কবি তুলসী দাস তার কাব্যত্মক কৃতকর্মের অন্যতম নিদর্শন হিসাবে প্রভু শ্রী রাম ভক্ত হনুমানের গুণাবলীর কথা, হনুমান চালিশা নামক চৌপায়ে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।
কবি তুলসী দাস লিখিত হনুমান চালিশা চৌপায়ে কয়েকটি ছোট কবিতা স্তবকের মাধ্যমে অতি সুন্দরভাবে পবন পুত্র হনুমানের অলৌকিক গুণগানের কথা বর্ণনা করেছেন।
তুলসী দাস হনুমান চালিশার চৌপায়ের মাধমে বজরংবলীর রূপ গুণ বর্ণনের সাথে সাথে প্রভু শ্রী রামের মনুষ্যরূপী বিনয়ী ব্যক্তিত্বকে সহজ সরল ভাষায় তুলে ধরেছেন।
আমরা এখন হনুমান চালিশা মন্ত্র বাংলা অনুবাদ,হনুমান চালিশা পাঠের উপকারিতা, হনুমান চালিশা পাঠ করার নিয়ম,হনুমান চালিশা বাংলা লিরিক্স,হনুমান চালিশা মন্ত্র বাংলা pdf ডাউনলোড করার লিংক শেয়ার করব।
সাধারণভাবে দেখতে গেলে প্রায়শই সমস্ত হিন্দুদের মধ্যে হনুমান চালিশার প্রতি ভক্তিযোগ দেখতে পাওয়া যায়। তবে বিশেষ করে উত্তর ভারতের হিন্দুদের মধ্যে হনুমান চালিশা সর্বাধিক জনপ্রিয় বলে মনে করা হয়।
আপনারা অনেক হিন্দুকে দেখতে পাবেন, যাদের হনুমান চালিশা ঠুটোস্ট হয়ে আছে। সনাতন হিন্দু ধর্মানুযায়ী মহাবলী হনুমানকে বীরত্ব,ভক্তি এবং সাহসের প্রতীক।
ভগবান শিবের রুদ্র অবতার হিসাবে বজরংবলীকেই মনে করা হয়। তবে বজরংবলীকে হনুমান নাম ছাড়াও আরো অনেক নামে ডাকা হয়, যেমন- মারুতি নন্দন, পবনপুত্র, কেশরী নন্দন,মহাবীর ইত্যাদি।
হিন্দু ধর্মের নিরিখে পবনপুত্র হনুমানজী হল একমাত্ৰ অমর ও অজেয় দেবতা । তাই যে ব্যক্তি প্রতিদিন হনুমানের গুণগান করে হনুমানের নাম জপ করে,সেই ব্যক্তির সমস্ত বিপদ ও দুর্বিধা দূর হয়ে যায়।
যে সমস্ত জাতক নিয়মিত হনুমান চালিশা পাঠ করেন তাদের জীবনের সমস্ত বাধা ও বিপত্তি দূর হয়ে,মনের মধ্যে জমে থাকা কালিমা ঘুচে গিয়ে ভগবানের চরণে কৃপা লাভ হয়।
হনুমান চালিশা কি (Hanuman Chalisha Ki)
হনুমান চালিশা হল ষোড়শ শতাব্দীর এক জনপ্রিয় কবি শ্রী তুলসী দাস রচিত পবনপুত্র হনুমানের গুণগান করা চৌপায়ের (স্তবক কবিতার) রূপ বিশেষ।
হনুমান চালিশার শেষ দিকে চৌপায়ের ৩৯ নং স্তবকে কবি তুলসী দাস তার নিজের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, যে ব্যক্তি শ্রদ্ধা ভক্তির সাথে হনুমান নাম জপ করবে, সে ব্যক্তি হনুমানের কৃপা লাভ করবে।
তাই হনুমানের উপর আস্থা রেখে সারা বিশ্বের সনাতনী হিন্দু সমাজ বিপদ অপদা থেকে উদ্ধারের জন্যে এক নিষ্ঠে হনুমান চালিশা জপ করে হনুমানের গুনগান করেন।
