জানুন 25 December বড়দিনের উৎসব কেন পালন করা হয়।

আজকে আমরা জানব ২৫ ডিসেম্বর,বড়দিনের উৎসব কেন পালন করা হয়। খ্রিস্টানদের কাছে,বড়দিনের গুরুত্ব কতখানি। বড়দিনকে মেরি ক্রিসমাস ডে,বলা হয় কেন ?

বন্ধুরা,এখন বড়দিন শুধু,খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বড়দিনের উৎসব কে আমরা,খ্রিস্টানদের পাশাপাশি,

অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষরা,সমাদরে পালন করে থাকি। বড়দিন নাম টা শুনেই,আমাদের মনে দাড়ি ওয়ালা,একটা লোকের ছবি ভেসে ওঠে।

যাকে বাদ দিয়ে বড়দিনের উৎসব হয়ে যায় বৃথা। তিনি হলেন কচিকাচাদের প্রিয় সান্তাক্লজ। ছোটদের কাছে বড়দিন কেন পালন করা হয় ?

এই প্রশ্ন মানেই তাদের প্রিয় সান্তাক্লজ। এতো ছিল কচিকাচাদের কথা। এবারে সত্যি সত্যিই,আমরা বড়োরা একটু জেনে নিই।

২৫ ডিসেম্বর,বড়দিনের উৎসব কেন পালন করা হয়। বড়দিন,পালনের অতীত ইতিহাস। বড়দিন কি,শুধু বড়দিন। বড়দিনকে,মেরি ক্রিসমাস ডে বলা হয় কেন।

আরো পড়ুন : ২০২১ এর সেরা ঈদের শুভেচ্ছা কবিতা স্ট্যাটাস এস এম এস বাংলা। 

বড়দিনের উৎসব


আজকে আমরা এখানে,বড়দিনের উৎসব এবং বড়দিন কেন পালন করা হয়। পর্যালোচনা করতে গিয়ে যে সমস্ত বিষয় গুলির ব্যাপারে জানব। সেগুলি হল –

  • বড়দিন কী  ?
  • ২৫ সে ডিসেম্বর বড়দিন কেন পালন করা হয় ?
  • বড়দিন কে মেরি ক্রিসমাস ডে বলা হয় কেন ?
  • ক্রিসমাস ট্রি / বড়দিনের উদ্ভিদ কী ?
  • বড়দিনের কেক।
  • সান্তাক্লজের গল্প ও বড়দিনের উপহার।
  • বড়দিনের শুভেচ্ছা বাত্রা।
  • ভালো লাগা বড়দিনের গান।

বড়দিন কী ?


বড়দিন হল,খ্রিস্টান ধর্মের মানুষদের একটি বড়ো উৎসব। ২৫ ডিসেম্বর,দিনটিকে খ্রিস্টান ধর্মের মানুষেরা যীশুর জন্মদিন হিসাবে পালন করে থাকে।

কিন্তু বাইবেলে,নির্দিষ্ট করে যীশুর জন্মদিনের কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাই যীশুর জন্মদিবস/ জন্ম তারিখ নিয়ে সংশয় আছে।

পরে ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে,পোপ ১ম জুলিয়াসের নির্দেশানুসারে। খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন গুলি,২৫ শে ডিসেম্বর দিনটিকে। প্রতীকীভাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে যীশুর,জন্মদিন হিসাবে পালন করা শুরু করে।

২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিনের উৎসব কেন পালন করা হয়


বড়দিনের উৎসব কেন পালন করা হয়,এর উত্তর খুঁজে দেখলে দেখতে পাওয়া যায় যে,আজ থেকে অনেক বছর আগে,চতুর্থ শতাব্দীতে প্রথম বড়দিন পালন করা শুরু হয় ।

রোমের অন্যান্য ধর্মের লোকেরা ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটাকে,সূর্যের জন্মদিন হিসেবে পালন করত । পরে এই দিনটাকে,অন্যান্য ধর্মের মানুষ দিকে, ডিসেম্বর দিনটাকে। যীশুর জন্মদিন হিসাবে,পালন করা শুরু করে ।

২৫ শে ডিসেম্বর কেন পালন করা হয়

 

