শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় ও শিবরাত্রি পালনের নিয়ম (Shivratri Keno Palon Kora Hoy)

ওঁম নমঃ শিবায় ! যিনি ত্রিকাল দর্শী, নিরাকার, সর্ব জ্ঞানী ও সর্বত্র বিরাজমান তিনি হলেন কালের কাল মহাকাল শিব। আজকে আমরা ত্রিকালদর্শীর বন্দনায় শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় (Shivratri Keno Palon Kora Hoy) সেই বিষয়ে আলোচনা করব।

হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষদের মতে অবিবাহিত কুমারী মেয়েরা মহা শিবরাত্রির উপবাস রাখলে তাদের শীঘ্র বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং ভগবান শিবের মত সুন্দর বর (Husband) হয়।

কিন্তু শুধুমাত্র সুন্দর বর পাওয়ার আশায় শিবরাত্রির ব্রত যে শুধু মাত্র মহিলারাই পালন করবে এমন কোনো কথা নেই। নারী পুরুষ নির্বিশেষে বিবাহিত মহিলারা সুখী দাম্পত্য জীবন যাপনের জন্যেও

শিব রাত্রির ব্রত পালন করে থাকেন। সাধারণভাবে প্রত্যেক সোম বারেই শিবের ব্রত পালন করা হয়, কিন্তু মহা শিবরাত্রি ব্রত পালন করার পিছনে এক আলাদা তাৎপর্য আছে।

আজকের আর্টিকেলে আমরা শিবরাত্রির ব্রত কথা,শিবরাত্রি ব্রত পালনের নিয়ম,শিবরাত্রি কবে ২০২৩, শিবরাত্রি পালন করলে কি হয়, শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়, শিবরাত্রির তাৎপর্য, শিবরাত্রি পূজা পদ্ধতি আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

মহা শিবরাত্রি কি (Moha Shivratri Ki), শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়

সাধারণত প্রত্যেক সপ্তাহের সোমবার এবং প্রতিমাসের ১৪ তম দিনটিকে শিবরাত্রি রুপে পালন করা হয়। তাই প্রতি মাসেই একটি করে শিবরাত্রির দিন থাকে । তবে শিবরাত্রি থেকে মহা শিবরাত্রির মহত্ব কিন্ত একেবারে আলাদা।

ফাল্গুন মাসের ১৪ তম দিনটি অথাৎ চতুর্দশীর দিনটি হল মহা শিবরাত্রির দিন। মহা শিবরাত্রি শুধু বছরে একবারই পালন করা হয়। পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী ফাল্গুন মাসের ১৪ তম দিনটিতে

অথাৎ ফাল্গুন মাসের চতুর্দশীর দিনে শিবের প্রথম স্ত্রী (wife) দক্ষরাজ প্রজাপতির কন্যা যজ্ঞে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু বরণ করলে, ভগবান শিব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে শিব তান্ডব স্ত্রোতম নৃত্য করেছিলেন।

(আরো পড়ুন : শিব তান্ডব স্ত্রোতম )

ঘটনা অপরান্তে ফাল্গুন মাসের ১৪তম দিনটিতে (চতুর্দশীর দিনে) শিবের প্রথম স্ত্রী সতী মারা যাওয়ার পর, হিমালয় রাজের কন্যা মাতা পার্বতীর ধ্যানে সন্তুষ্ট হয়ে শিব পার্বতীকে বিবাহ করেছিলেন।

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে চন্দ্র সূর্যের কাছে আসে, সেই সময় জীবন-রূপী চন্দ্রের, শিব-রূপী সূর্যের সঙ্গে মিলন ঘটে। তাই এই ধরণের প্রাকৃতিক যোগে শিব চতুর্দশী তিথিতে শিব পুজো করলে ব্যক্তির সকল মনস্কামনা পূরণ হয়।

শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় (Shivratri Keno Palon Kora Hoy)

হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে শিবরাত্রির ব্রত পালন নিয়ে নানান ধরণের কথা ও উপকথা সোনা যায়। আবার অনেকে মনে করেন শিবরাত্রির ব্রত শুধু মেয়েদের জন্যে, কিন্তু আমাদের এই ধারণা একদম ভুল।

গরুড় পুরান অনুযায়ী শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় (Hindu lord Shiva)

গরুড় পুরাণে ব্রহ্মা বলেছেন “শিবরাত্রিব্রতং বক্ষ্যে কথাঞ্চ সর্ব্বকামদৎ” , যার অর্থ হল শিবরাত্রির ব্রত করা ভক্তদের সকল প্রকার কামনা পূর্ণ হয়।

“কামযুক্তো হরিঃ পূজ্যোদ্বাদশ্যামিব কেশবঃ।
উপোষিতৈঃ পূজিতঃ সন্নকরাত্তরয়েত্তথা।।”

এই লাইন দুটির অর্থ হল যেমন- একাদশীর দিন উপবাস রেখে দ্বাদশীর দিন বিষ্ণুর পূজা করলে যেমন ভক্তের সকল কামনা পূরণ হয়, ঠিক তেমনি শিবরাত্রির ব্রত করলে, শিবরাত্রি করা ভক্ত নরকবাস হতে মুক্তি পায়।

