আজকের আর্টিকেলের লেখার মূল কেন্দ্র বিন্দু হল মা লক্ষীর পাঁচালী বাংলা (Maa Lokhir Pachali Bangla) ভাষায় আপনাদের সামনে তুলে ধরা। হিন্দু দেবী দেবতাদের মধ্যে মা লক্ষীকে ধন সম্পদের দেবী বলে মনে করা হয়।
তাই প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে ধন সম্পদের দেবী হিসাবে লক্ষী পূজার শেষে, মা লক্ষীর পাঁচালী পাঠ করা হয়। আজও গ্রামাঞ্চলে গৃহস্থ বাড়ির বউরা বৃহস্পতি বারের দিন লক্ষী পূজার ঘট ভরে লক্ষীর পাঁচালী ও ব্রত কথা পাঠ করে থাকেন।
আগেকার দিনে যখন ছাপাখানা ছিল না তখনকার দিনে শ্রুতি লিখন ছিল লক্ষী পূজার পাঁচালী মনে রাখার একমাত্র অবলম্বন। সেকালে লক্ষীর পাঁচালীর লেখার কোনো বালাই ছিলনা।
শুনে শুনে মা ও শাশুড়ি মায়েদের কাছ থেকে নতুন বৌমার লক্ষী পূজার পাঁচালী মুখস্থ করে রাখত, আর এইভাবেই চলত লক্ষী পূজা শেষে লক্ষীর পাঁচালী পাঠের পক্রিয়া যা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে হস্তরান্তর হত।
তাছাড়া হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস আছে বৃহস্পতি বারের দিন লক্ষী পূজা করার সাথে মা লক্ষীর পাঁচালী পাঠ করলে পরিবারের মঙ্গল হয় এবং নানান ধরণের সমস্যা ও রোগ ব্যাধি,কলহ ঝগড়া দূর হয়ে পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এছাড়া সনাতনী হিন্দু ধর্মের মানুষজনের মধ্যে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষী পূজা করার প্রচলন আছে। হিন্দু সনাতনী ধর্মানুযায়ী কোজাগরী লক্ষী পূজার দিন সমুদ্র মন্থনের মাধ্যমে ধন দেবতার দেবী মা লক্ষী আবিভূত হয়েছিলেন।
তাই দুর্গাপূজার পরে কোজাগরী পূর্ণিমায় হিন্দু ধর্মের মানুষরা ধুম ধামের সঙ্গে কোজাগরী লক্ষী পূজা করে থাকেন। জানুন… কোজাগরী লক্ষী পূজা কেন পালন করা হয়।
এখন আমরা মা লক্ষীর পাঁচালী বাংলা আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্যে লক্ষীর পাঁচালী ছাড়াও লক্ষী পূজার বারমাসি পাঁচালী, লক্ষী পূজার pdf, লক্ষীর পাঁচালী ও ব্রত কথা তুলে ধরব।
শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র
ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার ভূষিতাম্,
রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।
শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর স্তব মন্ত্র
ওঁ ত্রৈলোক্য-পূজিতে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে,
