কপার টি একটি দীর্ঘ্য মেয়াদি গর্ভ নিরোধক উপকরণ ।

আধুনিক যুগে যুগ উপযোগী যে সমস্ত গর্ভনিরোধক পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে কপার টি (Copper t) হল একটি অন্যতম এবং সবথেকে বেশি ব্যবহৃত সময়উপযোগী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি।

এখানে আপনারা যারা কপার টি নাম টি প্রথমবার শুনছেন তাদের মনে হতেই পারে আসলে কপার টি কি জিনিস ? কারণ একটাই আমাদের দেশে অন্য যে সমস্ত গর্ভনিরোধক পদ্ধতি আছে,

যেমন- যৌন সঙ্গমে কন্ডোমের ব্যবহার,লাইপেশন,গর্ভনিরোধক পিল ইত্যাদি এগুলোর প্রচলন বেশি। তাই গর্ভনিরোধক হিসাবে অন্য পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করা হলেও

অজ্ঞাতার অভাবে কপার টি এর মত একটি সবথেকে সুরক্ষিত এবং সাশ্রয়ী গর্ভনিরোধক পদ্ধতিটির ব্যবহার গ্রাম বাংলার মানুষের মধ্যে দেখা যায় না।

আসুন তাহলে কপার টি কি ? কপার টি লাগানোর নিয়ম,কপার টি খোলার নিয়ম,কপার টি লাগানোর সুবিধা  ,কপার টি সাইড এফেক্টস,কপার টি দাম কত সমস্ত কিছু জেনে নেওয়া যাক নিচের আলোচনার মাধ্যমে।

কপার টি কি (Copper t ki) ?


কপার টি হল একটি আধুনিক গর্ভনিরোধক উপকরণ যা মহিলাদের জন্য গর্ভনিরোধক উপকরণ হিসাবে কাজ করে। কপার টি কে আই ইউ ডি (Intra-uterine device) বলা হয়।

কপার ও টি,দুটি শব্দই হল ইংরেজী ভাষা থেকে এসেছে। কপার (Copper) মানে তামা,আর টি (T) হল ইংরেজী বর্ণমালার একটি বর্ণ। আসলে কপার টি উপকরণটির আকার

অনেকটা ইংরেজী “T” অক্ষরের এর মত তামার পাতে মোড়া,তাই এই উপকরণটির নাম দেওয়া হয়েছে কপার টি। ইংরেজী “T” অক্ষরের মত দেখতে উপকরণটি

উচ্চমানের প্লাস্টিকের পলিইথিলিন উপাদান দ্বারা তৈরী। প্লাস্টিকের “T” দন্ডটির উপর সুক্ষ তামার কুন্ডলি (অনেকটা স্প্রিঙের মত) পাকানো থাকে। কপার টি (Copper T) এর

আয়তন প্রায় ৩৮০ বর্গ মিলিলিমিটার মত হয়। কপার টি উপকরণটির নিচের দিকে নাইলনের সুতো থাকে, প্রয়োজন হলে ডাক্তার বাবুরা এই সুতো টেনে কপার টি রিমুভ করে থাকেন।

আরো পড়ুন : তিন তালাক কি বৈধ ! মুসলিম সমাজ এবং ভারতীয় আইনে তিন তালাকের বিধান। 

কপার টি কিভাবে গর্ভনিরোধক হিসাবে কাজ করে


যখন কোনো পুরুষ এবং নারী যৌন সঙ্গমে (Intercourse) লিপ্ত হয় তখন উভয়ের যৌনাঙ্গ থেকে সময়ের ব্যবধানে চরম উত্তেজনার মুহূর্তে ক্রমে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়।

পুরুষের যৌনাঙ্গ থেকে নিঃসৃত হওয়া শুক্রাণু যখন নারীর যৌনাঙ্গের মধ্যে দিয়ে,গর্ভাশয়ে ডিম্বানুর সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করে তখন নারী যৌনাঙ্গে অথাৎ

গর্ভাশয়ের মুখে কপার টি প্রতিস্থাপন করা থাকলে,কপার টি পুরুষের শুক্রাণুকে নারীর ডিম্বানুর সাথে মিলিত হওয়ার পথে বাধা দেয়। তাই শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলন না হওয়ায় নারী গর্ভধারণ করতে পারেনা।

