ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড কি,ইকুইটি ফান্ড কত প্রকার (Equity mutual fund ki)

মিউচুয়াল ফান্ডের নামতো অনেক শুনেছেন কিন্তু তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ফান্ড হল ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড বা ইকুইটি ফান্ড। কিন্ত আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ইকুইটি ফান্ড কি (Equity Fund) জানেন না।

আর বাংলা ভাষার কোনো ওয়েবসাইটে ফান্ড সম্পর্কিত সেরকমভাবে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জন্যে ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত কিছু তথ্য নিয়ে এসেছি।

আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি আপনার মনের মধ্যে থাকা ইকুইটি ফান্ড সমন্ধিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সহায়ক হবে। এর আগে মিউচুয়াল ফান্ড কিভাবে কাজ করে এবং মিউচুয়াল ফান্ড কত প্রকার আর্টিকেলটিতে

আমরা মিউচুয়াল ফান্ডকে তিন ভাগে ভাগে দেখেছিলাম – Debt,Hybrid এবং Equity ফান্ড। সাধারণভাবে বলতে গেলে ইকুইটি ফান্ড হল মিউচুয়াল ফান্ডের একটি স্কিম,

যে স্কিমের ফান্ডের টাকা কোম্পানির শেয়ার এবং স্টকে টাকা নিবেশ করা হয় তাকেই ইকুইটি ফান্ড বলা হয়। ইকুইটি ফান্ডকে Growth Fund বলা হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডের মূল তিনটিই ফান্ডের মধ্যে ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড হল সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ফান্ড। এখন আমরা ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড কি এবং ইকুইটি ফান্ডের লাভ গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড কি (What is Equity Mutual Fund in Bangla)

Equity Fund এর বেশিরভাগ ফান্ডের শেয়ার বাজারে নিবেশের জন্যে ব্যবহার করা হয়। যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে পারে তাদের জন্যে ইকুইটি ফান্ড হল সবথেকে ভালো মিউচুয়াল ফান্ড।

ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন ঝুঁকি থাকে ঠিক তেমন রিটার্ন ও অনেক বেশি পাওয়া যায়। ইকুইটি ফান্ড থেকে Secondary market এ ইকুইটি related আরো অন্যান্য জায়গায় নিবেশ করা হয়।

বেশিরভাগ ইকুইটি ফান্ডের ফান্ড কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটালাজেশন অনুসারে নিবেশ করা হয়। সহজভাবে বলতে গেলে যে ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজারে নিবেশ করা হয়, সেই ফান্ড গুলোকে ইকুইটি ফান্ড বলা হয়।

তাই অনেক বিনিয়োগকারী অল্প সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফা কামানোর জন্যে ইকুইটি ফান্ডে টাকা বিনিয়োগ করে। তবে এমন লোকও আছেন যারা ইকুইটি ফান্ডে রিস্ক অধিক থাকার জন্যে ভেবেচিন্তে ইকুইটি ফান্ডে নিবেশ করে।

ইকুইটি ফান্ড কত প্রকার (Equity Fund koto prokar)

ইকুইটি ফান্ডকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। ইকুইটি ফান্ডকে প্রধানত – Large cap, Mid cap এবং Small Cap তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি ফান্ড আছে যেমন- ডাইভার্সিফাইড ফান্ড এবং সেক্টর ফান্ড।

০১. লার্জ ক্যাপ ইকুইটি ফান্ড (Large Cap Equity Funds): লার্জ ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডের টাকা বেশিরভাগ দিগ্গজ বড় বড় কোম্পানিগুলোতে নিবেশ করা হয়। এই সমস্ত কোম্পনিগুলো তাদের নিজের নিজের সেক্টরে খুব ভালোভাবে

প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানি হয় এবং এই কোম্পনিগুলোর মার্কেট ক্যাপিটাইলাইজেশন এতটাই বড় হয় যে নতুন কোম্পানিগুলোর তুলনায় দেউলিয়া হওয়ার সম্ভবনা খুব কম থাকে।

ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড
ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড

এই জন্য লার্জ ক্যাপ কোম্পানিগুলোতে নিবেশ করাকে একটি সুরক্ষিত নিবেশ হিসাবে ধরা যেতে পারে। আর লার্জ ক্যাপ কোম্পানিগুলোর সূচীতে দেশের বড় বড় কোম্পানির গুলোর নাম থাকে।

তাই যে সমস্ত নিবেশক কম ঝুঁকির সাথে ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করেতে চায় তাদের জন্যে লার্জ ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডকে একটি সুরক্ষিত নিবেশের ফান্ড হিসাবে ধরা হয়।

০২. মিড ক্যাপ ইকুইটি ফান্ড (Mid Cap Equity Funds ): মিড ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডে বেশিরভাগ মধ্যম আকারের কোম্পনি গুলোতে টাকা নিবেশ করা হয়।

