ছট পূজা কি ? ছট পূজা কেন করা হয় (Chhath puja ki ? Chhath puja keno kora hoy)

সংস্কৃতি ও সভ্যতার দেশ ভারতবর্ষ হল বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষদের বাসস্থান। তাই দেশ এক হলেও ধর্ম যখন ভিন্ন ভিন্ন তখন সেখানে ধর্মানুযায়ী উৎসবের প্রাবধান ও ভিন্ন ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক।

হিন্দু ধর্মে বিশেষ করে উত্তর ভারতের কিছু অংশে ছট পূজাকে একটি মহাপার্বনের সঙ্গে তুলনা করলে কিছু কম বলা হবেনা। ভারতের সব রাজ্যে ছট পূজার প্রচলন ততটা না থাকায়

সাধারণ মানুষের মনে ছট পূজাকে ঘিরে ছট পূজা কি ? ছট পূজা কেন করা হয় ? ছট পূজা কিভাবে করতে হয় এই ধরণের প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক।

ছট পূজা বছরে দুবার হয়, একবার কালী পূজার ছয়দিন পরে ছট পূজা করা হয় একে কার্তিক ছট বলা হয়। আর একবার চৈত্র মাসে ছট পূজা হয় তাই একে চৈত্র ছট বা চৈতি ছট বলা হয়।

Table of Contents

ছট পূজা কি (Chhath Puja ki) ?

ছট পূজা হল ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের একটি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব। বিশেষ করে উত্তর ভারতের নেপাল,উত্তর প্রদেশ,বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছট পূজা বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে।

ছট পূজা হল সূর্য দেবতার পূজা অথচ এই পুজোকে ছট পূজা বা ছঠি মাইয়া কেন বলা হয় ? আসলে ছট পূজায় ছটা মানে সূর্যের রশ্মির পূজা করা হয়।

মৈথিলী ভাষা এবং ভোজপুরী ভাষায় ষষ্ঠ বা ছয়কে ছঠি উচ্চারণ করা হয়। তবে মূলত ছট পূজা সূর্য দেবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে করা হয়।

সূর্যের রশ্মিকে ছটা বলা হয় আর ছটা থেকেই ছঠি কথাটি এসেছে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী দুর্গাপূজার পর অমাবশ্যা কালী পূজা শেষ হলে কালী পূজার ০৬ দিন পরে ষষ্ঠীর দিন ছট পূজা করা হয়।

ছট পূজা কি ছট পূজা কেন করা হয়
ছট পূজা কি ছট পূজা কেন করা হয়

হিন্দু পুরানুযায়ী ছট পূজা হল সূর্য পত্নী ছঠি মাইয়ার পূজা (ছট মায়ের পূজা), ছট মাতাকে উষা বলে সম্বোধন করা হয়। ছট পূজার মাধ্যমে সূর্য ভগবান এবং সূর্য পত্নী ছঠি মাইয়ার (উষার) পূজা করা হয়।

অবশ্যই পড়ুন : শুভ বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বার্তা sms 

কার্তিক ছট পূজা কবে (Kartik Chhath Puja Kobe) ?

২০২২ সালে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে কার্তিক ছট পূজা করা হয়। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের চতুর্থীর দিন থেকে সপ্তমী পর্যন্ত মোট চার দিন ধরে ছট পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

কার্তিক মাসে ছট পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে একে কার্তিক ছট পূজা বলা হয়। এছাড়া বছরের শেষে চৈত্র মাসে আরো একবার একই নিয়মে ছট পূজা করা হয়, একে চৈতি ছট বলা হয়।

ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল সহ উত্তর প্রদেশ,বিহার,ঝাড়খন্ড রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হিন্দু পঞ্জিকা মতে ২০২২ সালে অক্টবরের ৩০ রবি বার ছট পূজা উদযাপন করবে।

