হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই আছে,একটার শেষ হতে না হতেই আর একটি পার্বণ এসে যায়। একইভাবে পরপর বিশ্বকর্মা পূজা, মহালয়া, দুর্গাপূজার শেষ হতে না হতেই এসে যায় কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা।
এমনিতে হিন্দু গৃহস্থরা সারাবছর ধরেই প্রতি বৃহস্পতি বার মা লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন,তাহলে আলাদা করে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা কেন করা হয় ? আলাদা করে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথির লক্ষ্মী পূজাকে,
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা কেন বলা হয় ? এরকম একটা প্রশ্ন আমাদের মনে হতেই পারে। চলুন তবে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা কেন করা হয়,কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ব্রতকথা,কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা পদ্ধতি,
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় কি কি লাগে,কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার মন্ত্র আদি দিয়ে মা লক্ষ্মী দেবীর কাহিনী শোনা যাক। তাহলেই আমরা কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা পদ্ধতি ব্যাপারটা সমন্ধে অবগত হতে পারব।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সময়সূচী ২০২৩ (Kojagari Lokhhi Puja 2023)
আপনাদের সুবিদার্থে হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সময়সূচী ২০২৩ নিচের টেবিলে দেওয়া হল। কিন্তু এবছরও গত বছরের ন্যায় দুইদিন ধরে কোজাগরী পূর্ণিমা লেগে থাকবে,তাই স্থানভেদে দুইদিন লক্ষ্মী পূজা হতে পারে।
কোজাগরীলক্ষ্মী পূজার তারিখ | ইংরেজি ০৯ অক্টোবর, সোম বার,২০২৩ সাল |
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সময়সূচী ২০২৩ | ২৮ অক্টবর ভোর ০৪:১০ থেকে, ২৯ অক্টবর রাত্রি ০১:৫০ পর্যন্ত |
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার সর্বমোট সময় | ৫০ মিনিট |
কোজাগরী পূর্ণিমা শুরু হবে | ২৮ অক্টোবর, সোমবার ২০২৩ ভোর ০৪: ১০ থেকে |
কোজাগরী পূর্ণিমা শেষ হবে | ২৯ অক্টোবর, মঙ্গল বার, ২০২৩ ভোর রাত্রি ০১:৫০ পর্যন্ত |
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা কেন করা হয় (Kojagari Lokhi Puja Keno Kora Hoy )
বাঙালিদের শারদীয়া দুর্গাপূজার পরেই আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা পালন করা হয়। এমনিতেই হিন্দু গৃহস্থ বাড়ির গৃহিণীরা প্রত্যেক সপ্তাহে বৃহস্পতি বারের দিনে ঘট ভরে মা লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন।
কিন্তু আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথির দিন মা লক্ষ্মী স্বয়ং,স্বামী নারায়ণের বৈকুন্ঠ ধাম ছেড়ে মর্ত্যধামে তার ভক্তদের পরীক্ষা নিতে হাজির হন। মা লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পদের দেবী,
কিন্তু হলে কি হবে ধন সম্পদতো আর যাকে,তাকে দেওয়া যায় না। তাই মা লক্ষ্মী প্রতিবছর আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমার দিন ভক্তদের পরীক্ষা নিতে গৃহস্থের বাড়ি বাড়ি হাজির হয়।
আসলে ‘কোজাগরী’ কথাটি এসেছে ‘কো’ ‘জাগ্রতি’ শব্দ থেকে,যার অর্থ হল ‘কে জেগে আছো ?’ আর সেই থেকেই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা কথার বহাল হয়েছে।