আসুন ব্যাপারটিকে আরো একটু সহজ ও ভালোভাবে বোঝা যাক। কপার টি উপকরণ টি নারীর যৌনাঙ্গে ডাক্তার দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয়।

কপার টি (Copper T) এর উপরিভাগ অথাৎ “T” এর মাথার দিক নারীর যৌনাঙ্গের ভিতরে গর্ভাশয়ের দুই মুখে পয়েন্ট করে লাগানো থাকে।

আর বাকি “টি” এর নিচের দিক, নিচের দিকে পয়েন্ট করানো থাকে। এবারে কথা হল প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী “T” উপকরণটি পুরোটাই তামার সুক্ষ পাতে মোড়া একটি উপকরণ।

তাই সহবাসের সময় উত্তেজনার চরম মুহূর্তে পুরুষ যৌনাঙ্গ থেকে শুক্রাণু নিঃসৃত হয়ে নারীর গর্ভাশয়ের (Ovary) দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে,কপার টি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের পথে বাধার সৃষ্টি করে।

কপারের (তামার পাতে) মোড়া “T” দন্ডটির সংস্পর্শে এলেই তামা এবং শুক্রাণুর মধ্যে একটি আম্লিক বিক্রিয়া হয়। (আপনারা জানেন হয়ত তামা তরল (জলের) সংস্পর্শে এলেই কালচে পড়ে যায়, এর কারণ হল-

জলের সংস্পর্শে তামার অম্লিক বিক্রিয়া হয়,তামা জলের সংস্পর্শে এলে পড়েই অম্ল (টক) নিঃসৃত করে তাই তামা তার উজ্জ্বলতা হারিয়ে তামা কালচে হয়ে যায় )

কপার টি কি
কপার টি কি

কপার টি এর উপর জড়ানো থাকা তামার পাত থেকে নির্গত হওয়া অম্ল অনু ,শুক্রাণুর মধ্যে এনজাইম, প্রোস্টাগ্লান্ডিন ও  শ্বেতকণিকার পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে

শুক্রণুকে দুর্বল এবং নিস্তেজ করে দেয়। যার ফলে শুক্রানুটি নিস্তেজ হয়ে গর্ভাশয়ের মধ্যেই মারা যায় এবং রতিক্রিয়ার সময় নারীদের ডিম্বাশয় থেকে নির্গত ডিম্বাণু

শুক্রাণুর সঙ্গে মিলত হওয়ার আসায় গর্ভাশয়ের দিকে ধেয়ে আসলেও কপার টি এর অম্লিক বিক্রিয়ায় পুরুষের শুক্রাণু নিস্তেজ হয়ে পড়ায় মিলিত হয়ে গর্ভধারণের সুযোগ পায় না যার ফলে নারীর গর্ভধারণ হয় না।

আরো পড়ুন : স্বপ্ন দোষ কেন হয় ? আমরা স্বপ্ন কেন দেখি ?

কপার টি লাগানোর নিয়ম (Copper t laganor niyom)


কপার টি উপকরণটিকে একটি বিশেষ পাতলা পাইপের মধ্যে ঢুকিয়ে,কপার টি এর নিচে থাকা দুটি সুতোর মধ্যে একটি সুতোকে ধরে টান দিলে

কপার টি উপকরণটির “T” অক্ষরের মাথাটি ইংরেজী “A” অক্ষরের মত মোচড় খেয়ে পাইপের মধ্যে সিকোড়ে যায়। এরপর এই বিশেষ পাতলা পাইপটিকে নারীর জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়।

নারীর যৌনাঙ্গে জরায়ুর মধ্যে পাইপটিকে প্রবেশ করানোর পরে পাইপটি ডিম্বাশয়ের কাছে গিয়ে পৌঁছালে কপার টি এর সঙ্গে যুক্ত থাকা একটি সুতো ধরে টান দিলে কপার টি এর মাথাটি খুলে গিয়ে

জরায়ুর মধ্যে ডিম্বাশয়ের জায়গায় নির্দিষ্ট ভাবে ফিট হয়ে যায়। এরপর ডাক্তার বাবু ধীরে ধীরে কপার টি বা আই ইউ ডি যায় বলুন না কেন সেটা নারী যৌনাঙ্গে স্থাপিত হয়ে গেলে পাইপটিকে বার করে নেয়।