তুলসী দাস কে (Tulshi Das Ke)
হিন্দু কবি তুলসী দাসকে গোস্বামীকে (১৪৯৭/১৫৩২-১৬২৩), তুলসী দাস বলা হয়। তুলসী দাস প্রাচীন ভারতের একজন বিশিষ্ট দার্শনিক ও কবি ছিলেন।
প্রভু শ্রী রামের একজন নিষ্ঠাবান সেবক হিসাবে গোস্বামী তুলসী দাস উত্তর প্রদেশের বেনারসীতে জন্মগ্রহণ করেন। তুলসী দাসকে রামনায়নের লেখক বাল্মিকীর প্রতিমূর্তি হিসাবে ধরা হয়।
কবি তুলসী দাস হনুমান চালিশা চৌপাঈ ছাড়াও কঠিন সংস্কৃত ভাষায় লেখা বাল্মিকীর রামায়নকে, রামচরিতমানসের চলতি সহজ সরল ভাষায় রূপ দান করেন।
রামচরিতমানস রচনা নিয়ে তুলসী দাসের একটি প্রসিদ্ধ কাহিনী লোকমুখে শুনতে পাওয়া যায়। একবার মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে তুলসী দাস দিল্লীতে ঔরঙ্গজেবের সভাকক্ষে উপস্থিত হয়।
সভাকক্ষে তুলসী দাস ভগবান শ্রী রামের গুনকীর্তন করলে, ঔরঙ্গজেব ক্ষুব্ধ হয়ে তুলসী দাসকে রামের গুণকীর্তনে মধ্যে দিয়ে সভাকক্ষে সাক্ষাৎ শ্রী রামের দর্শন করানোর জন্যে বলেন।
কবি তুলসী দাস তখন ঔরঙ্গজেবকে মনের বিশ্বাস ও ভগবান রামের প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়া শ্রী রামের দর্শন পাওয়া সম্ভব নয় সেই কথা বলেন। ঔরঙ্গজেব তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে তুলসী দাসকে কারাবন্দি করার হুকুম দেন।
এরপর ঔরঙ্গজেব দ্বারা তুলসী দাসকে কারারুদ্ধ করা হয়। তারপর প্রভু শ্রী রামের উপর অগাধ ভক্তি রেখে, তুলসী দাস কারাগারেই রামভক্ত হনুমানের গুণগানের কথা বর্ণন করে হনুমান চালিশা রচনা করেন।
পরে কারারুদ্ধ কবি তুলসী দাস বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলে তার রচিত হনুমান চালিশার স্তবক (চৌপায়) গুলো প্রথমবার একদল বানরের সামনে পাঠ করে শোনান।
অবশ্যই পড়ুন : শ্রী হনুমান আরতি বাংলা।
হনুমান চালিশা পাঠ করার সময় (Hanuman Chalisha Path Korer Somoy)
হিন্দুধর্মের মানুষেরা অন্যন্য ধর্মগ্রন্থের মত বাড়িতে হনুমান চালিশা রেখে, হনুমান চালিশা মন্ত্র পাঠ করে থাকেন। তবে হনুমান চালিশা পাঠ করার সময় কতগুলো বিষয় খেয়াল রেখে হনুমান চালিশা মন্ত্র জপ করা উচিত।
পঞ্চমুখী হনুমান চালিশা মন্ত্র জপ করার আগে প্রাতঃকালে স্নান সেরে পরিষ্কার শুদ্ধ বস্ত্রে ধুপ বাতি জ্বেলে পঞ্চমুখী হনুমান চালিশা মন্ত্র পাঠ করার জন্যে আসনে বসা উচিত।
তবে সন্ধে বেলা অথাৎ সূর্য ডোবার পর হনুমান চালিশা জপ করতে চাইলে হাত,পা ধুয়ে নিয়ে বাসি কাপড় ছেড়ে শুদ্ধ কাপড় পড়ে হনুমান চালিশা পাঠ করতে পারেন ।
