শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন। (Shrabon mase sombar shiber mathai jol dhala hoy keno )

শ্রাবণ মাস হল হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষজনের কাছে একটি পবিত্র মাস। হিন্দু ধর্মের শিবের উপাসকরা শ্রাবণ মাসকে শিবের উপাসনা করার মাস বলেই চিহ্নিত করে আসছেন।

তবে অনেকের মত আপনারও মনে হয়ত শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ? এই ধরণের প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে পারে, আর এটাই স্বাভাবিক। আসুন তাহলে আমরা আজকের আলোচনায় হিন্দুদের শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন

শিবের মাথায় জল ঢালার কারণ অথাৎ শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ? তার তাৎপর্য জানার চেষ্টা করি। হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষজনের মতে ও হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে শ্রাবণ মাস হল হিন্দু নববর্ষের পঞ্চম মানে ০৫ নম্বর মাস।

হিন্দু পঞ্জিকার পঞ্চম মাস অথাৎ শ্রাবণ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে যারা শিবের পূজা করেন, তাদের বিশ্বাস পঞ্চাঙ্গ মাসে শিবের উপাসনা করলে ভগবান শিব তার ভক্তদের দুঃখ দুর্দশা দূর করেন এবং ভক্তগণের মনের বাসনা পূরণ করেন।

তাইতো এই সময় হিন্দুরা শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন শিবের আরাধনা করেন। শ্রাবণ মাস ছাড়াও হিন্দুরা শিবরাত্রির ব্রত করে শিব ভক্তগণ শিবের উপাসনা করে থাকেন। শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন মহিলারা শিবের মাথায় দুধ গঙ্গাজল ঢেলে

স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং মঙ্গল কামনা করেন। অপরদিকে কুমারী মেয়েরা শিবের মত বর (স্বামী) পাওয়ার আশায় সোমবারের দিন শিবের মাথায় দুধ গঙ্গা জল ঢেলে ভগবান শিবকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করেন।

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন (Shrabon mase sombar shiber mathai jol dhala hoy keno)

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ? এই নিয়ে পৌরাণিক ঘটনা সহ নানান ধরণের গল্প উপাখ্যান মানুষের মনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমরা শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ?

তার কারণ সহ কয়েকটি উপাখ্যান আপনাদের সামনে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব। তার সাথে শ্রাবণ মাসে শিব ভক্তগণের ভোলে বম যাত্রার প্রেক্ষাপট আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা নিয়ে শিব পুরাণের আখ্যান

শিবপুরাণের কাহিনী অনুসারে আপনারা সবাই জানেন যে ভগবান শিবের সঙ্গে মাতা পার্বতীর বিবাহ হয়। তাই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢালার ঘটনাটা হল আসলে শিব পার্বতীর বিয়ের সময় জল সইতে যাওয়ার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই।

শিবের মাথায় জল ঢালার ঘটনাটিও হল শিব পার্বতীর বিয়ের আগে জল সইতে যাওয়া অনুষ্ঠানের একটি স্মৃতিচারণের অনুষ্ঠান। হিন্দু বিবাহের রীতিনীতি অনুসারে বিয়ের আগের দিন জল সইতে যাওয়ার নিয়ম।

শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন শিব পার্বতীর বিয়ের জল সইতে যাওয়া অনুষ্ঠানের পুনঃবর্তন হল শিবের মাথায় জল ঢালার অনুষ্ঠান। কারণ মনে করা হয় বিয়ের আগে মানে সোমবার,

মাতা পার্বতী এবং শিবকে স্নান করিয়ে জল সইতে যাওয়ার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই শিব পার্বতীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এখানে আমাদের মনে একটা কৌতূহল কাজ করা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

ভক্তরা সোমবার তো শুধু শিবের মাথায় শিবলিঙ্গে জল ঢালে তাহলে এখানে মাতা পার্বতী মানে শিবের পত্নী কোথায় বিদ্যমান থাকে ? আপনাদের কৌতূহলের জবাব হল শাস্ত্রঅনুযায়ী কনে মানে শিব পত্নী

উমা (পার্বতী) সপ্তাহে একদিন মানে সোমবারের দিন যুগলে (একসাথে) অবস্থান করেন। আর সোম কথাটির আক্ষরিক তাৎপর্য হল সহবস্থান মানে শিব পার্বতীর একসাথে বিরাজিত হওয়া।