২০২৩ সালে ছট পূজা কবে কত তারিখ দিন ক্ষণ 

তারিখ ছট পূজার শুভ মুহূর্ত তিথি 
১৭ নভেম্বর (শুক্র বার)স্নান ও সংযমচতুর্থী
১৮ নভেম্বর (শনি বার)খরনা ব্রত পালনপঞ্চমী
১৯ নভেম্বর (রবি বার)ছট পূজা সন্ধ্যা আরতি ও অর্ঘ্য নিবেদনষষ্ঠী
২০ নভেম্বর (সোম বার)উষা অর্ঘ্য ও আরতি নিবেদনসপ্তমী
ছট পূজা ২০২৩

ছট পূজার ইতিহাস (Chhath Pujar Itihas)

ছট পূজা ভারতবর্ষের এক অতি পৌরাণিক পূজা,তাই ছট পূজার ঐতিহাসিক মহত্ব নিছক কম না। হিন্দু ধর্মের অন্যান্য দেব দেবীর মত মানব কল্যানে সূর্য পত্নী ছট মায়ের পূজা করা হয়।

তবে অনেক অনাথ মাতা পিতা সন্তান প্রাপ্তির আশায় ছট পূজা করে থাকে। ছট পূজার সন্তান প্রাপ্তির আশায় ছট পূজার ব্রত কথা নিয়ে একটি পৌরাণিক কাহিনী শোনা যায়।

পৌরাণিক যুগে একজন ধর্মপ্রাণ রাজা ও রানী ছিল। রাজ্যের প্রজারা ধনধান্যে সুখে শান্তিতে বসবাস করলেও রাজা ও রানীর মনে সুখ ছিলনা।

তারা সন্তান প্রাপ্তির আশায় বহু সাধু মনীষীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন কিন্তু কিছুতেই তাদের সন্তান প্রাপ্তির মনবাঞ্ছা পূরণ হয়নি। একবার মহর্ষি কাশ্যপ রাজার ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

রাজা রানী উভয়েই ভক্তি ভরে মহর্ষি কাশ্যপের সেবা করে। মহর্ষি কাশ্যপ খুশি হয়ে তাদের সন্তান প্রাপ্তির আশীর্বাদ করেন। মহর্ষির আশীর্বাদে রানী গর্ভবতী হয় এবং মৃত সন্তান প্রসব করে।

তখন রাজা ও রানী ক্ষোভে দুঃখে জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে আত্ম হত্যা করার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিতে গেলে  ছট মাতা তাদের দর্শন দিয়ে ছট পূজা করার জন্য বলেন।

ছট মায়ের অভয়ে সন্তান প্রাপ্তির আশায় কঠোর বিধি নিয়ম মেনে রাজা রানী উভয়েই উপোস করে ভক্তি ভরে ছট মাতার পূজা করেন এবং তাদের পুত্র সন্তান প্রাপ্তি হয়।

এরপর থেকে রাজা ও রানী দুজনেই কার্তিক মাসের চতুর্থীর দিন থেকে চার দিন,নিষ্ঠার সাথে  ছট মায়ের ব্রত  পালন করতে থাকে।

রাজ্যের প্রজারা রাজা ও রানীর ভক্তি ভরে ছট পূজার ব্রত করা দেখে রাজ্যের প্রজাদের মধ্যে ধীরে ধীরে ছট মায়ের ব্রত কথা ও ছট পূজার মহত্বের প্রচার হয়।

অবশ্যই পড়ুন : শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী কেন পালন করা হয়। 

পুরাণের কাহিনীতে ছট পূজার মহত্ব (Chhath Pujar Mohotw)

হিন্দু ধর্মে এবং পুরাণে ছট পূজাকে বিশেষ মহত্ব দেওয়া হয়েছে। হিন্দু পুরাণ ছাড়াও রামায়ণ এবং মহাভারতে ছট পূজার উল্লেখ পাওয়া যায়।