আপনি চাইলে সর্বদা হনুমান প্রণাম মন্ত্র জপ করতে পারেন, ভগবানের ভক্তির জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় হয় না। ভক্ত যখন খুশি ভগবানকে স্মরণ করতে পারে,তবে শনিবার ও মঙ্গল বারকে হনুমানের বার বলা হয়।
হনুমান চালিশা পাঠ করার নিয়ম (Hanuman Chalisha Path Korer Niyom)
আমরা সঙ্কট মোচনের জন্যে বজরংবলীর পূজা করি,হনুমান প্রণাম মন্ত্র আদি জপ করি। তবে হনুমান মন্ত্র অথাৎ হনুমান চালিশা পাঠ করার নিয়ম গুলো মেনে হনুমান চালিশা পাঠ করলে তবেই মনপুত ফল পাওয়া যায়।
যদিও আমরা সবাই নিষ্ঠার সাথেই হনুমান চালিশা পাঠ করি, তবে হনুমান চালিশা পাঠ করার নিয়ম গুলো ঠিক ঠাক ভাবে পালন করলে হনুমান চালিশা পাঠের ফল লাভ করা যায়।
০১. আপনারা জানেন মঙ্গলবার এবং শনিবারকে বজরংবলীর বার বলা হয়। তাই শনিবার এবং মঙ্গলবারের দিন হনুমান প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণ করে হনুমান চালিশা পাঠ করলে হনুমান চালিশা পাঠের ফল লাভ করা যায়।
০২. হনুমান সিঁদুর খুব ভালোবাসেন, হনুমান তার শরীরে সিঁদুর মেখে থাকেন। আপনারা হনুমান চালিশা পাঠ করার পূর্বে বরংবলীকে সিঁদুর দিয়ে সিঙ্গার করান তাহলে মনপুত ফল লাভ করা যায়।
০৩. সর্বদা শুদ্ধ বস্ত্রে মনে ভক্তিভাব নিয়ে পঞ্চমুখী হনুমান চালিশা মন্ত্র জপ করা উচিত। হনুমান চালিশা পাঠ করার নিয়ম অনুসারে হনুমান মন্ত্র জপ করার সময়, দ্রুত হনুমান প্রণাম মন্ত্র পাঠ করা উচিত নয়।
০৪. সর্বদা লাল কুশ আসনের উপর বসে, কিংবা লাল কোনো আসনের উপর বসে হনুমান চালিশা ভজন কীর্তন ও বজরংবলীর হনুমান চালিশা পাঠ করা উচিত।
০৫. হনুমান চালিশা পাঠ করার সময় পঞ্চমুখী হনুমান চালিশার স্তবক গুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করে পড়া উচিত এবং তার সঙ্গে হনুমান চালিশার প্রতিটি লাইনের তাৎপর্য গুলো অভিধাবন করা উচিত।
০৬. পঞ্চমুখী হনুমান চালিশা মন্ত্র জপ করার পূর্বে আমাদের মন বিচলিত হলে, অবশ্যই ধ্যান করে আমাদের অশান্ত মনকে শান্ত করে নেওয়া উচিত, তা নইলে হনুমান চালিশা পাঠের ফল পাওয়া যায়না।
হনুমান চালিশা বাংলা লিরিক্স (Hanuman Chalisha Bangla Liric)
আপনাদের সুবিদার্থে হনুমান চালিশা বাংলা লিরিক্স পাঠ করার জন্যে নিচে দেওয়া হল, আপনারা এখান থেকে হনুমান চালিশা মন্ত্র পাঠ করে হনুমানজীকে সন্তুষ্ট করতে পারেন।
-: দোহা :-
শ্রী গুরু চরণ সরোজ রজ নিজমন মুকুর সুধারি ।
বরণৌ রঘুবর বিমলযশ জো দাযক ফলচারি।