বাকী কপার টি এর নিচের দিকে ঝুলে থাকা অতিরিক্ত সুতো দুটোকে প্রয়োজন মত সামান্য খানি নারীর জরায়ুর মধ্যে রেখে দিয়ে অতিরিক্ত বেড়ে থাকা সুতো দুটোকে কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়।

(ভালোভাবে বোঝার জন্য নিচে দেওয়া কপার টি লাগানোর ভিডিও দেখুন) এইভাবে একজন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্ট নারীর জরায়ুতে

নারীর গর্ভাশয়ের মাপ অনুযায়ী সঠিক আকারের একটি কপার টি (IUD) নির্বাচন করে জরায়ুর মধ্যে স্থাপন করে দেয়।

সঠিক আকারের কপার টি (IUD) নির্বাচন করে গর্ভাশয়ে যথাযথভাবে স্থাপন করা হলে ০৮-১০ বছর নারীরা অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের হাত থেকে মুক্তি পায়।

আরো পড়ুন : সমকামিতা কি ? সমকামীদের প্রকারভেদ। 

কপার টি কখন লাগানো হয় (IUD kokhon lagano jay)


কপার টি বা আই ইউ ডি পদ্ধতি ব্যবহার করার কিছু নিয়ম সমন্ধে আপনাদের অবগত করানো হল আপনারা কপার টি লাগানোর নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে পারেন।

নারীর শারীরিক অবস্থা কপার টি লাগানোর নিয়ম
মাসিকধর্মের সময় নারীর মাসিক ধর্মের আগে বা পরে,যেকোনো সময় নারী চাইলেই জরায়ুতে কপার টি স্থাপন করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে নারীর মাসিক ধর্ম শুরু হওয়ার ০১ থেকে ০৭ দিনের মধ্যে অথাৎ মাসিক ধর্ম শুরু হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কপার টি লাগিয়ে নেওয়ার সবথেকে ভালো সময়।