রামায়ণে শ্রী রামচন্দ্রের ছট পূজা 

রাজা দশরথের পুত্র শ্রী রামচন্দ্র ছিলেন সূর্য বংশের সন্তান, সূর্য বংশের কুল দেবতা ছিলেন সূর্য। রামায়ণের কাহিনী অনুসারে শ্রী রামচন্দ্র ও সীতা দেবী সহ ভাই লক্ষণকে সাথে করে

চৌদ্দ বছর বনবাস কাটিয়ে দীপাবলির দিন অযোধ্যায় ফিরে আসেন। অযোধ্যায় ফিরে এসে শ্রী রামচন্দ্রের রাজ্য অভিষেক হয়। অযোধ্যায় রামচন্দ্র,রাম রাজ্য স্থাপনের জন্য

প্রজার মঙ্গল কামনায় কার্তিক মাসে শুক্ল ষষ্ঠীতে রামচন্দ্র ও সীতা দেবী কঠোর বিধি নিয়মে উপবাস রেখে কুল দেবতা সূর্যের উপাসনা করেন।

কালক্রমে শ্রী রামচন্দ্র এবং সীতা দেবীর সূর্যের উপাসনা ধীরে ধীরে মানব কল্যাণের নিরিখে ছট পূজায় রূপান্তরিত হয়ে যায়।

মহাভারতে দ্রৌপদী ও পঞ্চপাণ্ডবদের ছট পূজা 

মহাভারতের কাহিনী অনুসারে ‘বনপর্বে’ দ্রৌপদী এবং পঞ্চপান্ডবেরা তাদের কৌরবদের সাথে পাশা খেলায় হারানো রাজপাট ফিরে পাবার জন্য একনিষ্ঠ ভাবে ছট পূজা করেছিলেন।

মহাভারতে সূর্য পুত্র কর্ণের ছট পূজা 

মহাভারতের বনপর্বে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে পান্ডবদের মাতা কুন্তী সূর্যদেবের আরাধনায় সূর্যদেবের আশীর্বাদে  কর্ণের জন্ম হয়।

কিন্তু পিতৃ পরিচয় অজ্ঞাত যুবরাজ দাতা কর্ণ অঙ্গরাজ্যের মঙ্গল কামনায় প্রতিদিন প্রাতঃকালে গঙ্গাস্নানের মধ্যে দিয়ে নিয়মিত সূর্য পূজা করতেন।

এরপর থেকে হস্তিনাপুর অঙ্গরাজ্যবাসী প্রজারা পরিবার ও রাজ্যের মঙ্গল কামনায় সূর্যের উপাসনা রাজ্য বাসীর প্রধান পূজা রূপে স্বীকৃতি পায়।

ছট পূজা কেন করা হয় (Chhath Puja Keno Kora Hoy)

ছট পূজা হল সূর্য দেব ও সূর্য দেবের স্ত্রী উষা মানে ছট মাতার উপাসনা। সূর্যের কিরণেই পৃথিবীতে প্রাণের উৎসের সঞ্চার হয়। সূর্য থেকে আগত রশ্মি গাছের পাতায় সালোকসংশ্লেষে অংশগ্রহন করে।

সালোকসংশ্লেষের মধ্যে দিয়ে গাছের পাতায় গ্লুকোচ রূপে সৌর শক্তিকে সঞ্চয় করে রাখে। উদ্ভিদের পাতায় জমা হওয়া সৌর শক্তি আমাদের জীবনে প্রাণের খোরাক যোগায়।

নিয়মিত সূর্য প্রণাম করলে একদিকে যেমন প্রাণবন্তময় উজ্জ্বল দীপ্ত স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় অপরদিকে তেমনি সমগ্র জীবকুলের প্রাণের উৎস সূর্য দেবতাকে কৃতিজ্ঞতা জানানো হয়।

ছট পূজার মধ্যে দিয়ে সূর্য দেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের এক অনাবিল আনন্দের অনুভূতি পাওয়া যায় এবং আগামী দিনে নিজ পরিবারের কল্যান সুখী,প্রশান্ত থাকার জন্য নিষ্ঠার সাথে ছট মাতার পূজা করা হয়।