ডিসেম্বর মাসে,দক্ষিণ গোলার্ধে খুব জোড় শীত পড়ত। এই শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য,সেকালের লোকেরা র্সূর্যের কিরণ চেয়ে সূর্যের কাছে প্রার্থনা করত।

খ্রিষ্টান ধর্মানুসারে,রোমের বেথেলহোম শহরের এক ঘোড়ার আস্তাবলে। ঈশ্বরের পুত্র যীশু,মা মেরির গর্ভে,জন্ম গ্রহন করে। যীশুর অনুগামী লোকেরা খ্রিষ্টান ধর্ম অনুসরণ করে।

বড়দিন কে মেরি ক্রিসমাস ডে বলা হয় কেন


আমরা উপরের পয়েন্ট গুলো পড়ে,জানতে পারলাম বড়দিনের উৎসব কি ? এখন আমাদের প্রশ্ন হল বড়দিন কে,মেরি ক্রিসমাস ডে বলা হয় কেন।

তাহলে বলে রাখি,মেরি ক্রিসমাস ডে কথাটি এসছে। যীশুর মা মেরির নাম অনুসারে। ঈশ্বরের পুত্র যীশু,মা মেরির গর্ভে জন্ম নেয়। যীশু ছিলেন কুমারি মায়ের সন্তান।

যীশুর বাবা ছিল না। ঈশ্বর এবং মা মেরিরি ভালোবাসা স্বরুপ,যীশু ঈশ্বরের পুত্র স্বরুপ,ঈশ্বরের বড় পুত্র হিসাবে আমদের মাঝে আসে।

মেরি ক্রিসমাস শব্দটিকে,ভেঙে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়। মেরি অথাৎ যীশুর মা। ক্রিসমাস শব্দের অর্থ “শুভ হোক খ্রিস্টের মাস”। তাই বড়দিনের আর এক নাম মেরি ক্রিসমাস ডে। 

আরো পড়ুন : মিশর পিরামিডের রহস্য। 

ক্রিসমাস ট্রি / বড়দিনের উদ্ভিদ কী


ইউরোপের দেশগুলোতে,উৎসবের দিনে গাছ সাজানো,একটা চিরাচরিত প্রথা ছিল। তখনকার দিনে মানুষ উৎসব সামিল হলে,গাছকে সাজিয়ে তারা তাদের আনন্দ উপভোগ করত।

চেরী,ফার ছাড়াও অন্যান্য গম্বুজ আকৃতি গাছ গুলোকে তারা আলো,ঘন্টা ইত্যাদি দিয়ে সাজাতো। আর যারা গরীব মানুষ ছিলেন,

তারা কাঠের টুকরো জড়ো করে,তীরভূজের আকার দিয়ে সাজাতেন। আর এই ভাবে ধীরে,ধীরে,উদ্ভিদ সাজানোর প্রথা থেকে,বড়ো দিনে উদ্ভিদ সাজানোর প্রথার চল এসে যায়।

আজকে তাই,পাশ্চিম দেশ গুলো সহ ভারত বর্ষে,বড়দিনের উদ্ভিদ /ক্রিসমাস ট্রি হিসাবে ঝাউ গাছকে আলো দিয়ে সাজিয়ে,বড়দিন পালন করা হয়।

সান্তাক্লজের গল্প ও বড়দিনের উপহার 


সান্তাক্লজ নামের পিছনে,এক মহান উদার ব্যক্তির নাম জড়িয়ে আছে। চতুর্থ শতাব্দীতে,এশিয়া মাইনরের এক ধনী ও অতি দয়ালু ব্যক্তি ছিলেন,যার নাম ছিল সেন্ট নিকোলাস।

সেন্ট নিকোলাস নিজে,একজন অনাথ ছিলেন। বাবা মায়ের ভালোবাসা তিনি পাননি। খুব ছোট্ট বয়সে তিনি,তার বাবা ও মা কে হারান। তাই তিনি,অনাথ হওয়ার কষ্ট টা ভালো ভাবে বুঝতেন।

x masday 3 1

 

তাই উৎসবের আগে,যে সমস্ত শিশুরা অসহায়,সেই সমস্ত শিশুদের শনাক্ত করে,ঐ সমস্ত শিশুদের উদ্দেশ্যে চুপি,চুপি উপহার দিয়ে যেতেন।

