অজিত দোভাল জীবনী (Ajit Doval Biography Bangla )

আজকে আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি ,অজিত দোভাল জীবনী। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানব অজিত দোভাল কে ?(who is Ajit Dovlal)

অজিত দোভাল (Ajit Dovlal)এর জীবনে ঘটে চলা বিভিন্ন রোমাঞ্চ কর ঘটনা বলি। এছাড়াও অজিত দোভাল Pakistan story.

তুলে ধরব অজিত দোভাল জীবনী র প্রেক্ষাপটে ঘটে চলা বিভিন্ন বিপত্তকর ঘটনা। আসুন তাহলে জানা যাক অজিত দোভাল জীবিনী’তে অজিত দোভালের জীবনের গল্প।

অজিত দোভাল জীবনী (Ajit Doval Biography Bangla )


অজিত দোভাল কে? অজিত দোভাল জীবনী র জানতে হলে আমাদের শুরু করতে হবে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষ থেকে।অজিত দোভাল এর জন্ম হয় ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে।

মেজর গুনানন্দ দোভাল এর ঘরে। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে, ১৯৪৫ সালের ২০ সে জানুয়ারী অজিত দোভাল এর জন্ম হয়।

অজিত দোভাল এর বাবা ছিলেন একজন সেনা অফিসার। অজিত দোভাল এর আদি বাড়ি ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যে।

পূর্ব গাড়োয়াল এর গিরি বনেলসুন এ। যা উত্তরাখন্ড রাজ্যে অবস্থিত। অজিত দোভালের জন্ম উত্তরাখণ্ডে হলেও ,তার পড়াশোনা উত্তরাখণ্ডে হয়ে ওঠে না।

বাবা সেনা বাহিনীতে থাকায় অজিত ডোভালের স্কুল শিক্ষা(Ajit Doval education) হয় রাজস্থানের আজমের এ। King Geoarge’s Royal Indian Military School(Ajmwer)থেকে, অজিত দোভাল স্কুল শিক্ষা শেষ করে।

এরপর ১৯৬৬ সালে National Defence Collage(Delhi) তে ইকোনোমিক্স। এবং  Agra Univercity(U.P) থেকে ইকোনোমিক্স এ মাস্টার ডিগ্ৰী পাস্ করেন।

মাস্টার ডিগ্রি করার পর অজিত কেরিয়ার গঠোনের দিকে ফোকাস করে। অজিত পুলিশ অফিসার হিসাবে, তার কেরিয়ার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৬৭ সালে অজিত দোভাল UPSC পরীক্ষায় ১ম বারেই পাস্ করে যায়। ১৯৬৮ সালে কেরল ক্যাডারে IPS অফিসার পদে যোগ দেয়।

আরো পড়ুন: সন্দীপ মহেশ্বেরী জীবনী। 

অজিত দোভাল জীবনী’তে,অজিত দোভাল এর Police Career


অজিত দোভালকে কেরলের কোট্টায়াম জেলার ASP পদের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে কোট্টায়াম জেলার থালাসেরে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয়।

থালাসের দাঙ্গা পরিস্থিতি এতটাই অশান্ত হয়ে পরে। যে সেখানে দোকানপাট লুটপাট ,রেপ,মাডার এর মত জঘন্ন কাজ গুলি, দিনের আলোতে আম জনতার সামনে ঘটতে থাকে।

পরিস্থিতি পুলিশ প্রশাসনের আওতার বাইরে চলে যায়। তখন গৃহমন্ত্রী ছিলেন কে.কারাকোরান। দাঙ্গাস্থিতি এতটা খারাপ ছিল যে, খবর গৃহমন্ত্রালয়ে পৌঁছায়।

সেইমুহূর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে দরকার ছিল একজন সুদক্ষ নায়কের।এই দুঃসময়ে,পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। দরকার ছিল ইয়ং দুঃসাহসী এক পুলিশ অফিসারের।