যথা ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভব ময়ি স্থিরা।
ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতির্হরিপ্রিয়া,
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পৎপ্রদা শ্রী: পদ্মধারিণী।
দ্বাদশৈতানি নামানি লক্ষীং সম্পূজ্য য: পঠেৎ,
স্থিরা লক্ষীর্ভবেত্তস্য পুত্রদারাদিভি: সহ।
(অবশ্যই পড়ুন : মা লক্ষ্মীর আরতি বাংলা। )
শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী।
(আরো পড়ুন : দীপাবলী কেন পালন করা হয়)
মা লক্ষীর পাঁচালী বাংলা (Maa Lokkhir Panchali Bangla)
দোল পূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ ।
ধীরে ধীরে বইতেছে মলয় বাতাস ।।
বৈকুন্ঠেতে একাসনে লক্ষ্মী নারায়ন ।
করিতেছে কত কথা সুখে আলাপন ।।
সৃষ্টিতত্ত্ব, জ্ঞানতত্ত্ব কত কথা হয় ।
শুনিয়া পুলকিত হয় দেবীর হৃদয় ।।
অকস্মাৎ দেবর্ষি নারায়ন স্বরে ।
আসিলেন ভক্তি চিত্তে বৈকুন্ঠ নগরে ।।
প্রনাম করি দেবর্ষি বলেন বচন ।
মর্ত্যে দুর্ভিক্ষ মাগো কি ভীষন ।।
ঋষি বলে মা তুমি চঞ্চলা মন ।
সর্বদা ঘোরো ভবন হতে ভবন ।।
তাই মর্ত্যবাসী কষ্ট কত পায় ।
দেখি তাহা কেমনে মম প্রানে সয় ।।
অন্নাভাবে লোকে কত কষ্ট ভোগে ।
মরিতেছে অনাহারে কৃশকায় রোগে ।।
ধর্মাধর্ম লোকে সবে ত্যাগ করি দেয় ।
স্ত্রী কন্যা বিক্রি করে ক্ষুধার জ্বালায় ।।
দুর্ভিক্ষে হইলো শেষ মরে জীবগন ।
দয়া করে মাগো তুমি করো নিবারন ।।
এই দুর্দশা দেখি প্রানে নাহি সয় ।
করো নিবারন মাগো হইয়া সদয় ।।
নারদের বাক্য শুনি কহেন হরিপ্রিয়া ।
বিশ্বমাতা আমি দেবী বিষ্ণুজায়া ।।
যে যেমন করে সে তেমন পায় ।
সে দোষে কর্মফল, করে হায় হায় ।।
মহামায়ার স্বরূপে নারী সত্যবচন ।
মর্ত্যবাসী না মানে এই কথন ।।
সদাচার কুল শীল দিয়া বিসর্জন ।
ঘরের লক্ষ্মীকে করে সদা বর্জন ।।
এমন মনুষ্যজাতি মহাপাপ করে ।
কর্ম দোষে লক্ষ্মী ত্যাজে তাহারে ।।
নারীর পরম গতি স্বামী ভিন্ন কেবা ।
ভুলেও না করে নারী পতি পদসেবা ।।
যথায় স্বেচ্ছায় ঘুরিয়া বেড়ায় ।
গুরুজনে নানা কটুবাক্য শোনায় ।।
সর্বদা হিংসা করে না মানে আচার ।
হিংসাতে তার মজে সংসার ।।
ছড়া নাহি দেয়, প্রভাতকালে ।
লক্ষ্মী সে স্থান ছাড়িয়া চলে ।।
অতিথি যদি উপস্থিত হয় দ্বারে ।
দূর দূর করি তারায় তাহাড়ে ।।
যেবা গুরু-ব্রাহ্মণ দেখি ভক্তি নাহি করে।
মম নিবাস কভু নহে সেই ঘরে ।।
এঁয়োতির চিহ্ন সিঁদুর শাখা না দেয় ।