সেন্ট নিকোলাস কে নিয়ে,একটি মজার কাহিনী আছে। একদিন নিকোলাস দেখতে পেলেন,তার শহরে। এক গরীব লোকের তিনটি মেয়ে আছে।

কিন্তু তার সামর্থ্য না থাকায়। ঐ অসহায় ব্যক্তিটি,তার মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছিলেন না। নিকোলাস তখন, চুপি,চুপি রাত্রি বেলা ঐ ব্যক্তির ছাদে গিয়ে পৌঁছলেন।

ইউরোপের দেশ গুলিতে,ঠান্ডা অধিক হওয়ায় ঘর গরম করার জন্য,ঘরে কাঠের চুল্লী ব্যবহার করত। আর সেই চুল্লীর চিমনি গিয়ে মিলত,ছাদের উপর।

নিকোলাস ছাদে উঠে লক্ষ করলেন,চিমনির উপর মোজা,শুকোনোর জন্য মেলা আছে। এরপর নিকোলাস,সেই মোজার মধ্যে,সোনার মোহর রেখে চলে গেলেন।

এর পর সকালে ঐ ব্যক্তি,মোজা তুলতে গিয়ে সোনার মোহর পেয়ে যায়। এবং তার মেয়েদের বিয়ে দেন। এই ভাবে নিকোলাস গরিব ব্যক্তিদের সাহায্য করতে থাকত।

উপহার দেওয়ার জন্য নিকোলাস,সবার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠতে থাকে। আর পাশাপাশি তখনকার দিনে,কচি কাচাদের,বড়দিনে উপহার দেওয়ার রেওয়াজ ছিল।

এইভাবে উপহারের রেওয়াজ,চলতে চলতে সেন্ট নিকোলাস হয়ে উঠল,ফাদার নিকোলাস। আর নিকোলাস ধীরে, ধীরে হয়ে উঠল,সেন্ট থেকে সান্তা এবং নিকোলাস হয়ে উঠল ক্লজ।

যে আজ আপনাদের,আমার সবার প্রিয় সান্তাক্লজ। আজকে আমরা যে সান্তাক্লজ কে জানি,সে বরফের দেশ থেকে আসেন।

যীশুর জন্মদিনে সান্তাক্লজ,আমাদের সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য,বড়দিনের আগের দিন রাতের বেলা। বল্গা হরিণে টানা,স্লেজ গাড়ী চড়ে আমাদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন।

তাই আজও বিশ্বাস অনুযায়ী খুদেরা,সান্তাক্লজ তাদের জন্য উপহার রেখে যাবে বলে ক্রিসমাস ডে এর আগের দিন। ছাদে মোজা শুকোতে দিয়ে রাখে।

বড়দিনের কেক


বড়দিনে উপহার দেওয়া নেওয়ার পাশাপাশি,সমানে চলে ভুরিভোজ। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের খুশীর উৎসব বড়দিন,উৎযাপিত হয় ১২ দিন ধরে। সাথে চলে মিষ্টি বিতরণ।

২৫ শে ডিসেম্বর থেকে শুরু করে,চলে ৫ ই জানুয়ারী পর্যন্ত। এই ১২ দিনে,নিত্য নতুন অনুষ্ঠানের সাথে,চলে সমানে ভুরিভোজ। ১২ দিনে ১২ রকমের পদ রান্না করা হয়।

বড়দিনের উৎসব

 

শীত প্রধান দেশে, ১২ রকমের মাছের পদের পাশাপাশি,বিভিন্ন ধরনের মাংস পরিবেশিত হয় পাতে। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে যেটা সকল সম্প্ৰদায়ের তালিকায় প্রধান।

সেটা হল, আপনার আমার সবার প্রিয় কেক। বড়দিন এলে এই কেকের মহিমা যেন,আরো কয়েক ধাপ উপরে উঠে যায়। পরিবেশিত হয় সকলের প্রিয় ব্যাঞ্জন হিসাবে,সেটা হল বড়দিনের কেক।

আরো পড়ুন : টাইটনিকের অজানা কিছু তথ্য। 

বড়দিনের গান


যীশুর জন্মদিন। আর গান পরিবেশন হবেনা, সেটা কী হয়। যীশুর জন্মদিনে বড়দিনের গান হিসাবে,যে সমস্ত গান গুলি পরিবেশিত হয় সেগুলি হল-

