হিন্দু ধর্মে হরিয়ালি টিজ, করবা চৌথ, শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, শিব রাত্রি, আরো ইত্যাদি অনেক ব্রত আছে। কিন্তু একাদশী ব্রত হল তার মধ্যে অন্যতম একটি প্রধান ব্রত। কারণ একাদশী পালনের নিয়ম (Ekadoshi Paloner Niyom),
আচার-আচরণ যথেষ্ট মার্জিত ভক্তি মূলক এবং আর সব ব্রত থেকে আলাদা। সবমিলিয়ে একাদশী ব্রতের এক আলাদা মাহাত্ম্য আছে। আমরা জানি আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা একাদশীর ব্রত পালন করেন।
কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আবার একাদশী কি, একাদশী পালনের নিয়ম, একাদশী পারণ মন্ত্র, একাদশী ব্রত কেন পালন করতে হয় বা একাদশীতে কেন উপবাস রাখতে হয়,
একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবেনা, একাদশীর খাদ্য তালিকায় কোন কোন খাদ্য দ্রব্য রাখা যাবে, নির্জলা একাদশী, একাদশীর মাহাত্ম্য ইত্যাদি বিষয় গুলো সম্পর্কে হিন্দু ধর্মের মানুষ হয়েও সেরকম ভাবে খোঁজ খবর রাখেনা।
তবে আমাদের আর্টিকেলটি হিন্দু ধর্মালম্বী মা বোন ও ভাই বন্ধু যারা, হিন্দু ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে তাদের জন্যে খুবই উপকারী হতে চলেছে , কারণ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে একাদশী পালনের নিয়ম,
একাদশী কেন পালন করতে হয়, নির্জলা একাদশী, একাদশী পারণ মন্ত্র, একাদশীর কাহিনী, একাদশী তালিকা ২০২২ (Ekadoshi List Iskon 2022), একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য pdf সমস্ত কিছু তুলে ধরব একাদশী পালনের নিয়ম আর্টিকেলটির মধ্যে দিয়ে।
একাদশী কি (What is Ekadoshi Broto)
একাদশী কি (What is Ekadoshi) ? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা খুব সহজভাবে দেওয়ার চেষ্টা করব। একাদশী হল একটি চাঁদের তিথি। আপনারা জানেন চাঁদের (Moon) দুটি পক্ষ এবং এবং ১৫ টি তিথি আছে।
চাঁদের এই দুটি পক্ষ হল- ক) কৃষ্ণপক্ষ এবং খ) শুক্লপক্ষ। আর তিথি গুলো হল যথা- প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী এবং পূর্ণিমা অথবা অমাবশ্যা।
চাঁদের গতিপথের অমাবস্যার পরে পূর্ণিমা পর্যন্ত সময়কালকে শুক্লপক্ষ বলে আর পূর্ণিমার পরে অমবস্যা পর্যন্ত সময়কালকে কৃষ্ণ পক্ষ বলে। চাঁদের এই দুই পক্ষের অথাৎ কৃষ্ণপক্ষ এবং শুক্লপক্ষ,
উভয় পক্ষের একাদশী তিথিটিকে হিন্দু ধর্মে বিশেষ পুন্য অর্জনের দিন বলে মনে করা হয়। তাই হিন্দুধর্মালম্বী মানুষের কাছে নিরম্বু উপবাস বিহিত একাদশীর ব্রত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
একাদশীর দিন বহু হিন্দু পুণ্য লাভের আশায় একাদশী ব্রত পালন করে থাকেন। একাদশীর দিন পঞ্চরবি শস্য (দানা শস্য) বাদ দিয়ে অথাৎ চাল,গম ইত্যাদি শস্য দ্বারা নির্মিত ভাত,রুটি ইত্যাদি উপাদেয় গুলো বাদ দিয়ে,
বিভিন্ন রকমের শাক সবজি,ফলমূল এবং দুধ খাওয়া যায়। তবে অন্যান্য একাদশীর মধ্যে ভগবান নারায়ণের পার্শ্ব (পাশ) পরিবর্তন ও উত্থানকে কেন্দ্র করে আষাঢ়, ভাদ্র ও কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশী তিথিকে বিশেষ শুভপ্রদ বলে মনে করা হয়।
এছাড়াও ভৈমী একাদশী ও মাঘের শুক্লা একাদশী তিথির আলাদাভাবে মর্যাদা থাকার জন্যে এই একাদশী তিথি গুলোকে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। শাস্ত্রমতে প্রত্যেক একাদশী পালনেই বিশেষ পুণ্যের অধিকারী হওয়া যায়।
নিয়মিত একাদশীর ব্রত পালন করলে শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং বিজ্ঞান সম্মতভাবেও মাসে দুইদিন মার্জিতভাবে উপবাস রাখা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো ফল দায়ক একটি উপাচার।
আরো পড়ুন :
- শিবরাত্রি কেন পালন করা হয় ও শিবরাত্রি পালনের নিয়ম।
- শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কেন পালন করা হয়।
- হারিয়ালি টিজ কেন পালন করা হয়।
- ছট পূজা কি ও ছট পূজা কেন করা হয়।
- দীপাবলি মানে কি ? দীপাবলি কেন পালন করা হয়।
- মহালয়া কেন পালন করা হয়।
একাদশী কেন পালন করতে হয়
একাদশী কেন পালন করা হয় এই প্রসঙ্গে বলতে গেলে দেখা যায়- পদ্মপুরাণ অনুযায়ী জৈমিনি ঋষি তার গুরুঠাকুর ব্যাসদেবকে একবার জিজ্ঞাসা করেন হে গুরুদেব একাদশীর আবির্ভাব কেমন করে হয়েছে, একাদশী কেন পালন করতে হয় ?