খুব অল্পদিনেই, অজিত তার বুদ্ধিদীপ্ত দিমাগ দিয়ে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টের নজর কেড়েছিল। তাই থালাসের দাঙ্গা মোকাবিলার জন্য অজিত দোভাল মনোনীত হয়।

অজিত দোভাল থালাসের এর কুন্নুর থানায় পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে থানা প্রভারীর সাথে মিলে, স্থানীয় দাঙ্গা কারীদের বিরুদ্ধে নীলছক আঁকা শুরু করে।

অজিত ঠিক করে প্রথমে দাঙ্গায় লুট হওয়া মালের কিনারা করতে হবে। তারপর জনতাকে, তাদের লুট হওয়া মাল ফেরত দিতে হবে।

এরপর অজিত দোভাল লক্ষের দিকে এগিয়ে যায়। সর্বপ্রথমে অজিত দাঙ্গাগ্রস্থ মানুষদের সাথে দেখা করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জাগায়।

সাধারণ মানুষকেআশ্বাস দেয়,দুই দিনের মধ্যে তাদের লুট হওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এরজন্য শুধু তাদের সহযোগিতার প্রয়োজন।

অজিত তাদের সঙ্গে কথা বলে, দাঙ্গাকারীদের সনাক্ত করার কাজ শুরু করে। এরপর একে,একে দাঙ্গাকারীদের শনাক্ত করে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করা শুরু করে।

গ্রেফতার হওয়া দাঙ্গাকারীদের কাছে থেকে,লুট হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। জনতা অজিত দোভাল এর  কথামত লুট হওয়া মাল ফিরে পায়।

২৮ সে ডিসেম্বর ১৯৭১ থালাসেরি দাঙ্গা শুরু হয়।পুরো দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে অজিত তার দূরদর্শী তীক্ষ্ণ দিমাগ ব্যবহার করে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করে।

মাত্র দুই দিনের মধ্যে,দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ করে অজিত এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এই কাজের জন্য প্রশংসা পায় অজিত দোভাল।

অজিতের প্রশংসা দিল্লীতে গৃহমন্ত্রালয় পর্যন্ত পৌঁছায়। এরপর অজিত দোভাল কে দিল্লীতে গৃহমন্ত্রালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।

অজিত দোভাল এর কাজ করার ধরণ দেখে। অজিত কে IB তে কাজ করার জন্যে Deputation এ নিয়ে নেওয়া হয়।

অজিত দোভাল জীবনী’তে, অজিত দোভাল Intelligence career


১৯৭২ সালে অজিত দোভাল দিল্লী তে এসে Intelligence Buero জয়েন করে। অজিত দোভাল জীবনী ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাওয়া যায়।

মাত্র ৭ বছর অজিত একজন পুলিশ অফিসার হিসাবে চাকুরী করেছেন। তারপরের জীবন একজন সুদক্ষ গোয়েন্দা হিসাবে দেশ সেবা করেছেন।

দিল্লীতে এসে অজিত বিবাহ করেন। Ajit Doval family বলতে, পত্নি অনু দোভাল(Ajit Doval wife)। তার দুই ছেলে ও আছে (Ajit Doval,son)। একজন হলেন শৌর্য দোভাল (Shaurya Dovl) এবং অপরজন হলেন বিবেক দোভাল

অজিত দিল্লিতে পৌঁছালে, আবার নতুন করে মিজোরামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।সত্তর দশকে MNF, মিজোরামকে পৃথক রাষ্ট ঘোষণা করার দাবি রাখে।

ভারত থেকে মিজোরাম কে আলাদা করার জন্য Mizoram National Front জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলছিল। এই আন্দোলন কে নেতৃত্ব দিচ্ছিল লাল ডেঙ্গা

মিজোরামে পরিস্থিতি তখন সরগরম। নিয়মিত যেখানে,সেখানে গোলাগুলি লেগেই থাকত। খুন,খারাপি হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