এছাড়াও নিয়মিত সূর্য প্রণামের সঠিক মন্ত্র উচ্চারণের করলে ব্যক্তির মানস পঠে সূর্য দেবের কৃপায় সারাদিন ব্যাপি অদৃশ্য শুভ শক্তির ছত্রছায়া লাভ করা যায়।

ছট পূজা প্রকৃত পক্ষে দেখতে গেলে সূর্য দেবের শক্তির পূজা করা। কিন্তু ছট পূজার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছেন মা গঙ্গা ও মা অন্নপূর্ণা।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের কাহিনী অনুসারে আষাঢ় মাসে বর্ষার প্রাদুর্ভাব ঘটলে চাষিরা মাঠে ফসল বুনে দেয়। কিন্ত ধীরে ধীরে আকাশ থেকে বৃষ্টি অর্দৃশ্য হয়ে যায়।

অপরদিকে সূর্য দেবের প্রচন্ড দ্রাব দ্রাহে মাঠের ফসল মাঠেই মরতে শুরু করেছে। মা অন্নপূর্ণা তখন মাঠের মধ্যেই মূর্ছা হয়ে পড়ছেন। চাষিদের ঘরে অন্নাভাবে হাহাকার দেখা দিয়েছে।

সূর্য দেবের প্রখর রোদ্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মা অন্নপূর্ণা তখন উপায় না দেখে সূর্য দেবের ধ্যানে ব্রতী হন।

কিন্তু সূর্য দেবের ধ্যানে মা অন্নপূর্ণার আরো করুন দশা হয়। সূর্যের প্রচন্ড তাপে মা অন্নপূর্ণার শরীর জ্বলে গিয়ে ক্ষীণ দশায় পৌঁছে যায়। মা অন্নাপূর্ণার করুন পরিস্থিতি দেখে দেবলোকে দেবতারা চিন্তিত হয়ে পড়েন।

সমস্ত দেবতারা তখন একত্রিত ভাবে সূর্য দেবের স্মরণাপন্ন হয়ে মা অন্নপূর্ণার দুরাবস্থার কথা তুলে সূর্যের কাছে তুলে ধরেন। সূর্য দেব তখন ‘মা অন্নপূর্ণাকে গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নিয়ে,

কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে সূর্যাস্তকালে এবং সপ্তমীতে সূর্যদয়ের সময় সূর্যের ছটা অথাৎ সূর্যের রশ্মি দেখে সূর্যের ১২ খানা নাম জপ করলে ধরাধাম অন্নে পরিপূর্ণ হওয়ার আশ্বাস দেন ।’

আর যে ব্যক্তি কার্তিক মাসের শুক্ল ষষ্ঠীর দিন সূর্যের অথাৎ ছট মায়ের ব্রত করবে তার পরিবারের কল্যাণ হবে সংসারে সুখ শান্তি বজায় থাকবে।

তাই প্রতিবছর বিশেষ করে হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষেরা কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে গঙ্গা ঘাটে কিংবা কোনো বড় জলাশয়ের ধারে ছট মাতার ব্রত বড় নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে থাকেন।

আরো পড়ুন : প্রেমিক ও প্রেমিকার মজাদার জোকস। 

সূর্য দেবের বারো খানা নাম কি কি 

ব্রহ্মান্ড পুরানের কাহিনী অনুযায়ী বিশ্বকর্মার বোন তনয়ার সঙ্গে সূর্য দেবের বিবাহ হয়। কিন্তু তনয়া দেবী সূর্য দেবের প্রচন্ড তাপ প্রবাহ সহ্য করতে অসমর্থ হলে,

বিশ্বকর্মা সূর্য দেবকে মোট বারো (১২ ভাগ) ভাগে ভাগ করে দেন। সূর্য দেবের ১২ টা ভাগ হল আমাদের ১২ মাসের সূর্য রশ্মির ভিন্ন প্রতিফলন ।