হিন্দুধর্মালম্বী মানুষদের বিশ্বাস,কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন রাত্রি বেলা, লক্ষ্মী পূজার পর মা লক্ষ্মী গৃহস্থের বাড়িতে,বাড়িতে ভক্তরা কেউ জেগে আছেন কিনা ? পরীক্ষা করার জন্যে আসেন।
কোজাগরী পূর্ণিমার দিন লক্ষ্মী পূজার পর,নারিকেল জল পান করে,ভক্তরা পাশাখেলার (লুডো খেলা) মধ্যে দিয়ে রাত্রি জাগরণ করলে মা লক্ষ্মী ভক্তদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে ধন সম্পদের কৃপা লাভের আশীর্বাদ করেন।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজায় কি কি লাগে (Kojagari Lokhi Pujay ki lage )
আপনারা যারা নিজের বাড়িতে নিজে নিজেই লক্ষ্মী পূজা করেন তাদের লক্ষ্মী পূজায় কি কি লাগে অথাৎ লক্ষ্মী পূজার ফর্দ জানাটা দরকার। আসুন একনজরে লক্ষ্মী পূজায় কি কি লাগে,লক্ষ্মী পূজার উপকরণ গুলো দেখে নেওয়া যাক।
লক্ষ্মী পূজার উপকরণ হিসাবে আপনাকে যে সমস্ত জিনিস গুলো লক্ষ্মী পূজার ফর্দ বাবদ জোগাড় করে নিতে হবে,সেই সমস্ত লক্ষ্মী পূজার উপকরণ হল-
সিঁদুর,কিষ্ট তিল,অধিবাসের ডালা,লক্ষী পূজার ঘট,মাটির সরা,আতপ চাল,ঘটের উপর দেওয়ার জন্যে গামছা,হরতকি,সুপারি,পান,দর্পন (আয়না),শীষ ওয়ালা ডাব,মধু,ঘী,লোহা,শঙ্খ,কুন্ড হাঁড়ি,
পঞ্চগুড়ি,ফুল মালা,চাঁদ মালা,চিড়ে,চিনি,নারিকেল,দই,মিষ্টি,ধান,দূর্বা,বেল পাতা,ফুল ইত্যাদি। তবে আপনি যদি বাড়িতে লক্ষীর মূর্তি বসিয়ে পূজা করেন তাহলে আপনাকে লক্ষী মূর্তি,পৈতা,গঙ্গাজল,কুশা,কুশি,পঞ্চ প্রদীপ,মাটির প্রদীপ,
নারায়ণের ধুতি,হোম যজ্ঞের জন্য কাঠ,বালি,থালা,যজ্ঞের জন্যে ঘী,কর্পূর,আলাদা করে ২৮ টি বেল পাতা,মা লক্ষ্মীর জন্যে শাড়ি এবং পুরুত ঠাকুরের দক্ষিণা দিতে হবে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা পদ্ধতি (Kojagari Lokhi Pujar Niyom )
এখন আমরা ঘরোয়া উপায়ে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। আপনাদের মধ্যে যারা ঘরোয়া উপায়ে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা করতে চান তাদের জন্যে ঘরয়া উপায়ে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা পদ্ধতি অনেকটা সহায়ক হবে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার জেলাভেদের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের লক্ষ্মী পূজার ধরণ চোখে পড়ে। যেমন- বাংলাদেশের ফরিদপুর,চট্টগ্রাম ইত্যাদি জেলাগুলোতে সরার উপর মা লক্ষ্মীর ছবি আঁকা হয়,
এই সরাকে লক্ষ্মী সরা বলা হয়। এই সরার উপর লক্ষ্মী,নারায়ণ,জয়া,বিজয়া,পেঁচা,পেঁচির ছবি এঁকে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। ফরিদপুরী সরায় দেবদেবীদের একটি চৌখুপির মধ্যে রাখা হয়।
অপরদিকে সুরেশ্বরী সরায় উপরে থাকেন মহিশুরমর্দিনী মা দূর্গা এবং নিচে মা লক্ষ্মী ও তার বাহন পেঁচার ছবি ধরা পরে। আবার গ্রামে গঞ্জের অনেক গৃহস্থ বাড়িতে মা লক্ষ্মীকে কড়ি দিয়ে,কড়ি স্বরূপ লক্ষ্মীপূজা করা হয়।
লক্ষ্মী পূজার আলপনা (Lokhi Pujar Alpona )
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আগে লক্ষ্মী পূজার আলপনার এক বিশেষ মহত্ব আছে। ঐ দিন আপনি যেখানে লক্ষ্মী পূজার জন্যে, যেখানে মা লক্ষ্মীর আসন পাতবেন,সেখানে আতপ চাল গুঁড়ো করে,চাল গুঁড়োর সঙ্গে জল মিশিয়ে
মা লক্ষ্মীর পাদুকার (পায়ের ছাপ) লক্ষ্মী পূজার আলপনা আঁকতে হয়। এছাড়া পুরোনো দিনে গ্রামের গৃহস্থ ঘরের গৃহ বধূরা ধানের গোলা থেকে শুরু করে ঠাকুর ঘর পর্যন্ত মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের লক্ষ্মী পূজার আলপনা আঁকত।
