আমরা আজকের আর্টিকেলে অরিজিৎ সিং জীবনী (Arijit Singh Jiboni Bangla) নিয়ে আলোচনা করব। অরিজিৎ সিং বর্তমানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্লে-ব্যাক সিঙ্গারের মত একজন সনামধন্য বরেণ্য গায়ক।
বর্তমানে অরিজিৎ এর গানের খ্যাতি শুধু ভারতেই নয় অরিজিৎ এর গানের সুরের জাদু কাঠির ছোঁয়ায় আজ ভারত তথা বিশ্ববাসী মন্ত্রমুগ্ধ। অরিজিৎ সিং নিজের মাতৃভাষাকে বাদ দিয়েও হিন্দি,পাঞ্জাবী, তামিল,
তেলেগু,আসামিয়া, গুজরাতি, ইংরেজী ইত্যাদি ভাষার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আরো অন্যান্য শিল্পীর তুলনায় অরিজিৎ সিং মাত্র ২৯ বছর বয়সেই সুরের সাধনায় মা সরস্বতীর আশীর্বাদে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে যায়।
২০১৩ সালে “আশিকী-০২” সিনেমার ‘তুম্হি হো‘ গানটি অরিজিৎ এর জীবনের life changer গান হয়ে যায়। এরপর অরিজিৎ সিংকে তার ফেলে আসা জীবনের দিকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
অরিজিৎ এর ‘তুমহি হো’ গানের সুর তখন প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয় বীণায় বেজে চলছিল, “তুম্হি হো” গানটি অরিজিৎ কে একধাপে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দেয়। তবে এটাও ঠিক পরিশ্রম ব্যাতিত কোনো কিছুই সহজ উপলব্ধ নয়।
অরিজিৎ সিং খুব সহজে একদিনেই কিন্তু সংগীতের ভুবনে নিজের জায়গা করে উঠতে পারেনি, তার জন্যে অরিজিৎকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
অরিজিৎ সিং ২০০৫ সালে সনি টিভির মিউজিক্যাল রিয়ালিটি শো “ফ্রেম গুরুকুল” এর সংগীত প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশত দর্শকদের থেকে ভোট না পাওয়ায় তিনি সেই রিয়ালিটি শো থেকে eleminate হয়ে যায়।
তবে তিনি এখানেই ক্ষান্ত না হয়ে, বিখ্যাত মিউজিক ডিরেক্টর প্রীতমের সঙ্গে সহকারী হিসাবে সঙ্গীত প্রযোজনার কাজ শুরু করেন। এইভাবে দীর্ঘ্যদিন সহকারী সঙ্গীত প্রযোজক হিসাবে কাজ শেখার পর তিনি বিশ্বের দরবারে নিজেকে তুলে ধরতে সমর্থ হন।
অরিজিৎ সিং জীবনী বাংলা (Arijit Singh Biography in Benglai)
আসুন একজনজরে অরিজিৎ সিং এর জীবনীর সংক্ষিপ্ত সারের দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক –
পুরো নাম | অরিজিৎ সিং |
জন্ম | ১৯৮৭ সালের ২৫ শে এপ্রিল |
উচ্চতা | ০৫ ফুট ০৬ ইঞ্চি মত |
ওজন | মোটামোটি ৭৫ কেজি |
চোখ এবং চুলের রঙ | কালো |
রাশি | বৃষভ |
নাগরিকতা | ভারতীয় |
জন্মস্থান | পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ শহর (ভারত) |
বাবার নাম | কক্কর সিং (পাঞ্জাবী শিখ) |
মায়ের নাম | অদিতী সিং (হিন্দু বাঙালী) |
বোনের নাম | অমৃতা সিং |
স্ত্রীর নাম | কোয়েল রায় সিং |
পড়াশোনা | শ্রীপত সিং কলেজ জিয়াগঞ্জ থেকে স্নাতক পাস করেন |
কাজকর্ম | বর্তমানে তিনি ভারতীয় সঙ্গীত জগতের অন্যতম সনামধন্য গায়ক কণ্ঠশিল্পী |
পছন্দের খাবার | মাছের ঝোল, আলুপোস্ত, ডাল আলু সেদ্ধ ভাত এবং মিষ্টি ও দই |