বাসী কাপড়ে যথা তথা বেড়ায় ।।
স্নান নিত্য নাহি করে যে মনুষ্য গণ ।
ত্যাজিয়া তাহারে, করি অন্যত্র গমন ।।
তিথি ভেদে যেবা নিষিদ্ধ দ্রব্য খায় ।
হই না কভু তার ওপর সহায় ।।
যে মনুষ্য ভক্তিভাবে একদশী না করে ।
কদাপি নাহি থাকি তাহার ঘরে ।।
উচ্চহাসি হাসিয়া যে নারী ঘোরে ।
গুরুজন দেখি ঘোমটা না টানে ।।
বয়োজ্যেষ্ঠ দেখি যারা প্রনাম না করে ।
সন্ধ্যাকালে ধূপ দীপ নাহি দেয় ঘরে ।।
ঠাকুর দেবতা আদি কভু না পূজে ।
সাধু সন্ন্যাসী দেখি হাসাহাসি করে ।।
এমন নারী যে গৃহেতে বসতি রয় ।
লক্ষ্মী ত্যাজে তাহাকে জানিবে নিশ্চয় ।।
এত বলি লক্ষ্মী দেবী বলেন মুনিকে ।
কর্মদোষে মনুষ্য নিজ ফল ভোগে ।।
ঋষি বলে মাগো তুমি জগতজননী ।
সন্তান কে করো ক্ষমা হে সনাতনী ।।
দূর করি দাও মা ভীষন মহামার ।
বর দিয়ে জীবেরে করহ নিস্তার ।।
এই বলি বিদায় হইলেন মহামুনি ।
চিন্তিত হইয়া কহেন নারায়নী ।।
কহ কহ কৃপাময় প্রভু নারায়ন ।
কিরূপে নিস্কৃতি পাইবে জীবগণ ।।
লক্ষ্মীদেবীর কথা শুনি কহেন জনার্দন ।
শুন দেবী মন দিয়া আমার বচন ।।
তুমি যে পরমা প্রকৃতি দেবী ভগবতী ।
তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাসৃষ্টি ।।
যে জন গুরুবারে লক্ষ্মী ব্রত করে ।
সুখে জীবন কাটাইবে তোমার বরে ।।
লক্ষ্মী কভু নাহি ছাড়িবে তাহারে ।
জীবনান্তে আসিবে সে বৈকুন্ঠ নগরে ।।
মর্ত্যে গিয়া কর এই ব্রত প্রচার ।
তোমার কৃপায় দূর হইবে অনাচার ।।
গমন করেন দেবী শুনি হরির কথা ।
পেঁচকে মর্ত্যে আইলেন জগতমাতা ।।
অবন্তী নামক নগরী পাশে এক বন ।
তথা আসি মা কমলা উপস্থিত হন ।।
হেথায় ছিল ব্যবসায়ী ধনেশ্বর রায় ।
অগাধ ধন, চৌদ্দ কূল বসি খায় ।।
পত্নী সুমতি ছিল সাত কুমার ।
সংসার ছিল তার লক্ষ্মীর ভান্ডার ।।
যথাকালে ধনেশ্বর করিল গমন ।
বিধবা হইলো পত্নী- ভাগ্যের লিখন ।।
সর্বদা কলহ করে সপ্ত বধূ গণ ।
মারমার কাটকাট হইত সর্বক্ষণ ।।
সংসার রচিল যে যার মতো যার ।
সুখের পরিবার হইল ছারখার ।।
এই দুঃখে ধনেশ্বর পত্নী ভীষন শোকে ।
বনে গমন করিল জীবন ত্যাজিতে ।।
সেই বনে বৃদ্ধা বসি করে হায় হায় ।
এই বুঝি লেখা ছিল বিধাতার খাতায় ।।
এই দেখি হরিপ্রিয়া বৃদ্ধা রূপ ধরে ।
ছদ্দবেশে দেখা দিলেন ধনেশ্বর ভার্যারে ।।
দেবী কহেন কে তুমি দাহ পরিচয় ।
কোথা হতে আসিলে বলোহ আমায় ।।
স্থান বড় ভয়ানক নির্জন বন ।
হেথা হোথা নানা জন্তু করে বিচরণ ।
বুড়ি বলে মাগো পোড়া কপাল আমার ।
ভয় আমি করি না আর মরিবার ।।