বুদ্ধিহীন তনুজানিকৈ সুমিরৌ পবন কুমার ।
বল বুদ্ধি বিদ্যা দেহু মোহি হরহু কলেশ বিকার॥
-: ধ্যান :-
গোষ্পদীকৃত বারাশিং মশকীকৃত রাক্ষসম্ ।
রামাযণ মহামালা রত্নং বংদে-(অ)নিলাত্মজম।
যত্র যত্র রঘুনাথ কীর্তনং তত্র তত্র কৃতমস্তকাংজলিম ।
ভাষ্পবারি পরিপূর্ণ লোচনং মারুতিং নমত রাক্ষসাংতকম।
উপরের দোহা ও ধ্যান মন্ত্র পাঠ করার পর হনুমান চালিশা মন্ত্র পাঠ করতে হয়। আমরা নিচে হনুমান চালিশার বাংলা লিরিক্স দিয়ে দিলাম,আপনারা সেখান থেকে হনুমান চালিশা লিরিক্স পাঠ করতে পারেন।
অবশ্যই পড়ুন : শ্রী হনুমানের ১০৮ নাম।
-:চৌপাঈ :-
জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর ।
জয় কপীশ তিহু লোক উজাগর ॥ [০১]
রামদূত অতুলিত বলধামা ।
অংজনি পুত্র পবনসুত নামা ॥ [০২]
মহাবীর বিক্রম বজরংগী ।
কুমতি নিবার সুমতি কে সংগী ॥ [০৩]
কংচন বরণ বিরাজ সুবেশা ।
কানন কুংডল কুংচিত কেশা ॥ [০৪]
হাথবজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ ।
কাংথে মূংজ জনেবূ সাজৈ ॥ [০৫]
শংকর সুবন কেসরী নংদন ।
তেজ প্রতাপ মহাজগ বংদন ॥ [০৬]
বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর ।
রাম কাজ করিবে কো আতুর ॥ [০৭]
প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিযা ।
রামলখন সীতা মন বসিযা ॥ [০৮]
সূক্ষ্ম রূপধরি সিযহি দিখাবা ।
বিকট রূপধরি লংক জলাবা ॥ [০৯]
ভীম রূপধরি অসুর সংহারে ।
রামচংদ্র কে কাজ সংবারে ॥ [১০]
লায সংজীবন লখন জিযাযে ।
শ্রী রঘুবীর হরষি উরলাযে ॥ [১১]
(আরো পড়ুন : শিব রাত্রি কেন পালন করা হয়)
রঘুপতি কীন্হী বহুত বডাযী ।
তুম মম প্রিয ভরত সম ভাযী ॥ [১২]
সহস্র বদন তুম্হরো যশগাবৈ ।
অস কহি শ্রীপতি কংঠ লগাবৈ ॥ [১৩]
সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীশা ।
নারদ শারদ সহিত অহীশা ॥ [১৪]
যম কুবের দিগপাল জহাং তে ।
কবি কোবিদ কহি সকে কহাং তে ॥ [১৫]
তুম উপকার সুগ্রীবহি কীন্হা ।
রাম মিলায রাজপদ দীন্হা ॥ [১৬]
তুম্হরো মংত্র বিভীষণ মানা ।
লংকেশ্বর ভযে সব জগ জানা ॥ [১৭]
যুগ সহস্র যোজন পর ভানূ ।
লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ ॥ [১৮]
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহী ।
জলধি লাংঘি গযে অচরজ নাহী ॥ [১৯]
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে ।
সুগম অনুগ্রহ তুম্হরে তেতে ॥ [২০]
রাম দুআরে তুম রখবারে ।
হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ॥ [২১]