একাদশীতে কেন উপবাস রাখা উচিত,একাদশী পালনের নিয়ম নিয়ে জীবকূলে মনুষ্য যৌনির জন্যে একাদশী ব্রত পালনের মাহাত্ম্য নিয়ে আমাদের যাবতীয় সংশয় দূর করুন।
মহির্ষী ব্যাসদেব তখন জৈমিনির কাছে একাদশীর আবির্ভাবের কথা বর্ণনা করে বলেন, একাদশীর প্রকৃত মাহাত্ম্য শুধু ভগবান নারায়ণই সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারেন।
তবে তুমি যখন প্রশ্ন করেছ আমি তখন একাদশী কেন পালন করা হয় বা আমাদের একাদশী কেন পালন করা উচিত সেই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করব।
ভগবান নারায়ণ সৃষ্টির শুরুতে পঞ্চভূত দ্বারা জীবকুল ও পৃথিবীর স্থাবর এবং অস্থাবর জ্বরা রুপী মোহো মায়ার সংসার নির্মাণ করেন। তারই সঙ্গে সৃষ্টির সময় মর্ত্যবাসীদের কৃতকর্মের দ্বারা করা পাপীদের করা পাপের
শাস্তি দেওয়ার জন্যে ভয়ানক চেহেরার একটি পাপপুরুষ তৈরী করেন। ভগবান পাপপুরুষের নির্মাণ কিছুটা এইভাবে করেছিলেন – পাপ পুরুষের মাথা তৈরী হয়েছিল ব্রহ্ম্য হত্যার পাপ দিয়ে ,
চোখ দুটি তৈরী হয়েছিল নেশা আসক্ত পাপ দিয়ে, মুখ তৈরী হয়েছিল স্বর্ণচৌর্যজনিত পাপ দিয়ে, দুই কান তৈরী করা হয় গুরুপত্নী উপগমনের পাপ দিয়ে,নাখ দুটি পরপত্নী হত্যার পাপ দিয়ে,
দুই হাত তৈরী হয়েছিল গো-হত্যার পাপ দিয়ে, ঘাড় (গ্রীবা) তৈরী হয়েছিল পরধন লোভীতার পাপ দিয়ে, বুকের উপরের অংশ ভ্রূণ হত্যার পাপ দিয়ে, বুকের নিচের অংশ পরস্ত্রী আসক্তির পাপ দিয়ে,
পেট আত্মীয়স্বজন হত্যার পাপ দিয়ে, নাভি অধীনস্থ মানুষের হত্যা জনিত পাপ দিয়ে। কোমর আত্মশ্লাঘা জনিত পাপ দিয়ে, জাঙ (জঙ্ঘাদেশ) গুরুনিদা জনিত পাপ দিয়ে, লিঙ্গ (যৌনাঙ্গ) শিশু কন্যা বিক্রির পাপ দিয়ে,
পশ্চাৎ দেশ (পাছা) গুপ্তকথা প্রকাশ করার পাপ দিয়ে,পা দুটো পিতৃ হত্যার পাপ দিয়ে এবং মাথার চুল সহ শরীরের অন্যান্য লোমাদি আরো অন্যান্য পাপ দিয়ে পাপপুরুষের নির্মাণ করা হয়েছিল।
বিধাতা দ্বারা নির্মিত পাপপুরুষের চেহেরা ছিল অতিকায় ভয়ানক- পাপপুরুষের চোখ দুটি ছিল পীত রঙের, পুরো শরীরের রং ছিল ঘোর অন্ধকার ময় কুচকুচে কালো।

এই কালো রঙের পাপপুরুষটির নির্মাণ মনুষ্যদিকে পাপ কর্মের জন্যে কঠিন শাস্তি দেওয়ার জন্যে তৈরী করা হয়। এইভাবে সৃষ্টির শুরুতে ভয়ঙ্কর চেহেরার পাপপুরুষটিকে নির্মাণ করার পর
ভগবান নারায়ন মর্ত্যবাসী মনুষ্যদের কথা চিন্তা করে দেখলেন এই জীব জগতের সৃষ্টি ও শুরুর মুলে যখন আমি, জীবজগতের পালন ও রক্ষার ভার যখন আমার হাতে,
তখন পাপ পুরুষের নিয়ন্ত্রণে জীব জগতের কল্যানে আমার কিছু করা উচিত। তা নইলে সমগ্র জীবকুল পাপী পুরুষের প্রভাবে পাপে ভরে যাবে এবং মর্ত্যধামে ধর্ম বলে আর কিছু থাকবেনা।
ভগবান নারায়ণ তখন সৃষ্টির পুনঃবিবেচনা করে নতুনভাবে যমরাজ সহ বিভিন্ন ধরণের নরকের সৃষ্টি করলেন। পাপীদের পাপ বিচার করার জন্যে যমরাজের কাছে পাঠিয়ে নরক যন্ত্রনা ভোগের ব্যবস্থা করলেন।
এইভাবে জগৎ সংসারে পাপপুরুষ, মনুষ্য ও নানান ধরণের জীবদেহ নির্মাণের পরে ভগবান নারায়ণ একদিন যমলোকে এসে উপস্থিত হলেন। ভগবান নারায়ণকে যমলোকে পা রাখতেই যমরাজ ভগবান নারায়ণকে স্রষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন।