এত বলি বৃদ্ধা সব কথা কন ।
শুনিয়া দুঃখিত হইলো কমলার মন ।।
বৃদ্ধা প্রতি বিষ্ণুপ্রিয়া কহেন বচন ।
আত্মহত্যা মহাপাপ শাস্ত্রের লিখন ।।
যাও তুমি গৃহে ফিরি করো লক্ষ্মী ব্রত ।
অবশ্যই আসিবে সুখ পূর্বের মতো ।।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এঁয়োগন ।
ব্রতের সকল কিছু করিবে আয়োজন ।।
আসন পাতি তাহে লক্ষ্মী মূর্তি বসাইবে ।
আম্র পল্লব, গোটা ফলে ঘট সাজিবে ।।
বিবিধ পুস্প, বিল্বপত্র নৈবদ্য সকল ।
দিবে কলা, শর্করা আতপ তণ্ডুল ।।
একটি করে মুদ্রা রাখিবে লক্ষ্মী ঘটে ।
একমুষ্টি তণ্ডুল জমাইবে লক্ষ্মী ভাঁড়ে ।।
আম্র পল্লবে করিবে সিঁদুর তৈলে গোলা।
চাল বাটি লক্ষ্মী সম্মুখে দিবে আলিপনা ।।
ধূপ দীপ জালি সম্মুখে রাখিবে ।
আসন পাতি লক্ষ্মী পূজায় বসিবে ।।
একমনে পূজা দিবে লক্ষ্মী নারায়ন ।
পূজাশেষে ব্রত কথা করিবে পাঠন ।।
না করিয়ো পূজায় ঘণ্টা বাদন ।
পূজান্তে উলু দিবে মিলি এঁয়োগন ।।
এই ভাবে যেই জন লক্ষ্মী ব্রত করে ।
কোন দুঃখ তার আর নাহি রহিবে ।।
শুনিয়া বৃদ্ধা কহিল আনন্দিত মনে ।
কে মা তুমি কহো পরিচয় দানে ।।
এই শুনি লক্ষ্মী দেবী স্ব মূর্তি ধরে ।
ভক্তি চিত্তে বৃদ্ধা কাঁদে ভূমি ওপর পড়ে ।।
লক্ষ্মী বলে যাহ তুমি নিজের ভবন ।
গুরুবারে আমাকে পূজিবে নিয়ম মতোন ।।
এত বলি বিদায় লইল সাগর নন্দিনী ।।
ঘরে ফিরি আসিল ধনেশ্বর পত্নী ।।
বধূ গনে কহিল লক্ষ্মীর ব্রতের কথন ।
গুরুবারে লক্ষ্মী ভজে সপ্ত বধূ গণ ।।
ধীরে ধীরে হইল সুখের ভবন ।
যেমন আছিল ঘর পূর্বের মতোন ।।
সপ্ত ভাই মিলে মিশে কলহ বিসর্জন।
সংসার হইল যেন স্বর্গের দেব ভবন।।
এই দেখি এক রমণী পূজা মানত করে ।
স্বামী চিররোগী, উপার্জন হীন সংসারে ।।
ভক্তি ভরে সেই নারী লক্ষ্মী দেবী ভজে ।
হরিপ্রিয়ার কৃপায় তাহার দুঃখ সকল ঘোচে ।।
রোগ ছাড়ি তার স্বামী সুস্থ হইল।
এই ভাবে সকল দুঃখ তার ঘুচিল ।।
আনন্দে দিনে জন্মিল তাঁহাদের সুন্দর নন্দন ।
লক্ষ্মীর কৃপায় তার বাড়িল ধন জন ।।
এই ভাবে লক্ষ্মী ব্রত ছড়ায় দেশ দেশান্তরে ।
সকলে শুনি লক্ষ্মী দেবীর পূজা করে ।।
লক্ষ্মী কৃপায় সকলের দুঃখ চলি যায় ।
কমলার কৃপা সকলের ওপর বর্ষায় ।।
একদিন লক্ষ্মী পূজা করে বামাগন ।
আসিল এক বনিক তাঁহাদের সদন ।।
বনিক কহে কোন দেবী কি পরিচয় ।
করিলে পূজা দেবীর, কি ফল হয় ।।
বামারা বলে ইনি লক্ষ্মী দেবী জগত জননী ।
লক্ষ্মী কৃপায় সুখে রহে ব্রতিনী ।।
গুরুবারে যে জন লক্ষ্মী পূজা করে ।