পছন্দের গায়ক | গুলাম আলী, জগজিৎ সিং, মেহেদি হাসান, কৃষ্ণ কুমার কন্নথ |
পছন্দের নায়ক | অক্ষয় কুমার, মনোজ বাজপেয়ী |
পছন্দের নায়ীকা | দীপিকা পাডুকোন ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া |
সম্পত্তির পরিমান | অমুমানিক ২০ কোটি টাকা |
অরিজিৎ এর জন্ম বৃত্তান্ত
ইংরেজী ১৯৮৭ সালের ২৫ শে এপ্রিল ভারতবর্ষের পশ্চিবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ শহরে বাংলা তথা বলিউডের রোমান্টিক গায়ক অরিজিৎ সিং এর বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয়।
অরিজিৎ এর পিতা কক্কর সিং পেশায় একজন LIC Agent ছিলেন, অরিজিৎ এর বাবা ক্কক্কর সিং এর পরিবার দেশ ভাগের সময় পাকিস্তানের লাহোর থেকে এদেশের পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে এবং তিনি জিয়াগঞ্জে হিন্দু পরিবারের কন্যা অদিতী সিং কে বিবাহ করেন।
অরিজিৎ সিং এর পড়াশোনা ও সঙ্গীত চর্চার পৃষ্ঠভূমি
অরিজিৎ সিং ছাত্র হিসাবে একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেনই বটে, তবে তার পড়াশোনা অপেক্ষা সঙ্গীতের উপরই বরাবর ঝোঁকটা ছিল বেশি। অরিজিৎ জিয়াগঞ্জের রাজা বিজয় সিং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
এরপর তিনি নদীয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুগত জিয়াগঞ্জের শ্রীপত সিং কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন। তবে অরিজিৎ এর পড়াশোনা অপেক্ষা সঙ্গীতেরই সর্বপরী সাধক।
অরিজিৎ এর পিতা কক্কর সিং এর দূর-দূরান্ত থেকে সঙ্গীতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিলনা, তবে অরিজিৎ এর দাদুর পরিবার মানে অরিজিৎ এর দীদা, মাসি, মা, মামা সকলেই সঙ্গীতের সাধক ছিলেন।
তাই অরিজিৎ এর সঙ্গীত জীবনে হাতে খড়ি হয় মা অদিতি সিং এর হাত ধরেই। অরিজিৎ এর মা অদিতি সিং নিজে একজন ভাল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সাধকের পাশাপাশি তার তবলা বাজানোর হাতও খুব দক্ষ ছিল।
শুরুতে অরিজিৎ তার মায়ের কাছ থেকেই সংগীত এবং তবলা শেখার তালিম নেয়। অরিজিৎ এর মাসি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিভাগ থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখেছিলেন তাই অরিজিৎ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভিতটা ছোটোবেলাতেই মজবুত হয়ে গেছিল।
বাড়িতে বসে নিজি সঙ্গীত শিক্ষার বাইরে অরিজিৎ রাজেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর কাছ থেকে শাস্ত্রীয় সংগীত, ধীরেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর কাছ তবলা এবং বীরেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর কাছ থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত শেখেন।
অরিজিৎ সিং এর সঙ্গীত জীবনে পদার্পন (Arijit Singh early life)
২০০৫ সালে সনি টিভির Singing Reality show “Frame Gurukul” অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গীতের ভুবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়ায়ে অরিজিৎ গুরুদেব রাজেন্দ্র প্রসাদ হাজারীর অনুপ্রেরণায়