এরপর থেকেই হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী শিব পার্বতীর সহাবস্থানের দিন স্বরূপ সোমবারের দিনটিকেই শিবের মাথায় জল ঢালার প্রশস্ত দিন বলে ধার্য্য করা হয়েছে।

তখন থেকে আজ অব্ধি হিন্দু ধর্মালম্বী শিবের উপাসনাকারীরা প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবকে স্নান করিয়ে যেমন নিজে পূর্ণ্য অর্জনের চেষ্টা করেন আর ঠিক একইসাথে হরপার্বতীর বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে যায়।

আরো পড়ুন : শিবের অষ্টোত্তর শতনাম।

শ্রাবন মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন , এই নিয়ে সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা শিবের গরল পান করার ঘটনার পৌরাণিক আখ্যান

পুরাণের কাহিনী অনুসারে শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন, দেবতা ও অসুরদের মধ্যে করা সমুদ্র মন্থনের ফলে সমুদ্র গর্ভ থেকে গরল (বিষ) ভরা কলসি উঠে আসে।

সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসা গরল (বিষ) এতটাই মারাত্মক ছিল যে, সেই গরলের এক বিন্দু পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করলেই পৃথিবীবাসী সমস্ত জীবকুলের ধ্বংস হওয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিল।

এহেন বিষম পরিস্থিতিতে সুর, অসুর ও সমস্ত জীবকুলের কল্যাণে ভগবান শিব সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা বিষ পান করে নিজের কণ্ঠে ধারণ করে, জীবকুল সহ সমস্ত দেবী ও দেবতাদের রক্ষা করেন।

ভগবান শিব বিষ পান করে কণ্ঠে ধারণ করার পর তার কণ্ঠ নীল হয়ে যায়। তাই শিবের আরেক নাম হল নীলকণ্ঠ। এরপর থেকে প্রথানুযায়ী নীলকণ্ঠ শিব তীব্র বিষের তেজস্ক্রিয় প্রকোপ থেকে সমস্ত প্রাণীকূলকে রক্ষা করায়,

মর্ত্যবাসী মানুষ নীলকণ্ঠ শিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভগবান শিবের গরল পানের মধ্যে দিয়ে জীবকূলকে রক্ষা করার অমরগাঁথার কৃতজ্ঞতা জানানোর স্মৃতি উৎসব হিসাবে প্রতিবছর নিয়ম করে শ্রাবণ মাসের

প্রতি সোমবার ভগবান শিবের মাথায় জল ঢেলে মহাদেব শিবকে স্নান করিয়ে ভগবান শিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। সেই থেকে আজ অব্ধি হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষেরা শ্রাবণ মাসের সোমবারের দিন গুলোতে শিবের মাথায় জল ঢেলে আসছেন।

রাক্ষসরাজ রাবণের জল অভিষেকের মাধ্যমেই শ্রাবণ মাসে সোমবারে শিবের মাথায় জল ঢালার প্রচলনতা

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ? এই নিয়ে আরো একটি পৌরাণিক উপাখ্যান হল শিবভক্ত রাবণের শিবের জল অভিষেক করার ঘটনা।

পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী এও মনে করা হয় যে সমুদ্র মন্থনের ফলে কলসি ভর্তি বিষ উঠে আসলে সেই বিষ ভগবান শিব পান করে তার কণ্ঠে ধারণ করেন। শিব কণ্ঠে বিষ ধারণ করে রাখলে শিবের কণ্ঠ নীল হয়ে যায়।

তাই শিবের আর এক নাম হল নীলকণ্ঠ। নীলকণ্ঠ শিবের উপর থেকে বিষের খারাপ প্রভাব দূর করার জন্যে শিবের অনুচরীরা ভগবান শিবের পরমভক্ত রাক্ষসরাজ রাবণের স্মরণ নেন।

রাক্ষসরাজ রাবণ তখন নিজে গঙ্গা থেকে বাঁকে করে জল বয়ে নিয়ে এসে ভগবান শিবের জলাভিষেক করেন, যার ফলে ভগবান শিব, বিষের তেজস্ক্রিয় প্রভাব থেকে মুক্ত হন।

এরপর থেকে বিধিমতে পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী শিব ভক্তগণ শ্রাবণ মাসে গঙ্গা থেকে বাঁকে করে জল নিয়ে এসে সোমবারের দিন শিবের মাথায় জল ঢেলে ভগবান শিবের জলাভিষেক করে থাকেন।

হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষের বিশ্বাস ভগবান শিব তার ভক্তদের উপর অল্পতেই সন্তুষ্ট হন। তাই বিধিমেনে শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন শিবের মাথায় জল ঢাললে যেমন অশেষ পূর্ন্যের অধিকারী হওয়া যায়,

তেমন ভগবান ভোলানাথ সন্তস্ট হলে ভক্তরা ভোলানাথের কাছে মনপুত বর পায়। সেই থেকে আজ অব্ধি নারী পুরুষ নির্বিশেষে ভগবান ভোলানাথকে তুষ্ট করার লক্ষে শ্রাবণ মাসে সোমবারের দিন জল ঢালার রীতি চলে আসছে।

আরো পড়ুন : শিবের আরতি কীর্তন।

শ্রাবণ মাসে বাঁকে করে জল বয়ে সোমবারে শিবের মাথায় জল ঢালা নিয়ে শ্রবণ কুমারের আখ্যান

পুরাণের কাহিনীতে পিতৃমাতৃ ভক্ত শ্রবণ কুমারের কাহিনীতে বাঁকে করে অন্ধ মাতা পিতাকে গঙ্গাজল সহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। ত্রেতাযুগে শ্রবণ কুমার নামের একজন

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন
শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন

তার বৃদ্ধ অন্ধ মাতাপিতাকে সঙ্গে করে তীর্থ করানোর জন্যে বাঁকে করে নিয়ে তীর্থ্য ভ্রমণে বের হয়। তীর্থ্যভ্রমণে এসে শ্রবণ কুমার হরিদ্বারে এসে পৌঁছালে শ্রবণ কুমারের অন্ধ মাতাপিতা,

শ্রবণ কুমারকে হরিদ্বার থেকে গঙ্গা জল সঙ্গে করে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। শ্রবণ কুমারের মাতাপিতা সহ বাঁকে করে গঙ্গা জল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা আগে গিয়ে,

ভক্তদের মনে ঘটনাক্রমে বাঁকে করে গঙ্গা থেকে জল তুলে নিয়ে গিয়ে গঙ্গা জলে শিবের জলাভিষেকের সূচনা করে। আর সেই কারণেই শিব ভক্তগণ শ্রাবণ মাসে গঙ্গা থেকে বাঁকে করে কাঁধে নিয়ে গঙ্গা জল বয়ে নিয়ে গিয়ে, ভগবান শিবের মাথায় জল ঢেলে জলাভিষেক করে থাকেন।

বেদের পাতায় শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালার আখ্যান

বেদে ভগবান শিবকে ‘রুদ্র’ নাম দিয়েই বোঝানো হয়েছে। বেদের কাহিনীতে ‘রুদ্র’ বলতে বজ্রের উপস্থাপক, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত আদি হল তার নিয়ন্ত্রণাধীন।

তবে বৈদিক যুগে বেদের উপস্থাপক বন্টনময় সমাজ ব্যবস্থা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র শ্রেণীবিন্যাস সমাজ ব্যবস্থার বাইরে আরো এক জনগোষ্ঠীর বিচরণ ছিল। মনে করা হয় এই জনগোষ্ঠী হল হয়ত আদি সনাতন।

তাদের হাত ধরেই বেদের নিরাকার ঈশ্বরের সাধনার বাইরে গিয়ে, সনাতন সমাজে মহাদেব নিরাকার থেকে আকারে বিরাজমান হলেন। বৈদিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের আর, নিরাকার ঈশ্বরের পূজা করতে ভালো লাগছিল না।

তারা কল্পনা ও উপলব্ধির বাইরে তাদের ইষ্ঠ দেবতাকে চাক্ষুসভাবে দেখে উপাসনা করতে চাইছিল। তাই বৈদিক যুগের সনাতন সমাজ তাদের নিজের ইচ্ছেতেই তাদের কল্পনার দেবতাকে পার্থিব রূপ দিতে আগ্রাসী হলেন।

বাস্তবের অভিজ্ঞতা দিয়ে মানুষ দেখতে পেল পাহাড়ের গায়ে মেঘ গুলো ধাক্কা খেলে বজ্রপাত হয়, পৃথিবীতে বৃষ্টি নামে। তাই তাদের ক্রমশ মনে হতে লাগল, পাহাড়ই হল তাহলে তাদের আরাধ্য দেবতা।