তবে মধ্যম বর্গের কোম্পানিগুলোতে নিবেশ করলে নিবেশের সাথে অনেক ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ এই সমস্ত কোম্পানিগুলো বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সমবসময় ভালো রকমের ফলাফল না করতেও পারে।

তাই এখানে আপনার টাকা যেমন লস হওয়ার ঝুঁকি থাকে, ঠিক তেমনি আবার এই সমস্ত ফান্ডে নিবেশ করলে ফায়দা হওয়ার চান্স অনেক বেশি থাকে।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মাঝারি কোম্পানি গুলো ব্যবসায় growth করে অনেক বড় কোম্পানির মত মুনাফা কামায়। সেক্ষেত্রে মিড ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয়ে যায়।

তাই যারা বড় ধরণের ঝুঁকি নিতে পারে,সেই সমস্ত ব্যক্তিরা এই ধরণের মিড ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করলে চরমভাবে লাভবান হয়।

০৩. স্মল ক্যাপ ইকুইটি ফান্ড (Small Cap Equity Funds) : যে সমস্ত মিউচুয়াল ফান্ডের স্কীমের ফান্ডের টাকা শুধু ছোট ছোট কোম্পানির শেয়ার এবং স্টকে নিবেশ করা হয় সেই ধরণের ফান্ড গুলোকে স্মল ক্যাপ ইকুইটি ফান্ড বলা হয়।

স্মল ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডের বেশিরভাগ টাকা ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা ছোট ছোট কোম্পানি গুলোতে নিবেশ করা হয়। তাই স্মল ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডে নিবেশ, লার্জ ক্যাপ এবং মিড ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকি পূর্ণ।

কিন্তু এটাও ঠিক স্মল ক্যাপ ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করলে মিড ক্যাপ এবং লার্জ ক্যাপ ফান্ডের তুলনায় অনেক বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। তাছাড়া স্মল ক্যাপ ইকুইটি ফান্ড গুলো সম্পর্কে খুব বেশি জানা না যাওয়ায়,

এই ধরণের ফান্ডে নিবেশ একটু বেশি ঝুঁকি পূর্ণ নিবেশ বলে মনে করা হয়। তাই যে সমস্ত বিনিয়োগকারী ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা আছে তাদের জন্যে স্মল ক্যাপ ইকুইটি ফান্ড হল উপযুক্ত ইকুইটি ফান্ড।

০৪. সেক্টর ফান্ড (Sector Fund) : সেক্টর ফান্ডে নিবেশের তাৎপর্য হল কোনো বিশেষ সেক্টরে নিবেশ করা। সেক্টর ফান্ডের টাকা কোনো বিশেষ ধরণের কোম্পানির শেয়ারের ফান্ডে নিবেশ করা হয়।

এই ধরণের ফান্ডের টাকা বিশেষ কোনো একটি perticular সেক্টরের কোম্পানির ফান্ডে নিবেশ করা হয়। তাই আর বাকি যে সমস্ত ফান্ড আছে সেগুলোর তুলনায় সেক্টর ফান্ডে নিবেশ হল অন্যতম ঝুঁকি পূর্ণ একটি নিবেশ পক্রিয়া।

সেক্টর ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজার তাদের নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে, যে সেক্টর থেকে বেশি পরিমানে মুনাফা কামানো যায় সেই ধরণের কোন একটি perticular সেক্টরে টাকা নিবেশ করে।

যেমন- রিয়েল স্টেট সেক্টরে ফান্ড নিবেশ করলে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি মুনাফা কামানো যায়। তবে যারা মিউচুয়াল ফান্ডে নতুন তাদের সেক্টর ফান্ডে নিবেশ না করায় উচিত।

০৫. ELSS (ইকুইটি লিংকড সেভিং স্কীম) / Tax Saving Funds : যে সমস্ত নিবেশক ইনকাম ট্যাক্স রিবেট পেতে চায় তাদের জন্যে ইকুইটি লিংকড সেভিং স্কীম একটি গুরত্বপূর্ন ট্যাক্স সেভিং ফান্ড হিসাবে কাজ করে।

আয়কর অধিনিয়ম ৮০ C অনুসারে ইকুইটি লিংকড সেভিং স্কীম ফান্ড থেকে ইনকাম ট্যাক্স রিবেট পাওয়া যায়। তবে এই ধরণের ফান্ডে নিবেশ করে বছরে ০১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স রিবেট পাওয়া যায়।

Tax Saving Fund গুলোতে মিনিমাম ০৩ বছরের লকিং পিরিয়ড থাকে। এই লকিং পিরিয়ডের মধ্যে বিনিয়োগকারী তার নিবেশ করা রাশি কোনোমতেই ম্যাচুরিটি পিরিয়ডের আগে বার করতে পারেনা।

০৬. ডাইবারসিফাইড ইকুইটি ফান্ড : এই ধরণের ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের টাকা কিছু বিশেষ ধরণের শেয়ারে ইনভেস্ট না করে বিভিন্ন ধরণের শেয়ার ও স্টকে নিবেশ করা হয়।