ঈশ্বর উবাচ-
“মাঘফাল্গুণয়োর্ম্মধ্যে কৃষ্ণা যা তু চতুর্দ্দশী।
তস্যাং জাগরণাদ্রুদ্রঃ পুজিতো ভুক্তিমুক্তিদঃ।।”

ভোলা মহেশ্বর বলেছেন মাঘ ও ফাল্গুন মাসের মধ্যে যে ভক্তগণ কৃষ্ণচতুর্দশীতে উপবাস রাখে এবং জাগরণ করে ভক্তিভরে মহাদেবের পূজা করে তাকে মহাদেব মুক্তি প্রদান করেন।

(আরো পড়ুন : শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কেন পালন করা হয়)

মেয়েরা মহাশিব রাত্রির ব্রত করে কেন (Hindu Lord Shiva)

দক্ষরাজ প্রজাপতিদের রাজা হওয়ার পর , দক্ষরাজ রাজ্যভিষেকর জন্যে সভাসদ সহ একটি বড় যজ্ঞের আয়োজন করেন। সেই যজ্ঞে স্বর্গ,মর্ত্য ও পাতালের দেবী দেবতা,ঋষি মুনিরা উপস্থিত থাকলেও ভোলানাথ শিবের কিন্তু নেমন্ত্রন ছিলনা।

কারণ দক্ষরাজ ভোলানাথ শিবকে, শুরু থেকেই জামায় হিসাবে ততটা পছন্দ করতেন না। এদিকে দক্ষরাজের কন্যা সতী, বিনা নেমন্তনেই বাবার আনন্দ উৎসবের যজ্ঞ দেখতে নন্দী মহারাজের সঙ্গে যজ্ঞের স্থানে উপস্থিত হয়েছেন।

কিন্তু সভাস্থলে পৌঁছে সতী দেখতে পেলেন সেখানে শিব নিন্দা চলছে। সতী দক্ষরাজকে শিব নিন্দা থেকে বিরত থাকতে বললেও দক্ষরাজ তাতে ভুক্ষেপ না দিয়েই শিব নিন্দা করতে থাকেন।

দক্ষরাজের মুখে স্বামীর নিন্দা শুনে সতী লজ্জায় অপমানে ক্রোধে যজ্ঞের অগ্নিকুন্ডের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেন। পরে নন্দী মহারাজের থেকে ভোলানাথ সতী বিয়োগের খবর পেয়ে দৌড়ে আসেন।

এরপর দক্ষের সভায় যজ্ঞের অগ্নিকুন্ড থেকে পার্বতীর নিথর দেহ তুলে নিয়ে ভোলা মহেশ্বের শিব তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। পরে অবশ্য ভগবান বিষ্ণু তার চক্র দিয়ে সতীর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ছেদ করে দিলে বিভিন্ন জায়গায় সতীপীঠ তৈরী হয়।

সতীর বিয়োগে ভোলানাথ শিব ঘোর তপস্যায় মগ্ন হয়। এইভাবে যুগের পর যুগ তপস্যা করতে থাকলে সৃষ্টির বিনাশ নিশ্চিত দেখে, সকল দেবী ও দেবতাগণ বিচলিত হয়ে ভগবান শিবের ধ্যান ভাঙানোর পরিকল্পনা করেন।

কিন্তু এখানে প্রশ্ন ওঠে ভগবান শিবের ধ্যান কে ভঙ্গ করবে ? আর যে ভঙ্গ করবে সে মহাদেবের তৃতীয় চক্ষুর রোষানলের আগুনে ভষ্ম হয়ে যাবে। উপায় স্বরূপ দেবী ও দেবতারা ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর সাথে পরামর্শ করে

সতীর অংশ স্বরূপ হিমালয় রাজার কন্যা হিসাবে, মাতা পার্বতীকে সৃষ্টি করেন। শুরু থেকে মাতা পার্বতী ভগবান শিবের ভক্ত ছিলেন এবং শিবকে বর (স্বামী) হিসাবে পাওয়ার জন্য প্রতি সোমবার শিবরাত্রির ব্রত করতেন।

এইভাবে মাতা পার্বতী তার সাধনা ও দেবতাদের চেষ্টায় ভোলানাথ শিবকে স্বামী হিসাবে পেয়ে থাকেন। আর ঘটনাক্রমে শিব পার্বতীর বিয়ের দিন ছিল ফাল্গুন মাসের চতুর্দশীর দিন।

শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়
শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় (shivratri keno palon kora hoy)

এইভাবেই ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশীর দিনে ভোলানাথ শিব তার বৈরাগ্য জীবন ত্যাগ করে পুনঃরায় মাতা পার্বতীর সঙ্গে সংসার জীবনে ব্রতী হন এবং শিবরাত্রির ১৫ দিন পরেই মিলন ও রঙের উৎসব দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

তার জন্যই কুমারী অবিবাহিত মেয়েরা ঘটা করে শিবের মত সুন্দর বর ও শীঘ্র বিয়ে হওয়ার আসায় মেয়েরা মহা শিবরাত্রির ব্রত করে, শিবরাত্রির দিন রাত্রি বেলা শিব লিঙ্গের উপর দুধ গঙ্গাজল ঢেলে ভোলামহেশ্বরের পূজা করে থাকেন।

লোকমোতে অনেকের ধারণা শিবরাত্রির পূজা শুধু মেয়েদের জন্যে। কিন্ত এটা মোটেও যুক্তি সম্মত কথা নয়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল ভক্তগণই শিবরাত্রির পূজা করতে পারেন।

