর মায়ের সানিধ্যে এসে। পড়ে এই বান্ধবীর মা,অপুর সংসারে,শর্মিলা ঠাকুরের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhay), শিশীর ভাদুড়ীর,জীবনকালের শেষের তিন বছর,সানিধ্য লাভ করেন। বাকী অভিনয় সৌমিত্র বাবু যেটুকু শিখেছিলেন,শিশীর ভাদুড়ীর বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় দেখে।

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার কর্ম জীবন,অভিনয় দিয়ে শুরু করতে পারেন নি। তিনি শুরুতে,অল ইন্ডিয়া রেডিওর,একজন বাচক শিল্পী হিসেবে, কেরিয়ার শুরু করেন।

কিন্তু হলে কী হবে,শুধু একজন বাচক শিল্পী হিসাবে,সৌমিত্র বাবুর,খিদে মিটছিল না। তিনি তো চেয়েছিলেন অভিনেতা হতে, আসল খিদে ছিল অভিনয়ের।

সৌমিত্র বাবু কিন্ত তার খিদেকে দমিয়ে রাখেন নি। বাচক শিল্পীর পাশাপাশি, তিনি বিভিন্ন থিয়েটারে,অভিনয় চালিয়ে যেতে লাগলেন।

“কিশোর ভারতীর ১০১ খানা রহস্য রোমাঞ্চের বইটি Amazon থেকে কিনতে পারেন। 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলচিত্র জীবনে পদার্পন


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলচিত্র জীবন শুরু করেন সত্যজিৎ রায় দ্বারা,প্রযোজিত অপুর সংসার, সিনেমার মাধ্যমে। ১৯৫৭ সালে,কার্তিক বোসের নীলাচলে মহাপ্রভুর স্ক্রিন টেস্টে বাদ পড়ে যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

জীবনের প্রথম স্ক্রিন টেস্টে ফেল হয়ে যায় তিনি তার জায়গায় নেওয়া হয় অসীম কুমার কে। এরপরে তিনি হাল ছাড়েন নি বিভিন্ন জায়গায় সিনেমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় এর জন্য,অডিশন দিতে থাকেন।

এর আগের বছর ১৯৫৬ সালে সত্যজিৎ রায়,তার অপরাজিত সিনেমার জন্য, নতুন একটা চেহারা খুঁজছিলেন। সত্যজিতের এসিস্টেন্ট,সৌমিত্রকে সত্যজিৎ রায় এর কাছে নিয়ে গেলেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পরিবার (Somitra Chattopadhay family )
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

কিন্তু সত্যজিৎ রায় তার অপরাজিত সিনেমার জন্য,নিত্যান্ত বালক সুলভ,একটি চেহেরা খুঁজছিলেন। তাই সৌমিত্রকে তিনি মানা করে দিয়ে বলেন,নাহে আপনার বয়স একটু বেশি হয়ে গেছে আমার অপু থেকে।

এরপর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumtra Chattopadhyay) একদিন,সত্যজিৎ রায় এর জলসাঘর ছবির শুটিং দেখতে যায়। শুটিংয়ের ফাঁকে চা পানের বিরতি চলছে ছবি বিশ্বাস এবং সত্যজিৎ রায় চেয়ারে বসে চা খাচ্ছে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অদূরেই দাঁড়িয়েছিলেন সত্যজিৎ বাবু সৌমিত্রকে ডেকে পাঠায়। সৌমিত্র,কাছে আসতেই ছবি বিশ্বাসের কাছে বলে ফেললেন, এইযে তরুণ কমবয়সী ছেলেটাকে দেখছ, এহল সৌমিত্র,আমার পরবর্তী ছবি অপুর সংসারের অপু।

অপুর সংসার ছবিতে শর্মিলা ঠাকুরের বিপরীতে,সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন শুটিং দেখতে কিন্তু এসব ঘটনার খুনঅক্ষরেও আন্দাজ করে উঠতে পারেননি তিনি।

এভাবে অপ্রস্তুতভাবে সৌমিত্রকে সত্যজিৎ রায় তার সিনেমায় অপুর চরিত্রে হীরোর ভূমিকায় অভিনয় করাবেন সৌমিত্র বাবু নিজেও বুঝে উঠতে পারেননি।

সৌমিত্র বাবুর অপরাজিত সিনেমার অডিশনের রোল স্কিপ্ট,সত্যজিৎ রায়ের মনে ধরেছিল। শুধু তাকে বাদ দেওয়ার কারণ ছিল, সৌমিত্র বাবুর অল্প বয়স।