কারণ –

  • যেহেতু এই সময় মহিলারা মাসিক ধর্মের মধ্যে থাকে তাই গর্ভধারণের সম্ভবনা থাকে না।
  • মাসিকের সময় যৌনাঙ্গের সংবেদনশীল পর্দা (সারভিক্স) নরম ও সংবেদনশীল (খোলা) থাকায় সহজেই নারীর গর্ভাশয়ে কপার টি স্থাপন করা যায়।
  • মাসিক চলাকালীন বা মাসিক শেষ হওয়ার দু-একদিনের মধ্যে (নারীর জরায়ু প্রসারিত হওয়ায়) কপার টি লাগালে নারীরা যৌনিতে রক্তপাত ও জরায়ুর মাংসপেশিতে ব্যাথা হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই কম থাকে।
  • মাসিক শেষ হওয়ার পর স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে যৌন সঙ্গমে মিলিত না হয় এবং স্ত্রী যদি আগে থেকে গর্ভবতী না থাকে তাহলে সেই স্ত্রী বা মহিলা তার জরায়ুতে কপার টি স্থাপন করতে পারে।
চিরাচিরত পুরোনো গর্ভনিরোধক পদ্ধতির পরিবর্তে নতুন আই ইউ ডি পদ্ধতি বেছে নিলে 
  • যদি কোনো মহিলা আগে থেকে নিয়ম করে গর্ভনিরোধক হিসাবে গর্ভনিরোধক বড়ি,কন্ডোম কিংবা গর্ভনিরোধের অন্য কোনো পন্থা (লাইপেশন ব্যতীত) অবলম্বন করছেন,কিন্তু তারা আই ইউ ডি অথাৎ কপার টি যদি লাগাতে চান ? সেই সমস্ত মহিলারা যেকোনো সময় ভালো স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে কপার টি বা আই ইউ ডি লাগাতে পারেন।
  • যে সমস্ত মহিলারা গর্ভনিরোধক হিসাবে শরীরে গর্ভনিরোধক ইনজেকশন পুশ করিয়ে রেখেছেন,সেই সমস্ত মহিলারা তাদের ইনজেকশনের ডোজের সময় সীমা পার হওয়ার পর, নতুন করে গর্ভনিরোধক ইনজেকশন না লাগিয়ে কপার টি লাগিয়ে নিতে পারেন।
সন্তান প্রসব করার পরে
  •  মহিলা তার সন্তান প্রসব করার পরে, কপার টি স্থাপন করতে চাইলে ফুল বের হওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কপার টি স্থাপন করতে হবে। যদি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কপার টি স্থাপন করা না হয়, তাহলে আগের ০৪ সপ্তাহ পর্যন্ত কপার টি লাগানো যাবেনা। কপার টি লাগানোর জন্য তাকে ০৪ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
  • সিজারিয়ান ডিলেভারীর ক্ষেত্রে সিজার অপারেশন করার পর ডাক্তার বাবুকে বলে কপার টি লাগানো যায়।
বাচ্চা মায়ের দুধ পান করার সময়
  • সন্তান প্রসবের ২৮ দিন থেকে শুরু করে শিশুর ০৬ মাস বয়স অবধি শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ পান করে থাকে এবং সেই সময় মহিলার যদি মাসিকধর্ম না হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কপার টি লাগানো যেতে পারে।
  • যদি কোনো মহিলার বাচ্চা বুকের দুধ খায় আর সাথে সাথে মহিলার মাসিকধর্ম শুরু হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ঐ মহিলাকে নিয়ম অনুযায়ী মাসিক ধর্ম শুরু হওয়ার ০১ সপ্তাহের মধ্যে কপার টি লাগিয়ে নিতে হবে।
সন্তান প্রসবের ০৬ মাস পর (বাচ্চা যদি বুকের দুধ খায়)
  • সন্তান প্রসবের ০৬ মাসের মধ্যে মাসিক ধর্ম শুরু না হলে কপার টি লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে কিন্তু তার আগে খেয়াল রাখতে হবে ঐ সময় মহিলা যাতে গর্ভবতী না হয়।
  • মাসিক শুরু হয়ে যায় তাহলে মহিলাদের মাসিকের তারিখ অনুযায়ী কপার টি লাগাতে হবে।
সন্তান প্রসবের ০৪ মাস পর (বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ না খেলে )
  • এই সময় মহিলাদের মাসিক না হলে এবং সেই মহিলা যদি গর্ভবতী না হয় তাহলে কপার টি লাগানো যায়।
  • এক্ষেত্রেও মাসিকধর্ম শুরু হয়ে গেলে শুরুর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কপার টি লাগানো যায়।
বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত মহিলা যাদের এখনো কোনো সন্তান হয় নি বিবাহিত হোক কিংবা অবিবাহিত, যেকোনো মহিলা গর্ভবতী নয় নিশ্চিত হলেই সেই মহিলা গর্ভনিরোধক হিসাবে কপার টি লাগিয়ে নিতে পারে।
গর্ভপাত হলে
  • গর্ভপাত হওয়ার ০৩-০৬ মাস অতিক্রম করলে,সাধারণত নারী জরায়ু সংক্রমণ মুক্ত হয়ে যায়। মোটামোটি নিশ্চিত হওয়া যায় জরায়ুতে সাধারণত কোনো ধরণের সংক্রমণ থাকেনা,তাই সেক্ষেত্রে ০৩-০৬ মাস পেরোনোর ০১ সপ্তাহের মধ্যে কপার টি লাগনো যাবে।
  • আবার যদি নারীর গর্ভপাত ০৭ দিনের বেশি হয় এবং ডাক্তার বাবু নিশ্চিত হয়ে যায় জরায়ুতে কোনো সংক্রমণ নেই তাহলে ডাক্তার বাবুর পরামর্শ নিয়ে কপার টি লাগানো যেতে পারে।
  • সংক্রমিত জরায়ুর ক্ষেত্রে ডাক্তার বাবুর পরামর্শে জরায়ু সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার পর কপার টি লাগানো উচিত।
  • নারীর গর্ভধারণ করার ০৬ মাস পর যদি কোনো নারীর গর্ভপাত হয়ে যায়, তাহলে সেই মহিলা কপার টি লাগাতে চায় তাহলে তাকে জরায়ুর সংক্রমণ থেকে মুক্তির জন্য জন্য ০৩-০৬ মাস অপেক্ষা করা উচিত।
আপদকালীন গর্ভনিরোধক হিসাবে নারী ও পুরুষের মধ্যে অসুরক্ষিত যৌন সহবাস করার ০১-০৫ দিনের মধ্যে কপার টি লাগালে গর্ভনিরোধ করা যায়।