সবমিলিয়ে মিজোরাম তখন লাল ডেঙ্গা-র আতঙ্কে কাঁপছে। এহেন পরিস্থিতিতে খুন হয়ে যায় একজন IPS অফিসার।

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য দিল্লী থেকে IB -র,পুরো টিম আসে। কিন্তু মিজোরামের পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল।তাই IB ফিরে যায়।

IB -র, পক্ষে সেখানে গিয়ে কোনো খবর জোগাড় করা মুশকিল হয়ে পড়েছিল। লাল ডেঙ্গার আতঙ্ক এতটাই প্ৰৱল ছিল। যে কেউ মুখ খুলতে রাজি ছিল না।

এভাবে লাল ডেঙ্গা এবং তার দলের কোনো রকম হদিস IB করে উঠতে পারছিলনা।পুলিশের সাথে IB ও ফেল হতে দেখা যাচ্ছিল।

এরকম উতপ্ত পরিস্থিতে নতুন করে IB-র কোনো অফিসার যেতে চাইছিলনা। তখন অজিত দোভাল নিজে থেকে বলে আমি যাব মিজোরামে।

মিজোরামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখে। সদ্য বিবাহিত অজিত কে,মিজোরাম যাওয়ার জন্য নিষেধ করে। কিন্তু অজিত নিজের ইচ্ছেই মিজোরামে যায়।

অজিত দোভাল MNF Operation (Mizoram National Front)


অজিত মিজোরামে এসেই পরিস্থিতির তদন্তে নামে। MNF এর তদন্তে নেমে অজিত সূচনা সংগ্রহ করতে শুরু করে। তদন্তে নেমে অজিত, লাল ডেঙ্গার সঙ্গে যুক্ত ৬ জন নেতার হদিস পায়।

একে,একে লাল ডেঙ্গার ৬ জন নেতার, নাম,পরিচয় Ajit Dovlal জোগাড় করে ফেলে। অজিত ৬ জনের উপর শুকুনের নজর জমিয়ে রাখে।

এরপর তাদের আস্তানা, দেশ বিরোধী কার্যে তাদের কোথা থেকে সাহায্য আসছে।তাদের পুরো কুন্ডলি অজিত,বানিয়ে ফেলে।

Ajit Dovlal একে,একে ৬ জন লাল ডেঙ্গা অনুগামী নেতাদের সঙ্গে দেখা করে। Ajit Doval-র বুঝতে বাকী থাকেনা, এই ৬জন নেতাদের পিঠে হাত রেখে লাল ডেঙ্গা মিজোরামে অশান্তি ছড়াচ্ছে।

মিজোরামে এসেও অজিত তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি প্রয়োগ করে। অজিত লাল ডেঙ্গার সহগামী নেতাদের বোঝাতে শুরু করে।মিজোরাম ভারতের অভিন্ন অঙ্গ।

মিজোরাম কে, ভারত থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়।মিজোরাম কে আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করার দাবি কোনোদিন ভারত সরকার মেনে নেবে না।

ajit doval pakistan spy

মিজোরাম কে আলাদা করা ছাড়া। অন্য সব দাবি ভারত সরকার মানতে রাজি আছে। এইভাবে Ajit Doval তাদের ব্রেনওয়াস করে ফেলে।

এরপর ভারত সরকারের সঙ্গে, লাল ডেঙ্গা এবং বাকি ৬জন নেতার,এক শান্তি বৈঠকের আয়োজন করা হয়।লাল ডেঙ্গা সেই বৈঠকে যোগ দেয়।

লাল ডেঙ্গা কে বোঝানো হয়। তার অনুগামী আরও অন্যান্য ৬জন নেতা ভারত সরকারের শর্তে রাজি হয়েছে। তাই তার। সরকারের কাছে, সরকারের শর্ত মানা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।