১২ মাসে সূর্য বিভিন্ন রূপে আলাদা আলাদা কোনে কিরণ দিয়ে থাকেন। বিশ্বকর্মা ভগবান দ্বারা খণ্ডিত সূর্য দেবের ১২ টি অংশ ১২ মাসে পৃথক নামে ব্রহ্মাণ্ডে উদিত হয়। সূর্য দেবের ১২ টি অংশের মাস অনুযায়ী নাম হল –

বৈশাখ মাসের নাম – তপনঃ

জ্যৈষ্ঠ মাসের নাম – ইন্দ্রঃ
আষাঢ় মাসের  নাম – রবিঃ
   শ্রাবণ মাসের নাম – গর্ভস্থিঃ

ভাদ্র মাসের নাম – যমঃ
            আশ্বিন মাসের নাম – হিরণ্যরেতাঃ
         কার্তিক মাসের নাম – দিবাকরঃ
         অগ্রহায়ণ মাসের নাম – মিত্রঃ
    পৌষ মাসের নাম –  বিষ্ণুঃ
    মাঘ মাসের নাম – অরুণঃ
     ফাল্গুন মাসের নাম– সূর্যঃ
         চৈত্র মাসের নাম – বেদজ্ঞঃ

ছট পূজা কিভাবে করতে হয়(Chhath Puja Kivabe KorteHoy)

দীপাবলীর ছয় দিন পরে মহাধুমধামের সঙ্গে ছট পূজা উদযাপন করা হয়। চতুর্দশী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত মোট চার দিন ধরে ছট পূজা উদযাপন করা হয়।

ছট পূজা কি ছট পূজা কেন করা হয়
ছট পূজা কি ছট পূজা কেন করা হয়

এতক্ষন আমরা ছট পূজা কি ? ছট পূজার ইতিহাস,ছট পূজার মহত্ব এবং ছট পূজা কবে জানলাম এখন আমরা ছট পূজা কিভাবে করতে হয় অথাৎ ছট পূজা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলব।

২০২২ সালে হিন্দু পঞ্জিকামতে ছট পূজার সূর্যোদয়ের সময় হল সকাল ০৬:৩১ মিনিট এবং সূর্যাস্তের সময় হল বিকেল ০৫:৩৭ মিনিট। সকাল সন্ধ্যার নির্দিষ্ট সময় মেনে ছট পূজার অর্পণ করতে হবে।

ছট পূজা পদ্ধতি 

আপনাদের সুবিধার্তে নিচে ছট পূজা পদ্ধতি বিধি টেবিলের মাধ্যমে দেখানো হল আশারাখি আপনারা ছট পূজা পদ্ধতি বিধি সমন্ধে মোটামোটি একটি ধারণা পাবেন।