যদিও আমাদের সমাজে বাচ্চাবস্থাতেই মেয়েদের মনে শিবের মত বর (Husband) পাওয়ার জন্য শিবের উপাসনা করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাই আমাদের সমাজে পুরুষ অপেক্ষা মেয়েরাই শিবরাত্রির ব্রত করে থাকেন।

শিব পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়

শিব পুরাণ অনুযায়ী ধরিত্রী ধামে শিবরাত্রির প্রচলন শুরু হয় মূলত পুরুষের হাত ধরেই। আসুন আমরা তাহলে পুরানের কাহিনীতে শিব রাত্রি পালনের পিছনের অন্তঃনিহিত কাহিনী জানার চেষ্টা করি।

শিব পুরাণের কাহিনী অনুসারে কোনো একসময় বারাণসীতে একজন ব্যাধ (শিকারী) বসবাস করতো। সেই ব্যাধের জীবন যাপনের প্রধান রুজিরুটি ছিল পশু পাখি শিকার করা।

ব্যাধ শিকার করার জন্যে নানান রকমের পন্থা অবলম্বন করে পশু পাখিদের নিজের জালে ফাঁসিয়ে তাদের হত্যা করতো। একদিন ব্যাধ শিকার না পেয়ে শিকারের খোঁজে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করে পথ হারিয়ে ফেলে।

এদিকে সূর্য্য অস্তাচলে গিয়ে সন্ধে হওয়ার জোগাড়। সারাদিন স্বীকার না পেয়ে ব্যাধ ক্ষুধা তৃষ্ণায় বনে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্ত হলে কি হবে সন্ধে গড়িয়ে রাত হয়ে আসায়,

অন্ধকার জঙ্গলে হিংস্র জন্তু জানোয়ারের কবলে পড়ে ব্যাধের প্রাণ যাওয়ার ভয় হচ্ছিল। উপায় না দেখে ব্যাধ তখন প্রাণ বাঁচানোর জন্যে অন্ধকারে ঠাউরে একটি বেল গাছের ডালে চড়ে পড়ল এবং সেই গাছের ডালেই রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল।

এদিকে সারা রাত শিশীর ভেজা রাত্রে, শিশীরে ভিজে ক্ষুধা তৃষ্ণায় দুর্বল ব্যাধ মাঝ রাত্রে ঠান্ডায় কাঁপতে লাগল। ঠান্ডায় কাঁপুনিতে বেল গাছ থেকে তখন ব্যাধের অজান্তেই বেল পাতা গুলো নড়ে একটা দুটো করে নিচে ঝড়ে পড়তে লাগল।

দৈবযোগে বেল গাছের তলাতেই একটি শিবের প্রতীকী স্বরূপ একটি পাথরের শিব লিঙ্গ বেল গাছের নিচে প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্ত বিধির বিধানে কাকতালীয়ভাবে সেই দিনটি ছিল শিব চতুর্দশীর দিন।

অপরদিকে ব্যাধও সেদিন সারাদিন না খেয়ে না দেয়ে উপবাসে ছিল, সারা রাত্রে হিমে ভিজে তার শরীরের স্নানও হয়ে গেছিল। আর ঠান্ডায় তার শরীরের ঝাঁকুনিতে বেল পাতা ঝড়ে ঝড়ে বেল গাছের নিচে থাকা শিব লিঙ্গের উপর পড়ছিল।

এইভাবে ব্যাধ তার অজান্তেই শিব চতুর্দশীতে মহাকাল শিবের, শিবরাত্রির ব্রত করে মহাপূর্ণ্য লাভ করে ফেলেছিল। যাইহোক পরের দিন সকাল হলে ব্যাধ তার ঘরে ফিরে যায়।

কিন্তু কালের বিধানে ব্যাধের সেদিনই আয়ু শেষ হয়ে গেল এবং বাড়িতে এসেই মৃত্যু হল। যমদূত ব্যাধের আত্মাকে জমপুরীতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে হাজির হল, অপর দিকে ভগবান শিবের দুই অনুচর

ব্যাধকে শিবলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হতে লাগল। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেল। শেষ পর্যন্ত যমদূত এবং শিব দূতের মধ্যে ঝগড়া মেটানোর জন্য স্বয়ং যমরাজ ভোলানাথ শিবের কাছে উপস্থিত হলেন।

যমরাজ ভোলা মহেশ্বরের কাছে ব্যাধের পশু পাখি হত্যা ও সকল দুস্কর্মের কথা তুলে ধরে ব্যাধের পাপের শাস্তি দেওয়ার জন্য যমপুরী নিয়ে যেতে চাইলেন। তখন ভোলানাথের পরম সেবক নন্দী মহারাজ ধর্মরাজ যমকে সবটা বুঝিয়ে বললেন।

হে যমরাজ ব্যাধ যে দুরাচারী ও দুস্কর্ম পরায়ণ একজন মানুষ তাতে কোনো সন্দেহ নেই ! তবে এটাও সত্যি ব্যাধ তার অজান্তে শিব চতুর্দশীতে মহা শিবরাত্রির ব্রত করে তার জীবনের যাবতীয় পাপ ধুয়ে ফেলেছেন।

শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়
শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় (shivratri keno palon kora hoy)