তবে এখনো লক্ষ্মী পূজায় মা লক্ষ্মীর যেখানে ঘট স্থাপন করা হবে সেখানে এবং ঠাকুর ঘরের দরজার সামনে মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ সহ আলপনা আঁকতে হয়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার বিধি নিয়ম (Lokhi Pujar Bidhi Niyom )
ধাপ ০১ : লক্ষ্মী পূজা পদ্ধতি শুরু করার আগে লক্ষ্মী পূজার নিয়ম অনুযায়ী সবার প্রথমে ডান হাতের চেটোর (তালুর মধ্যে) মধ্যে একটু খানি গঙ্গাজল নিয়ে ওঁ বিষ্ণু,ওঁ বিষ্ণু,ওঁ বিষ্ণু তিনবার উচ্চারণ করে
নিজের মাথার উপর সহ চারিদিকে গঙ্গাজল ছিটিয়ে নিয়ে নারায়ণকে স্মরণ করে দেহ মন শুদ্ধ করতে হবে। তারপর পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চারক ভগবান সূর্য দেবকে স্মরণ করে তামার কুশির মধ্যে গঙ্গাজল উৎসর্গ করতে হবে।
এরপর মনে মনে সূর্য দেবকে প্রণাম করে জগৎ সংসারের মঙ্গল কামনা করবেন। তারপর আর একবার হাতের চেটোয় গঙ্গাজল নিয়ে পূজার ফুল,ফল লক্ষ্মী পূজার নৈবদ্য ইত্যাদির উপর ছিটিয়ে দিয়ে শুদ্ধ করে নিন।
ধাপ ০২ : এবারে মা লক্ষ্মীর ঘট স্থাপনের পালা। আপনি যেখানে মা লক্ষ্মীর ঘট স্থাপন করবেন সেখানে মা লক্ষ্মীর পাদুকা চিহ্নের লক্ষ্মীর আলপনা আঁকার জায়গায় একটু খানি ধান ও মাটি ছড়িয়ে নিতে হবে।
তারপর বিজোড় সংখ্যার আমের শাখা দিয়ে গঙ্গাজল ভর্তি করে শীষ ওয়ালা ডাবের উপর সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে ঘটের উপর শীষ ওয়ালা ডাবটি রাখতে হবে এবং ডাবের উপর গামছা রেখে কলা ও হরতকি রাখতে হয়।
তারপর ঘটের উপর পৈতা রাখতে হবে এবং মা লক্ষ্মীকে পৈতা ও মালা পড়াতে হবে। তারপর মা লক্ষ্মীকে স্মরণ করে মা লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ধ্যানমন্ত্র (Lokhi Pujar Dhyanmantra)
ধাপ ০৩ : এবারে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার মন্ত্র বাবদ আপনাকে মা লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। মা লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র হল –
ওঁ পাশা ক্ষমা লিকাম্ভোজ-শৃণিভির্যাম্য-সৌম্যয়োঃ।
পদ্মাসনস্থাং ধ্যায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।।
গৌরবর্ণাং সুরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার-ভূষিতাম্।
রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।।
এইভাবে তিনবার মন্ত্রটি উচ্চারণ করার পর দুই চোখ বুজে,করজোড় করে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করবেন। মনে রাখবেন লক্ষ্মী পূজার সময় কাঁসর ও ঘন্টা বাজানো বারণ তাই এসব ভুলেও বাজাবেন না,এতে মা লক্ষ্মী অসন্তষ্ট হন।
মা লক্ষ্মীর আবাহন মন্ত্র (Lokhi Pujar Abahaonmantro )
ধাপ ০৪ : এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আহ্বান জানানোর পালা। তাই আপনাকে এখন মা লক্ষ্মীর আবাহন মন্ত্র উচ্চারণ করে মা লক্ষ্মীকে আবাহন করতে হবে।
ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ
ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিধেহি
ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রাধিষ্ঠান কুরু মম পূজান গৃহাণ।
ধাপ ০৫ : এবার আপনি মা লক্ষ্মীর মূর্তির কিংবা মা লক্ষ্মীর ছবি,যেটা আপনার ঠাকুর ঘরে আছে,সেখান থেকে মা লক্ষ্মীর পায়ে গঙ্গাজল ঠেকিয়ে নিয়ে চরণামৃত স্বরূপ