এইভাবে অজিত দোভাল, মিজোরাম কে, ভারত থেকে আলাদা করার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ইতি টানে। মিজোরাম ভারতের অভিন্ন অঙ্গে সামিল হয়।

অজিত ডোভালের রণকৌশলে মিজোরামে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে লাল ডেঙ্গা নির্বাচিত হয়ে, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী হয়।

এই ঘটনার পুরো কৃতিত্ব দেওয়া হয় অজিত দোভাল কে। তাকে মাত্র ৮ বছর চাকুরীতে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল(President Police Medal) দেওয়া হয়।

সাধারণ ভাবে ভারতে কোনো পুলিশ অফিসার কে তার কেরিয়ার এবং কর্ম নিষ্ঠা বিশ্লেষণ করার পর। ১৪-১৫ বছর সময় লেগে যায় প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল প্রাপ্তির জন্য।

আরো পড়ুন: বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল। 

অজিত দোভাল Operation Black Thunder


অজিত দোভাল জীবনী অধ্যয়নের, আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল Opration Black Thunder ১৯৮৮।

১৯৮৮ সালে খালিস্থানি জঙ্গিরা, অমৃতসর স্বর্ণ মন্দির কব্জা করে ফেলে।তারা পাঞ্জাবকে আলাদা করে খালিস্তান গঠন করার দাবি জানাই।

এই ঘটনায় ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাজীব গান্ধী। রাজীব গান্ধির সামনে,খালিস্থান জঙ্গি মোকাবিলা চ্যালেঞ্জ ছিল।

এর জন্য আবার অজিত দোভাল কে স্মরণ করা হয়। অজিত দোভাল অমৃতসরে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে ঘটনার তদন্তে নামে।

সেখানে গিয়ে Ajit Doval রিক্সা ওয়ালার ছদ্মবেশ নেয়। বেশ কয়েকদিন Ajit Doval সেখানে রিক্সা চালায়। সেখানকার পথঘাট চেনার চেষ্টা করতে থাকে।

অজিত দোভাল জীবনী(ajit doval biography)

এভাবে স্বর্ণ মন্দিরের(Golden Temple)এর ভিতরে,আসা যাওয়া প্রতিটি লোকের উপর অজিত নজর রাখতে থাকে। কিন্তু এভাবে অজিতের কিছু হাসিল হয় না।

অজিত দোভাল স্থানীয়দের চোখে, সন্দেহের তালিকায় এসে যায়।কারো বুঝতে অসুবিধা হয়না, মাথায় ফেটা বাঁধা,লুঙ্গি পড়া লোকটা স্থানীয় রিক্সা ওয়ালা নয়।

খালিস্থানি সমর্থকরা Ajit Doval কে ধরে নিয়ে যায়। আসলে অজিত নিজেও চাইছিলেন, কোন প্রকারে স্বর্ণ মন্দিরের ভিতরে দাখিল হতে।

সেখানে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে। কারণ এভাবে রিক্সা চালিয়ে,বাইরে থেকে,ভিতরের কোনো তথ্য অজিত আদায় করে উঠতে পারছিলেননা।

Ajit Doval কে খালিস্থানি জঙ্গিপ্রধান, পরিচয় জানতে চায়। পরিচয়ে অজিত নিজেকে, পাকিস্থানি ISI এর এজেন্ট হিসাবে পরিচয় দেয়।

কিন্তু অজিত দোভাল এর এই কথা তারা কোনো মতেই বিশ্বাস করেনা। তারা তাকে ভারতের কোনো গুপ্তচর বলেই সন্দেহ করে।

কিন্তু যাইহোক Ajit Doval শেষমেস, খালিস্থানি দের বুঝিয়ে উঠতে সমর্থ হয়। তিনি হলেন পাকিস্তানি ISI এজেন্ট। আর তাদিকে সাহায্য করার জন্য,জঙ্গি প্রধান তাকে পাঠিয়েছে।