অরিজিৎ সিং ” Frame Gurukul” এর একজন প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। শুরুরদিকে অরিজিৎ এর গুরুকুল এর প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করার কোন ইচ্ছে ছিলনা।
তবে তিনি যখন জানতে পারেন ” Frame Gurukul” বিচারকের আসনে বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিশারদ শঙ্কর মহাদেব থাকছেন তখন তিনি তার মন পরিবর্তন করে গুরুকুল এর প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।
অরিজিৎ সনি টিভির ফ্রেম গুরুকুল এর ফাইনাল পর্যন্ত না পৌঁছতে পারলেও দর্শকদের ভালোবাসায় এবং বিচারকদের বিচারে সেরা-০৬ পর্যন্ত পৌঁছে যায় কিন্ত এস এম এস এর মাধ্যমে দর্শকদের ভোট না পাওয়ায় তাকে সেখান থেকেই বিদায় নিতে হয়।
তারপর সনি টিভির উদ্যোগে ইন্ডিয়ান আইডল এবং গুরুকুল এর সেরা-১০ প্রতিযোগীদের নিয়ে ” দশ-কে-দশ-লে-গয়ে-দিল “ নামের একটি সঙ্গীত প্রতিযোগীতা হয়েছিল।
অরিজিৎ সিং সনি টিভির এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেন এবং সেই প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হয়। ” দশ-কে-দশ-লে-গয়ে-দিল “ প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হওয়ার পর
অরিজিৎ তার নিজস্ব রেকর্ডিং সেটাপ তৈরী করে সঙ্গীত প্রোগ্রামিং দিয়ে সংগীতের জীবন যাত্রা শুরু করেন। নিজস্ব সঙ্গীত চর্চার বাইরেও অরিজিৎ, শঙ্কর-এহসান-লয়, বিশাল-শেখর ও মিথুনের সঙ্গে সহকারী সঙ্গীত প্রোগ্রামার হিসাবে অনেকদিন কাজ করেছেন।
সঙ্গীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেবা অরিজিৎ এর গানে মুগ্ধ ছিলেন, তাই প্রথম থেকেই অরিজিৎকে সাপোর্ট করতেন। শঙ্কর মহাদেবা নিজে বিভিন্ন সঙ্গীত পরিচলকদের অরিজিৎকে দিয়ে গান গাওয়ার জন্যে বলতেন।
সেইসময় অরিজিৎ এর নতুন কণ্ঠ বলে, অরিজিৎকে দিয়ে কেউ গান গাওয়াতে চাইতনা। কিন্ত শঙ্কর মহাদেবা ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন অরিজিৎ সিং এর গানই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আওয়াজ হতে চলেছে।
গায়ক হিসাবে অরিজিৎ এর সঙ্গীত জীবন (Arijit Singh Singing life)
শঙ্কর-এহসাস-লয় তাদের নতুন মিউজিক অ্যালবাম “হাই-স্কুল-মিউজিক-অ্যালবাম-০২” এর গান অরিজিৎ সিংকে সঙ্গীত জীবনের পথে এগিয়ে চলার পথ প্রস্তুত করে দেয়।
শঙ্কর-এহলাস-লয়ের এই মিউজিক অ্যালবামটিতে অরিজিৎকে দিয়ে “অল-ফর-অন” গানটি গাওয়ানো হয়। এরপর অরিজিৎ সঙ্গীতের সুরের তানপুরায় নিজেকে আরো বেশি ধারলো করার লক্ষে
২০১০ সালে প্রখ্যাত সঙ্গীত কম্পোজার প্রীতম চক্রবর্তীর সঙ্গে সহকারী সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে কাজ করা শুরু করেন। এরপর একে একে প্রীতম অরিজিৎকে দিয়ে তিনটি ব্লক ব্লাস্টার সিনেমা,
গোলমাল-০৩, ক্রুক, এবং একশন রিপ্লে, সিনেমার গানে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ২০১১ সালে অরিজিৎ প্রথমবার বলিউডে গান গাওয়া শুরু করেন।