মায়ের যেখানে ঘট স্থাপন করেছেন সেখানে মা লক্ষ্মীর পায়ের চিহ্ন আঁকা আলপনায় ঠেকিয়ে নিতে হবে। আপনি মানসপটে চিন্তা করবেন আপনার আহবান মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে মা লক্ষ্মী স্বয়ং আপনার ঘরে বিরাজ মান হয়েছে। আপনি মা লক্ষ্মীর চরণ ধুইয়ে দিয়ে চরণ ধোয়া জল প্রসাদ স্বরূপ গ্রহণ করছেন।
ধাপ ০৬ : এবারে একে একে ফুল,বেল পাতা সহ,আতপ চালের নৈবদ্য মা লক্ষ্মীর ঘটে তুলে দেবেন। তারপর মা লক্ষ্মীর কপালে ও ঘটে চন্দন ঘষে চন্দনের ফোঁটা পড়িয়ে দেবেন।
ধাপ ০৭ : এরপর নিষ্ঠার সঙ্গে মা লক্ষ্মীকে শঙ্খ বাজিয়ে ধুপ প্রদীপ দেখাবেন,তারপর গড় করে মা লক্ষ্মীকে ভক্তিভরে প্রণাম করতে হবে। এরপর হল মায়ের চরণে অঞ্জলি দেওয়ার পালা –
মা লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার মন্ত্র
মা লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার আগে হাতে ফুল বেল পাতা নিয়ে নিতে হবে তারপর মা লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে। এরপর এষ সচন্দন পুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রী লক্ষ্মী দৈব্য নমঃ
পর পর তিনবার মন্ত্রটি উচ্চারণ করে নিতে হবে। এরপর দেবরাজ ইন্দ্র,নারায়ণ এবং ধনের দেবতা কুবেরের উদ্যেশে ফুল বেলপাতা নিবেদন করবেন।
কিন্তু ধ্যান রাখবেন মা লক্ষী কিন্তু পূজায় তুলসী পাতা গ্রহণ করেন না। পুরাণের কাহিনীতে তুলসী দেবীকে মা লক্ষ্মীর সতীনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
তারপর মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচাকে ফুল বেল পাতা নিবেদন করতে হবে। আপনি যদি গুরু দীক্ষা নিয়ে থাকেন তাহলে লক্ষ্মীর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার আগে গুরু মন্ত্র জপ করে নিতে পারেন।
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্বতঃ পাহি মাং নিত্যং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে ।।
এরপর মা লক্ষ্মীকে ভোগ নিবেদন করে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ব্রতকথা লক্ষী পূজার পাঁচালী পড়তে হয়। কিন্তু মনে রাখবেন মা লক্ষ্মীকে কোনো সময় লোহার পাত্রে ভোগ নিবেদন করবেন না।
লোহা দেওয়া হয় অলক্ষীকে তাই মা লক্ষী লোহার ব্যবহারে অসন্তুস্ট হন এবং তৎক্ষণাৎ মা লক্ষী গৃহস্থের গৃহ ত্যাগ করে।

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ব্রতকথা
লক্ষ্মী পূজার পরে হিন্দু সধবা মহিলাদের মাথায় ঘোমটা দিয়ে আসন পেতে বসে প্রদীপ জ্বালিয়ে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার ব্রতকথা,লক্ষ্মী পূজার পাঁচালী পড়তে হয়।
শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন,
মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ,
বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।
হেনকালে বীণা হাতে আসি মুনিবর,
হরিগুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।
গান সম্বরিয়া উভে বন্দনা করিল,
বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।
মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়,
কিবা মনে করি মুনি আসিলে হেথায়।
কহে মুনি তুমি চিন্ত জগতের হিত,
সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।
সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ,
বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।
লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মুনিবর,