স্বাধীন খালিস্থানের সমর্থন,পাকিস্তান তাদের সাহায্য করতে চায়। এইভাবে Ajit Doval তাদের কনভেন্স করে নেয়।এইভাবে অজিত দোভাল,তাদের সমস্ত রণকৌশল হাতিয়ে নেয়।

Ajit Doval এরপর বাইরে বেরিয়ে আসে। তারপর Opration Black Thunder এর জোযনা তৈরি করে। NSG কমান্ডো দ্বারা অপারেশন করা হয়।

এইভাবে খালিস্থানি জঙ্গিদের কাছথেকে স্বর্ণ মন্দির কে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। অজিত দোভাল কে এই ঘটনার জন্য কৃতি চক্র (Kriti Chakra)দেওয়া হয়।

অজিত দোভাল Pakistan story (Ajit Doval In Pakistan)


অজিত দোভাল তার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন। তার গোয়েন্দা জীবনের বেশ কিছু সময় পাকিস্তান দূতাবাসে কাটায়।

প্রায় ৭বছর Ajit Doval পাকিস্তান দূতাবাস। এছাড়াও পাকিস্তান জেল এবং লাহোরে কাটায়। তিনি তার পাকিস্তানের একটা ঘটনা শেয়ার করেছিলেন।

সেই ঘটনা বয়ান করতে গিয়ে বলেছেন। একবার তিনি লাহোরে এক ওলিয়া বাবার মাজারে যান। সেখানে তিনি এক অভূতপূর্ব ঘটনার সম্মুখীন হয়।

অজিত যখন ওলিয়া বাবার মাজারে ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি অজিতের কানের কাছে এসে জিগ্যেস করে। তিনি হিন্দু কিনা? অজিত এর উত্তরে না বলে।

কিন্তু ওই ব্যক্তি বলে না। তুমি হিন্দু। তোমার কান ফুটো করা আছে। আর কান ফুটো শুধু মাত্র হিন্দুরা করে রাখে।

এরপর অজিত কিছু বলার আগেই ,ওই ব্যক্তি অজিতকে ওলিয়া বাবার মাজার থেকে কিছু দূরে। একটা গলির ভিতরে নিয়ে যায়।

সেই গলিত ভিতর,একটা বাড়িতে অজিত কে নিয়ে যায়। এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। অজিত কে আবার ওই ব্যক্তি বলে, না তুমি হিন্দু।

অজিত দোভাল পাকিস্থান স্টোরি ( pakistan story ajit doval)

অজিত তখন বলে, আগে আমি হিন্দু ছিলাম।এখন আমি ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান হয়েছি।ওই ব্যক্তি তখন বলে না,তুমি ধর্ম পরিবর্তনও করোনি।

এরপর ওই ব্যক্তি, তার ঘরের আলমারির তালা খোলে।আলমারীর মধ্যে হিন্দু দেবী,দেবতার মূর্তি দেখায়। তিনি বলেন আমিও একজন হিন্দু।

কিন্তু এখানে আমি একজন মুসলমান হয়ে দিন যাপন করছি। লোকে আমাকে এখানে একজন মাজারের বাবা বলেই চেনে। তিনি আরো বলেন।

তার পরিবারকে অনেকদিন আগেই উগ্রবাদীরা হিন্দু বলে হত্যা করেছে। তাই তিনি এখানে মুসলমান ভেসে বেঁচে আছেন। সাথে অজিত দোভাল কে তার কানের প্লাস্টিক সার্জারী করে নোয়ার জন্য বলেন।

নইলে তিনি যেকোনো সময়ে,ধরা পরে যেতে পারেন। উত্তরে Ajit Doval বলেন উত্তরাখন্ডের,গোড়োয়ালি সংস্কৃতিতে ছেলে ওমেয়ে উভয়ের কান ফুটো করা হয়।