পাহাড়ের দৌলতে পৃথিবীতে বৃষ্টি নামছে, মাটিতে বীজ পড়ে জলে ভিজে অংকুরদম ঘটিয়ে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করছে। ক্রমশ তাদের মনে হতে লাগল ঋষি মুনিদের মুখ থেকে শুনে আসা মেঘ, বৃষ্টি ও বজ্রপাত ঘটানো ‘রুদ্র’ দেবতার চাক্ষুস রুপ হল ,আসলে এই পাহাড়।

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন

এইভাবে মানুষ কালক্রমে ‘রুদ্র’ দেবতাকে পাহাড় রূপেই পুজো করতে লাগল। কিন্তু কালক্রমে মানুষের ইচ্ছে ও আবেগ তাদের ইষ্ঠ দেবতাকে আপনজনের মত ঘরে ঠাঁয় দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করল।

তারা চাইল তারা তাদের দেবতাকে নিজেদের ঘরে রেখে পরিবারের সদস্যের মত আপন করে নিয়ে নিজে নিজেদের ঘরে ঘরে পুজো করতে। কিন্ত এখানে ঘটনা হল এত বড় পাহাড়কে তো ঘরে কাঁধে করে নিয়ে এসে পুজো করা যায়না।

তখন মানুষ তার বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে অনেক ভেবেচিন্তে পাহাড় আকৃতির পাথর দিয়ে শিবলিঙ্গ স্বরূপ ‘রুদ্র’ দেবতার সংস্করণ তৈরী করল, যাতে করে মানুষ নিজেদের ঘরে ঠাঁই দিয়ে তারা নিজেরাই তাদের দেবতার পুজো করতে পারে।

মনে করা হয় বৈদিক মতে এটাই ছিল ‘রুদ্র’ দেবতার প্রথম এবং আদি (আদিম) প্রতিমা। ‘রুদ্র’ বা শিবের এই আদি ভাবমূর্তি বজায় রেখে শিবকে দেবাদি দেব মহাদেব বলা হয় এবং মহাদেবকেই আদি দেবতা বলে মনে করা হয়।

পৌরাণিক যুগে ‘আদি দেবতা’ শব্দটিকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই ধীরে ধীরে তৈরী হয়ে গেল সৃষ্টির আদি দেবতা শিবের উত্থান। এইভাবে সেই সময়ে প্রকৃতির নিয়মে সময়মত বৃষ্টি না হলে

মানুষ মনে করত ভগবান শিব হয়ত অজ্ঞাতবশত বৃষ্টি আনার কথা ভুলে গেছে তাই হয়ত সময়মত পৃথিবীতে বৃষ্টি নামছেনা। মানুষ তখন রুদ্রদেবতা অথাৎ শিবকে তার বৃষ্টি নামানোর কর্তব্যের কথা মনে করানোর জন্যে

শ্রাবনমাসে কৃষিকাজ করার প্রাক্কালে শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবের বৃষ্টি আনার কর্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দিত। এইভাবে আদিকাল থেকে শিবের মাথায় জল ঢালার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়।

পৌরাণিক যুগ থেকেই রুদ্র দেবতার পাহাড় স্বরূপ রূপটিকে লিঙ্গের রূপ দিয়ে পূজা করার রীতি শুরু হয়। এইভাবেই বৃষ্টি ও সৃষ্টিকে প্রজননের সঙ্গে মিলে মিশে তৈরী হল শিব পূজনের এক নতুন তত্ত্ব।

কালের ব্যবধানে ভালো বর পাওয়ার আশায় শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালার রীতি ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের মধ্যেও প্রাধন্যতা পেল। অপরদিকে নিঃসন্তান মহিলারা নতুন করে ব্রত রাখল সন্তান লাভের আশায়।

আরো পড়ুন : একাদশী কেন পালন করা হয় ও একাদশী পালনের নিয়ম।

শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢালার নিয়ম

শিবের আর এক নাম হল ভোলানাথ। লোকে বলে ভগবান শিব অল্পেই সন্তুষ্ট হন। তাই শিবকে আলাদা করে ঘটা করে পূজা করার দরকার পড়েনা। শিব আরাধনায় ভক্তিভরে শিবের মাথায় দুধ গঙ্গাজল চড়ালেই শিব তাতে সন্তস্ট হন।