অবশ্যই থাকিবে সুখে কমলার বরে ।।
এই বাক্য শুনে হাসে বনিক মহাশয় ।
মানিনা এই সত্য তব কথায় ।।
কপালে যদি না থাকে ধনের লিখন ।
কিরূপে দিবে লক্ষ্মী বর- ধন- জন ।।
শুধু শুধু লক্ষ্মী পূজা করি কি হয় ।
বৃথা কাটাইতেছো কমলা পূজায় ।।
গর্বে ভরা বাক্য লক্ষ্মী সইতে নারে ।
ধীরে ধীরে মা কমলা ছাড়িল তাহারে ।।
ঝড় উঠি তার নৌকা জলে ডোবে ।
ধন জন আদি গেলো নানা রোগে ভোগে ।।
মড়কে রোগে তার গৃহ হইল ছারখার ।
ভিখারী হইয়া বনিক ঘোরে দ্বারে দ্বার ।।
এককালে সে থাকিত রাজার হালে ।
আজ সে ভিখারী, পথে কষ্টে চলে ।।
এই ভাবে বহু দেশ ঘোরে সদাগর ।
একদিন আইলো সে অবন্তী নগর ।।
সেই স্থানে ব্রত করে যতেক বামাগনে ।
বসি তারা মন দেয় লক্ষ্মীর ভজনে ।।
এই দেখি পূর্ব কথা হইলো স্মরণ ।
এই স্থানে দেবীরে করিছে অবমানন ।।
সেই পাপে সব ধ্বংস হইলো তার ।
ভূমিতে লোটাইয়ে সদাগর কান্দে বারবার ।।
এই স্থানে করেছি মাগো বহু অহঙ্কার ।
সেই পাপে সব কিছু হইলো ছারখার ।।
ধন গর্বে মত্ত হয়ে করিনু অবহেলা ।
সেই অপরাধে মা তুমি মোরে ত্যাজিলা ।।
ক্ষুধার জ্বালায় মাগো ঘুরি দেশ দেশান্তরে ।
ধন- জন- আত্মীয় গেলা আমাকে ছেড়ে ।।
তুমি মাতা দয়াময়ী বিষ্ণু বক্ষ বিলাসিনী ।
তুমি মাতা ভগবতী জগত পালিনী ।।
তুমি যারে রক্ষা করো কিসের তার ভয় ।
তুমি যারে ত্যাজি যাও, সে সব হারায় ।।
তুমি যারে কৃপা কর, সেই ধন্য হয় ।
তোমার আশিসে মাগো সর্ব সিদ্ধি হয় ।।
এই ভাবে সদাগর লক্ষ্মী স্তব করে ।
কমলার কৃপা দৃষ্টি বনিকের উপর পড়ে ।।
লক্ষ্মীর কৃপায় বনিক সব ফিরি পায় ।
গৃহে ফিরি মন দেয় লক্ষ্মীর পূজায় ।।
লক্ষ্মীর কৃপায় তাহার ধন জন বাড়ে ।
এই ভাবে ব্রত প্রচার হয় দেশ দেশান্তরে ।
এই ভাবে সকলে লক্ষ্মী পূজা করে ।
ধনে জনে বাড়িল কমলার বরে ।।
খাদ্য ধন জন বাড়িল লক্ষ্মীর কৃপায় ।
হরি হরি বল তুলিয়া হস্ত দ্বয় ।।
যেই জন ভক্তি ভরি লক্ষ্মী পূজিবে ।
অবশ্যই তাহার দুঃখ সকল ঘুচিবে ।।
যে পড়ে ব্রত কথা, আর যেবা করে শ্রবন ।
অবশ্যই পাইবে সে মা লক্ষ্মীর চরণ ।।
ব্রত কথা শুনিবে অবশ্যই ভক্তি মনে ।
লক্ষ্মীর কৃপায় বাড়িবে ধনে জনে ।।
জয় জয় ব্রহ্মময়ী, মা নারায়নী ।
তোমার কৃপায় শেষ করিনু গ্রন্থ খানি।
(আরো পড়ুন : ছট পূজা কেন করা হয়।)
লক্ষী পূজার বারোমাসি পাঁচালী (Lokkhi Pujar Baromasi Pachali)
এতক্ষন আমরা উপরের পংতিতে মা লক্ষীর পাঁচালী বাংলাতে তুলে ধরলাম, এই স্তবকে আমরা লক্ষী পূজার বারোমাসি পাঁচালী পরিবেশন করব। আশা করি মা লক্ষীর ভক্তদের কাছে মা লক্ষীর বারোমাসি পাঁচালী ফলপ্রদ হবে।