 

আরো পড়ুন : স্বাস্থ্য বীমা কি ? জানুন স্বাস্থ্য বীমার যাবতীয় খুঁটি নাটি। 

কপার টি খোলার নিয়ম (Copper t kholar niyom)


কপার টি রিমুভ করা খুব সাধারণ একটি বিষয়। একজন অভিজ্ঞ গাইনো ডাক্তারের তত্বাবধানে ইচ্ছে মত সময়ের তোয়াক্কা না করেই কপার টি রিমুভ করা যায়।

কপার টি খোলার ০১ মাসের মধ্যে নারী শরীরে ৫০ % সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা চলে আসে যা ০২-০৩ মাসের মধ্যে স্বাভাবিক আগের মত গর্ভধারণের অবস্থায় পৌঁছে যায়।

কপার টি এর নিচে থাকা দুটি সুতোর একটিকে নিচের দিকে ধরে টান দিলে অতি সহজেই নারীর জরায়ু কপার টি রিমুভ (IUD) হয়ে যায়।

ডাক্তারবাবু তার চিমটে দিয়ে কপার টি এর নিচে থাকা সুতো টেনে কপার টি জরায়ু থেকে বার করে দেয়। কপার টি রিমুভ করার সময় কোনো কোনো মহিলারা হালকা ব্যাথা অনুভব করে।

এরকম পরিস্থিতিতে কোনো কোনো মহিলার জরায়ুর মধ্যে হালকা রক্ত ক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে। কিন্ত মহিলাদের এই রক্ত স্রাব মাসিক ধর্মের মত নয়।

কপার টি রিমুভ করার সময় রক্ত ক্ষরণ হওয়া একটি অতি সাধারণ বিষয়,যা সময়ের ব্যবধানে নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। কোনো মহিলার যদি কপার টি লাগানো থাকে

তাহলে ০২ বছরের ব্যবধানে পুরোনো কপার টি পরিবর্তন করে নতুন কপার টি লাগিয়ে নেওয়াটাই ভাল। তাতে কপার টি এর গুন ও মান দুইই অক্ষুন্ন থাকে।

আরো পড়ুন : জমি রেকর্ড কি ? জমির রেকর্ড করানো কেন দরকার ?

কপার টি লাগানোর সুবিধা (Copper t laganor subidha)


দেখুন কপার টি আপনি কেন লাগাবেন ? এর উত্তর আপনার নিশ্চয় আর বলে দিতে হবেনা কারণ আপনারা জানেন কপার টি লাগানোর সুবিধা হল কপার টি লাগালে পরে

খুব সহজেই অবাঞ্ছিত গর্ভনিরোধ করা যায়। তবুও কপার টি লাগানোর বিশেষ সুবিধা গুলোর  কতগুলো মুখ্য বিন্দু আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল –

০১. কপার টি হল একটি ধাতব পদার্থ যেটা প্লাস্টিকের দন্ডের উপর তামার পাতে মোড়া থাকে তাই কপার টি এর মধ্যে আলাদা করে

কোনো রকমের হরমোন অথবা কোনো গর্ভনিরোধক রাসায়নিক ঔষধ মেশানো থাকেনা। ফলে আলাদা করে বিক্রিয়া জনিত কারণে জরায়ুতে হানি হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।

কপার টি কি
কপার টি কি

০২. কপার টি ব্যবহারকারী মহিলাদের অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ করার সম্ভবনা না থাকায়,নারীদের মনে নারী পুরুষ সহবাস করলে গর্ভবতী হয়ে পড়ার মত মানসিক চিন্তা থাকেনা।