যমলোকে যমরাজ নারায়ণকে প্রণাম করে সিংহাসনে বসিয়ে ভগবান নারায়ণের ভক্তিভরে পূজা করলেন। কিন্তু সিংহাসনে বসেই ভগবান নারায়ণ যমলোকে নরকের দ্বার থেকে মানুষের করুন কান্নার আওয়াজ পেলেন।
নারায়ণ তখন যমরাজকে নরকের দ্বার থেকে কান্নার আওয়াজ আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। যমরাজ বললেন ‘হে প্রভু! মর্ত্যলোকের মানুষ পাপপুরুষের ছায়ায় প্রভাবিত হয়ে তার কৃতকর্মের করা পাপের জন্যেই নরকে এসে নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে।
ভগবান তখন নরক যন্ত্রনায় ভোগা মানুষজনদের দেখতে নরকের দ্বারে গিয়ে উপস্থিত হলেন। ভগবানকে দেখে নরকের মানুষ চিৎকার করে ভগবান নারায়ণের কাছে নরক যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করার জন্যে কৃপা প্রার্থনা করার জন্যে বললেন।
ভগবান নারায়ণের তখন করুণ মনে দয়া হল, ভগবান বিচলিত হয়ে চিন্তা করলেন এই জীবকূল তো আমারই সৃষ্টি তখন এই জীবকুলের নরকদশা থেকে উদ্ধারের জন্যে আমার কিছু করা উচিত।
পরমেশ্বর ভগবান তখন তার পূর্বের বিচার পুনঃবিবেচণা করে পাপাচারী মানুষদের পাপ নাসের জন্যে ভগবান স্বয়ং একাদশী নামে দেবীমূর্তীতে আবির্ভুত হলেন।
তারপর সমগ্র নরকগামী নরক যন্ত্রনায় ভোগা পাপীদের একাদশী ব্রত করার জন্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়ে সকল পাপীদের একাদশীর ব্রত করিয়ে নরক যন্ত্রনা থেকে উদ্ধার করলেন।
এইভাবেই একাদশীর ব্রত করে সকল পাপীরা তাদের কৃতকর্মের করা পাপ থেকে উদ্ধার হল এবং সমস্ত পাপীরা তৎক্ষণাৎ ভগবানের সঙ্গে বৈকুন্ঠ ধামে চলে গেলেন।
একাদশীতে কেন উপবাস রাখতে হয় (Ekadoshite Keno Upbas rakhte hoy)
আশাকরি আপনারা এবারে নিশ্চয় একাদশী কেন পালন করতে হয় বুঝতে পারলেন। এবারে আমরা একাদশীতে কেন উপবাস রাখতে হয় সেই ব্যাপারে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
একাদশী হল স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর (নারায়ণের) রুপ। ভগবান শ্রী হরির অপর রুপ হল একাদশী। একাদশী হল সমস্ত ব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম ব্রত। শ্রীহরির একাদশী রুপে আবির্ভাবের জন্যেই পাপ পুরুষের প্রভাব শেষ হয়ে যায়।
যাইহোক জগৎ সংসারে একাদশীর আবির্ভাবের ফলে পাপ পুরুষের প্রভুত্ব ধীরে ধীরে কম হতে থাকলে, পাপপুরুষ শ্রী নারায়ণের কাছে করজোড়ে এসে হাজির হলেন।
পাপপুরুষ ভগবানের উদ্দেশ্যে বললেন হে বিধাতা আমি আপনার প্রজা, আপনারই সৃষ্টি, যারা আমাকে আশ্রয় করে থাকে তাদের কর্মের ফল অনুযায়ী তাদিকে দুঃখ দেওয়ায় আমার কাজ ছিল।
কিন্তু আপনি ধরাধামে শ্রী একাদশীর আবির্ভাব ঘটিয়ে জগৎ সংসারে এসে মানুষ পাপ কাজ করা থেকে বিরত হচ্ছে আর আমি তাদের উপর কিছুই করতে পারছিনা এবং আমার অস্তিত্ব দিন প্রতিদিন কমে আসছে।
একাদশী ব্রত করে সব পাপাচারী মানুষ তাদের পাপ থেকে উদ্ধার হয়ে, আপনার সাথে বৈকুন্ঠ ধামে আশ্রয় পাচ্ছে, সুতরাং- ‘হে ভগবান আমার কি হবে, পাপ ও পাপী ছাড়া আমি কার আশ্রয়ে থাকব ?’
একাদশীর প্রভাবে মানুষের মধ্যে থাকা পাপরূপী পুরুষের মৃত্যুর পর তার শরীরের অবশিষ্ট্যাংশ গুলো জড়দেহে ধারণ করে সবাই যদি বৈকুন্ঠ ধামে চলে যায় তাহলে এই মর্ত্য লোকের কি হবে ?