দিন উৎসব ছট পূজা পদ্ধতি বিধি 
প্রথম দিনস্নান ও সংযমচতুর্থীর দিন ছট পূজার উপোসীরা স্নান করে নতুন কাপড় পড়ে পূজাঅর্চনা করে এবং ছট পালনের জন্য সংকল্প করে। তারপর নিরামিষ বিনা নুনে ছোলার ডাল,মিষ্টি কুমড়োর এবং লাউয়ের সবজি দিয়ে ভাত রান্না করে নিজে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খেতে দেয়।
দ্বিতীয় দিনখরনা ব্রত পালনছট পূজার দ্বিতীয় দিন অথাৎ পঞ্চমীর দিনকে খরনা বলা হয়। খরনা ব্রতর দিন যিনি ছট পূজার ব্রত করছেন সেই মহিলা উনুনে কাঠের আঁচে গুড়ের পায়েস তৈরী করে প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করে। তারপর থেকে ছট ব্রতী আগের ৩৬ ঘন্টার জন্য নির্জলা উপবাস রাখেন।
তৃতীয় দিনছট পূজা সন্ধ্যা আরতি ও অর্ঘ্য নিবেদনছট পূজার তৃতীয় দিন অথাৎ কার্তিক মাসের শুক্ল ষষ্ঠীর দিনও ছট পূজার ব্রতী হওয়া মহিলারা খরনা ব্রতর দিন শুরু হওয়া দীর্ঘ্য ৩৬ ঘন্টার নির্জলা উপবাসের মধ্যই থাকে। ঐ দিন ছট পূজার প্রসাদ হিসাবে ঠেকুয়া এবং লাড্ডূ তৈরী করা হয়। তারপর সেইদিন সন্ধ্যা বেলা স্বপরিবারে নতুন বস্ত্র পড়ে নদী কিংবা বড় জলাশয়ে গিয়ে কপালে সিঁদুর লাগিয়ে ফুল,বেলপাতা,গোটা আখ,হলুদ গাছ ইত্যাদি ধামা ভরে নিয়ে গিয়ে  একবুক জলে সূর্যাস্তে ঢলে পড়া সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করে। এইভাবে পরের দিন অথাৎ তৃতীয় দিনের জন্য ছট ব্রতীদের উপবাস অক্ষুন্ন থাকে।
চতুর্থ দিনউষা অর্ঘ্য ও আরতিছট পূজার চতুর্থ দিন অথাৎ সপ্তমীর দিন সকালবেলা প্রাতঃকালে ছট ব্রতী মহিলারা নদী বা জলাশয়ের ধারে গিয়ে একবুক জলে নেমে উদিত সূর্যকে প্রণাম করে ছট পূজার অর্ঘ্য নিবেদন করে। তারপর নিজের চারিদিকে ০৭ পাক ঘুরে দিক পরিক্রমা করেন। এইভাবে সূর্যদেবের জলোভিষেক পরিক্রমা করে ছট পূজা সম্পন্ন হয়। তারপর অন্যান্য ভক্তদের মধ্যে ছট পূজার প্রসাদ বিতরণ করা হয় এবং ছট ব্রতী উপোসীরা ছট মায়ের প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করে।

ছট পূজার চারদিন ছট পূজায় ব্রতী মহিলারা খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে। ছট পূজার বিধি নিয়ম ছট ব্রতী মহিলা কঠোর নিয়মের মধ্যে পালন করেন।

অবশ্যই পড়ুন : বিশ্বকর্মা পূজা কেন পালন করা হয়। 

ছট পূজা ব্রত পালনের কঠোর কিছু নিয়ম (Chhath Puja Vital Rules)

ছট পূজায় ভগবান সূর্য এবং সূর্যের পত্নী ছট মাইয়ার পূজা করা হয়। কিন্তু ছট পূজা পালন হয় কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে, তাই সবাইয়ের দ্বারা ছট পূজার ব্রত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

আসুন ছট পূজার ব্রতর কঠোর নিয়ম গুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক –

০১. ছট পূজার ব্রত শুধুমাত্র মহিলারা করতে পারবে এমন কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই। পরিবারের পুরুষ সদস্য চাইলে ছট পূজার ব্রত করতে পারে।

০২. ছট পূজার ব্রত রাখা ব্রতীদের ছট পূজার দিন নতুন কাপড় পড়তে হয়। তবে নতুন কাপড় হলেও খেয়াল রাখতে হবে কাপড়ের মধ্যে কোনো রকমের

ছেড়া ফাটা যাতে না থাকে বা কাপড়ের উপর পরে হাত শেলাই করা হাত শেলাই না থাকে। ছট পূজায় পুরুষ ব্রতীদের পরনে ধুতি পড়তে হয় এবং মহিলাদের শাড়ি পড়তে হয়।

০৩. চতুর্থী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত ছট পূজার চারদিন ছট পূজার ব্রতীদের নিয়ম করে মাটিতে কম্বল কিংবা চাটাই পেরে শুতে হয় খাট বিছনায় ছট ব্রতীদের শোয়া বারণ।

০৪. যারা প্রতি বছর ছট পূজার উপবাস করেন তারা ভাইফোঁটার পর থেকেই পেঁয়াজ,রসুন ছাড়া নিরামিষ সবজি ভাত গ্রহণ করেন।