০৩. যদি কোনো দম্পতির, কপার টি ধারণ করার পর পরিবার বড় করার পরিকল্পনা থাকে তাদের বেবি প্লানিং থাকে তাহলে মহিলা তার জরায়ু থেকে যখন খুশি কপার টি রিমুভ করে পুনরায় গর্ভধারণ করতে পারে।

০৪. একটি ভালো মানের কপার টি একবার নারীর জরায়ুর মধ্যে স্থাপিত করা হলে সেই নারী অনায়াসে ১০ বছর পর্যন্ত অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারে।

০৫.  বাজারে আর যেসব বিকল্প গর্ভনিরোধক পদ্ধতি রয়েছে,যেমন- কন্ডোম,গর্ভনিরোধক বড়ি,নারী শরীরে গর্ভনিরোধক ইনজেকশন পুশ করা ইত্যাদির থেকে,

জরায়ুতে কপার টি স্থাপন করা অনেকটাই সুলভ, সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘ্য মেয়াদি একটি উপকরণ। যার জন্য আপনাকে বার বার টাকা খরচ করতে হবে না।

০৬. কপার টি (আই ইউ ডি) ব্যবহার করলে ৯৯.৯ % গর্ভনিরোধ করা যায় এবং কপার টি লাগানোর সাথে সাথে তা কার্যকর হয়।

০৭. কপার টি একটি দীর্ঘ্য মেয়াদি এবং সময় উপযোগী আধুনিক গর্ভনিরোধক উপকরণ হওয়ায় বর্তমান দম্পতির মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় গর্ভনিরোধক উপকরণ হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ।

আরো পড়ুন : করোনা ভাইরাসের নতুন লক্ষণ গুলো কি কি ?  ঘরোয়া উপায়ে করোনা প্রতিরোধ কিভাবে  করবেন। 

কপার টি সাইড এফেক্টস (Copper t side effects)


প্রত্যেক জিনিসের কিছু সুবিধা তো আবার কিছু হয়তো অসুবিধা থাকে তবে কোনো জিনিস যদি উপকারী ও সাশ্রয় হয় তাহলে কি সে জিনিস ব্যবহার করবেন না তাতো হয় না !

কপার টি এর কিছু সাইড এফেক্টস আছে,তবে তা নিতান্তই অবাঞ্ছিত একটি বিষয় যার জন্য আপনাকে খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হবেনা।

০১. কপার টি লাগানোর প্রথম দিকে কয়েক মাস কোনো কোনো মহিলার যৌনিতে হালকা রক্ত স্রাব হতে পারে। মাসিক ধর্মের সময় মাসিকে অতিরিক্ত রক্ত স্রাব এবং তলপেটে খিঁচুনি অনুভব হতে পারে।

০২. বিশেষ কিছু মহিলার কপার টি লাগানোর শুরুর দিকে, জরায়ু থেকে নিজে থেকেই কপার টি বার হয়ে আসার মত ঘটনাও চোখে পড়ে, আপনারা এটাকে কপার টি সাইড এফেক্টসও  বলতে পারেন।

০৩. বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে কপার টি ফিট না বসলে জরায়ু ছিদ্র হয়ে গর্ভাশয়ে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। তাই সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ গাইনো ডাক্তারের তত্বাবোধানেই কপার টি লাগানো উচিত।

০৪. যে সমস্ত মহিলাদের মাসিক ধর্মের সময় অতিরিক্ত রক্ত স্রাব হয় সেই সমস্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় কপার টি রিমুভ করতে গিয়ে জরায়ুতে কপার টি এর মাথায় লাগানো সুতো খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়।

০৫. কপার টি লাগানোর জন্য এবং কপার টি খোলার জন্য বার বার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। কপার টি নিজে থেকে লাগানো বা খোলা যায় না।

আরো পড়ুন : করোনার কোন ভ্যাকসিন সবথেকে ভালো এবং কার্যকরী। 

কপার টি দাম কত (Copper t price)


কপার টি দাম কত হেডিং খানা দেখেই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এবারে কপার টি এর দাম নিয়ে কথা বলা হবে। সাধারণত কপার টি এর দাম নির্ধারিত হয় কপার টি এর গুণমান এবং মেয়াদ এর উপর ভিত্তি করে ।