কহিতে লাগিলা তারে জুড়ি দুই কর।
অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান,
মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।
সেথায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ,
দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।
রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়,
ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।
অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে,
স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে।
স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার,
সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।
তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী,
সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।
স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে,
তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে।
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা,
কহিলেন মুনি প্রতি দোষ দাও বৃথা।
নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ,
অকারণে মোর প্রতি কর অনুযোগ।
শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়,
মম অংশে জন্ম লয় নারী সমুদয়।
তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে,
তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে।
লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে,
কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে।
কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া,
দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।
মুনির বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল,
মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।
নারীদের সর্বদুঃখ যে প্রকারে যায়,
কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।
শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি,
কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি।
প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে,
করিবে তোমার ব্রত ভক্তিযুক্ত মনে।
নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন,
ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।
মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী,
দেখিলেন বনমধ্যে বৃদ্ধা এক বসিয়া আপনি।
সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে,
কহ মাগো কি হেতু এ ঘোর কান্তারে।
বৃদ্ধা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী,
কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।
পতি-পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর,
এখন সব ছিন্নভিন্ন যাতনাই সার।
যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন,
ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।
নারায়ণী বলে শুন আমার বচন,
আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।
যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত,
আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ,
করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।
কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন,
মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।
জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা,
আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।
আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান,
সিঁদুর গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।
ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে,
শুনিবে পাঁচালী কথা দূর্বা লয়ে হাতে।
একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ,
সতত লক্ষ্মীর মূর্তি করিবে চিন্তন।
ব্রত শেষে উলুধ্বনি দিয়ে প্রণাম করিবে,
এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে।
দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়,
দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।
পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে,
ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দুই জনে।
অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা,
স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।
লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর হইলো তার,
নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।
কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়,
হইল সংসার তার সুখের আলয়।
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে,
ক্রমে প্রচারিত হলো দেশ দেশান্তরে।
করিতে যে বা দেয় উপদেশ,
লক্ষীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।
এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস,
লক্ষীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।
পরিশেষে হল এক অপূর্ব ব্যাপার,
যে ভাবে ব্রতের হয় মাহাত্ম্য প্রচার।
বিদর্ভ নগরে এক গৃহস্থ ভবনে,
নিয়োজিত বামাগণ ব্রতের সাধনে।
ভিন্ন দেশবাসী এক বণিক তনয়,
সে উপস্থিত হল ব্রতের সময়।
বহুল সম্পত্তি তার ভাই পাঁচজন,
পরস্পর অনুগত ছিল সর্বক্ষণ।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়,
বলে এ কিসের ব্রত এতে কিবা ফলোদয়।
বামাগণ বলে শুনি সাধুর বচন,
লক্ষী ব্রত করি সবে সৌভাগ্য কারণ।
সদাগর শুনি ইহা বলে অহঙ্কারে,
অভাবে থাকিলে তবে পূজিব উহারে।
ধনজন সুখভোগ যা কিছু সম্ভব,
সকল আমার আছে আর কিবা অভাব।
কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন,
হেন বাক্য কভু আমি না করি শ্রবণ।
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা,
নানা দ্রব্যে পূর্ণ তরি বানিজ্যেতে গেলা।
গর্বিত জনেরে লক্ষ্মী সইতে না পারে,
সর্ব দুঃখে দুঃখী মাগো করেন তাহারে।
বাড়ি গেল, ঘর গেল, ডুবিল পূর্ণ তরি,
চলে গেল ভ্রাতৃভাব হল যে ভিখারী।
কি দোষ পাইয়া বিধি করিলে এমন,
অধম সন্তান আমি অতি অভাজন।
সাধুর অবস্থা দেখি দয়াময়ী ভাবে,
বুঝাইব কেমনে ইহা মনে মনে ভাবে।
নানা স্থানে নানা ছলে ঘুরাইয়া ঘানি,
অবশেষে লক্ষ্মীর ব্রতের স্থানে দিলেন আনি।
মনেতে উদয় হল কেন সে ভিখারী,
অপরাধ ক্ষম মাগো কুপুত্র ভাবিয়া।
অহঙ্কার দোষে দেবী শিক্ষা দিলা মোরে,
অপার করুণা তাই বুঝালে দীনেরে।
বুঝালে যদি বা মাগো রাখগো চরণে,
ক্ষমা কর ক্ষমাময়ী আশ্রিত জনেরে।
সত্যরূপিনী তুমি কমলা তুমি যে মা,
ক্ষমাময়ী নাম তব দীনে করি ক্ষমা।
তুমি বিনা গতি নাই এ তিন ভুবনে,
স্বর্গেতে স্বর্গের লক্ষ্মী ত্রিবিধ মঙ্গলে।
তুমি মা মঙ্গলা দেবী সকল ঘরেতে,
বিরাজিছ মা তুমি লক্ষ্মী রূপে ভূতলে।
দেব-নর সকলের সম্পদরূপিনী,
জগৎ সর্বস্ব তুমি ঐশ্বর্যদায়িনী।