নন্দী মহারাজের কথা শুনে ধর্মরাজ যম কিছুটা বিস্মিত হলেন ঠিকই, কিন্ত তিনি শিবরাত্রি ও শিবের মাহাত্ম্যের কথা ভাবতে ভাবতে যম পুরীতে চলে গেলেন।

ভোলানাথ শিবের মহা শিবরাত্রি এমন একটি ব্রত যা পঞ্চমতে শ্রেষ্ঠ ব্রত হিসাবে স্বীকৃত। তাই পঞ্চমত অনুযায়ী শুধু নারী নয়, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল শিব ভক্তই মহা শিবরাত্রির ব্রত করতে পারেন।

একবার মাতা পার্বতী ভোলানাথ শিবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি ভক্তের কোন ব্রতে বেশি সন্তস্ট হন ? তখন ভোলা মহেশ্বর মাতা পার্বতীকে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহা শিবরাত্রির ব্রত করার জন্য বলেন।

তিনি বলেন ঐ পবিত্র দিনে যে ভক্ত, ভক্তিভরে মহা শিবরাত্রির ব্রত করবে, সেই ভক্তের সর্বপাপ বিনাশ হবে। তাই মহা শিবরাত্রির ব্রত ভক্তগণের কাছে মুক্তদাত্রি ব্রত হিসাবেও পরিচিত।

এরপর মাতা পার্বতী শিব চতুর্দশীতে, মহা শিবরাত্রি ব্রতের মাহাত্ম্যের কথা আত্মীয় স্বজনের কাছে বর্ণনা করে শিবরাত্রির ব্রত করার জন্য বলেন। এইভাবেই মহা শিবরাত্রির ব্রত দেবলোক থেকে শুরু করে মর্ত্যলোক অবধি পৌঁছে যায়।

(আরো পড়ুন : শ্রী কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম )

শিবরাত্রি ব্রত পালনের নিয়ম (Shiv Ratri Paloner Niyom)

আমরা এখানে ভগবান শিবের আরাধনায় সাধারণ ভক্তরা শিব পূজা কিভাবে করতে পারবে অথাৎ মহা শিবরাত্রি পূজা পদ্ধতি সহ শিবরাত্রি পালনের নিয়ম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করে দেখাব।

আপনারা এখানে বর্ণিত মহা শিবরাত্রি পূজা পদ্ধতি গুলো ফলো করে নিজের ঘরে ভগবান শিবের আরাধনা করতে পারেন। একইভাবে প্রতি সোমবার শিব লিঙ্গের পূজা বা বানেশ্বর শিবের পূজা করতে পারেন।

তবে আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি বানেশ্বর শিব ও শিবলিঙ্গের পূজা পদ্ধতি কিন্তু আলাদা আলাদা। তাই যে সমস্ত ভক্তবৃন্দের ঘরে বানেশ্বর শিব আছে তারা বানেশ্বর মন্ত্র উচ্চারণ করেই ভগবান শিবের পূজা করবেন।

আমরা এখানে বানেশ্বর শিবের পূজা করার নিয়ম এবং সাধারণভাবে শিব লিঙ্গের পূজা, শিবরাত্রি ব্রত পালনের নিয়ম সহ দুই ধরণের পূজা পদ্ধতি বর্ণনা করব। আপনারা আমাদের মহা শিবরাত্রি পূজা পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে ভগবান শিবের পূজা করতে পারেন।

শিবচতুর্দশীর আগের দিন অথাৎ ত্রয়োদশীর দিন সকাল বেলা মেয়েরা নখ, ছেলেরা নখ ও গোফ কেটে স্নান করে নিরামিষ খেয়ে সংযম ব্রত পালন করবেন। পরের দিন অথাৎ শিব চতুর্দশীর দিন উপোস রেখে সকাল বেলা স্নান সেরে

পঞ্চাক্ষর মন্ত্র ‘ওঁম নমঃ শিবায়’ মন্ত্র উচ্চারণ করে ভগবান শিবের ভক্তি করবেন। এরপর রাত্রিবেলা শিবলিঙ্গকে প্রথম প্রহরে ‘হ্রীং ঈষণায় নমঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গকে দুধ দিয়ে স্নান করাবেন।

দ্বিতীয় প্রহরে ‘হ্রীং অঘোরায় নমঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গকে দই দিয়ে স্নান করাবেন। তৃতীয় প্রহরে ‘হ্রীং বামদেবায় নমঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গকে ঘি দিয়ে স্নান করাবেন।

চতুর্থ প্রহরে, ‘হ্রীং সদ্যোজাতায় নমঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গকে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে পূজা করবেন। তবে চেষ্টা করবেন সকাল হওয়ার ০৩ ঘন্টা পূর্বে সূর্যোদয়ের আগেই যেন শিবরাত্রির পূজা সমাপ্ত হয়ে যায়।

তবে যদি কোনো ভক্তগণ শারীরিকভাবে অসুস্থ হন কিংবা কোনো শিশু অথবা বৃদ্ধ ব্যক্তি ব্যক্তি শিবরাত্রির উপবাস করেন সেক্ষত্রে রাত ১২ টার আগেও পূজা সেরে নিলেও কোনো অসুবিধা নেই এবং তাদের সকাল বেলার পূজা না করলেও চলে।

তবে যে সমস্ত উপাসকগণ শারীরিক এবং মানসিকভাবে সক্ষম তারা সকালে না খেয়ে খালি পেটেই স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে মহা শিবরাত্রির পূজা করবেন। এখানে যে সমস্ত উপাসকগণ গুরুদীক্ষায় দীক্ষিত হয়েছেন