১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের প্রযোজনায় অপুর সংসার ছবিটি মুক্তি পায়। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে।

বিভূতিভূষণের অপু,তখন সত্যজিতের হাত ধরে,বাঙালীর পাড়ার,ছেলে হয়ে উঠেছিল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কখন বাঙালির হৃদয়ে তার জায়গা পাকা করে নিয়েছিল, সে নিজেও বুঝে উঠতে পারেনি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর সিনেমা


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhyay), তার পুরো জীবনে তিনশত কাছাকাছি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৯৫৯ সালে অপুর সংসার সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় পা রাখেন।

১৯৬০ সালে তপন সিংহের পরিচালনায় ক্ষুদিত পাষান সিনেমায় সৌমিত্র বাবু অভিনয় করেন। এরপর তিন কন্যা, সমাপ্তি তে,অমূল্য চরিত্রে এছাড়াও আরো একবার তপন সিংহের পরিচালনায় ঝিন্দের বন্দী সিনেমায়,

উত্তম কুমারের বিপরীতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দর্শকদের প্রশংসা কুড়ান। বাঙালী হৃদয় তখন,উত্তম কুমার এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমার,শ্রেষ্ঠত্বের বিচার বিমর্ষতায় মেতে ওঠে।

১৯৬২ সালে সাত পাকে বাধা সিনেমায় সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে, নতুন করে দর্শক হৃদয়ে দাগ কাটে। বসন্ত বিলাপ ছবিতে সুপর্ণা সেনের সঙ্গে সৌমিত্রের রোমান্স দৰ্শকদের মনে নতুন করে প্রেমের শিহরণ জাগায়।

উত্তম সৌমিত্রের ঝগড়ায় বাঙালী যখন ব্যস্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumtra Chattopadhay), তখন নিজেকে বাঙালির মনে নিত্য নতুন ভাবে সাজাতে ব্যস্ত।

অশনি সংকেতের,পন্ডিত মশাই তখন মহানায়ক হওয়ার দৌড়ে নয়, তিনি তখন নিত্য নতুন চরিত্রে সামিল হয়ে বাঙালীর ভালোবাসা কুড়োতে ব্যস্ত।

কখনো তিনি হীরকরাজ্যের উদয়ন পন্ডিত, আবার কখনো তিনি শুধু পাঠশালার মাস্টারমশাই নয়, পাঠশালার পাঠ পেরিয়ে ছাত্রদের মনের খোরাক যোগায়।

উদয়ন পণ্ডিতের পাশাপাশি তিনি আতঙ্ক, সিনেমার মাস্টারমশাই যার চোখ বন্ধ রাখার জন্য,চোখ রাঙায় চোরেরা। আবার তিনি কখনো এসবের বাইরে গিয়ে,কোনি সিনেমায় কোনিকে ফাইট শেখার মন্ত্র যোগায়।

সব মিলিয়ে তিনি সত্যজিৎ,মৃণাল, তপন বোসের ছবির জলসাঘরকে তার চরিত্রের,রজনী গন্ধার সুবাসে,সুরভিত করে গেছেন।

আরো পড়ুন: কোহিনুর হীরার ইতিহাস। 

এছাড়াও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমার মধ্যে,উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলি হল- গণদেবতা,ঘরে বাইরে,প্রতিনিধি,অসুখ, হেমলক সোসাইটি, গৌতম ঘোষের দেখা,সুজয় ঘোষের অহল্যা,অতনু ঘোষের ময়ুরাক্ষী।

soumitra chattopadhay biography

আর যেটার উল্লেখ,না করলে হয়তো,আমাকে বাঙালী হৃদয় কোনোদিন হয়তো ক্ষমা করবে না। সৌমিত্র অভিনীত সেই বিশেষ, সিনেমা দুটি হল,নন্দিতা রায় এবং শিব প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের,বেলাশেষে এবং পোস্তো

এছাড়া,বাংলীর প্রিয় ফেলুদাকে,ভুলে গেলে চলবেনা সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ চরিত্রে, নিছক তিনি শুধু গল্প চরিত্রে, তিনি অভনয় করেননি।

তিনি বাঙালীর মনে,গোয়েন্দাগীরির নতুন করে এডভেঞ্চারের সৃষ্টি করেছে। তাই আজও বাঙালি হৃদয়ে ফেলুদা সিরিজের রহস্য গুলো পড়তে গেলে সৌমিত্রের চেহেরা ফুটে ওঠে।