সর্বত্র পূজিতা তুমি ত্রিলোক পালিনী,
সাবিত্রী বিরিঞ্চিপুরে বেদের জননী।
ক্ষমা কর এ দাসের অপরাধ যত,
তোমা পদে মতি যেন থাকে অবিরত।
শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ট তারা পরমা প্রকৃতি,
কোপাদি বর্জিতা তুমি মূর্তিমতি ধৃতি।
সতী সাধ্বী রমণীর তুমি মা উপমা,
দেবগণ ভক্তি মনে পূজে সবে তোমা।
রাস অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুমি রাসেশ্বরী,
সকলেই তব অংশ যত আছে নারী।
কৃষ্ণ প্রেমময়ী তুমি কৃষ্ণ প্রাণাধিকা,
তুমি যে ছিলে মাগো দ্বাপরে রাধিকা।
প্রস্ফুটিত পদ্মবনে তুমি পদ্মাবতী,
মালতি কুসুমগুচ্ছে তুমি মা মালতি।
বনের মাঝারে তুমি মাগো বনরাণী,
শত শৃঙ্গ শৈলোপরি শোভিত সুন্দরী।
রাজলক্ষ্মী তুমি মাগো নরপতি পুরে,
সকলের গৃহে লক্ষ্মী তুমি ঘরে ঘরে।
দয়াময়ী ক্ষেমঙ্করী অধমতারিণী,
অপরাধ ক্ষমা কর দারিদ্র্যবারিণী।
পতিত উদ্ধার কর পতিতপাবনী,
অজ্ঞান সন্তানে কষ্ট না দিও জননী।
অন্নদা বরদা মাতা বিপদনাশিনী,
দয়া কর এবে মোরে মাধব ঘরণী।
এই রূপে স্তব করি ভক্তিপূর্ণ মনে,
একাগ্র মনেতে সাধু ব্রত কথা শোনে।
ব্রতের শেষে নত শিরে করিয়া প্রণাম,
মনেতে বাসনা করি আছে নিজধাম।
গৃহেতে আসিয়া বলে লক্ষ্মীব্রত সার,
সবে মিলি ব্রত কর প্রতি গুরুবার।
বধুরা অতি তুষ্ট সাধুর বাক্যেতে,
ব্রত আচরণ করে সভক্তি মনেতে।
নাশিল সাধুর ছিল যত দুষ্ট সহচর,
দেবীর কৃপায় সম্পদ লভিল প্রচুর।
আনন্দে পূর্ণিত দেখে সাধুর অন্তর,
পূর্ণতরী উঠে ভাসি জলের উপর।
সাধুর সংসার হল শান্তি ভরপুর,
মিলিল সকলে পুনঃ ঐশ্বর্য প্রচুর।
এভাবে নরলোকে হয় ব্রতের প্রচার,
মনে রেখ সংসারেতে লক্ষ্মীব্রত সার।
এ ব্রত যে রমণী করে এক মনে,
দেবীর কৃপায় তার পূর্ণ ধনে জনে।
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন,
ইহলোকে সুখী অন্তে বৈকুন্ঠে গমন।
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ই মধুর,
অতি যতনেতে রাখ তাহা আসন উপর।
যে জন ব্রতের শেষে স্তব পাঠ করে,
অভাব ঘুচিয়া যায় লক্ষ্মীদেবীর বরে।
লক্ষ্মীর পাঁচালী কথা হল সমাপন,
ভক্তি করি বর মাগো যার যাহা মন।
সিঁথিতে সিঁদুর দাও সব এয়োমিলে,
উলুধ্বনি কর সবে অতি কৌতুহলে।
দুই হাত জোড় করি ভক্তিযুক্ত মনে,
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে,
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে।
লক্ষ্মী দেবীর কাহিনী
লক্ষ্মী পূজা ও লক্ষ্মী দেবীর কাহিনী গল্প আপনারা অনেক শুনে থাকবেন,আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে লক্ষ্মী দেবীর কাহিনী হিসাবে এমন একটি গল্প আপনাদের শোনাচ্ছি।
বাংলা জুড়ে তখন নবাবী শাসন চলছে দিল্লীর মসনদে বসে আছেন বাদশাহ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। তিনি লোকমুখে শুনেছিলেন জগৎ শেঠ খুব বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোক।
যাইহোক দিল্লীর নবাব তখন বাংলার নবাব সিরাজুদুল্লার কাছে জগৎ শেঠকে দেখার ইচ্ছে পোষণ করলেন। সিরাজ তখন জগৎ শেঠকে ডেকে সবটা খুলে বললেন।
জগৎ শেঠ তখন সিরাজের কাছে আজ্ঞা নিয়ে দিল্লী পৌঁছালেন। দিল্লীতে জগৎ শেঠের নবাবী কায়দায় আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি রইলো না। জগৎ শেঠকে দেখে দিল্লীর বাদশাহ খুব খুশি হলেন এবং জগৎ শেঠকে
তিনি দিল্লীতে থেকে যাওয়ার জন্যে বললেন। কিছুদিন পর জগৎ শেঠ বাংলায় ফিরে এলেন এবং নবাবের সঙ্গে দেখা করলেন। নবাব তখন খুশি হয়ে জগৎ শেঠকে বললেন বল তুমি কি চাও ?