  1. এলোরে এলো আজ বড়দিন। 
  2. বড়দিন প্রভু যীশুর জন্মদিন । 
  3. যীশু রাজা শিশু হয়ে জন্ম নিল মেরির ঘরে । 
  4. ভববানীর পূর্ণতায় এলো বড়দিন। 
  5. আজ প্রভু এসেছেন আমাদের ক্ষুদ্র গোশালায়। 
  6. প্রসংশা করি তার নাম যে নাম আছে পরিত্রান। 
  7. বছর ঘুরে এলো বড়দিন ।
  8. একটি বছর পরে মানুষের ঘরে ঘরে আবার এসেছে বড়দিন।
  9. শীত মাঝে এল বড়দিন। 
  10. সময়ে চাকা ঘুরে একটি বছর পরে আবার বড়দিন। 

বড়দিনের শুভেচ্ছা বাত্রা


বড়দিনে প্রিয় জনদের সাথে শুভেচ্ছা বাত্রা পাঠানো বাঙালীর হাড়ে শীত লাগার ন্যায় সত্য। সে SMS হোক কিংবা গ্রিটিংস কার্ডের মাধ্যমে। শুভেচ্ছা বাত্রা পাঠানোর রেওয়াজ অতি প্রচলিত।

তাই বড়দিনের মেরি ক্রিসমাস ডে কিছু শুভেচ্ছা বাত্রা আপনাদের উদ্দশ্য করে শেয়ার করা হল –

“সুন্দর একটা মাসের নাম ডিসেম্বর।                                                                                           সব মুহূর্ত কাটুক তোমার অনাড়ম্বর।                                                                               বড়দিনের আনন্দে ধুয়ে যাক সব কষ্ট                                                                                            মধুর হোক তোমার প্রতিটি মুহূর্ত”।

 

“শত্রূ তোমার বন্ধু হোক ,                                                                                                   বন্ধু যে ,সে আরো কাছে আসুক                                                                                        বিপদে ধৈর্য্য ধরার শক্তি                                                                                                    যেন প্রভু তোমাকে দেয়,                                                                                                    সব বাধা পিছনে ফেলে                                                                                                     যেন সুন্দর জীবন গড়তে                                                                                                      পারো সেই প্রত্যাশা করি।”

 

“বিপদ তোমাকে এড়িয়ে যাক,                                                                                                 বিধাতা তোমায় রক্ষা করুক                                                                                                সর্গ তোমার অপেক্ষায় থাকুক,                                                                                    ভালোবাসা তোমায় ছুঁয়ে যাক                                                                                                   এই বড়দিন যেন সবাইকে খুশি দেয় । ”

 

“ক্রিসমাস ডে হলো এমন একটা যাদুর কাঠি                                                                                     যার পরশে শক্ত পাথর যায় গলে।                                                                                        তাই এস সবাই মিলে, হিংসা বিবাদ ভুলে                                                                                হ্যাপী মেরি ক্রিসমাস ডে।

পরিশিষ্ট


পরিশেষে এটাই বলব যে,বড়দিনের উৎসব কেন পালন করা হয়। এসব ভাবনার বাইরে বেড়িয়ে মানুষ বড়দিনকে,শুধু খ্রিস্টানদের উৎসব বলে পালন করেনা।

বড়দিন আজ শুধু,কোনো একটা ধর্মের উৎসব নয়। বড়দিন উৎসবটিকে আজকাল কার মানুষ,নিজেদের প্রাণের উৎসব হিসাবেই পালন করে।

তাইতো বাঙালী আজও কেক কাটে,বড়দিনের উৎসব পালনের পাশাপাশি। কচিকাচাদের সাথে মাঠে গিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো। গির্জাঘরে গিয়ে মোম বাতি জ্বালানো কোনো কিছুতেই বাদ পড়েনা।

বড়দিনে যীশু যেন,মানুষের মনে নতুন করে সম্প্রীতির বাত্রা বহন করে নিয়ে আসে। তাই আমরা যে যার ধর্ম পালন করিনা উৎসবটা সবাই পালন করি।

 

 

 

 

 

আমাদের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ০৫ ষ্টার রেটিং দিন।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here