বলিউডে সৌমিত্র বাবুর, যাওয়ার ঝোঁক খুব একটা ছিল না। তবুও তার অভিনীত বলিউডের কয়েকটি সিনেমা হল -নিরুপমা, হিন্দুস্থানী সিপাহী, স্ত্রী কে পত্র ইত্যাদি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত নাটক


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,তার সিনেমা জগতের পাশাপাশি বহু নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত নাটক গুলি হল -তাপসী, নামজীবন, রাজকুমার,নীলকণ্ঠ,চন্দন পুরের চোর,ফেরা ইত্যাদি।

সত্যজিৎ রায় ও সৌমিত্র 


সত্যজিৎ রায়কে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মানিকদা, বলে ডাকতেন। সত্যজিৎ রায় প্রযোজিত, ১৪ টার কাছাকাছি সিনেমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,অভিনয় করেছেন।

অনেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে, সত্যজিতের মানস পুত্র বলে ডাকতেন। সত্যজিৎ রায়ের,যে সমস্ত সিনেমাগুলিতে,সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন।

আরো পড়ুন: রামানুজন জীবনী।

সেই সমস্ত সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপুরসংসার,তিনকন্যা,অভিযান,চারুলতা,অরণ্যেরদিনরাত্রি,অশনিসংকেত,সোনার কেল্লা,জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে,গণশত্রূ ইত্যাদি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পরিবার 


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও তার পরিবার নিয়ে,কলকাতার গল্ফ গ্রীন এর বাড়িতে থাকতেন। তার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা হল তিন জন। অনেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছেলে এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পৌলোমী বোস কে নিয়ে প্রশ্ন করেন।

তাহলে আপনাদের বলি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,পৌলোমী বোস হল বাবা ও মেয়ে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে হল পৌলোমী বোস। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছেলে হল সৌগত চট্টপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ,স্ত্রী (Wife) হল দীপা চট্টোপাধ্যায়।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পৌলোমী বোস

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সাক্ষাৎকার খুব কম দিতেন,তার মধ্যে লোকদেখানি ব্যাপারটা ছিলনা। তিনি নিজেকে প্রচার করা থেকে বিরত রাখতেন তিনি জানতেন অভিনয় হল তার আসল পরিচয়।

এক মিডিয়া চ্যানেলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সাক্ষাৎকরে বলেন। আমার কোনো দিন আলাদা করে সেক্রেটারী রাখার প্রয়োজন হয়নি, আমি মনে হয় অত বড় মাপের অভিনেতা এখনো হতে পারিনি।

কোনো চিত্র প্রযোজক তাঁর কাছে,ছবির প্রস্তাব নিয়ে এলে বলতেন, দাড়াও হে বাপু! আমি আমার হিসেবের খাতাটা দেখে নিই, ঐ দিন কাওকে,কথা দিয়েছি কিনা।

পুরুস্কার


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chattopadhyay) এর অভিনয় বাংলা সিনেমা জগৎকে,এক অনন্য পরিচয় প্রদান করেছে।

তাঁর এই অসামান্য কৃতীর জন্য,তাকে নানা রকম সম্মান পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রথম তিনি জাতীয় পুরুস্কার পান। ২০০০ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা তাকে সাম্মানিক ডি.লিট্ উপাধি দেওয়া হয়।

এরপর ২০০৪ সালে তাকে পদ্ম ভূষণ সম্মান প্রদান করা হয়। এর আগে তাকে পদ্মশ্রী পুরুস্কার দেওয়া হয় কিন্তু বাংলা সিনেমায় সরকারের অগ্রণী কোনো ভূমিকা না নেওয়ায় তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

২০০৬ সালে পদক্ষেপ ছায়াছবির জন্যে তাকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার খেতাব দেওয়া হয়। এছাড়াও ২০১২ সালে, তাকে ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ সম্নান দাদা সাহেব ফালকে পুরুস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

২০১৭ সালে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বঙ্গ ভূষণ পুরুস্কার দেয়। ঐ বছর তাকে ফ্র্যান্স সরকার ফ্রান্সের সর্ব্বোচ সম্মান লিজিওন অফ অনার দেন।

মানিক বন্দোপাধ্যায় এর পাঁচটি সেরা উপন্যাস সমগ্র এখন Amazon পাওয়া যাচ্ছে।  

 Soumitra Chattopadhyay এর লেখা বই


সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর মধ্যে,বই পড়ার খিদে ছিল খুব। আর যে অভিনেতা, নিয়মিত বই পড়েন, যিনি একজন ভালো পাঠক তার মধ্যে নিজে থেকে একজন সুদক্ষ শিল্পী সত্তা বিকশিত হয়ে যায়।