আরো পড়ুন: কোহিনুর হীরার ইতিহাস । 

নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরে উগ্রবাদী সম্যসার সমাধান


নব্বয়ের দশকে কাশ্মীরের ঘাঁটি আতঙ্কবাদী কার্যকলাপে তপ্ত হয়ে উঠে। কাশ্মীরের যুবকদের রীতিমতো ব্রেনওয়াস করছিল পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন।

বিভিন্ন পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন। কাশ্মীরের যুবকদের মাথায়। কাশ্মীর কে ভারত থেকে আলাদা করার ভুত পালছিল।

তরুণ যুবক দিকে উস্কানি দিচ্ছিল। তারা নিয়মিত পুলিশ এবং সেনাকর্মীদের টার্গেট করে তাদের হত্যা করে কাশ্মীরে আতঙ্ক ছড়াতে চাইছিল।

তারা চাইছিল সেনা এবং পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা করে। তাদের আওয়াজ কে দিল্লীর সরকারের কানে পৌঁছাতে। এই আতঙ্কবাদী কার্যকলাপে অর্থনেতিক মদদ জোগাচ্ছিল পাকিস্তান।

কাশ্মীরের যুবকদিকে,পাকিস্তানি আতঙ্কবাদী সংগঠন আশ্বাস দিয়েছিল। তারা ধীরে,ধীরে তাদের সংগঠন মজবুত করুক।বিনিময়ে হাতিয়ার এবং গোলাবারুদের জোগান দেবে।

ajit doval ips

আর যখন তাদের আন্দোলন ,তীব্র হবে। তখন পাকিস্তানি আতঙ্কবাদীরা তাদের সাথে লড়বে। এভাবে তারা ভারতের কাছ থেকে কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করে, স্বাধীন কাশ্মীর রাষ্ট্র গঠন করবে।

Ajit Dovalকে পরিস্থিতির গতিক খারাপ বুঝে কাশ্মীরে পাঠানো হয়। Ajit Doval-র সামনে পরবর্তী মিশন ছিল কাশ্মীরে উগ্রবাদী সমস্যার সমাধান

দোভাল কাশ্মীরে এসে পরিস্থিতির উষ্ণতার পারদ মাপা শুরু করে দেয়। তদন্তে কুকাপাড়ে বলে পাকিস্তানে ISI এজেন্টের দ্বারা সক্রিয় ব্যাক্তির নাম সামনে আসে।

কুকাপাড়ে নামের ওই ব্যাক্তি,তার ২৫০ জন লোক লস্কর নিয়ে সমগ্র কাশ্মীরে। ভারত বিরোধী আন্দোলন গড়ে যুবকদের মাথা খাচ্ছিল।

অজিত দোভাল জীবনের পরোয়া না করে। আতঙ্কবাদী শিবিরে গিয়ে, কুকাপাড়ের সাথে দেখা করে। এবং কুকাপাড়ে কে কনভেন্স করে।

এরপর এই কুকাপাড়ে তার দলবল নিয়ে।পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান তোলে। যে কুকাপাড়ে ভারত বিরোধী হয়ে,কাশ্মীরের যুবকদের মধ্যে আন্দোলন করছিল।

সেই কুকাপাড়ের,অজিত ব্রেনওয়াশ করে ফেলে।এরফলে কাশ্মীরে ১৯৯৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন সম্ভব হয়। কুকাপাড়ে নিজেও একটি পার্টি গঠন করে এবং MLA হয়।

এইভাবে অজিত দোভাল নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরে উগ্রবাদী সমস্যার সমাধান করে।

কান্দাহার বিমান অপহরণ (Kandahar Plane Hijacked )


১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু থেকে দিল্লী আসার পথে ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের IC-৮১৪ বিমান।নেপাল থেকে উড়ান ভরলে,তালিবানি জঙ্গিরা,বিমানটিকে অপহরণ করে নেয়।