সব সুখ লহৈ তুম্হারী শরণা ।
তুম রক্ষক কাহূ কো ডর না ॥ [২২]
আপন তেজ সম্হারো আপৈ ।
তীনোং লোক হাংক তে কাংপৈ ॥ [২৩]
ভূত পিশাচ নিকট নহি আবৈ ।
মহবীর জব নাম সুনাবৈ ॥ [২৪]
নাসৈ রোগ হরৈ সব পীরা ।
জপত নিরংতর হনুমত বীরা ॥ [২৫]
সংকট সে হনুমান ছুডাবৈ ।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ ॥ [২৬]
সব পর রাম তপস্বী রাজা ।
তিনকে কাজ সকল তুম সাজা ॥ [২৭]
ঔর মনোরধ জো কোযি লাবৈ ।
তাসু অমিত জীবন ফল পাবৈ ॥ [২৮]
চারো যুগ প্রতাপ তুম্হারা ।
হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিযারা ॥ [২৯]
সাধু সংত কে তুম রখবারে ।
অসুর নিকংদন রাম দুলারে ॥ [৩০]
অষ্ঠসিদ্ধি নব নিধি কে দাতা ।
অস বর দীন্হ জানকী মাতা ॥ [৩১]
রাম রসাযন তুম্হারে পাসা ।
সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ॥ [৩২]
তুম্হরে ভজন রামকো পাবৈ ।
জন্ম জন্ম কে দুখ বিসরাবৈ ॥ [৩৩]
অংত কাল রঘুপতি পুরজাযী ।
জহাং জন্ম হরিভক্ত কহাযী ॥ [৩৪]
ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরযী ।
হনুমত সেযি সর্ব সুখ করযী ॥ [৩৫]
সংকট ক(হ)টৈ মিটৈ সব পীরা ।
জো সুমিরৈ হনুমত বল বীরা ॥ [৩৬]
জৈ জৈ জৈ হনুমান গোসাযী ।
কৃপা করহু গুরুদেব কী নাযী ॥ [৩৭]
জো শত বার পাঠ কর কোযী ।
ছূটহি বংদি মহা সুখ হোযী ॥ [৩৮]
জো যহ পডৈ হনুমান চালীসা ।
হোয সিদ্ধি সাখী গৌরীশা ॥ [৩৯]
তুলসীদাস সদা হরি চেরা ।
কীজৈ নাথ হৃদয মহ ডেরা ॥ [৪০]
-:দোহা:-
পবন তনয় সঙ্কট হরণ – মঙ্গল মূরতি রূপ |
রাম লখন সীতা সহিত – হৃদয় বসহু সুরভূপ |
(আরো পড়ুন : মা লক্ষীর পাঁচালী বাংলা)

হনুমান চালিশা বাংলা অনুবাদ (Hanuman Chalisha Bangla Anubad)
আপনারা হনুমান চালিশার বাংলা অনুবাদিত রূপ পাঠ করতে চান তাহলে নিচের স্তবকে আপনাদের কথা ভেবে হনুমান চালিশার বাংলা অনুবাদ দেওয়া হল, আপনারা হনুমান চালিশা বাংলা অনুবাদ পড়তে পারেন।
-:দোহা :-
শ্রী গুরু চরণ পদ্ম স্মরি মনে মনে ।
কোটি কোটি প্রনমিনু তাহার চরণে ।।
শ্রীরামের চরণ পদ্ম করিয়া স্মরণ ।
চতুর্বর্গ ফল যাহে লভি অনুক্ষণ ।।
বুদ্ধিহীন জনে ওহে পবন কুমার ।
ঘুচাও মনের যত ক্লেশ ও বিকার ।।
-:চৌপাঈ:-
জয় হনুমান জ্ঞান গুনের সাগর ।
জয় হে কপিশ প্রভু কৃপার সাগর । [০১]
শ্রীরামের দুত অতুলিত বলধাম ।
অঞ্জনার পুত্র পবন পুত্র নাম ।[০২]
মহাবীর বজরঙ্গী তুমি হনুমান ।
কুমতি নাশিয়া কর সুমতি প্রদান ।[০৩]
কাঞ্চন বরন তব তুমি হে সুরেশ ।
কর্ণেতে কুণ্ডল শোভে কুঞ্চিত কেশ ।[০৪]
হাতে ব্জ্র তব আর ধ্বজা বিরাজে ।