আর সেই জন্যেই ভক্তরা হয়ত শিব আরাধনায় বাঁকে করে গঙ্গাজল নিয়ে এসে শিবের মাথায় জল চড়িয়ে শিব আরাধনা করেন। তাইতো শ্রাবণ মাসে দেশ বিদেশ থেকে ভক্তরা পায়ে হেঁটে বাঁকে করে জল নিয়ে এসে শিবের মাথায় জল ঢেলে জলাভিষকে করেন।

তবে শিবের মাথায় অথাৎ ভোলেবাবার মাথায় জল ঢালার বেশ কিছু নিয়ম আছে এবং সেই নিয়ম অত্যন্ত কঠোর ভাবে পালনের মাধ্যমে শিবের মাথায় জল চড়াতে হয়।

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন
শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন

শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢালার নিয়ম গুলো মেনে চলে শিবের মাথায় জল ঢালতে হয় –

  • জল ঢালতে যাওয়ার আগে ভক্তদিকে সংযম ব্রত পালন করার মধ্যে দিয়ে হাত,পায়ের নখ, গোফ-দাড়ি, মাথার চুল ইত্যাদি কামাতে হয়। তারপর শুদ্ধ নতুন বস্ত্র পড়ে জল ঢালতে যেতে হয়।
  • ভক্তদিকে পায়ে হেঁটে ভোলেবাবার মাথায় জল ঢালার জন্যে জল আনতে যেতে হয়।
  • ভক্তদিকে ভোলানাথের মাথায় জল ঢালতে যাওয়ার জন্যে স্বাত্বিক নিরামিষ ভোজন করতে হয়।
  • ভোলেবাবার জল ঢালতে যাওয়ার পদযাত্রার সময়, যাত্রাপথে বিশ্রামের দরকার পড়লে বাঁক সরাসরি মাটিতে নামিয়ে রেখে বিশ্রাম করা যায়না। গঙ্গাজল ভর্তি বাঁকটিকে গাছে বা অন্য কোথাও রেখে তবেই বিশ্রাম করতে হয়।
  • ভোলেবাবার ভোলবমের যাত্রাপথে প্রসাব,পায়খানা পেলে আবার নতুন করে স্নান করে কাঁধে বাঁক নিতে হয়।

শ্রাবণ মাসে শিব পূজার নিয়ম

এমনিতেই যারা শিবের উপাসক তারা দৈনন্দিন ভগবান শিবের নিত্যপূজা করে থাকেন। তবে শিবের আরাধনার জন্যে সোমবারের দিনটি চিহ্নিত তাই সোমবারের দিনটিই শিব পূজার জন্যে উত্তম।

ভগবান শিব আমাদের অল্পতেই সন্তুষ্ট তাই শিব পূজা করার জন্যে শিব পূজার মন্ত্র জানতে হবে এমন কোনো বাধ্য বাধ্যকতা নেই। মনের ভক্তি দিয়েও শিবের পূজা করা যায়।

শিব পূজা করার জন্যে ভোলেবাবার পছন্দ সই ধুতুরা ফুল, বেলপাতা, দুধ-গঙ্গাজল আদি দিয়ে শিবের পূজা করলেই শিব সন্তুষ্ট হন। তবে আপনারা কেউ যদি শিবরাত্রির উপবাস করেন

আপনারা তাহলে আমাদের শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় ও শিবরাত্রি পালনের নিয়ম আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। আমরা সেখানে শিবরাত্রি পালনের যাবতীয় নিয়ম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছি।

পরিশিষ্ট

শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ? এই ধরণের প্রশ্ন আমার আপনার মত অনেকেরই মনে থেকে থাকতে পারে। তবে কথা হল আমরা অনেকেই হয়তো শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ? সেই থিওরিটা অনেকেই জানিনা।

আমরা আপনাদের শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ? এই প্রশ্নের যথাযথ জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশাকরি আপনারা আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে শ্রাবণ মাসে সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন ?

অথাৎ শিবের মাথায় শ্রাবণ মাসে জল ঢালার আসল তাৎপর্যটি বুঝতে পেরেছেন। তবে আপনাদের মনে শিবের মাথায় জল ঢালা বা ভগবান শিবের উপাসনা নিয়ে কোনো ধরণের প্রশ্ন থাকলে আমাদের সরাসরি কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

5/5 - (1 vote)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here