কপার টি এর মেয়াদ যত দীর্ঘ্য মেয়াদি হবে কপার টি এর দাম ও তত বেশি হবে। তবে একটি ভালো গুণমানের দীর্ঘ্য মেয়াদি (১০ বছরের) কপার টি এর দাম ৩০০-৫০০ টাকা এর মধ্যেই হয়।

কপার টি লাগানোর ভিডিও (Copper t laganor video)


নিচে কপার টি লাগানোর ভিডিও দেওয়া হল আপনারা পুরো কপার টি লাগানোর ভিডিও টি দেখলেই বুঝতে পারবেন কপার টি কিভাবে লাগানো হয়।

পরিশিষ্ট


কপার টি কি,কপার টি কিভাবে কাজ করে,কপার টি কিনে লাগাবেন না সরকারী হাসপাতাল থেকে লাগাবেন সবটুকু বুঝে উঠতে পারার মত প্রাসঙ্গিক আলোচনা করে

কপার টি এর যাবতীয় খুঁটি নাটি আপনাদের সামনে তুলে ধরা হল। আমার বিশ্বাস কপার টি কি ? নামটা শুনে আর আশ্চর্য্য হবেন না বরঞ্চ নিজেদের সুখী দাম্পত্য জীবনের

কথা মাথায় রেখে আপনি গর্ভনিরোধকের বিকল্প পদ্ধতি হিসাবে অবশ্যই কপার টি ব্যবহারের কথা ভাববেন। এছাড়াও কপার টি কি নিয়ে আরো ভালোভাবে জানতে হলে

আপনি একজন বিশেষজ্ঞ গাইনোকলজিস্ট ডাক্তার বাবুর সাথে পরামর্শ গ্রহণ করেন। আর কপার টি কি নিয়ে ছোট খাটো জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানান।

আমরা যথাসম্ভব যথাযথ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের লেখাটি আপনার কাছে যদি একটি সচেতনতা মূলক পোস্ট বলে মনে হয় তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

FAQ


প্রশ্ন – কপার টি কি ?

উঃ – কপার টি হল  প্লাস্টিক ও তামার সমন্বয়ে তৈরী দীর্ঘ্য মেয়াদি একটি আধুনিক গর্ভনিরোধক উপকরণ।

প্রশ্ন – কপার টি লাগানোর কত দিন পর sex করা যায় ?

উঃ – যিনি (মহিলা) কপার টি লাগিয়েছেন তার শারীরিক কোনো অসুবিধা না হলে কপার টি স্থাপনের প্রথম দিন থেকেই Sex করতে পারেন।

প্রশ্ন – কপার টি কোথায় লাগানো হয় ?

উঃ – সমস্ত সরকারী ব্লক এবং মহকুমা হাসপাতালে বিনা পয়সায় কপার টি লাগানো হয়। আপনি প্রয়োজনে বেসরকারী হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ডাক্তার বাবুর ক্লিনিক থেকে টাকা দিয়ে কপার টি লাগাতে পারেন।

এই আর্টিকেল গুলোও পড়ে দেখুন –

 

5/5 - (1 vote)

6 COMMENTS

    • সাজিয়া আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। দেখুন বাংলাদেশে জেলা সরকারি ক্লিনিকগুলোতে কমবেশি কপার টি উপলব্ধ থাকে। তবে সব সময় সরকারি ক্লিনিকে কপার টি উপলব্ধ না থাকতেও পারে। তবে কপার টি এর দাম খুব বেশি নয় আপনি ৭০০ টাকার মধ্যে খুব ভালো মানের কপার টি প্রাইভেট ঔষধের দোকানে পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে কপার টি কিনে নিয়ে গিয়ে সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার বাবুর কাছে বিনা পয়সায় কপার টি লাগিয়ে নিতে পারেন।

  1. আমার সিজার এর সময় কপার টি পরানো হয়েছিলো। চার মাস আগে আমার সিজার হয়।১ম বাচ্চা আমার।কপারটি পরার পরে মাসে ২০ দিনেই মাসিক থাকে।যেটা খুব অস্বস্তিকর।তাই কপারটি আজ চার মাস পর খুলতে গিয়েছিলাম রংপুর মা ও শিশু সদর হাসপাতালে।ওনারাই পরিয়ে দিয়েছিলো।কিন্তু দূর্ভাগ্গ তারা আমার কপারটির সুতাটি খুজে পায়নি।আমি অনেক কষ্ট পেয়ছি জরায়ু তে।ঠিকভাবে হাটতে কষ্টহচ্ছে। আমি তাহলে কি করবো?জদিও তারা আমাকে আবার দু মাস পরে ডকেছে খুলে দেয়ার জন্য।খুব কষ্ট দায়ক ব্যাথা।