তারা সকালে স্নান সেরে আহ্নিক করে তারপর শিবপূজায় বসবেন। সবার প্রথমে শিব পূজার উপকরণ গুলি আপনার শ্রাদ্ধ মত জোগাড় যন্ত্র করে নিয়ে নিজের হাতের কাছে রেখে দেবেন।

তবে অনেক সময় যে সমস্ত ভক্তগণ ঠাকুর ঘরে ভগবান শিবের নিত্যপূজা করেন, তাদের সবসময় শিব পূজার উপকরণ সামগ্রী গুলো প্রতিদিন যেমন- বেলপাতা,ফুল ইত্যাদি একত্রিত করে গুছিয়ে রাখা সম্ভব হয় না।

তারা শিব পূজা করার সময় পূজার উপাচার গুলোর নাম উচ্চারণ সহ মন্ত্র উচ্চারণ করে সামান্যতম অর্ঘ্য স্বরূপ গঙ্গাজল দিয়ে (জলশুদ্ধি) করে ভগবান শিবের পূজা করতে পারেন।

শিব পূজার মন্ত্র ও মহা শিবরাত্রি পূজা পদ্ধতি (Shiv Pujar Mantra)

সবার প্রথমে শিবরাত্রির পূজার বসার আগে বা প্রতি সোমবারে শিব পূজা করার আগে শিব মন্দিরের ভিতরে শিব পূজার যাবতীয় উপকরণ গুলোর জোগাড় যন্ত্রর করে নিন। তারপর ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে নিন। আপনি যদি গুরু দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে থাকেন তাহলে-

শিব, শ্রীগুরু ও ইষ্টদেবতাকে প্রণাম করে তিন জনকে অভিন্ন চিন্তা করতে করতে যথাশক্তি আপন আপন গুরুর দীক্ষামন্ত্র জপ করবেন। তারপর করজোড়ে এই মন্ত্রটি পাঠ করবেন-


‘ওঁ সর্বমঙ্গলমাঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্।
নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণি কারয়েৎ।।’

আচমন :

ডান হাতের তালু গোকর্ণাকৃতি করে মাষকলাই ডুবতে পারে,সেই পরিমাণ জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রটি পাঠ করে জল পান করুন। এইভাবে মোট তিন বার জলপান করে আচমন করার পর হাত জোড় হাত করে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন-

‘ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি

সূরয়ঃদিবীব চক্ষুরাততম্।’

‘ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।’

জলশুদ্ধি:

তামার পাত্রে বা কোশা কুশিতে গঙ্গাজল বা পরিষ্কার জল নিয়ে মধ্যমা আঙুল দ্বারা সেই জল স্পর্শ করে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন-


‘ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতি।
নর্মদে সিন্ধু-কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু।।’

সৌরমন্ডল থেকে সব তীর্থ সেই পার্শ্বস্থ জলের মধ্যে বিরাজিত হয়েছেন মানসপটে এই চিন্তা করতে করতে সেই জলে একটি ফুল দিয়ে তীর্থপূজা করুন।

শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়
শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় (shivratri keno palon kora hoy)

তীর্থপূজার মন্ত্রটি হল-

‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে তীর্থেভ্যো নমঃ।’

এরপর সেই জল সামান্য মত কুশীতে নিয়ে পূজা সামগ্রীর উপর এবং নিজের মাথায় ছিটিয়ে দিন।

আসনশুদ্ধি :
পূজার আসনটিকে শুদ্ধ করার জন্যে যে আসনটিতে বসে পূজা করছেন, সেই আসনটিতে একটি ফুল দিয়ে হাত জোড় করে নিচের মন্ত্রটি পাঠ করুন-

‘ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা।
ত্বঞ্চ ধারায় মাং নিত্যং পবিত্রং কুরু চাসনম্।।’

পুষ্পশুদ্ধি :
পুষ্প স্পর্শ করে এই মন্ত্রটি পাঠ করুন-

‘ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে।
পুষ্পাচয়াবকীর্ণে চ হুঁ ফট্ স্বাহা।’

ভূতশুদ্ধি :
হাত জোড় করে মনে মনে এই চারটি মন্ত্র পাঠ করুন-

‘ওঁ ভূতশৃঙ্গাটাচ্ছিরঃ সুষুম্নাপথেন জীবশিবং
পরমশিবপদে যোজয়ামি স্বাহা ।। ১ ।।
ওঁ যং লিঙ্গশরীরং শোষয় শোষয় স্বাহা ।। ২ ।।
ওঁ রং সংকোচশরীরং দহ দহ স্বাহা ।। ৩ ।।
ওঁ পরমশিব সুষুম্নাপথেন মূলশৃঙ্গাটমুল­সোল­স
জ্বল জ্বল প্রজ্জ্বল প্রজ্জ্বল সোঽহং হংসঃ স্বাহা ।। ৪ ।।’

প্রাণায়াম :
‘ওঁ’ বা গুরুপ্রদত্ত বীজমন্ত্রে (বাণেশ্বর শিবের ক্ষেত্রে ‘ঐঁ’ মন্ত্রে) চার বার ৪/১৬/৮ ক্রমে পূরক, কুম্ভক ও রেচক করে প্রাণায়াম করুন।