আমি একাদশীর প্রভাবে পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ, পাহাড়, নদী কোথাও আশ্রয় না পেয়ে দেবতাদের নিকট আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু একাদশীর প্রভাবে সেখানেও আশ্রয় নিতে পারছিনা।
হে ভগবান তাহলে আপনিই বলুন একাদশীর আবির্ভাবে যেখানে সবাই একাদশীর ব্রত করছে তাহলে আপনার সৃষ্টিকরা জগৎ সংসারে আমার আশ্রয় কোথায় হবে ? আমাকেও একটি নির্ভয় আশ্রয় দিন,যে আশ্রয়ে থেকে আমি একাদশীর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারব।
পরম দয়াময় ভগবান নারায়ণ পাপপুরুষের কাতর প্রার্থনা স্বীকার করে বললেন ‘হে পাপ পুরুষ! তুমি দুঃখ কোরোনা ! একাদশীর দিন তোমার থাকার নির্ভয় বাসস্থান বলে দিচ্ছি, তুমি সেখানেই একাদশীর দিন অবস্থান করবে এবং সেখানে তুমি সুরক্ষিত থাকবে।
হে পাপপুরুষ যখনই ধরাধামে একাদশী তিথির আবিৰ্ভাৱ হবে তখন তুমি অন্ন ও রবি শস্যের মধ্যে অবস্থান করবে। একাদশীর দিনে ঐ সমস্ত জায়গায় অবস্থান করলে আমার অভিন্ন মূর্তি তোমায় বধ অথাৎ নাস করতে পারবেনা।
এইভাবেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীনারায়ণ পাপপুরুষের নির্ভয় আশ্রয়স্থানের খোঁজ দিয়ে অন্তর্ধান হয়ে যায় এবং পাপপুরুষ তার উপযুক্ত নিরাপদ বাসস্থান খুঁজে পায়।

তাহলে বুঝতে পারছেন হিন্দু ধর্মের মানুষদের একাদশীতে কেন উপবাস রাখতে হয় ? আসলে ভগবান নারায়ণের আদেশে একাদশী ব্রতর দিন পাপ পুরুষ বাবদ জগৎ সংসারের সকল পাপ কর্ম নিরাপদ ও নির্ভয় আশ্রয়স্থান স্বরূপ
খাদ্যশস্যের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাই হিন্দু ধর্মের মানুষেরা একাদশীর দিন পরম পুণ্য লাভের আশায় একাদশীর ব্রত করে একাদশীতে দানা শস্য গ্রহণ করেন না।
তাই যে সমস্ত ভক্তগণ একাদশী তিথিতে একাদশীর ব্রত করে তারা সকল প্রকার পাপ থেকে পরিত্রান লাভ করে নরক যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পায়। আর অপরদিকে একাদশীর দিন দানা শস্য খেলে কোটি ব্রাহ্মণ হত্যার সমান পাপ হয়।
তাই বর্ণ গৌত্র নির্বিশেষে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রীয়, বৈশ্য, শূদ্র সমস্ত জাতির মানুষকেই একাদশীর ব্রত পালন করা উচিত। শাস্ত্রমতে একাদশীর দিন উপবাস না রেখে খাদ্য শস্য গ্রহণ করলে ব্রাহ্মণ হত্যার সমতুল্য পাপের ভাগিদার হতে হয়।
তাই যে সমস্ত ভক্তগণ একাদশীর দিনে একাদশী ব্রত পালন করে সেই সমস্ত ভক্তগণের সমস্ত পাপ বিনাশ হয়ে তাদের বৈকুন্ঠ ধামে আশ্রয় লাভ হয়।
(আরো পড়ুন : জগন্নাথ মন্দিরের রহস্য)
একাদশী পালনের নিয়ম
যে সমস্ত ভক্তগণ একাদশী পালন করতে চান, সেই সমস্ত ভক্তগণকে সবার প্রথমে ভোরবেলা বিছানা ত্যাগ করতে হবে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্রে ঠাকুর ঘরে গিয়ে ঠাকুর জাগরণ ও আরতি করতে হবে।
তবে স্নান করার সময় কোনো সুগন্ধি, সাবান, শ্যাম্পু, ফেস ওয়াশ, মাথার তেল, বডি পারফিউম, কাপড়ে লাগানো সুগন্ধি দ্রব্য এই সমস্ত জিনিস একেবারে লাগানো বারণ।
তারপর শ্রী গুরুর নাম নিয়ে ‘ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে প্রণাম করে, একাদশীর ব্রত পালনের জন্য সংকল্প করতে হবে। ‘হে প্রভু আমার উপর কৃপা কর তোমার ভক্ত মঙ্গলময় একাদশীর ব্রত যেন ভালোভাবে পালন করতে পারে, সেই প্রার্থনা করি প্রভু।’
একাদশীর দিন পরনিন্দা,কুকথা গাওয়া,মিথ্যাচার,ক্রোধ,দিবানিদ্রা,আলাপচারিতা করা বারণ। একাদশীর দিন পুরো দিন প্রভুর নাম কীর্ত্তণ জপ আদির মধ্যে ভক্তগণকে মগ্ন থাকতে হয়।
এছাড়া একাদশীর দিন গঙ্গা স্নান, শ্রী গৌর হরির পূজা, গীতা ও ভাগবত পাঠ করা অত্যন্ত পূর্ন্যের কাজ বলে মনে করা হয়। যে সমস্ত ভক্তগণ মালা জপ করেন তারা মালা জপ করতে পারেন।
একাদশীর দিন খৌর কর্মাদি নিষিদ্ধ মানে- একাদশীর দিন চুল,নখ,দাড়ি ইত্যাদি কাটা যাবেনা। একাদশীর দিন কাম (sex),ক্রোধ থেকে নিজেকে দূরে রেখে কৃষ্ণ প্রেমে নিজেকে বিলীন রাখতে হবে। সর্বমোট ২৪ টি একাদশী আছে, প্রত্যেকটি মাসেই ০২ টি করে একাদশী থাকে।
একাদশীর তালিকা