সুন্দর গদাটি কাঁধে তোমার যে সাজে ।[০৫]
অপরূপ বাহু তব পবন নন্দন ।
মহাতেজ ও প্রতাপ জগত বন্দন ।[০৬]
বিদ্যাবান গুণবান তুমি হে চতুর ।
শ্রীরামচন্দ্রের কার্যে তুমি হে আতুর ।[০৭]
সর্বদা রামের আজ্ঞা করিতে পালন ।
হৃদে রাখ সদা রাম সীতা ও লক্ষ্মণ ।[০৮]
সূক্ষ্মরূপ ধরি তুমি লঙ্কা প্রবেশিলে ।
ধরিয়া বিকট রূপ লঙ্কা দগ্ধ কৈলে ।[০৯]
ভীম রূপ ধরি তুমি অসুর সংহর।
শ্রীরাম চন্দ্রের তুমি সর্ব কাজ কর ।[১০]
সঞ্জীবন আনি তুমি বাঁচালে লক্ষ্মণ ।
রঘুবীর হন তাহে আনন্দিত মন ।[১১]
রঘুনাথ দিলা তোমা আলিঙ্গন দান ।
কহিলেন তুমি ভাই ভরত সমান ।[১২]
সহস্র বদন তব গাবে যশ খ্যাতি ।
এত বলি আলিঙ্গন করেন শ্রীপতি ।[১৩]
সনকাদি ব্রহ্মাদি যতেক দেবগণ ।
নারদসারদ আদি দেব ঋষি গণ ।[১৪]
যম ও কুবের আদি দিকপালগনে ।
কবি ও কোবিদ যত আছে ত্রিভুবনে ।[১৫]
সুগ্রিবের উপকার তুমি যে করিলে ।
রাম সহ মিলাইয়া রাজপদ দিলে ।[১৬]
তোমার মন্ত্রণা সব বিভীষণ মানিল ।
লঙ্কেশ্বরের ভয়ে সবে কম্পমান ছিল ।[১৭]
সহস্র যোজন উর্দ্ধে সূর্য দেবে দেখে ।
সুমধুর ফল বলি ধাইলে গ্রাসিতে ।[১৮]
জয় রাম বলি তুমি অসীম সাগর ।
পার হয়ে প্রবেশিলে লঙ্কার ভিতর ।[১৯]
দুর্গম যতেক কাজ আছে ত্রিভুবনে ।
সুগম করিলে তুমি সব রাম গানে ।[২০]
চিরদ্বারী আছ তুমি শ্রীরামের দ্বারে ।
তব আজ্ঞা বিনা কেহ প্রবেশিতে নারে ।[২১]
শরণ লইনু প্রভু আমি যে তোমারি ।
তুমিই রক্ষক মোর আর কারে ডরি ।[২২]
নিজ তেজ নিজে তুমি কর সম্বরণ ।
তোমার হুংকারে দেখ কাঁপে ত্রিভুবন ।[২৩]
ভুত প্রেত পিশাচ কাছে আসিতে না পারে ।
মহাবীর তব নাম যেইজন স্মরে ।[২৪]
রোগ নাশ কর আর সর্ব পীড়া হর ।
মহাবীর নাম যেবা স্মরে নিরন্তর ।[২৫]
সঙ্কটেতে হনুমান উদ্ধার করিতে ।
তোমার চরণে যেবা মন প্রান দিবে [২৬]
সর্বপরি রামচন্দ্র তপস্বী ও রাজা ।
শ্রীরামের অরিগনে তুমি দিলে সাজা ।[২৭]
তোমার চরণে যেবা মন প্রান দিবে ।
এ জীবনে সেই জন সদা সুখ পাবে ।[২৮]
প্রবল প্রতাপ তব হে বায়ু নন্দন ।
চার যুগ উজ্জ্বল রহিবে ত্রিভুবন ।[২৯]
সাধু সন্ন্যাসিরে রক্ষা কর মতিমান ।
শ্রীরামের প্রিয় তুমি অতি গুণবান ।[৩০]
অষ্টসিদ্ধি নবসিদ্ধি যাহা কিছু রয় ।
সকলই সিদ্ধ হয় তোমার কৃপায়। [৩১]
রাম রামায়ণ আছে তব নিকটেই ।
শ্রীরামের দাস হয়ে রয়েছ সদাই ।[৩২]
তোমার ভজন কৈলে রামকে পাইবে ।
জনমে জনমে তার দুঃখ ঘুচে যাবে ।[৩৩]
অন্তকালে পাবে সেই রামের চরণ ।
এই সার কথা সব শুন ভক্তগণ ।[৩৪]
সব ছাড়ি বল সবে জয় হনুমান ।