তুমি দিল্লীর বাদশাহের মন জয় করে বাংলার মান উজ্জ্বল করেছো তাই আমি তোমার উপর সন্তস্ট হয়েছি। এরপর জগৎ শেঠ বাড়ি ফিরে এসে তার মায়ের কাছে নবাবের সমস্ত কথা খুলে বলেন।
জগৎ শেঠের মা ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী একজন মহিলা,তিনি জগৎ শেঠকে শিখিয়ে পড়ে বলেন তোমার উপর নবাব খুশি হয়ে যখন বলেছে তুমি যা চাইবে তাই পাবে ,
কিন্তু কোনো কিছু চাওয়ার আগে তুমি নবাবের কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নেবে তিনি যেন তার দেওয়া কথা রাখেন। এরপর জগৎ শেঠ নবাবের কাছে আগে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়ে বলেন
হে নবাব আমি কিছুই চাইনা শুধু কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন নগরে কারো বাড়িতে যেন বাতি না জলে এই প্রতিশ্রুতি দিন। যাইহোক নবাব তো আগেই প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয়ে গেছে
তাই নবাবের আদেশে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন আর বাতি জ্বললো না সমগ্র নগরী ঘোর অন্ধকারময় হয়ে রইল। আর এদিকে জগৎ শেঠের মা সব জেনে বুঝে কোজাগরী পূর্ণিমার দিন
মা লক্ষ্মীর ব্রত করলেন এবং লক্ষ্মী পূজা সেরে ঘীয়ের প্রদীপ জ্বেলে রাত জেগে বসে রইলেন। সমস্ত নগরী অন্ধকার দেখে মা লক্ষ্মী জগৎ শেঠের ঘরে প্রদীপের আলো দেখতে পেয়ে, ছদ্মবেশ ধারণ করে জগৎ শেঠের ঘরে
রাত্রি টুকু থাকার জন্যে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। এদিকে জগৎ শেঠের মায়ের কিছু বুঝতে বাকি রইল না যে মা লক্ষ্মী তার সাথে ছলনা করে ছদ্মবেশে তার ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।
যাইহোক জগৎ শেঠের মা ছিলেন অতি চালাক মহিলা, তিনি মা লক্ষ্মীকে বললেন মা আমি নদী থেকে স্নান সেরে আসি,আমার স্নান সেরে না আসা পর্যন্ত তুমি আমার ঘরে অপেক্ষা কর।
মা লক্ষ্মী জগৎ শেঠের মায়ের কথায় হ্যাঁতে হ্যাঁ মেলালেন,অপরদিকে জগৎ শেঠের মা তখন ঘর থেকে বেড়িয়ে নদীর দিকে চলে গেলেন এবং পুত্রের মঙ্গল কামনায় স্ব-মৃত্যু গ্রহণ করলেন।
তিনি নদীতে স্নান করতে গিয়ে আর ফিরে এলেন না। আর এদিকে মা লক্ষ্মী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ায় জগৎ শেঠের বাড়ি থেকে ফিরে যেতে পারলেন না। তাই বলা হয় মা লক্ষ্মীর কৃপা লাভের পর জগৎ শেঠের ঘরে রত্ন সামগ্রীর কমতি ছিল না।
এমন কথিত আছে মা লক্ষ্মীর কৃপায় জগৎ শেঠের ঘরে এতো ধন সম্পদ ছিল যে সেই ধন সম্পদ দিয়ে পুরো রাজ্য বাসীর অন্ন অনায়সে জোগানো যেত।
লক্ষ্মী পূজার গান
কোজাগরী পূর্ণিমার দিনে মা লক্ষ্মীর আরাধনার সাথে মা লক্ষ্মীর বন্দনায় লক্ষ্মী পূজার গান শুনলে মন ও বুদ্ধিতে স্থিরতা আসে। আমরা নিচে লক্ষ্মী পূজার গানের লিংক দিয়ে দিলাম আপনারা লিংকে ক্লিক করে লক্ষ্মী পূজার গান উপভোগ করতে পারেন।
FAQ
প্রশ্ন : কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা কবে ?
উঃ- কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা ২৮ অক্টবর শনিবার ২০২৩ সাল।
প্রশ্ন : কোজাগরী মানে কি ?
উঃ- কোজাগরী মানে কে- জাগো রে।
প্রশ্ন : লক্ষ্মী শব্দের অর্থ কি ?
উঃ- সুলক্ষণ যুক্ত শান্ত শিষ্ট মেয়েকে লক্ষ্মী বলা হয়।