একাদশীর তালিকায় সর্বমোট ২৪ খানা একাদশী আছে। প্রত্যেক মাসের কৃষ্ণ পক্ষে ০১ টি একাদশী এবং শুক্ল পক্ষে ০১ টি একাদশী, সবমিলিয়ে মাসে ০২ টি করে একাদশী থাকে। একাদশী গুলো হল-
০১.উৎপন্না একাদশী, ০২. মোক্ষদা একাদশী, ০৩. সফলা একাদশী, ০৪. পুত্রদা একাদশী, ০৫. ষটটিলা একাদশী, ০৬. জয় একাদশী, ০৭. বিজয়া একাদশী, ০৮. আমলকী একাদশী, ০৯. পাপমোচনী একাদশী, ১০. কামদা একাদশী, ১১. বরুথিনী একাদশী,
১২. মোহিনী একাদশী, ১৩. অপরা একাদশী, ১৪. নির্জলা একাদশী, ১৫. যোগিনী একাদশী, ১৬. শয়ন একাদশী, ১৭. কামিকা একাদশী, ১৮. পবিত্রা একাদশী, ১৯. অন্নদা একাদশী, ২০. পরিবর্তিনী একাদশী, ২১. ইন্দিরা একাদশী, ২২. পাশাংকুশা একাদশী, ২৩. রমা একাদশী, ২৪. উত্থান একাদশী।
একাদশীর খাদ্য তালিকা (Ekadoshi Food List)
একাদশী পালনের নিয়মে একাদশীর খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার ভক্ষণ করা সবথেকে বড় কঠিন কার্য্যের মধ্যে পরে। কারণ একাদশী ব্রতের মূল উদ্দেশ্যই হল খাবারের প্রতি সংযম করা।
যে সমস্ত ভক্তগণ একাদশীর ব্রত রাখবেন, সেই ভক্ত যদি শারীরিকভাবে সক্ষম হন তাহলে একাদশী পালনের নিয়ম অনুযায়ী একাদশীর আগের দিন অথাৎ দশমীর দিন শুধু দিন কিংবা রাত্রি শুধু একবার আহার করবেন।
তবে রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভালো করে ব্রাশ করে নেবেন, যাতে দাঁতের ফাঁকে খাবারের অবশিষ্ট্যাংশ কোনো মতেই দাঁতের ফাঁকে আঁটকে না থাকে।

একাদশীর দিন আর নতুন করে ব্রাশ করবেন না শুধু খালি মুখে ভালো করে কুল কুচি করে নেবেন। কারণ ব্রাশ করার সময় অনেক ক্ষেত্রে দাঁত থেকে রক্ত ক্ষরণ হতে দেখা যায় ,আর একাদশীতে রক্তক্ষরণ করা একদম নিষিদ্ধ।
এরপর একাদশীর দিন পুরোদিন নিরাহার থেকে রাত্রি জাগরণ করে ঠাকুরের নামগান করবেন এবং একাদশীর পরের দিন দ্বাদশীতে শুধু একবার আহার করবেন। তবে ভক্ত যদি শারীরিকভাবে অসমর্থ হয় তাহলে শুধুমাত্র একাদশীর দিন নিরাহার থাকবেন।
আর ভক্তগণ যদি একেবারেই না পারুক হন, মানে সত্যিকরেই ভক্তের শরীর খারাপ এবং তিনি নিরাহার একাদশী করতে অসমর্থ তারা পঞ্চ রবি শস্য বাদ দিয়ে ফলমূল ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করতে পারেন।
একাদশীর ব্রত পালনের সময় একাদশীর খাদ্য তালিকায় যে সমস্ত খাবার গুলো রাখতে পারবেন সেই সমস্ত খাদ্য গুলো হল-
- গোল আলু, মিষ্টি আলু, চাল কুমড়ো, পেঁপে, ফুলকপি, টমেটো ইত্যাদি খেতে পারেন।
- রান্নায় সমস্ত রকমের তেল বাদ দিয়ে রান্নার জন্যে শুধুমাত্র ঘী ব্যবহার করতে হবে, তবে ছোঁক দেওয়ার জন্যে পাঁচ ফোড়ন ব্যবহার করা যাবেনা ।
- রান্নার কাজে সমস্ত রকমের মসলা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মরিচ, হলুদ, ও সিন্ধু লবন ব্যবহার করতে পারেন।
- ফলমূল হিসাবে- আপেল, কলা, আঙ্গুর, আনারস, আখ, তরমুজ, বেল, নারিকেল, বাদাম খেতে পারেন। তবে ফলমূল আদি কাটার সময় খুব সাবধানে কাটবেন যাতে হাত না কেটে যায়। কারণ একাদশীতে রক্তক্ষরণ একেবারেই নিষিদ্ধ।
- তরল পানীয় হিসাবে দুধ ও লেবু জলের শরবত পান করতে পারেন।
নোট : একাদশীর ব্রত মূলত নিরাহার একাদশী পালন করা উচিত। তবে এই সমস্ত খাদ্য দ্রব্য গুলো ভগবানকে উৎসর্গ করে শুধু তারাই সেবন করতে পারেন যারা সত্যি সত্যি নিরাহার একাদশীর ব্রত করতে অপারক।
একাদশীর ব্রত পালনের মধ্যে দিয়ে ভক্তগণের প্রধান কর্ম হল গোবিন্দকে স্মরণ করা। তাই পারুক ও অপারক ভক্তরা যে, যে নিয়মেই একাদশীর ব্রত পালন করুক কিনা, সবার উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই হওয়া উচিত “গোবিন্দকে স্মরণ করা। “
একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবেনা (Ekadoshite Ki Ki Khaoya Jabena)
এতক্ষন আমরা একাদশী পালনের নিয়ম, একাদশী কেন পালন করতে হয় অথাৎ আমাদের একাদশী কেন পালনের নিয়ম সহ আমাদের একাদশী কেন পালন করা উচিত সেই সমস্ত ব্যাপারে আলোচনা করলাম।