হনুমন্ত সর্ব সুখ করিবে প্রদান ।[৩৫]
সর্ব দুঃখ দূরে যাবে সঙ্কট কাটিবে ।
যেইজন হনুমন্তে স্মরণ করিবে ।[৩৬]
জয় জয় জয় জয় হনুমান গোঁসাই ।
তব কৃপা ভিন্ন আর কোন গতি নাই ।[৩৭]
যেই জন শতবার ইহা পাঠ করে ।
সকল অশান্তি তার চলে যায় দূরে ।[৩৮]
হনুমান চলিশা যে করে পঠন ।
সর্বকার্য্যে সিদ্ধি লাভ করে সেই জন ।[৩৯]
তুলসীদাস সর্বদাই শ্রী হরির দাস ।
মনের মন্দিরে প্রভু কর সদা বাস ।[৪০]
-: দোহা :-
পবন নন্দন,সঙ্কট হরণ -মঙ্গল মুরতি রূপ ।
শ্রী রাম লক্ষ্মণ,জানকী রঞ্জন-তুমি হৃদয়ে ভুপ।
হনুমান চালিশা মন্ত্র বাংলা pdf ডাউনলোড
আপনারা যদি হনুমান চালিশা মন্ত্র বাংলা pdf আকারে ডাউনলোড করে মুখস্থ করতে চান,তাহলে আমাদের দেওয়া নিচের হনুমান চালিশা মন্ত্র বাংলা pdf বটনে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
হনুমান চালিশা মন্ত্র বাংলা pdf ডাউনলোড করার জন্যে নিচের নীল বটনে ক্লিক করুন।

হনুমান চালিশা বাংলা ভাষায় mp3 download
আপনারা হনুমান চালিশা বাংলা ভাষায় mp3 download করতে চাইলে নিচের দেওয়া লিংকের নীল বটনে ক্লিক করে, হনুমান চালিশা বাংলা ভাষায় mp3 download করতে পারেন।
হনুমান চালিশা পাঠের উপকারিতা (Hanuman Chalisha pather upokarita)
কথিত আছে নিয়মিত পঞ্চমুখী হনুমান চালিশা মন্ত্র জপ করলে দেহ মন আত্মা শুদ্ধি হয়ে সমগ্র শরীরের রোগ ব্যাধি আদি দূর হয়ে যায়। তাই হনুমান চালিশাকে মানব জীবনের সঞ্জীবনী মন্ত্র বলা হয়।
নিয়মিত হনুমান চালিশা পাঠের ফলে হনুমান চালিশার স্তবক গুলো ঠুটোস্ট হওয়ার সাথে সাথে মনের অন্ধকারের কালিমা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও হনুমান চালিশা পাঠের অনেক উপকারিতা আছে সেগুলো আপনাদের সাথে আলোচনা করব।
০১. হনুমান চালিশা শনি মহারাজের প্রকোপ থেকে রক্ষা করে
পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে শোনা যায় একবার শনি দেব পবনপুত্র হনুমানের মাথার উপর ভর করে হনুমানের বুদ্ধি ভ্রষ্ট করতে চাইছিলেন। তখন পবনপুত্র হনুমান সবকিছু বুঝতে পেরে
নিজের মাথার উপর একটি অতি প্রকান্ড মাপের পাথর চড়িয়ে নেন। সেই পাথরের ভারে শনি দেবের প্রাণ যাবার উপক্রম হলে শনি দেব হনুমানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তিনাকে আশ্বস্ত করেন
যেই ব্যক্তি পবনপুত্র হনুমানের পূজা করবেন শনির প্রকোপ কোনো দিন তার ছায়া মাড়াবেনা। তাই হিন্দু ধর্মের মানুষেরা শনি দেবের অশুভ শক্তির প্রকপ ছায়া থেকে বাঁচার জন্যে হনুমান চালিশা জপ করে থাকেন।