০৫. ছট পূজার আগে বা পরে পরিবারের কোনো সদ্যসের মৃত্যু হলে আগের এক বছর ছট পূজা করা যায় না।

০৬. ছট পূজার উৎসব সাধারণত নদী কিংবা বড় পুকরে জলাশয়ের ধারে ছট মাতার পূজা করা হয়। ছট পূজায় একমাত্র পূজা যা এতো কঠিন নিয়মের মধ্যে দিয়ে ছট ব্রতীরা মানব কল্যানে পালন করে।

০৭.  অনেক হিন্দুধর্মালম্বী মানুষদের মতে ছট পূজা অথাৎ সূর্য দেবের আরাধনার পিছনে অন্তঃনিহিত বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য লুকিয়ে আছে।

ছট পূজার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য বা গুরত্ব 

অনেক বৈজ্ঞানিক আছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন ছট পূজা হল বিজ্ঞান সম্মত ভাবে পালনীয় একটি উৎসব। ছট পূজায় রাখা দীর্ঘ্য ৩৬ ঘন্টার ব্রতর মধ্যে দিয়ে মানব শরীরে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিন বার হয়ে যায়।

গঙ্গা বক্ষে কিংবা পুকুর ঘাটে বক্ষ জলে উন্মুক্ত শরীরে থাকাকালীন সূর্যের আলো গায়ে লাগলে মানব শরীরে সৌর তড়িৎ প্রবাহিত হয় যা মানব শরীরে প্রাকৃতিক ভিটামিন- ডি হিসাবে কাজ করে।

সূর্য থেকে আগত সৌর ভিটামিন- ডি মানুষের মধ্যে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিছু কিছু বৈজ্ঞানিকদের মতে উন্মুক্ত শরীরে সূর্যালোক পড়লে মানব শরীরে বাসা বাধা ব্যাকটেরিয়া নাশ হয়।

অব্শ্যই পড়ুন : বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা sms (ভ্যালেন্টাইন ডে বাংলা sms)

ছট পূজা সংগীত ভিডিও (Chhath Puja Sangeet Video)

ছট পূজা স্পেশাল প্রতিভা সিং এর ছট পূজা সংগীত ভিডিও আপলোড করা হল আপনারা নিচের ভিডিওতে টাচ করে সরাসরি ছট পূজা সংগীত ভিডিও দেখতে পারেন।

FAQ 

প্রশ্ন- ছট পূজায় কার পূজা করা হয় ?

উঃ- ছট পূজায় সূর্য ভগবান এবং তার স্ত্রী ছঠি মাইয়ার পূজা করা হয়।

প্রশ্ন- ছট পূজার ঘটকে কি বলে ?

উঃ- ছট পূজার ঘটকে ছট অরগ বলা হয়।

প্রশ্ন- ২০২৩ সালে ছট পূজা কবে ?

উঃ- ২০২৩ সালে ছট পূজা ১৭ নভেম্বর শুক্র বার।

প্রশ্ন- ছট পূজা কেন করা হয় ?

উঃ- সংসারের মঙ্গল কামনায় ছট পূজা করা হয়।

পরিশিষ্ট 

আমরা এতক্ষন ছট পূজা কিভাবে করতে হয়,কার্তিক ছট পূজা কেন করা হয়,সূর্য পূজার পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

হিন্দু ধর্মের নানান উৎসবের মধ্যে ছট মাইয়া অথাৎ ছট পূজাকে সবথেকে পবিত্র এবং কঠোর নিয়মের পূজা বলে মনে করা হয়।

তাই যারা ছট পূজা করে থাকেন ছট মায়ের প্রতি আস্থা রাখেন আশা করি ছট পূজা কেন করা হয় আর্টিকেলটির মাধ্যমে ছট পূজার তাৎপর্য সমন্ধে সামান্যতম হলেও কিছুটা অন্তত অবগত করাতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

এই আর্টিকেল গুলো পড়ে দেখুন –
5/5 - (1 vote)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here