আপনারা যে সমস্ত ভক্তগণ একাদশীর ব্রত পালন করেন তাদের একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবেনা অথাৎ কোন কোন খাবার গুলো একাদশী পালনের নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া অনুচিত সেই সমস্ত খাদ্যগুলোর নাম জানা দরকার-
- ধান থেকে তৈরী সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্য যেমন- চাল,মুড়ি,চিড়া,পায়েস,চালের পিঠা,খৈ ইত্যাদি একাদশীতে খাওয়া যাবেনা।
- গম থেকে তৈরী খাদ্যদ্রব্য যেমন- আটা, ময়দা, সুজি, বেকারী জাতীয় খাদ্য- বিস্কুট,হরলিক্স, কমপ্লান, সুজি জাতীয় জিনিস একাদশীতে খাওয়া যাবেনা।
- যব এবং ভুট্টা থেকে তৈরী খাদ্যদ্রব যেমন- ছাতু, পপকর্ণ, ছাতু ইত্যাদি একাদশীতে খাওয়া যাবেনা।
- সর্ষের তেল,সয়াবিন তেল, তিলের তেল একাদশীর খাবারে ব্যবহার করা যাবেনা।
- সকল প্রকারের ডাল যেমন- মাসকলাই,মুগ,খেসারী,মুসুরী,ছোলা, অড়হর, মটরশুটি,বরবটির,সয়াবিন ডাল ইত্যাদি একাদশীতে খাওয়া যাবেনা।
- এইসমস্ত খাদ্যদ্রব্য গুলো ছাড়াও যে সমস্ত ভক্তগণ পান,বিড়ি,সিক্রেট,চা,কফি ইত্যাদি নেশাজাত দ্রব্য একাদশীতে খাওয়া যাবেনা।
একাদশীর ব্রত এমন একটি ব্রত যে ব্রত করলে শুধু নিজের কল্যাণ হয়না, যে ভক্ত একাদশীর ব্রত পালন করে সেই ভক্তের প্রয়াত মাতা পিতার কৃতকর্মের করা পাপ নাস হয়ে যায় এবং তারা নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পায়।
যদি কোনো মানুষ জেনে বুঝেও একাদশীর দিন নিজে অন্ন গ্রহণ করে এবং অপর ব্যক্তিকে অন্ন খাওয়ায় তাহলে সেই ব্যক্তির নরক বাস হয়। সুতারং সকল হিন্দু ভাইবোনদের আমাদের একান্ত চিত্তে একাদশীর ব্রত পালন করা উচিত।
(আরো পড়ুন : গণেশ চতুর্থী কি, গণেশ চতুর্থী পালনের নিয়ম)
একাদশী পারণ (Ekadoshi Paron)
একাদশী পালনের নিয়ম অনুযায়ী একাদশী পালনের বিধি, একাদশীর আগের দিন থেকে শুরু হয়ে যায়। একাদশীর আগের দিন সারাদিনে একবার খাবার গ্রহণ করতে হয়।
তারপরের দিন মানে একাদশীর দিন নিরাহার থাকতে হয়। একাদশীর পরের দিন মানে দ্বাদশীর দিন সকাল বেলা স্নান সেরে, মানে একাদশীর উপবাস ভাঙার জন্যে পঞ্জিকায় দেওয়া নির্দিষ্ট সময় অনুসারে একাদশীর পারণ মন্ত্র উচ্চারণ করে
ভগবানকে নিরামিষ রান্না করে পঞ্চ রবি শস্যের তৈরী খাবার নিবেদন করে তারপর উপবাসীকে প্রসাদ হিসাবে পঞ্চ রবি শস্য গ্রহণ করে একাদশীর ব্রত সমাপ্ত করতে হয়। একাদশীর আগের দিন দশমী তিথি থেকে শুরু করে
একাদশী ও দ্বাদশী পর্যন্ত একাদশী ব্রত পালনের যে পুরো নিয়ম বা পক্রিয়া, এই পক্রিয়াকেই একাদশী পারণ বলা হয়। শাস্ত্রমতে একাদশীর ব্রত করে একাদশী পারণ মেনে চললে তবেই একাদশীর সম্পূর্ণ রূপে ফল পাওয়া যায়।
একাদশী ব্রত হল একটি সংযম ব্রত তাই একাদশী ব্রত পালনের সময় ক্রোধ, নারী পুরুষ সহবাস, মিথ্যাচার, পরনিন্দা এইসমস্ত জিনিস গুলোকে নিজেকে দূরে রেখে ঠাকুরের নামগানে নিজেকে বিলীন রাখবেন।
একাদশীর পারন মন্ত্র
একাদশীর পরের দিন সকালবেলা অথাৎ দ্বাদশীর দিন পঞ্চ রবি শস্যের নিরামিষ ভোগ রান্না করে একাদশীর পারণ মন্ত্র উচ্চারণ করে ভগবানকে প্রসাদ নিবেদন করার পর একাদশীর ব্রত সম্পন্ন করতে হয়। একাদশীর পারণ মন্ত্রটি হল-
একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞান দৃষ্টি প্রদো ভব।।
এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ভগবানকে প্রসাদ নিবেদন করে, পঞ্চ রবি শস্যের ভগবানকে দেওয়া প্রসাদ নিবেদন করার পর একাদশীর ব্রত সম্পন্ন হয়।
একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য pdf (Ekadoshi Broto Mahatmo pdf download)
একাদশীর ব্রতর মাহাত্ম্য নিয়ে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তার গীতাতে বলেছেন-
যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।
স্বপন জাগ্রত চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন স হিয়তে।
একাদশী পালনের নিয়ম (একদশী তালিকা ২০২২)
অথাৎ যে ব্যক্তি একাদশী ও শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীতে গীতা পাঠ করে, সেই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকুক কিংবা, চলতে থাকুক কিংবা জাগতে থাকুক সেই ব্যক্তির কোনো শত্রু কোনো রকমের ক্ষতি করতে পারেনা।