অরিজিৎ মিথুন এর কম্পজিসনে ‘মাডার-০২’ সিনেমার এর গান ‘ফির মোহাব্বত করনে’ গানটি গেয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে সঙ্গীত পরিচালক মিথুন ‘ফির মোহাব্বত করনে’ গানটি
২০০৯ সালে রেকর্ড করেন ঠিকই কিন্তু তিনি ২০১১ সালে ‘ফির মহববত করনে’ গানটি অফিসিয়াল ভাবে মুক্তি দেন। ২০১২ সালে অরিজিৎ সিং প্রীতমের কম্পোজিশনে
‘এজেন্ট বিনোদ’ সিনেমার আরো একটি গান ‘রাব্দা’ গায়। অরিজিৎ এর গলায় ‘এজেন্ট বিনোদ’ সিনেমার ‘রাব্দা’ গানটি দর্শকদের মনমুগ্ধ করে। গানটির চরম সাফল্য দেখে প্রীতম ‘রাব্দা’ গানটিকে আরো চারটি আলাদা আলাদা ভাষায় ডাব করেন।
সেই বছরই অরিজিৎ প্রীতমের সাথে জুটি বেঁধে আরো কতগুলো সিনেমা যেমন- প্লেয়ার্স,ককটেল ও বরফি সিনেমায় কাজ করেন। ২০১২ সালে অরিজিৎ বিশাল ও শেখরের ‘সাংহাই‘ সিনেমার ‘দুয়া’ গানটি গায়
এবং তার জন্য অরিজিৎকে ফ্লিম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ২০১৩ সালটি অরিজিৎ এর জীবনের সুবর্ণময় সময় ছিল। এই বছর অরিজিৎ মিথুনের কম্পোজিশনে মিউজিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডে এর গল্পে
নির্মিত সিনেমা ‘আশিকি-০২’ এর “তুম-হি-হো” গান টি গেয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যায়। অরিজিৎ এর আওয়াজে আশিকি সিনেমার তুম-হি-হো রোমান্টিক গানটি দর্শকদের মন কেড়ে নেয়।
২০১৩ সালে আশিকীর তুম-হি-হো গানটি সেই বছরের সেরা সুপার হিট গান হিসাবে নির্বাচিত হয়। ‘তুম হি হো’ এই গানটি গাওয়ার জন্যে অরিজিৎ সিংকে নানান ধরণের ছোট বড় পুরস্কারে পুরুস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
এরপরে অরিজিৎ বলিউডের বিভিন্ন সিনেমায় প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসাবে গান গাওয়ার সুযোগ পায় এবং বলিউডের অন্যতম সেরা রোম্যান্টিক গায়ক হয়ে উঠে।
সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলীর “আশিকী” সিনেমার তুম-হি-হো গানটি গাওয়ার জন্যে একটি নতুন ফ্রেস গলার দরকার ছিল, প্রীতম তখন একটি সুদক্ষ তরুণ শিল্পীর নতুন গলার খোঁজ করছিলেন
সেই সময় ভাগ্যক্রমে জিৎ গাঙ্গুলী youtube অরিজিৎ সিং এর গলায় গাওয়া “দুয়া” গানটি শোনেন। ব্যাস অরিজিৎ এর আওয়াজ জিৎ গাঙ্গুলীর মনে দাগ কেটে যায়।
জিৎ গাঙ্গুলী আশিকী সিনেমার তুম-হি-হো গানটি অরিজিৎ কে দিয়ে গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। এরপর তো আর নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা, অরিজিৎ তুম-হি-হো গানটি গেয়ে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়।
অরিজিৎ এর তুম-হি-হো গানটির সাফল্যের পর ২০১৩ সালেই পরিচালক করন জোহর এর ‘য়ে-জবানী-হে-দিবানী’ সিনেমায়, সঙ্গীত পরিচালক প্রীতমের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘য়ে-জবানী-হে-দিবানী’ সিনেমার প্রায় সব গান গুলোতেই কণ্ঠ দেয়।
প্রীতম দ্বারা ‘য়ে-জবানী-হে-দিবানী’ সিনেমার ‘বালম-পিচকারী‘ গানটির কম্পোজিশনের জন্যে অরিজিৎকে নির্বাচন করা হয়। দেখতে গেলে ২০১৩ সালটা সবমিলিয়ে অরিজিৎ এর জীবনের একটি মূল্যবান সময় ছিল।