বিমানটিতে মোট ১৪৪ জন যাত্রী ছিল। বিমানটিকে প্রথমে জঙ্গিরা,পাঞ্জাব। তারপরে লাহোর এবং দুবাই নিয়ে যায়। তারপর আফগানস্থানের কান্দাহারে বিমানটিকে অবতরণ করেন।

জঙ্গিদের দাবি ছিল। ১৪৪ জন যাত্রীদের বদলে,ভারতের বিভিন্ন জেলে বন্দি থাকা ১০০ জন তালিবানি জঙ্গী কে মুক্তি দেওয়া।

ভারত সরকার তখন।প্রতিবারের ন্যায় অজিত দোভাল সহ আরো দুই জনকে। মধ্যস্থতা করার জন্য কান্দাহারে পাঠায়।

অজিত এখানেও তার কামাল দেখায়।অজিত দোভাল আতঙ্কবাদীদের সাথে কথাবাত্রার মাধ্যমে। জঙ্গিদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে নেয়।

১০০ জন জঙ্গির বদলে। শুধুমাত্র ৩ জন জঙ্গিকে(মৌলানা মাসুদ আজাহার,আহমেদ ওমর সাঈদ শেখ এবং মুস্তাক আহমেদ)রেহায় করে ১৪৩ জন ভারতীয় যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।

আরো পড়ুন: গণিতবিদ রামানুজন। 

অজিত ডোভালের আরো অন্যান্য কৃতী কর্ম (Ajit Doval others achivements )


অজিত দোভাল ২০০৪-২০০৫ সাল পর্যন্ত IB র ডাইরেক্টর পদের দায়িত্ব সামলান(IB Director Ajit Doval)। তারপর ২০০৫ সালে তিনি চাকুরী জীবন থেকে অবসর নেন।

২০০৯ সালে অজিত দোভাল Vivekananda International  Foundation গঠন করেন। এই সংস্থার মাধ্যমে অজিত বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাকে সুরক্ষা পরামর্শ দিতেন।

২০১৪ সালে বিজেপি সরকার কেন্দ্রে আসে। তারপর নরেন্দ মোদী তাকে ভারতে তৃতীয় জাতীয় সুরক্ষা পরামর্শ দাতা(NSA) হিসাবে নিযুক্ত করেন।

National Security Adviser হওয়ার পরেই অজিত ডোভালের সামনে অগ্নী পরীক্ষা এসে যায়।Tirkit এ ভারতীয় নার্সরা অপহরণ হয়ে যায়।

২০১৪ সালে ইরাকের Tirkit এ ISIS জঙ্গিরা কব্জা করে নেয়। ঐ Tirkit এ ভারতের সাউথ ইন্ডিয়ার ৪৪ জন নার্স এক হাসপাতালে কাজ করত।

Tirkit এ জঙ্গিদের কব্জা হওয়ার ফলে। ভারতীয় নার্সরাও জঙ্গিদের হাথে বন্দি হয়ে যায়।ভারতে নার্সদের আত্মীয় স্বজনের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

biography of ajit doval

ভারত সরকারে কাছে নার্সদের পরিবার চাপ সৃষ্টি করে। তখন আবার অজিত দোভাল মোর্চা সামলায়। Ajit Doval  জঙ্গিদের সাথে কথা বলে।

আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে অজিত কথা বলে। এরপর অজিত জঙ্গিদের কমান্ডার এর সাথে জোগাজোগ করে।

৪৪ জন ভারতীয় নার্সকে বিনা শর্তে ছেড়ে দিতে বলে। আর যদি না ছাড়া হয়,তা নাহলে এর পরিনাম  ভাল হবেনা।

ভবিষ্যতে ভারত তাদের জন্য সবথেকে বড় শত্রূ হয়ে সামনে আসবে। আর এরজন্য তাদের যে আগের মিশন আছে। তাতে ভারত প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এইভাবে অজিত দোভাল।এক অসাধ্য  সাধন সম্ভব করে ৪৪ জন ভারতীয় নার্সকে স্বশরীরে, ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।