আমরা নিচে ভক্তগনদের জন্যে একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য pdf ডাউনলোড করার লিংক দিয়ে দিলাম আপনারা যে সমস্ত ভক্তগণ একাদশী মাহাত্ম্য পড়তে চান তারা আমাদের লিংকে ক্লিক করে একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য pdf ডাউনলোড করে পড়তে পারেন।

একাদশী তালিকা ২০২৩ (Ekadoshi List Iskon 2023)
কৃষ্ণ ভক্ত একাদশীর ব্রত রাখেন, সকল ভক্তবৃন্দের জন্য আমরা একাদশী ব্রতর একাদশী তালিকা ২০২২ (Ekadoshi List Iskon 2023), পুরো বছরের একাদশী তালিকা সূচী আপনাদের জন্যে শেয়ার করা হল।
সংখ্যা | একাদশীর নাম | মাস | দিন | পারণের সময় |
০১ | পৌষ পুত্রদা একাদশী ও বৈকুন্ঠ একাদশী | জানুয়ারী | ০২ তারিখ সোম বার ২০২৩ | ০১ জানুয়ারী ০৭:১১ PM থেকে ০২ জানুয়ারী ০৮:২৩ AM |
০২ | ষটিতিলা একাদশী | জানুয়ারী | ১৮ তারিখ বুধ বার ২০২৩ | ১৭ জানুয়ারী ০৬:০৫ PM থেকে ১৮ জানুয়ারী ০৪:০৩ PM |
০৩ | জয়া একাদশী | ফেব্রুয়ারী | ০১ তারিখ বুধ বার ২০২৩ | ৩১ জানুয়ারী ১১:৫৩ AM থেকে ০১ ফেব্রুয়ারী ০২:০১ PM |
০৪ | বিজয়া একাদশী | ফেব্রুয়ারী | ১৬ তারিখ বৃহস্পতি বার ২০২৩ | ১৬ ফেব্রুয়ারী ০৫:৩২ AM থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারী ০২:৪৯ AM |
০৫ | আমলকীব্রত একাদশী | মার্চ | ০৩ তারিখ শুক্র বার ২০২৩ | ০২ মার্চ ০৬:৩৯ AM থেকে ০৩ মার্চ ০৯:১১ AM |
০৬ | পাপমোচনী একাদশী | মার্চ | ১৮ তারিখ শনি বার ২০২৩ | ১৭ মার্চ ০২:০৬ PM থেকে ১৮ মার্চ ১১:১৩ AM |
০৭ | কামদা একাদশী | এপ্রিল | ০১ তারিখ শনি বার ২০২৩ | ০১ এপ্রিল ০১:৫৮ AM থেকে ০২ এপ্রিল ০৪:১৯ AM |
০৮ | বরুথিনী একাদশী | এপ্রিল | ১৬ তারিখ রবি বার ২০২৩ | ১৫ এপ্রিল ০৮:৪৫ PM থেকে ১৬ এপ্রিল ০৬:১৪ PM |
০৯ | মোহিনী একাদশী | মে | ০১ তারিখ সোম বার ২০২৩ | ৩০ এপ্রিল ০৮:২৮ PM ০১ মে থেকে ১০:০৯ PM |
১০ | অপরা একাদশী | মে | ১৫ তারিখ সোম বার ২০২৩ | ১৫ মে ০২:৪৬ AM থেকে ১৬ মে ০১:০৩ AM |
১১ | নির্জলা একাদশী | মে | ৩১ তারিখ বুধ বার ২০২৩ | ৩০ মে ০১:০৭ PM থেকে ৩১ মে ০১:৪৫ PM |
১২ | যোগিনী একাদশী | জুন | ১৪ তারিখ বুধ বার ২০২৩ | ১৩ জুন ০৯:২৮ AM ১৪ জুন থেকে ০৮:৪৮ AM |
১৩ | দেবশয়নি একাদশী | জুন | ২৯ তারিখ বৃহস্পতি বার ২০২৩ | ২৯ জুন ০৩:১৮ AM থেকে ৩০ জুন ০২:৪২ AM |
১৪ | কামিকা একাদশী | জুলাই | ১৩ তারিখ বৃহস্পতি বার ২০২৩ | ১২ জুলাই ০৫:৫৯ PM ১৩ জুলাই থেকে ০৬:২৪ PM |
১৫ | পদ্মিনী একাদশী | জুলাই | ২৯ তারিখ শনি বার ২০২৩ | ২৮ জুলাই ০২:৫১ PM থেকে ২৯ জুলাই ০১:০৫ PM |
১৬ | পরমা একাদশী | আগস্ট | ১২ তারিখ শনি বার ২০২৩ | ১১ আগস্ট ০৫:০৬ AM থেকে ১২ আগস্ট ০৬:৩১ AM |
১৭ | শ্রাবণ পুত্রদা একাদশী | আগস্ট | ২৭ তারিখ রবি বার ২০২৩ | ২৭ আগস্ট ১২:০৮ AM থেকে ২৭ আগস্ট ০৯:৩২ PM |
১৮ | অজা একাদশী | সেপ্টেম্বর | ১০ তারিখ রবি বার ২০২৩ | ০৯ সেপ্টেম্বর ০৭:১৭ PM থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ১০:২৮ PM |
১৯ | পার্শ্ব একাদশী | সেপ্টেম্বর | ২৫ তারিখ সোম বার ২০২৩ | ২৫ সেপ্টেম্বর ০৭:৫৫ AM থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর ০৫:০০AM |
২০ | ইন্দিরা একাদশী | অক্টবর | ১০ তারিখ মঙ্গল বার ২০২৩ | ০৯ অক্টবর ১২:৩৬ PM ১০ থেকে অক্টবর ০৩:০৮ PM |
২১ | পাসকুঙসা একাদশী | অক্টবর | ২৫ তারিখ বুধ বার ২০২৩ | ২৪ অক্টবর ০৩:১৪ PM থেকে ২৫ অক্টবর ১২:৩২ PM |
২২ | রমা একাদশী | নভেম্বর | ০৯ তারিখ বৃহস্পতি বার ২০২৩ | ০৮ নভেম্বর ০৮:২৩ AM থেকে ০৯ নভেম্বর ১০:৪১ AM |
২৩ | দেবউত্থান একাদশী | নভেম্বর | ২৩ তারিখ বৃহস্পতি বার ২০২৩ | ২২ নভেম্বর ১১:০৩ PM থেকে ২৩ নভেম্বর ০৯:০১ PM |
২৪ | উৎপন্না একাদশী | ডিসেম্বর | ০৮ তারিখ শুক্র বার ২০২৩ | ০৮ ডিসেম্বর ০৫:০৬ AM থেকে ০৯ ডিসেম্বর ০৬:৩১ AM |
২৫ | মোক্ষদ্বা একাদশী | ডিসেম্বর | ২২ তারিখ শুক্র বার ২০২৩ | ২২ ডিসেম্বর ০৮:১৬ AM থেকে ২৩ ডিসেম্বর ০৭:১১ AM |
FAQ
প্রশ্ন- একাদশী কি ?