অরিজিৎ এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঙ্গীতের সাধনায় অরিজিৎকে একজন সেরা শিল্পীর জায়গা করে দিয়েছে। অরিজিৎ তার জীবনের সেরা সময়ে, চেন্নাই এক্সপ্রেস, আর-রাজকুমার, জ্যাকপট, ফাটা পোষ্টার নিকলা হিরো,
রামলীলা, মিকি ভাইরাস, এর মত হিট সিনেমা গুলোতে প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসাবে কাজ করেছেন। অরিজিৎ এর আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর সেইসময় ছোট বড় সব ধরণের সিনেমার সিনেমার প্রযোজকরা
তাদের নির্মিত সিনেমা হিট হওয়ার আশায় অরিজিৎকে দিয়ে তাদের সিনেমায় গান গাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করত। ২০১৪ সালের শুরুরদিকে অরিজিৎ সঙ্গীত সাধনার ফল স্বরূপ অরিজিৎকে বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এ. আর. রহমান, সাজিদ-বাজিদ
এর মত বড় বড় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুখ্যাতি এনে দেয়। এছাড়াও অবশ্য অরিজিৎ আরো নাম করা বিভিন্ন সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন যেমন- টনি কক্কর, অমিত ত্রিবেদী, বিশাল ভরদ্বাজ ইত্যাদি।
অরিজিৎ সিং এর বিবাহ ( Arijit Singh marriage)
গান গাওয়ার পাশাপাশি অরিজিৎ ব্যান্ডমিন্টন খেলতে, সিনেমা দেখতে এবং ডকুমেন্টারি লিখতে পছন্দ করেন। অরিজিৎ সিং এর বিবাহ এক বহু চর্চিত বিষয়।
কেউ কেউ বলে থাকেন অরিজিৎ তার জীবনে দুই বার বিবাহ করেন-০১) গুরুকুল এর তারই সহ প্রতিযোগী ২০০৫ সালের সনি টিভি ইন্ডিয়ার ফ্রেম গুরুকুল সঙ্গীত রিয়ালিটি শো এর winer রূপরেখা ব্যানার্জীর সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল বলে জল্পনা শোনা যায়।

তবে রূপরেখার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে অরিজিৎ সিং ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য না করলেও, রূপরেখা ব্যানার্জী স্পষ্ট করে জবাব দিয়ে বলে দেন অরিজিৎ সিং এর সঙ্গে তার কোনো বিবাহ হয়নি সবটাই গুজব মাত্র।
তবে হ্যাঁ রূপরেখা নিজে একজন শিল্পী হওয়ার সাথে সাথে অরিজিৎ এর গানের একজন বড় ভক্ত তিনি সেটা স্বীকার করেছেন । ০২) অরিজিৎ তার কলেজ জীবনের বান্ধবী কোয়েল রায় কে বিয়ে করেন।
বর্তমানে অরিজিৎ কোয়েল রায় সিং এর সঙ্গে সুখ শান্তিতে ঘরকন্না সামলাচ্ছেন। ২০১৪ সালের ২০ শে জানুয়ারী অরিজিৎ সিং এর সঙ্গে কোয়েল রায় এর বিবাহ হয়।

কলেজের শুরুর দিন থেকেই অরিজিৎ কোয়েল রায় কে পছন্দ করতেন। তবে অরিজিৎ এর সঙ্গে কোয়েলের বিয়ে হওয়ার আগে কোয়েল রায় এর আরো একবার বিবাহ হয়েছিল, তবে কোয়েলের সেই বিবাহ দীর্ঘ্যস্থায়ী হয়নি।
খুব অল্পদিনের মধ্যে তার প্রথম পক্ষের স্বামীর সাথে কোয়েলের ডিভোর্স হয়ে যায়। বর্তমানে কোয়েলের আগেকার পক্ষের বিবাহের একটি কন্যা সন্তান আছে। অরিজিৎ কোয়েলের আগেকার কন্যাসন্তান কে নিজের সন্তানের স্বীকৃতি দিয়ে