শ্রীগুর্বাদিপূজা :

এরপর একটি একটি করে গন্ধপুষ্পদ্বারা শ্রীগুরু ও অন্যান্য দেবতাদের পূজা করুন।
মন্ত্রগুলি হল-

‘ঐঁ এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীগুরবে নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে গণেশাদিপঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে আদিত্যাদিনবগ্রহেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদিদশদিকপালেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে কাল্যাদিদশমহাবিদ্যাভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মৎস্যাদিদশাবতারেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে মৎস্যাদিদশাবতারেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ।
ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে সর্বাভ্যো দেবীভ্যো নমঃ।’

শিবের ধ্যান :
এরপর একটি ফুল নিয়ে (সম্ভব হলে কূর্মমুদ্রায় ফুলটি নেবেন) শিবের ধ্যান করবেন। শিবের সাধারণ ধ্যানমন্ত্র ও বাণেশ্বর ধ্যানমন্ত্র আলাদা আলাদা ধ্যান মন্ত্র দুটি নিচে দেওয়া হল-


সাধারণ শিবপূজার ধ্যানমন্ত্র-

‘ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্।
পদ্মাসীনং সমন্তাৎ স্তুতমমরগণৈর্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্ত্রং ত্রিনেত্রম্।।’

বাণেশ্বর শিবের ধ্যানমন্ত্র-


‘ঐঁ প্রমত্তং শক্তিসংযুক্তং বাণাখ্যঞ্চ মহাপ্রভাং।
কামবাণান্বিতং দেবং সংসারদহনক্ষমম্।।
শৃঙ্গারাদি-রসোলাসং বাণাখ্যং পরমেশ্বরম্।
এবং ধ্যাত্বা বাণলিঙ্গং যজেত্তং পরমং শিবম্।।’

স্নান-


এরপর শিবকে স্নান করাবেন। গঙ্গাজলে শুদ্ধজলে চন্দন মিশ্রিত করে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে শিবকে স্নান করাবেন এই মন্ত্রে শিবকে স্নান করাবেন-

‘ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্।
উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ।।
ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি
তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।’

বিঃ দ্রঃ- মনে রাখবেন সাধারণ শিব লিঙ্গের পূজা এবং বাণেশ্বর শিবের পূজার উভয় ক্ষেত্রেই স্নান মন্ত্র কিন্ত এক।

প্রধান পূজা :

ভোলা মহেশ্বরকে স্নান করারনোর পর আরেকবার ধ্যানমন্ত্রটি পাঠ করে শিবের ধ্যান করবেন। তারপর মনে মনে শিব পূজার উপচারগুলি শিবকে উৎসর্গ করে মনে মনে মানসপূজা করবেন। মনে মনে মানসপূজা করার পর একে একে শিব পূজার উপচারগুলি বাহ্যিকভাবে ভগবান শিবকে সমর্পণ করবেন।

সাধারণ শিবলিঙ্গে দশোপচার পূজার মন্ত্র

‘ওঁ নমো শিবায় এতৎ পাদ্যং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় এষঃ অর্ঘ্যঃ শিবায় নমঃ। (আতপচাল ও দূর্বা সহ চন্দন লাগিয়ে বেলপাতা ফুল সহ দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদমাচমনীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং স্নানীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় এষ গন্ধঃ শিবায় নমঃ। (চন্দনের ফোঁটা দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং সচন্দনপুষ্পং শিবায় নমঃ। (একটি চন্দনমাখানো ফুল দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং শিবায় নমঃ। (একটি চন্দনমাখানো বেলপাতা দিন)

ওঁ নমো শিবায় এষ ধূপঃ শিবায় নমঃ। (ধূপটি শিবের সামনে তিনবার ঘুরিয়ে শিব লিঙ্গের বামদিকে ধূপদানিতে গুঁজে দিন)

ওঁ নমো শিবায় এষ দীপঃ শিবায় নমঃ। (প্রদীপটি শিবের সামনে তিনবার ঘুরিয়ে দেবতার বাঁদিকে রাখুন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং শিবায় নিবেদয়ামি। (নৈবেদ্যের উপর অল্প সামান্যার্ঘ্য জল ছিটিয়ে দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং পানার্থোদকং শিবায় নমঃ। (পানীয় জলের উপর অল্প সামান্যার্ঘ্য জল ছিটিয়ে দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং পুনরাচমনীয়ং শিবায় নমঃ। (সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন)

ওঁ নমো শিবায় ইদং তাম্বুলং শিবায় নমঃ। (একটি পান দিন, পান পাতা না থাকলে সামান্যার্ঘ্য জল একটু দিন।)

ওঁ নমো শিবায় ইদং মাল্যং শিবায় নমঃ। (মালা থাকলে ভগবান শিবের গলায় একটি মালাটি পরিয়ে দিন)’

বাণেশ্বর শিবলিঙ্গে দশোপচার পূজার মন্ত্র

বিঃ দ্রঃ- সাধারণ শিব লিঙ্গ এবং বানেশ্বর শিবের পূজার উপচার দেওয়ার নিয়ম সাধারণ শিবলিঙ্গে পূজার মতই একইরকম।

‘ওঁম এতৎ পাদ্যং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম এষঃ অর্ঘ্যঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদমাচমনীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদং স্নানীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।