বছরে বৈশাখ মাস প্রথম যে হয়।
পূজা নিতে এস গো মা আমার আলয়ে।।
জৈষ্ঠ্য মাসে ষষ্ঠী পূজা হয় ঘরে ঘরে।
কৃপা করি এস ওমা পূজা যে বা করে।।
আষাঢ়ে আসিতে মাগো নাহি কর দেরী।
পূজা হেতু রাখি মোরা ধান্য-দূর্বা ধরি।।
শ্রাবণের ধারা দেখ চারিধারে পড়ে।
পূজিবারে শ্রীচরণ ভেবেছি অন্তরে।।
ভাদরের ভরা নদী কূল বয়ে যায়।
কৃপা করে এস গো মা যত শীঘ্র হয়।।
আশ্বিনে অম্বিকা সাথে পূজা আয়োজন।
কোজাগরী রাতে পুনঃ করিব পূজন।।
কার্তিকে কেতকী ফুল চারিধারে ফোটে।
বসো এসে মাগো মোর পাতা এ ঘটে।।
অঘ্রাণে আমন ধান্যে মাঠ গেছে ভরে।
লক্ষ্মীপূজা করি মোরা অতি যত্ন করে।।
পৌষ পার্বণে মা গো যে মনের সাধেতে।
প্রতি ঘরে লক্ষ্মী পূজি নবান্ন দানেতে।।
মাঘমাসে মহালক্ষ্মী মহলে রহিবে।
নতুন ধান্য দিয়া পূজা করি মোরা সবে।।
ফাল্গুনে ফাগের খেলা চারিধারে হয়।
এস গো মা বিষ্ণুজায়া পূজিব তোমায়।।
চৈত্রেতে চাতকসম চাহি তব পানে।
এস ওমা পদ্মালয়া অধিনী ভবনে।।
লক্ষ্মীদেবী বারমাসি হৈল সমাপন।
দীন ভক্তজন দুঃখ কর নিবারণ।।
কাতরে ডাকিছে যত ভক্ত সন্তান।
ভক্তজন মাতা হয়ে করহ কল্যাণ।
(আরো পড়ুন : হনুমান চালিশা বাংলা)
লক্ষীর পাঁচালী pdf
লক্ষীর পাঁচালী ও ব্রত কথা (লক্ষীর পাঁচালী pdf) পড়ার আগে মা লক্ষীর ধ্যান মন্ত্র উচ্চারণ করা উচিত আমরা এতক্ষন লক্ষীর ধ্যান মন্ত্র ,লক্ষীর পাঁচালী ও ব্রত কথা ও লক্ষী পূজার বারোসমাসি পাঁচালী আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরলাম।
আপনারা যদি কেউ মা লক্ষীর পাঁচালী pdf ডাউনলোড করতে চান তাহলে নিচের লিংকে ক্লিক করে মা লক্ষীর পাঁচালী pdf ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

পরিশিষ্ট
আমরা আজকের আর্টিকেলে মা লক্ষীর ভক্তদের জন্যে লক্ষীর পাঁচালী ও ব্রতকথা, লক্ষী পূজার বারোমাসি পাঁচালী এবং মা লক্ষীর পাঁচালী বাংলা ভাষায়, আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
মা লক্ষীর ভক্ত হিসাবে মা লক্ষীর কাছে আমাদের প্রার্থনা মা লক্ষী যেন তার সকল ভক্তদের উপর কৃপা দৃষ্টি দিয়ে সবার অভাব অনটন দূর করুক।
মা লক্ষী আমাদের শস্য শ্যামলা বসুন্ধরাকে সবুজে ভরিয়ে তুলুক। মা লক্ষীর আশীর্বাদে এই সকলের অভাব অনটন দূর হয়ে আমাদের পৃথিবী ধনধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক এই কামনা করি।