২০১৪ সালের ২০ শে জানুয়ারী হিন্দু ধর্মমতে বীরভূমের তারাপীঠ মন্দিরে মা তারাকে স্বাক্ষী রেখে কোয়েল রায়কে বিবাহ করেন। বর্তমানে অরিজিৎ ও কোয়েলের দুই সন্তান আছে, কোয়েল ও অরিজিৎ তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে দিব্বি সময় কাটাচ্ছেন।
অরিজিৎ সিংকে ঘিরে বাদ ও বিবাদ ( Arijit Singh Controvercy )
প্রত্যেকটা সেলিব্রিটি মানুষের জীবনকে ঘিরেই কিছুনা কিছু বাদ ও বিবাদ থাকে, তাই বাদ ও বিবাদের যাত্রায় অরিজিৎ সিং জীবনীতে অরিজিৎ সিং কে ঘিরে বাদ ও বিবাদ থাকবে না এমনটা কিন্তু নয়।
অরিজিৎ সিং এর গায়ক জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনে বেশ কিছু বাদ ও বিবাদের ঘটনা সামনে এসেছে আমরা অরিজিৎ সিং এর জীবনের কিছু বাদ বিবাদের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
০১. ২০১৩ সালের দিকে একটি দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় অরিজিৎ সাংবাদিক উপর মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলেন যার জন্যে তাকে জেল পর্যন্ত যেতে হয়েছিল।
০২. ২০১৫ সালে অরিজিৎকে নিয়ে একটি নতুন খবর ভাইরাল হয়। সেই সময় গ্যাংষ্টার রবি পূজারী অরিজিৎ সিং এর কাছ থেকে মুম্বাইয়ে থাকার জন্যে ০৫ কোটি টাকা সেলামি চেয়ে বসে, টাকা না আদায়ে অরিজিৎ সিংকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
০৩. অরিজিৎ সিং এর জীবনের সবথেকে বড় বাদ ও বিবাদের ঘটনা হল অরিজিৎ সিং এবং বলিউড অভিনেতা সালমান খানের মধ্যে হওয়া বাদ ও বিবাদের ঘটনা। বলি পাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় একবার একটি অ্যাওয়ার্ড ফাংশানে
অরিজিৎ সিং সালমানকে নিয়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেন। যার জন্যে সালমান খান অরিজিৎ সিং এর উপর পুরোপুরি খোঁচে যায়। পরে অবশ্য অরিজিৎ সিং সালমান খানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
অরিজিৎ সালমান খানের সুলতান সিনেমার একটি সুপারহিট গানে কণ্ঠ দেয় কিন্ত সালমান ও অরিজিৎ এর বাক বিতন্ডার জেড়ে সালমান খান অরিজিৎ সিং কে ক্ষমা না করে সুলতান সিনেমা থেকে অরিজিৎ সিং এর গাওয়া গানটিকে বাতিল করে দেয়।
০৪. একবার অরিজিৎ সিংকে ষ্টার প্লাস চ্যানেলের পক্ষ থেকে একটি সঙ্গীত শো এর বিচারক হিসাবে ডাকা হয়। কিন্ত সেই রিয়ালিটি শো এর মঞ্চে ‘হানি সিং’ কে সহবিচারক হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হলে
অরিজিৎ সিং ষ্টার প্লাস এর সেই সঙ্গীত রিয়েলিটি শো এর মঞ্চ থেকে নিজেকে সাইড করে নেয়। মনে করা হয় অরিজিৎ সিং ও হানি সিং এর মধ্যে সেরকম তালমিল না থাকায় অরিজিৎ সিং নিজেকে বিচারকের স্থান থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
অরিজিৎ সিং এর গান (Arijit Singh Song list)
অরিজিৎ সিং জীবনীতে যদি অরিজিৎ সিং এর গাওয়া গান গুলোর সম্পূর্ণ তালিকা এক পাতায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কারণ অরিজিৎ সিং শুধু টলিউড (বাংলা) এবং বলিউড (হিন্দি) ছায়াছবির গান ব্যতীত বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় বহু গান গেয়েছেন –