ওঁম এষ গন্ধঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদং সচন্দনপুষ্পং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদং সচন্দনবিল্বপত্রং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম এষ ধূপঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম এষ দীপঃ বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদং সোপকরণনৈবেদ্যং বাণেশ্বরশিবায় নিবেদয়ামি।
ওঁম ইদং পানার্থোদকং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদং পুনরাচমনীয়ং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদং তাম্বুলং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।
ওঁম ইদং মাল্যং বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।’

পুষ্পাঞ্জলি :

ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে পুষ্পাঞ্জলী দেওয়ার জন্যে সচন্দন পুষ্প ও বেলপাতা নিয়ে শিবের পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রটি উচ্চারণ করে একে একে, তিন বার অঞ্জলি দেবেন।

সাধারণ শিবের পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র –

‘ওঁ নমো শিবায় এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি নমো শিবায় নমঃ।’

বাণেশ্বর শিবের পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র –

‘ওঁম এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলি বাণেশ্বরশিবায় নমঃ।’

গৌরীপূজা :

শিবের পুষ্পাঞ্জলী হয়ে যাওয়ার পর মাতা গৌরীর পূজা বা শিবলিঙ্গের গৌরীপিঠের পূজা করতে হবে। গৌরী পূজার মন্ত্র হল-

‘ওঁ হ্রীঁ এতে গন্ধপুষ্পে গৌর্যৈ নমঃ।’

অষ্টমূর্তি পূজা :

যে সমস্ত ভক্তবৃন্দের বাড়িতে বানেশ্বর শিব আছে, সেই সমস্ত ভক্তদের অষ্টমূর্তির পূজা করার দরকার হয় না। কিন্ত অন্যান্য ক্ষেত্রে শিবের বা শিব লিঙ্গের পূজা করতে গেলে ফুল দিয়ে অষ্টমূর্তির পূজা করতে হয়।

অষ্টমূর্তির পূজা মন্ত্র

‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে অষ্টমূর্তিভ্যো নমঃ।’

জপ ও জপসমর্পণ :

অষ্টমূর্তির পূজা মন্ত্র উচ্চারণের পর ১০৮ বার ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ মন্ত্র উচ্চারণ করুন কিংবা নিজে নিজের গুরুর দীক্ষামন্ত্র ১০৮ বার জপ করে, এই মন্ত্রে এক গণ্ডুষ জল শিবের নিচের দিকের ডান হাতের উদ্দেশ্যে প্রদান করুন।

‘ওঁ গুহ্যাতিগুহ্যগোপ্তা ত্বং গৃহাণাস্মৎকৃতং জপম্।
সিদ্ধির্ভবতু মে দেব ত্বৎপ্রসাদান্মহেশ্বর।।’

প্রণাম :
শিব পূজার সর্বশেষ পদ্ধতি হল ভগবান শিবের প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণ করে ভগবান শিবকে সাষ্টাঙ্গে শিবকে প্রণাম করা। শিবকে প্রণাম করার পরেই শিব পূজার পক্রিয়া সমাপ্ত ও সম্পন্ন হয়।

সাধারণ শিবলিঙ্গের ও শিব পূজার ক্ষেত্রে প্রণাম মন্ত্র হল-

‘ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।’

বাণেশ্বর শিবের ক্ষেত্রে শিবের প্রণাম মন্ত্র হল-

‘ওঁ বাণেশ্বরং নরকার্ণবতারণায়
জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায়।
কর্পূরকুন্দধবলেন্দুজটাধরায়
দারিদ্র্যদুঃখদহনায় নমঃ শিবায়।।’

ভোগসর্বস্ব শৃংখলাহীন জীবনে মানুষ জড়তা ও অজ্ঞানতার বসে আজ ক্লান্ত। দিন প্রতিদিন আধুনিক যুব সমাজ ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতা থেকে সরে গিয়ে নিজেকে জড় পৃথিবীর মোহো মায়ায় জড়িয়ে ফেলছে।

কিন্ত পৃথিবীর জড়তায় মানুষের মনে ক্ষনিকের সুখ, শান্তি ও ঐশ্বর্য এনে দিলেও তা কিন্তু চিরস্থায়ী নয়। মানুষের মনের শান্তি কিন্ত আধ্যাত্মিকতায়।

শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় (shivratri keno palon kora hoy)

মহা শিবরাত্রির মাহাত্ম্য় বা শিব রাত্রির গুরুত্ব (শিব রাত্রি কেন পালন করা হয়)

ফাল্গুনকৃষ্ণচতুর্দশ্যামাদিদেবো মহানিশি।

শিবলিঙ্গতয়োদ্ভূতঃ কোটিসূর্যসমপ্রভ।।

ঈশান সংহিতা অনুযায়ী এই স্তোত্র দুটির অর্থ হল কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে জ্যোতির্লিঙ্গ স্বরূপ ভগবান শিব, শিব চতুর্দশীতে মহা শিবরাত্রির দিন অবিভুত হন।

শিবরাত্রির ব্রত স্ত্রী পুরুষ, শিশু ও কন্যা যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি করতে পারেন। শাস্ত্রমতে শিব রাত্রির ব্রত পালন না করলে মনুষ্য পাপের অধিকারী হয়। সাধারণভাবে দেখতে গেলে হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন ব্রত করার নিয়ম আছে,