তখন তিনি,একজন ভালো অভিনেতা নাহয়ে যায় কোথায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা বই গুলি হল -শ্রেষ্ঠ কবিতা, মানিকদার সঙ্গে, চরিত্রের সন্ধানে,প্রতিদিন তব গাঁথা,শব্দরা আমার বাগানে,মধ্য রাতের সংকেত,পরিচয় ইত্যাদি।

“তুমি আছো আমি আছি”-বাংলা রোমান্টিক উপন্যাসটি Amazon এ উপলব্ধ রয়েছে। 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কবিতা ও আবৃতি


আমরা জানি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একজন বাচক শিল্পী হিসাবে, অল ইন্ডিয়া রেডিওতে যোগদান করেন। তখন তিনি যে একজন উচ্চপর্যায়ের বাচিকতা এবং তার অনবদ্য ভাষা শৈলী নিয়ে সন্দেহ থাকে না।

সৌমিত্র বাবুর গুরু গম্ভীর স্বরে,কবিতা আবৃত্তি শ্রোতাদের মনে,বিনার ঝংকারের মত বেজে ওঠে। তার অদম্য  কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গি লোম খাড়া করে।

ইতি অপু,কবিতা আবৃত্তি খানা শুনলেই আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি তার স্কীল কে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন। তিনি যে সমস্ত কবিতা গুলি লিখেছেন,সেগুলোকে একটি কবিতা সমগ্র আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া তিনি নাটক লিখেছেন, তার লেখা নাটকের বই হল-নাটক সমগ্র-১,নাটক সমগ্র-২।

https://youtu.be/eA9JZDDtzSc
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

করোনা আক্রান্ত হয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু

২০২০ সালে অক্টবর মাসে করোনা কালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনার শরীরে,জ্বর না ছাড়ায় চিকিৎসকরা করোনা টেস্ট করার জন্য বলেন।

০৫ অক্টবর নমুনা টেস্টে তার রিপোর্টে,কোভিড-১৯, ধরা পড়ে। এরপর তাকে কলকাতার বেলভিউ, হাসপাতালে ভর্তী করা হয়। ১৪ অক্টবর ২য়, বার নমুনা সংগ্রহ করা হলে সৌমিত্র বাবুর শরীরে কোভিড-১৯, রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

এরপর,তার স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হয়, হাসপাতালে থাকাকালীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের,শারীরিক অবস্থার আবার অবণতি দেখা দেয় তার কিডনির ডায়ালিসিস করানো হয়।

কিন্তু তাতে তার, শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয় না। অবশেষে ১৫ ই নভেম্বর ২০২০ সালে দুপুর ১২ টা নাগাদ ৮৫ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।

পরিশিষ্ট


পরিশেষে আমরা এটাই বলব পোস্তর দাদু আজ স্বশরীরে আমাদের সামনে নেই ঠিকই, কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় অধ্যয়নে এটা বোঝা গেল,

পোস্তর, দাদুর হাতছানি ও ছাপ দাদু নাতির অকৃত্রিম ভালোবাসা হয়ে বাংলী হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবে। কোই,গাও দেখি দাদু ভাই,হচ্ছেনা! আরো জোড়ে গলা ছেড়ে গাও।

সত্যি পোস্তর দাদু, তুমি অনবদ্য। তুমি বাংলীর মনে,বাংলা সিনেমায়,তোমার অভিনয় সত্যিকারের বাঙ্গালীর পাতে,পোস্তর ন্যায় পরিবেশন করেছ।

সুধী পাঠকবৃন্দ আমাদের আর্টিকেলে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় জগতের সামান্যতম কিছু ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

সৌমিত্র বাবুর কর্মশৈলীকে পাণ্ডুলিপি দিয়ে শুধু কিঞ্চিৎ মাত্রই তুলে ধরা সম্ভব। এত বড় মাপের ব্যাক্তিত্বকে,কাগজ কলমের কয়েকটি বাক্যে জানা সম্ভব নয়।

তবুও যদি আমাদের আর্টিকেলে সৌমিত্র বাবুকে নিয়ে,কিছু ভালোলাগা আপনারা উপলব্ধি করতে পারেন,তাহলে একজন বাঙালি হিসাবে নিজেকে ধন্য মনে করবো।

4.7/5 - (3 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here