অরিজিৎ সিং এর গলায় গাওয়া কিছু হিন্দি গান
ক্রমাঙ্ক সংখ্যা | সিনেমার নাম | অরিজিৎ এর গাওয়া গান গুলো |
০১. | মার্ডার- ০২ | ফির মোহাব্বত করনে চলা টু |
০২. | আশিকী- ০২ | তুম-হি-হো, মেরি আশিকী, চাহু মে না, হম মর জায়েঙ্গে |
০৩. | হামটি শর্মা কি দুলহনিয়া | সমঝাবন |
০৪. | বদলা পুর | জুদাই |
০৫. | য়ে জবানী হে দিবানী | দিল্লীবালি গার্লফ্রেন্ড, কবিরা, ইলাহী |
০৬. | ফাটা পোষ্টার নিকলা হিরো | মে রঙ শরবতো কে তু প্যাসে ঘাটকা পানি |
০৭. | রামলীলা | লাল ইস্ক |
০৮. | হামারি অধুরি কাহিনী | হামারি আধুরি কাহিনী |
০৯. | দিলবালে | গেরুয়া, জনম জনম |
১০. | বাজিরাও মাস্তানি | আয়াত |

অরিজিৎ সিং এর এর গলায় গাওয়া কিছু বাংলা গান
ক্রমাঙ্ক সংখ্যা | সিনেমার নাম | অরিজিৎ এর গাওয়া গান গুলো |
০১. | মিসেস সেন | চুপি চুপি |
০২. | আসছে বছর আবার হবে | চিনে ফেলেছি রাস্তাঘাট |
০৩. | লড়াই | কিছু কিছু কথা |
০৪. | হাওয়া বদল | মনে পড়লে |
০৫. | দ্বিতীয় পুরুষ | আবার ফিরে এলে |
০৬. | কবীর | আকাশেও অল্প নীল |
০৭. | ককপিট | খেলাশেষ |
০৮. | গ্যাংষ্টার | তোমাকে চায় |
০৯. | বোঝে না সে বোঝে না | বোঝে না সে বোঝে না |
১০. | বস | মন মাঝিরে |
অরিজিৎ সিং এর পুরুস্কারের সূচী (Arijit Singh Award list)
অরিজিৎ সিং তার গায়কী জীবনে বহু পুরুস্কার পেয়েছেন। আপনারা জানলে অবাক হবেন অরিজিৎ সিং এর গাওয়া আশিকী-০২ সিনেমার ‘তুম-হি-হো’ গানটির জন্যে অরিজিৎ সিংকে
১০ জায়গা থেকে নোমিনেট করা হয়েছিল তার মধ্যে ০৯ জায়গায় অরিজিৎকে বিজয় খেতাব দেওয়া হয়। এছাড়াও অরিজিৎকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ৭০ বারেরও বেশি সময় বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড এর জন্যে নোমিনেটের করা হয় তার মধ্যে অরিজিৎ ২৩ টিরও বেশি জায়গায় পুরুস্কার জেতে।
অরিজিৎ সিং এর পাওয়া বিভিন্ন পুরুস্কার গুলো হল-
- ফ্লিমফেয়ার অ্যাওয়ার্ড- ০২.
- আইফা অ্যাওয়ার্ড- ০১.
- গিল্ড অ্যাওয়ার্ড- ০২.
- মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড- ০৩.
- জো সিন অ্যাওয়ার্ড- ০২.
এছাড়াও ভারতের সুপ্রসিদ্ধ গায়ক অরিজিৎ সিংকে ২০১৪ সালে UK থেকে Indian Students Union দ্বারা Youth Icon Music Award দিয়ে পুরুস্কৃত করা হয়।
পরিশিষ্ট
অরিজিৎ সিং শুধু একজন ভালো গায়ক নয় তিনি একজন খুব ভালো মনের মানুষ। আপনারা যদি অরিজিৎ সিং এর ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে হয়ত লক্ষ করে দেখেছেন অরিজিৎ কতটা সাদামাটা জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন।
আমরা অরিজিৎ সিং জীবনীতে অরিজিৎ সিং এর ছোট বড় ঘটনার কিছু সামান্যতম প্রেক্ষাপট আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। বাস্তবে মানুষটা আরো বেশি সুন্দর।
আজ অরিজিৎ সিং শুধু বাংলীরই গর্ব নয় আমাদের দেশের গৌরব। অরিজিৎ তার গানের সুরে শুধু বাঙালীর নয় পুরো ভারতবাসী তথা বিশ্ববাসীর মন কেড়ে নিয়েছে।