এছাড়া পুলওয়ামা এবং উড়ি হামলার বদলা হিসাবে। ভারতীয় পাকিস্তানে সার্জিকাল স্ট্রাইক করে। তার পিছনে অজিত দোভাল এর দিমাগ ছিল।

বর্তমানে চীনের সঙ্গে হয়ে যাওয়া ডোকলাম বিবাদ নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে যে সমস্যা চলছিল। এই ডোকলাম, সমস্যার সমাধান অজিত দোভাল আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেন।

অজিত ডোভাল Failure mission (Ajit Doval Failure mission)


অজিত দোভাল(Ajit Doval story) তার জীবনে একটি মাত্র মিশনে অসফল হয়েছিল। দাউদ ইব্রাহিম কে ধরতে গিয়ে অজিত  অসফল হয়েছিল।

দুবাইয়ের গ্রান্ড হায়াৎ হোটেলে, দাউদ ইব্রাহিমের মেয়ের বিয়ের ভোজের অনুষ্ঠান রাখা হয়। সেই ভোজে দাউদ ইব্রাহিমের আসার কথা ছিল।

সেই মত অজিত দোভাল দিল্লীর এক পাঁচতারা হোটেলে একটি  মিটিং করছিলেন। সেই মিটিং এ সামিল হন ছোটো রাজন গাঙের দুইজন শুটার।

অজিত ডোভালের প্ল্যান ছিল। দাউদ হোটেলে এলে,তাকে অপহরণ করা। তা সম্ভব না হলে সাব শুটার দিয়ে গুলি করে হত্যা করা।

সবকিছু প্ল্যান মাফিক চলছিল। সাব শুটার দের দুবাইয়ে আসা যাওয়ার টিকিট। পাসপোর্ট ,থাকার ব্যবস্থা সবকিছু হয়ে গেছিল।

লোকমুখে প্রচলিত আছে,দাউদের কিছু লোক পুলিশের মধ্যেও আছে। যায় হোক, কোনো প্রকারে এই প্ল্যান লিখ হয়ে দাউদের কানে পৌঁছে যায়।

আর দাউদের কথামত মুম্বাই পুলিশের একটি দল। ছোট রাজন গাঙের শুটার দিকে ধরার জন্য দিল্লী আসে। যাদের সঙ্গে অজিত মিটিং করছিল।

পরে তাদিকে মুম্বাই পুলিশ।অন্য কোন ঘটনার অপরাধে গ্রেফতার করে।এর ফলে দাউদ ইব্রাহিম কে ধরার মত  গুরুত্বপূর্ন মিশন বিফল হয়ে যায়।

আরো পড়ুন: মিশরের পিরামিডের রহস্য ।

পরিশিষ্ট


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করলাম অজিত দোভাল জীবনী। অজিত দোভাল কে ?ইত্যাদি বিষয়ে।

সত্য কথা বলতে গেলে অজিত ডোভাল এরকম অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন। যেগুলো অন রেকর্ড অজিত নিজেও স্বীকার করে না। হয়ত তার পেশাটাই এরকম।

২০২০ তে,বর্তমানে অজিত ৭৬ বছর বয়সী। অনেকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন অজিত ডোভাল Salary কত। তাহলে বলে রাখি অজিত দোভাল ১৬২,৫০০(Ajit Doval salary) টাকা মাসিক মাইনে পায়।

যেখানে কিছু জিনিস গোপন রাখাটাই তার এবং ভারতের জন্য শ্রেয়। অনেকে অজিতের এইসব কারনামা দেখে ভারতের Jems Bond বলে থাকে।

পরিশেষে আপনাদের কাছে,আমাদের একান্ত অনুরোধ। যদি আমাদের লেখা অজিত দোভাল জীবনী,আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই প্রিয় জনদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

 

3.4/5 - (5 votes)

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here