উঃ- একাদশী হল চাঁদের ১৫ টি তিথীর মধ্যে হিন্দু ধর্মের বিশেষ একটা পূর্ণ্য তিথী। হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে একাদশীর উপবাস ব্রত পালন করলে মর্ত্যলোকের কৃতকর্মের পাপ ধুয়ে যায় এবং পরলোকে নরকবাস না হয়ে বৈকুন্ঠ ধামে আশ্রয় হয়।
প্রশ্ন- একাদশীর পারণ মন্ত্র কি ?
উঃ- একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞান দৃষ্টি প্রদো ভব।।
প্রশ্ন- একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবেনা ?
উঃ- ০১. ধান থেকে নির্মিত-চাল,ভাত,মুড়ি,খৈ,সুজি ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা।
০২.গম ও যব থেকে নির্মিত- আটা,ময়দা দ্বারা কোনো ধরণের খাবার খাওয়া যাবেনা।
০৩. ডাল- কোনো রকমের ডাল খাওয়া যাবেনা।
০৪. তেল- কোনো রকমের ভোজ্য তেল খাওয়া যাবেনা। শুধুমাত্র ঘী ব্যবহার করা যাবে।
প্রশ্ন- একাদশীতে কি কি খাওয়া যাবে ?
উঃ- যে সমস্ত ভক্তগণ একাদশীর উপবাস রেখেছেন অথচ শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদেরই বিশেষ কিছু খাদ্য সেবন করার কথা বলা হয়েছে। একাদশীতে ফলমূল এবং লেবুর শরবত ও দুধ খাওয়া যাবে।
প্রশ্ন- একাদশীতে কি সাবু খাওয়া যায় ?
উঃ- একাদশীতে ধান,গম ও যব সহ বিভিন্ন ধরণের রবি শস্য খাওয়া নিষিদ্ধ, কিন্তু অনেক জায়গায় মন্দিরে সাবুর ভোগ দেওয়া যায়। কিন্ত একাদশীতে সাবু খাওয়ার আগে অবশ্যই ধ্যান রাখতে হবে সাবু দানায় যেন কোনো রকমের ময়দা মেশানো না থাকে। কারণ বাজারে ঝা চকচকে সাদা রঙের সাবু দানা পাওয়া যায়। আর এই সমস্ত সাদা রঙের সাবু দানার মধ্যে ময়দা মেশানো থাকে সেটা রান্না করার পরে বুঝতে পাওয়া যায়। আর আপনি যদি ময়দা মেশানো সাবু দানা খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার একাদশীর ব্রত করাই বৃথা হয়ে যায়। সুতরাং সাবু দানা খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবু দানায় যাতে ময়দা মেশানো না থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন- একাদশীতে কি কি বর্জনীয় ?
উঃ- একাদশীতে সমস্ত প্রকার পঞ্চ রবি শস্য যেমন- ধান দ্বারা প্রস্তুত চাল,মুড়ি, ভাত,খৈ, ইত্যাদি। গম ও যব দ্বারা প্রস্তুত সকল প্রকার আটা ও ময়দার জিনিস বিস্কুট, হরলিক্স,ছাতু ইত্যাদি খাওয়া নিষিদ্ধ। তেল- খাদ্য দ্রব্যে সমস্ত রকমের তেল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। মসলা হিসাবে শুধু- সিন্ধু লবন,হলুদ,মরিচের ব্যবহার করতে পারেন। ডাল – কোনো ধরণের ডাল খাওয়া যাবেনা।
প্রশ্ন- একাদশী ব্রত মন্ত্র ?
উঃ- একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞান দৃষ্টি প্রদো ভব।।
প্রশ্ন- একাদশী কি ?
উঃ- একাদশী হল একটি তিথি।
প্রশ্ন- পঞ্চ শস্য কি কি ?
উঃ- একাদশীতে যে ০৫ টি শস্য অথাৎ পঞ্চ শস্যের কথা বলা হয়েছে, সেই পঞ্চ শস্য গুলো হল, যেমন- ধান,গম,যব,ডাল এবং তৈল বীজ।