    • বিদিশা হাবিব, আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা আপনার মূল্যবান কমেন্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের সাথে ভাগাভাগি করার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার সমস্যা হল আপনার যৌনিতে কপার টি স্থাপন করার পর মাসে ২৮ অথবা ৩০ দিন পর নিয়মিত ভাবে পিরিয়ড না হয়ে, আপনার মাসের ২০ দিনের মধ্যে পিরিয়ড হয়ে যাচ্ছে অথবা পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর টানা ২০ দিন যাবৎ আপনার জরায়ুতে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, যেটা আপনার কাছে অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিদিশা হাবিব, প্রাকৃতিক নিয়মে সন্তান প্রসবের সময় এগিয়ে এলে মেয়েদের যৌনি অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং নরম ও প্রসারিত হয়ে যায়। যৌনিপথ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, যৌনিপথ দিয়ে জল(পানি) ভাঙে, এক কথায় মেয়েদের যৌনি তখন অত্যন্ত নরম থাকে। তারপর আপনার সন্তান সিজার করে হোক কিংবা নরম্যাল ডেলেভারি হোক ফুল পড়ে। তাই সন্তান প্রসবের পরও নিয়মমাফিক যৌনিকে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সাধারণভাবে ০৩ থেকে ০৪ মাস সময় লাগে। কিন্তু এখানে প্রত্যেক মহিলার শারীরিক গঠন আলাদা আলাদা, তাই এমন হতে পারে আপনার জরায়ুতে ডাক্তারবাবু যখন কপার টি লাগিয়েছিল,তখন আপনার যৌনি হয়তো আগের মত স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে আসেনি। আপনার যৌনিপথ তখনো অনেক নরম ছিল, তাই কপার টি লাগানোর পর ধীরে ধীরে যৌনি পথ শুকিয়ে গিয়ে যৌনির নরম চামড়ার মধ্যে কপার টি এর সুতোর উপর মাংস জমে গেছে। তাই সবার মত আপনার যৌনিতে কপার টি এর সুতোটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু এখানে ঘাবড়ে যাবেন না। অনেক সময় ডাক্তার বাবুরা যত্নশীলভাবে কপার টি না পড়ানোর জন্য এইধরণের সমস্যা হতে পারে,আবার অনেক সময় আপনার শারীরিকভাবে জরায়ুর গঠনগত তারতম্যের জন্যেও এই ধরণের সমস্যা হতে পারে। এখন আপনি বলেছেন আপনার হাটা চলা করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, তাই দেরি না করে অতি শিগ্রি জরায়ুর ‘আলট্রা সোনোগ্রাফি'(USG) করে দেখা উচিত আপনার জরায়ুর ভিতরে মাংসপিন্ড জমে কপার টি এর সুতোটা চাপা পড়ে গেছে কিনা। যদি আপনার জরায়ুতে সুতোটার উপর মাংস পিন্ড জমে যায়, তাহলে জানবেন আপনার জরায়ুতে মাংসপিন্ড জমে যাওয়ার জন্যে আপনার পিরিয়ডের রক্ত সঠিক নিয়মে বেরিয়ে আসতে পারছেনা,মাংসপিন্ডের জন্যে মাসিকের সময় রক্তক্ষরণ আঁটকে থাকছে যার জন্যে আপনার পিরিয়ডের রক্তক্ষরণ ২০ দিন ধরে হচ্ছে। তাই এখন আপনাকে একজন অভিজ্ঞ গাইনো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কপার টি টা বার করে নেওয়ায় আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত। পরে আপনার শরীর ঠিক হয়ে গেলে আপনি চাইলে ০৯/১০ মাস পরে একজন অভিজ্ঞ গাইনো ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে একটি ভালোমানের কপার টি কিনে লাগাতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here