এই ধরনের ফান্ড কোম্পনি গুলো ছোট, বড় সকল ধরণের বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগ করে,তাই এই সমস্ত কোম্পনি গুলোতে নিবেশ করলে সেরকম রিস্ক থাকেনা এবং কম বেশি মোটামুটি রিটার্ন পাওয়া যায়।

ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে সুবিধা

মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্ত সুবিধা ইকুইটি ফান্ডের মধ্যেও পাওয়া যায়। ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে নিবেশ করার একটি অন্যতম সুবিধা হল আপনাকে একবার টাকা নিবেশ করার পর আর চিন্তা করতে হয়না।

ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজার ইকুইটির ফান্ড ম্যানেজ করে কিন্তু শেয়ারে নিবেশ করলে পুরো ঝুঁকি নিয়ে নিজেকেই ফান্ড ম্যানেজ করতে হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডে কিভাবে বিনিয়োগ করব

বর্তমানে ইকুইটি ফান্ডে নিবেশ করা অনেক সহজ, আপনারা অনলাইনে কিংবা অফলাইন কোনো ব্রোকার অথবা এজেন্টের সাহায্য নিয়ে ইকুইটি ফান্ডে নিবেশ করতে পারেন।

তবে যারা নতুন বিনিয়োগকারী মার্কেট সমন্ধে জ্ঞান কম, তাদের ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করার আগে একজন অভিজ্ঞ ব্রোকারের সাহায্য নিয়ে তবেই ইকুইটি ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত।

ব্রোকারের সাহায্য নিয়ে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ করার আগে আপনি মিউচুয়াল ফান্ডের যাবতীয় ছোট বড় সমস্ত তথ্য জেনে বুঝে তারপর ইনভেস্ট করতে পারবেন।

আবার আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে কোনো ফান্ডে সরাসরি নিবেশ করতে চান, তাহলে সেখানে একসাথে আলাদা আলাদা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার অনেক বিকল্প রাস্তা পাওয়া যায়।

অনলাইনে কোনো ইকুইটি ফান্ডে নিবেশ করতে চাইলে আপনি সরাসরি মিউচুয়াল ফান্ডের ওয়েবসাইট সাইন আপ করতে পারেন। যেমন- রিলায়েন্স, টাটা, আদানি ইত্যাদি কোম্পানির ফান্ড গুলোতে নিবেশ করতে পারেন।

এই সমস্ত সাইটে ইনভেস্ট করার জন্যে আপনাকে অনলাইন মারফতে ব্যাঙ্ক ডিটেলস সহ আধার,প্যান কার্ড ইত্যাদি দিয়ে KYC করার দরকার হবে।

অনলাইনের মাধ্যমে আপনি সরাসরি যেকোনো মিউচুয়াল ফান্ডের ফান্ড কেনা বেচা করতে পারেন। তার সাথে অনলাইনে নিবেশ করার প্লাস পয়েন্ট হল এখানে কোনো ব্রকেজ চার্জ দিতে না হওয়ায় অনেক বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়।

সেরা মিউচুয়াল ফান্ড

বর্তমানে ভারতে অনেক মিউচুয়াল ফান্ডের কোম্পানি আছে তাদের মধ্যে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় সেরা মিউচুয়াল ফান্ড কোনটি ? কোন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে বেশি বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে ?

তাহলে আপনাদের জন্যে এখানে ০৫ টি সেরা মিউচুয়াল ফান্ডের নাম এখানে আমরা সাজেস্ট করলাম। যে ফান্ড গুলোতে নিবেশ করলে আপনি হয়ত লাভবান হতে পারেন।

সেরা ০৫ টি ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড ২০২২

০১) SBI BlueChip Fund-Regular (D)

০২) Birla SL Frontline Equity Fund (D)

০৩) Franklin India Prime Plus Fund (D

০৪) Meera Asset Opportunities Fund-Regular (D)

০৫) HDFC Mid Cap Fund (D)

আপনারা উপরোক্ত ফান্ডগুলোতে নিবেশ করে কম সময়ে মুনাফা কামাতে পারেন।

নোট : একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে কোন ধরণের মিউচুয়াল ফান্ড অথবা স্টক মার্কেটে টাকা বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই আপনাকে মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করে তবেই বিনিয়োগ করা উচিত।

পরিশিষ্ট

আশাকরি আপনারা ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড কি সেই সমন্ধে মোটামোটি একটি ধারণা পেয়ে গেছেন। আপনারা মিউচুয়াল ফান্ড ও শেয়ার মার্কেট সমন্ধে যদি আরো ভালোভাবে জানতে চান তাহলে

আমাদের মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত আরো অন্যান্য আর্টিকেল গুলো পড়ে দেখুন। তাতে করে আপনাদের মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

আমাদের আর্টিকেল টি আপনার কাছে একটি জ্ঞানমূলক পোস্ট মনে হলে আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবে। আপনাদের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ আমাদের আর্টিকেলটি ভাইবোনদের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ বাড়াতে সাহায্য করবেন।

5/5 - (3 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here