কিন্তু তার মধ্যে মহা শিবরাত্রির ব্রতকে “ব্রতরাজ” বলা হয়। মহা শিবরাত্রির ব্রত করলে মানুষ যমলোক থেকে রেহাই পেয়ে তার স্থান শিবলোকে হয়। শাস্ত্রে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি যদি মহা শিবরাত্রির ব্রত রেখে যদি

রাত্রি জাগরণ করেন তাহলে তার সকল পাপ ধুয়ে যায় এবং সেই ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করে। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিব রুপী সূর্যের সঙ্গে আমাদের জীবন রুপী চন্দ্রের মিলন ঘটে।

অথাৎ শিবরাত্রির ব্রত করলে ভগবানের সঙ্গে ভক্তের সম্পর্ক অনেক নিকটস্থ হয়। মহা শিবরাত্রির মধ্যে দিয়ে মানুষ ক্রোধ,কাম,মোহ, মায়া ত্যাগ করে ভগবানের সন্নিকটস্থ এসে ,

জ্বরা বিকার থেকে মুক্তি পেয়ে পরম সুখ শান্তি ও ঐশ্বর্যের মধ্যে দিয়ে পরমাত্মার সঙ্গে আত্মার মিলন হওয়ার সুযোগ পায়। পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী শিব চতুর্দশীর দিনে অগ্নি শিবলিঙ্গ হিসাবে মহাদেব স্বয়ং প্রকট হয়েছিলেন।

এই শিব লিঙ্গের কোনো আদি ও অন্ত ছিলনা। মনে করা হয় শিব লিঙ্গের উপরের অংশ খোঁজার জন্যে ব্রহ্মা হংসের রূপ ধারণ করেন কিন্ত ব্রহ্মা সেই শিব লিঙ্গের কোনো অন্ত খুঁজে পায় না।

অপরদিকে ভগবান বিষ্ণু শিব লিঙ্গের ভীত খোঁজার জন্যে বরাহের অবতার নেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়না, ব্রহ্মা ও বিষ্ণু দুজনেই শিবলিঙ্গের আদি ও অন্ত খুঁজতে বিফল হয়।

শিব লিঙ্গ নিয়ে মহা শিবরাত্রির আর একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। মনে করা হয় এই মহা শিবরাত্রির দিনই ৬৪ টি স্থানে শিব লিঙ্গ প্রকাশ পেয়েছিল। এই সমস্ত শিব লিঙ্গের মধ্যে ১২ টি জ্যোতিলিঙ্গের নাম জানা গেছে।

আরও একটি অবিস্বানীয় ব্যাপার কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারী পর্যন্ত কল্পনিকভাবে সরল রেখায় দেখলে দেখতে পাওয়া যায় ১২ টি জ্যোতিলিঙ্গ এক সোজা ও সরল রেখায় অবস্থান করছে। এই ১২ খানা অনন্ত জ্যোতিলিঙ্গ হল-

  1. সোমনাথ (Somnath) – Gir Somnath In Gujarat
  2. নাগেশ্বর (Nageshwar) – Daarukavanam In Gujarat
  3. ভীমাশঙ্কর (Bhimashankar) – Pune In Maharashtra
  4. ত্রিম্বাকেশ্বর (Trimbakeshwar) – Nashik In Maharashtra
  5. গ্রীষ্নেশ্বর (Grishneshwar) – Aurangabad In Maharashtra
  6. বদ্দিনাথ (Vaidyanath) – Deoghar In Jharkhand
  7. মহাকালেশ্বর (Mahakaleshwar) – Ujjain In Madhya Pradesh
  8. ওমকারেশ্বর (Omkareshwar) – Khandwa In Madhya Pradesh
  9. কাশী বিশ্বনাথ (Kashi Vishwanath) – Varanasi In Uttar Pradesh
  10. কেদারনাথ (Kedarnath) – Kedarnath In Uttarakhand
  11. রামেশ্বরম (Rameshwaram) – Rameswaram Island In Tamil Nadu
  12. মালিকার্জুনা (Mallikarjuna) – Srisailam In Andhra Pradesh

(আরো পড়ুন : করবা চৌথ কি ? করবা চৌথ কেন পালন করা হয় )

শিবরাত্রি কবে ২০২৩ (Shivratri Kobe 2023)

২০২৩ সালের মহা শিবরাত্রি হল ১৮ ই ফেব্রুয়ারী শনিবার। মহা শিবরাত্রি পালনের সময় হল শনিবার সকাল ০৬ টা বেজে ৫৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ড হতে ১৯ শে ফেব্রুয়ারী রবিবার বিকেল ০৩ টা বেজে ২৫ মিনিট ২৮ সেকেন্ড পর্যন্ত।

প্রশ্ন- শিবরাত্রি কবে ২০২৩

উঃ- ২০২৩ সালের শিবরাত্রি হল ১৮ ই ফেব্রুয়ারি শনিবার।

পরিশিষ্ট

ওম নমঃ শিবায়। শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা মহা শিবরাত্রি পূজা পদ্ধতি, মহা শিবরাত্রি কি, মেয়েরা শিবরাত্রি কেন পালন করে, শিব রাত্রির মাহাত্ম্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদের শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় ? আর্টিকেলটি যদি ভালোলাগে তাহলে অবশ্যই আপনার ভালোমন্দ মতামত আমাদের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করে জানাবেন এবং আপনার ভাই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

5/5 - (2 votes)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here