( আরো পড়ুন : শনি চালিশা )
০২. হনুমান চালিশা পাঠের মাধ্যমে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়
হিন্দু ধর্মে মান্যতা আছে এক নিষ্ঠার সাথে ভক্তি ভরে পবনপুত্র হনুমানের পূজা করলে অথাৎ পঞ্চমুখী হনুমান চালিশা মন্ত্র জপ করলে হনুমানজী তার ভক্তদের উপর কৃপা দৃষ্টি দিয়ে ভক্তের মনবাঞ্ছা পূরণ করে।
০৩. হনুমান চালিশার নিয়মিত পাঠে জাতকের বুদ্ধি বৃদ্ধি হয়
উচ্চস্বরে হনুমান চালিশা পাঠ করলে আসে পাশের অশুভ শক্তির ত্রাস কমে গিয়ে এক ইন্দ্রজালের সৃষ্টি হয় যা মানসিক স্থিরতা প্রদান করে স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
০৪. হনুমান চালিশা স্তবক পাঠ মানুষের ক্ষমা দৃষ্টি বৃদ্ধি করে
‘অহিংসা পরমধর্ম’ আর মানুষ মাত্রই ভুল হয়,আর যেখানে ভুল হয় সেখানে পাপ কাজ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। হিন্দুধর্মের মান্যতা অনুসারে মানুষকে তার কর্তৃকর্মের ফল এই জন্মেই ভোগ করতে হয়।
হনুমান চালিশার স্তবকগুলোতে অতীত এবং বর্তমানের সব পাপস্খলনের কথা বলা হয়েছে যা আমাদের কর্তৃকর্মের জন্যে অনুতপ্ত করে পাপ পূর্ণ্য বোধের চেতনা জাগায়।
০৫. হনুমান চালিশা প্রেতাত্মাদের থেকে রক্ষা করে
আমরা বিপদে আপদে পড়লেই হনুমানজীকে স্মরণ করি,আর হনুমান আমাদের অশুভ আত্মাদের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই রাত্রি বেলা কেউ শুয়ে শুয়ে ভয় পেলে কিংবা রাতের বেলা একলা পথ চলতে গা ছম ছম করলে,
হনুমান চালিশার স্তবক গুলো লিখে তাবিজ বা কবজ ভরে দিলে এসব অশুভ আত্মারা আমাদের আসে পাশে আসতে পারেনা,ছোট ছেলে মেয়েরা প্রেতাত্মাদের ভয় পাওয়া থেকে মুক্তি পায়।
পরিশিষ্ট
এতক্ষন আমরা হনুমান চালিশা পাঠের উপকারিতা, হনুমান চালিশা পাঠ করার সময়,হনুমান চালিশা পাঠ করার নিয়ম ইত্যাদি বিষয় গুলো আলচনা সাপেক্ষে যতটা সম্ভব বর্ণনা করলাম।
তার সাথে আপনাদের সুবিধার্থে হনুমান চালিশা মন্ত্র বাংলা pdf ডাউনলোড করার লিংক শেয়ার করলাম। আপনারা আমাদের লিংকে ক্লিক করে হনুমান চালিশার বাংলা pdf ডাউনলোড করে মুখস্থ করতে পারেন।
আমাদের এই উপক্রম আপনার পছন্দ সই হলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করে আপনার পরিজনদের কাছে পৌঁছে দেবেন। এছাড়াও আপনার কোনো রকমের প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আমাদের আর্টিকেল আপনাদের কেমন লাগল, আমাদের ০১ থেকে ০৫ ষ্টার রেটিং দিয়ে জানাবেন। ধন্যবাদ।